আকাশ

মাঠে বাচ্চারা ঘুড়ি উড়াচ্ছিল।
কাটাকাটি হচ্ছিল ঘুড়িতে ঘুড়িতে। খেলা বেশ জমেই উঠেছে। কিন্তু ছোট বাচ্চারা তো, ঘুড়ির কাটা-কাটি কথার কাটাকাটিতে গিয়ে ঠেকলো।

কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি।
হাতাহাতি থেকে বেশ ভালোই মারামারি শুরু হলো দু’জনে। একজনের মাথা ফাটিয়ে দিলো অন্যজন।

তারপরও আরও একটু বড় হয়ে গেল ঝগড়াটা, সংযুক্ত হয়ে শক্তি বৃদ্ধি করলো কয়েকজন বড় ভাইও। এবার কিন্তু বেশ একটু বড় আকারে শুরু হয়ে গেল ঝগড়টা।

একপক্ষের ছোট ছেলেটি (যে মাথা ফাটিয়েছে) বুঝতে পারলো যে অবস্থা সুবিধের না; আর কিছুক্ষন এখানে থাকলে মাইর খেতে হবে; ভো দৌড়ে নিজেদের বাসায় চলে গেল।

ওদিকে যে মার খেয়েছে তার বড় ভাই হুমরাচুমরা গোছের, সে একটা ধাড়ালো দা নিয়ে পেছন পেছন ছুটে গেল ঐ ছোট ভাইয়ের মাথা ফাটানো ছেলেটিকে তাড়া করে। ইতিমধ্যে ছেলেটি নিজে বাসায় পৌছে গেছে। গিয়ে তার মেঝ ভাইকে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে ভাইয়ের প্রতি আকুল আবেদন জানালো। বলল, ‘ওরা ধারালো দা নিয়ে আসছে- আমাকে মারতে।’

মেঝ ভাই উত্তেজিত হয়ে গেলেন।
বললেন, ‘তুই ঘাবরাস না; অমি দেখবো কি হয়েছে। ওরা যদি বাসায় আসেই- তাহলে তুই খাটের নীচে লুকিয়ে পরবি।’

ওদিকে ঐ পক্ষ ধাড়ালো দা নিয়ে উঠে এসেছে এই বাসায়, জোরে জোরে কলিং বেল চাপছে, দরজাও ভেংগে ফেলার চেষ্টা করছে। সংগে হুমকি ধামকী।

মেঝ ভাইটি বেশ সাহসী ও চতুর।
সে রান্নাঘর থেকে একটি সবজী-মাছ-মাংস কাটার বটি উঁচু করে ধরে গেট খুলে দিলো এবং প্রথম যে ঘরে ঢুকলো, তাকেই এক কোপ।

ঘটনাস্থলেই ঐ পক্ষের ধারালো দাওয়ালা ছেলেটি মারা গেল।
পরিস্থিতি উত্তেজিত হয়ে পরলো। পুলিশ আসবে; বাকীরা নিজের আত্মীয়-বন্ধুদের খবর দিতে গেল। অবস্থা থমথমে, ভয়াবহ।

সেও কিংকর্তব্যবিমুঢ়।
কি হলো, নিজেই যেন বুঝতে পারছিল না। তার মাথা খারাপ হয়ে যাবার জোগাড়। ওদিকে তার মা বাসাতেই ছিল। তিনিও ভীতু হয়ে পরলেন। এরপর কি হবে? আমার মেঝ ছেলেকে তো আর বাঁচানো যাবে না।

হাতে মাত্র ৩০০ টাকা ছিল।
টাকাটা ছেলেকে দিয়ে বললেন, ‘তুই পালিয়ে যা। যেখানে পারিস, পালিয়ে যা। আর আসবি না। তোকে মেরে ফেলবে। কিন্তু তোকে বেঁচে থাকতে হবে; তুই পালা, ১ মিনিটও দেরী করবি না। পালা।’

ছেলেটি মনে মনে নিজের নতুন নাম ধারণ করলো আকাশ।
আকাশ ১ কাপড়ে ৩০০ টাকা এবং নিজের সংগ্রহে থাকা আরও ১৫০ টাকাসমেত বাড়ী থেকে বের হয়ে সোজা চলে গেল গুলিস্তান। ওখান থেকে একটি বাস ধরে মাগুরা।

কি করবে কিছুই সে জানে না।
মাত্র ক্লাস নাইনে পরে সে।

হাতে তেমন টাকাও নেই যে কিছু একটা করতে পারবে।
ওদিকে ঘটনার আকিস্মকতায় সে নিজেও ঘাবড়ে গেছে। কি হবে? ধরা পরে গেলে? কিছুতেই ধরা পরা যাবে না। কিন্তু কি করবে সে? এমন তো হবার কথা ছিল না। সে একজন খুনী? তার মাথা কাজ করছিল না।

স্থানীয় একটি ছোট মসজিদ দেখতে পেল।
পাশের একটি পুকুরে গোসল করে মসজিদে চলে গেল। ঘুমিয়ে পরলো। জোহরের আজানের সময় তার ঘুম ভাংলো। দিন কয়েক মসজিদেই তার কেটে গেলো; স্থানীয় বাজারে ১ বেলা, আধ বেলা খেয়ে দিন পার করতে লাগলো।

