১দিন পিছিয়ে বাংলাদেশ

“সমগ্র পৃথিবীতে কেয়ামত কি একই দিনে সংগঠিত হবে, না কি বাংলাদেশে একদিন পরে কেয়ামত হবে?”

বাংলাদেশের চাঁদ দেখা কমিটি এবং অতি আধুনিক কিছু ইসলামী জ্ঞানসম্পন্নব্যক্তিদের (যাদের সিদ্ধান্তে ও মতামতে একদিন পর রোজা বা ঈদ অনুষ্ঠিত হয়) কাছে আমি বিনীতভাবে জানতে চেয়েছিলাম দিন কয়েক আগে।

বিনিময়ে অসংখ্য বিরূপ মন্তব্যও পেয়েছি।
অবশ্য এতে আমি আশ্চর্য হইনি মোটেও- আমার প্রস্তুতি ছিল। কারণ আমি আমার বাংলাদেশকে চিনি। চিনবোই না বা কিভাবে- দীর্ঘ অলমোষ্ট ৪০টা বছর তো বাংলাদেশেই কাটিয়েছি। আমার’চে কে ভালো চিনে আমার দেশকে?

বিরূপ মন্তব্য যারা করেছে- তাদের একটা অংশের মন্তব্য ছিল ‘ইসলাম সম্পর্কে আরও বেশী পড়াশোনা করার’। আমি পড়াশোনা করতে এমনিতে বেশ ভালোই বাসি। কাজেই উপদেশদাতাদের ধন্যবাদ।

যাই হোক আমার প্রশ্নটি কিন্তু ছিল ‘শুধুমাত্র’ “বাংলাদেশের চাঁদ দেখা কমিটি এবং অতি আধুনিক কিছু ইসলামী জ্ঞানসম্পন্নব্যক্তিদের (যাদের সিদ্ধান্তে ও মতামতে একদিন পর রোজা বা ঈদ অনুষ্ঠিত হয়)” বরাবর- আর প্রশ্নটি উম্মুক্ত করেছিলাম ফিৎনা ছড়ানোর জন্য নয়।

ফিৎনা ছড়িয়ে আমার ব্যক্তিগত কোন স্বার্থসিদ্ধি হবে না। বাংলাদেশে আমার কোন স্বার্থ নেই।

আমার পাঠক মাত্রই জানেন যে আমি শুধুই দেশের গণমানুষকে ‘সচেতন’ করার উদ্দেশ্যে লেখা-লেখি করি। দেশের মানুষ সচেতন হলে আপনা-আপনিই সকল মিথ্যা বিদেয় নিবে। অযোগ্যতার অবসান ঘটবে।

অযোগ্যতর অবসান চাওয়া এবং গণমানুষের সচেতনতা সৃস্টি যদি ‘ফেৎনা’ হিসাবে গণ্য হয়- আমি এই ফেৎনা আমার সারাজীবনই ছড়াবো ইনশাল্লাহ। এই ফেৎনা ছড়ানো থেকে আমাকে কেউ নিবৃত্ত করতে পারবে না।

আমাকে অনেকেই অনুরোধ করেন ‘সামান্যতম বিতর্কও সৃষ্টি করে’ এমন লেখা যেন আমি প্রকাশ না করি। আমি জানি তারা আমার শুভাকাঙ্খী। তারা প্রায়ই বলে থাকে- আপনি রাজনীতি’র লেখা বা ধর্মীয় লেখাগুলি বাদ দিলে আপনার ফলোয়ার অল্প কিছুদিনেই কয়েক লাখ হয়ে যাবে।

আমি দ্বার্থহীনভাবে আবারও বলছি- আমি ফলোয়ার বৃদ্ধির জন্য বা জনপ্রিয়তা পাওয়ার লোভে একটি লাইনও কোনদিন লিখিনি, কোনদিন লিখবোও না।

আমি শুধুই গণসচেতনতা সৃষ্টি এবং গণমানুষের ভেতরে যৌক্তিকতাবোধ ক্রিয়েট করার জন্যই লিখি। আমি চাই এই দেশের একজন সামান্য ক্লিনারও যদি প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থেকে থাকে- সে দেশের ‘সরকার প্রধান’ হবার সাহস দেখাবে।

এই দেশে কেউ কাউকে প্রশ্ন করার সাহস করবে না যে, “আপনি আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি?” দেশের রাষ্ট্রিয় ক্ষমতা দু’টি দল বাস্তবে দু’টি অযোগ্য পরিবারের হাতে আর নিয়ন্ত্রিত হবে না।

মানুষ যতদিন বোকা থাকবে ততদিনই বলবে, ‘সারা জীবন যেটা করে এসেছি সেটা কেন আপনার কথায় ত্যাগ করবো!’ আমি এমন অর্থব লোকদের ভেতরেও সচেতনতা সৃস্টি করবোই। একদিন তারা তাদের এই বোকামীতে নিজেরাই লজ্জা পাবে নিজের কাছে।

আর এজন্য আমাকে মাঝে মধ্যে কিছু ‘উদ্ভট’ স্ট্যাটাস দিতেই হবে।
নইলে মানুষের ভেতরে ‘প্রশ্ন’ সৃস্টি হবে কিভাবে? মানুষ ‘চিন্তা’ করার সুযোগ পাবে কিভাবে?

আমার কৈশরে আমি নিজেই তো দেখেছি আমাদের দেশের হুজুররা কোরবানীর পর গরু বা খাসীর মাথাটি নিজেরা নিয়ে নিত; সময়ের পরিবর্তনে, সময়ের প্রয়োজনে হুজুররা কিন্তু আর এখন মাথা নেবার সাহস পায় না।

স্ট্যাটাসটির সর্বশেষ কমেন্টটি যদি দেখেন তাহলে দেখতে পাবেন যে একজন লিখেছেন,
“রসুল (সা:) কাদের বলেছিলেন চাঁদ দেখতে? তাদের আর কি কি ব্যাবস্থা ছিল চাঁদ দেখার বা সঠিক ভাবে দিন গননা করার? খালি চোখে যা দেখা যায় তাই ছিল তাদের একমাত্র উপায়। আজ চাঁদ কখন জন্ম নিচ্ছে প্রতিটা মুহূর্ত নখদর্পণে। তবুও বলব দেখি নাই?
দেখতে যদি হয়ই তাহলে কে বা কারা বেশী যোগ্যতা রাখে দেখার?
নতুন চাঁদেই মাসের শুরু।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের বলেছেন এই মাসে উপস্থিত থাকলে রোজা রাখতে। যদি জানি চাঁদের জন্ম হয়ে গেছে আমি দেখলাম কি না দেখলাম রমজান আমার জন্য ফরজ হয়ে যায় সেদিন থেকেই। কারো সাধ্য নাই অস্বীকার করার।”

আমি ঠিক এমন একটা কমেন্ট পাবার জন্যই স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলাম।

এই পৃথিবীটা এখন আর যথেষ্ঠ বড় নয়।
একটা সময় ছিল ‘ম্যান-টু-ম্যান’ যোগযোগ অনেক সময় সাপেক্ষ ছিল শুধুই দূরত্বের কারণে। কিন্তু আজ এই গ্লোবালভিলেজে দূরত্বকে মানুষ জয় করেছে। কাজেই পুরাতন চিন্তা, ধ্যান ধারণা আমাদের অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে। সময়ের প্রয়োজনেই তা ত্যাগ করতে হবে।

লায়লাতুল কদর’কে বলা হয়েছে হাজার বছরেরর চেয়েও শ্রেষ্ঠ রাত।
আচ্ছা সেই লায়লাতুল কদর রমজানের শেষ দশদিনের কোন এক বেজোড় রাতের একটা অনির্দিষ্ট রাত। পুরো পৃথিবী লায়লাতুল কদর খুঁজছে একদিন আর বাংলাদেশ অবধারিতভাবে খুঁজবে জোড় রাত্রে- বেজোড় রাতে নয়।

পুরো পৃথিবী রমজান মাস গণনা করছে একদিন আর বাংলাদেশ করছে তার পরের দিন।

তাহলে আমার প্রশ্নটি ছিল একটাই তো পৃথিবী। ১০ই মহররম যদি কেয়ামত অনুষ্ঠিত হয়ে- সেটা তো বাংলাদেশের হিসাবে ৯ই মহররম থাকবে; সুতরাং বাংলাদেশ তো একটা দিন বেশী হাতে পাবে বা বাংলাদেশে একদিন পর কেয়ামত হবে।

আমার কথায় কি কোন যুক্তিই ছিল না?

যাই হোক, বিষয়টিকে আর দীর্ঘায়িত করবো না।
দায়টুকু ইসলামের নয়। ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান। পরিপূর্ণ মানে কমপ্লিট। ইসলামে কোন গ্যাপ নেই। গ্যাপ যা রয়েছে সেটুকু কিছু অযোগ্য ক্ষমতাশালীদের হাতে। আর যখনই মানুষ সচেতন হবে- ওসব ক্ষমতাসীন অযোগ্যরা এমনিতেই মাটিয়ে লুটিয়ে পড়বে।

যোগ্যতার শাসন কায়েম হবে এবং যোগ্যতা হিসাব কষবে। বাংলাদেশ পৃথিবী থেকে একদিন পিছিয়ে থাকবে না।

কিছু কিছু প্রশ্ন দেখে আমি হতবাক হয়েছি।
অসংখ্য ‘জিপিএ পাইপ’ কমেন্ট পেয়েছি; তারা প্রশ্ন তুলেছে সৌদীর সংগে মিল রেখে একই সংগে ফজর নামাজ পড়বে নাকি? এই ক্লাসটাই আবার তীর্যক নোংড়া মন্তব্য জুড়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে ‘জিপিএ পাইপ’দের সংখ্যা যে কতটা বেড়েছে- ভাবতেও লজ্জা হয়।

যেখানে কথা হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা’র কার্যকারিতা নির্ণয় নিয়ে সেখানে প্রশ্ন তুলছে স্থানীয় ঘন্টার ব্যবহার নিয়ে! অসংখ্য জিপিএ পাইপ দেখা যায় হাচিনার রাজ্যে কিন্তু এরা সত্যিই সর্বোচ্চা মাপের জিপিএ পাইপ!

বাংলাদেশের মানুষের যা জ্ঞান- তাতে যদি একদল ‘নিজের চাঁদ নিজেই দেখে সিদ্ধান্ত নিবো’ বলে বেঁকে বসে- আমি অবাক হবো না।

তারপরও সবচে বেশী কমেন্ট ছিল পজেটিভ এবং যুক্তিযুক্ত।
অনেকেই আমারচেও বেশী যুক্তি উপস্থাপন করেছে, সত্যকে সাহসের সংগে সামনে নিয়ে এসেছে। এরাই অন্ধকারে আলোর দিশারী।

সাহসী এবং যুক্তির ও আধুনিকতার সংগে যারা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সংগে মানিয়ে নিয়ে যু্ক্তি দিয়েছেন তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

এবং শেষটায় শুধু একটা কথাই বলবো, আর সেটা হলো ইসলাম কোন পশ্চৎপদ ধর্ম নয়। ইসলাম একটা পরিপূর্ণ জীবন-বিধান। যুগের সংগে তাল মিলাতে এবং পর্যাপ্ত বিজ্ঞান চর্চার নির্দেশনা পবিত্র কোরাণ শরীফেরই।

কিন্তু বাংলাদেশের মতো সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে পরা দেশগুলিই বিজ্ঞানকে, যুক্তিকে ইসলামের প্রতিপক্ষ মনে করে। আজ পশ্চিমা দুনিয়া যে ঈর্ষনীয়ভাবে বিজ্ঞানের দিকে ঝুকেছে সেটাও মুলে রয়েছে পবিত্র কোরাণের অসংখ্য ঈশারা। ভুলে যাবেন না যে পশ্চিমারা মুহাম্মদ (সা) কে নিয়ে, পবিত্র কোরাণ শরীফকে নিয়ে রীতিমত গবেষনা করে।

আপনাদের মতো কোরাণকে শুধুই পবিত্র গ্রন্থ হিসাবে অতি যত্ন করে তাকের উপর লুকিয়ে রাখে না তারা।

যুক্তি, বিজ্ঞান এবং ইসলাম হাত ধরাধরি করে চলে।
যুক্তির বাইরে ইসলামের কিছুই নেই- যারা বলছে যুক্তি দিয়ে ইসলাম হয় না; তারা তাদের মূর্খতা থেকেই ইসলামকে ছোট করার হীনচেষ্টা করছে।

এই লেখার শেষে একটা ভবিষ্যতবাণী লিখে দিচ্ছি, সেটা হলো এই পৃথিবীর মানুষ একদিন সত্যিই সত্যিই ‘টাইম-ট্রাভেল’ করবে। কারণ এই ‘টাইম-ট্রাভেল’ এর মতো এক সময়ের অচিন্তনীয় বিষয়টি ১৪০০ বছর আগে মুহাম্মদ (সা) তাঁর শবে মেরাজের মাধ্যমেই সর্বপ্রথম করে গেছেন।

ইসলাম থেকে বিজ্ঞান খুঁজুন, ঠকবেন না।

ইসলামই গণতন্ত্র শিক্ষা দিয়েছে, ইসলামই ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র-ব্যবস্থার প্রথম পরিপূর্ণ উদাহরণ। মুহাম্মদ (সা) কে স্রেফ একজন নবী হিসাবে নয়, সর্বপ্রথম তাকে দেখতে শিখুন একটি আধুনিক রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে।

এতেই আপনার চিন্তা-ভাবনা ১৮০ ডিগ্রী টার্ণ নিবে।

   Send article as PDF