অল্প বয়স্ক একটা ছেলে একা একা মসজিদে থাকছে দেখে ইমাম ও স্থানীয়দের দৃষ্টিতে পরে গেলো। আকাশের কাছে তার বাড়ী কোথায়, এখানে কেন? কি করছে ইত্যাদি জানতে চাওয়া হলো।

আকাশ বেশ গুছিয়ে কথা বলতে জানতো। প্রচুর বই পরা ছেলে সে।
বলল, ‘আমি বাড়ী থেকে পালিয়ে এসেছি। বাড়ীতে অনেক অভাব। মনের দুঃখে পালিয়ে এসেছি। বাবা-মা আমাকে পড়াতে চান না, সামর্থ নেই। নিজের বাসার ঠিকানা না দিয়ে নানা বাড়ীর কথা বলে একটি ভুল ঠিকানা জানালো সকলকে। সে এখানে কোথাও লজিং থাকতে চায়, বাচ্চাদের পড়াবে এবং নিজেও স্কুলে ভর্তি হবে।

ছেলেটি বেশ বুদ্ধিদীপ্ত।
তার একটা ব্যবস্থা হয়ে গেল। স্থানীয় এক বাড়ীতে তার আশ্রয় জুটলো।

এখান থেকেই সে ২ বছর পর এসএসসি পাশ করলো।
তারপর এইচএসসি। পরীক্ষার পর হঠাৎ একদিন তার খুব ইচ্ছে হলো সে নানা বাড়ীতে যাবে লুকিয়ে। এবং আসলো।

আমি জোহরের নামাজে মসজিদে গিয়েছি, জামাত শেষে আকাশকে দেখে চমকে উঠলাম। আমি ঘটনা জানতাম। সকলেই জানতো। কিন্তু আকাশ আমার দিকে খুব বন্ধুত্বপরায়ন চাহনী দিয়ে তাকিয়ে বলল, ‘মামা কেমন আছো?’

আমি অবাক হলাম।
ওর প্রতি তখনও আমার প্রচন্ড ঘৃণা। সে একজন খুনী। তাছাড়া আমি তখনও বিস্তারিত জানি না কিভাবে সে খুনী হয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র জানি সে একটা মার্ডারার।

আমি উত্তর দিলাম না, এড়িয়ে যেতে চাইলাম।
কিন্তু আকাশ নাছোরবান্দা। সে আমার কাছে উঠে এলো। বলল, ‘মামা। মসজিদে তুমি ছাড়া তো এলাকার কেউ নেই। তাছাড়া তোমাকেই প্রথম দেখলাম। তোমার সংগে আমার কিছু কথা আছে। একটু সময় দাও।’ খুবই আন্তরিকভাবে ও কথাগুলো বললো আমাকে।

আমার কেন যেন খুব মায়া হলো আকাশের জন্য।
ওর মুখের দিকে তাকালাম। ওকে আমার খুনী মনে হলো না। এমন সুন্দর মুখের মানুষটি কেন খুনী হবে? আমি ওর সংগে হাত মেলালাম।

তারপর আমাদের কেমন করে যেন খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
আজান হলে মসজিদে দেখা হয়। নামাজ পরি, তারপর গল্প করি এদিক-ওদিক। টুয়েন্টি-নাইন খেলি। আমার খুব হাঁটার বাতিক, প্রচুর হাঁটাতাম আমি, আকাশও তাই- সংগী হয়ে গেল। ওহ, ওটা রমজান মাস ছিল। ও বেশ কিছুদিন থাকবে গ্রামে। ঈদের পর যাবে।

একদিন আমি ওকে খুব বেশী কৌতুহল নিয়ে জানতে চাইলাম, ‘মামা, তুমি খুনটা করলে কেন? আর কিভাবেই বা করলে?’

আকাশের দু’চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পরতে লাগলো। রুমাল দিয়ে মুখটা মুছলো। তারপর বললো, ‘মামা, সব কথা জিজ্ঞেস করো, প্লিজ ওই প্রসংগটা এনো না। আমি ঠিক থাকতে পারি না। আমার কথা বন্ধ হয়ে যায়। আমি ঘুমাতে পারি না। প্লিজ মামা, আমাকে জিজ্ঞেস করো না।’

আমি থেমে গেলাম।
এমন অবস্থায় আর কোন প্রশ্ন করতে নেই।

ও চলে গেল আবার ওর স্থানে।
জেনেছি এর মধ্যে আকাশ বেশ কয়েবার নিজের আশ্রয়স্থল, স্কুল, কলেজ পরিবর্তন করেছে। ওর কোন অভিভাবক নেই। সে একা। নিজের সিদ্ধান্ত, নিজের অর্থ নিজেকেই সংস্থান করতে হয়। টিউশনি করে জীবন চলে তার। সুযোগ পেলেই আমাদের গ্রামে আসে। আর আসলেই মসজিদের কোন নামাজের ওয়াক্তে ওর সংগে দেখা হয়। কোন কারণে আমি মসজিদে অনুপস্থিত থাকলে ও সোজা আমাদের বাড়ীতে চলে আসে। আমার খোঁজ করে।

এরমধ্যে আকাশও গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে।
আসলো। কি করবে সে এখন জানে না। কিছু তো একটা করা দরকার। আমি ওকে বুদ্ধি দিলাম নিজের নাম পরিচয় পরিবর্তন করে পাসপোর্ট করে বিদেশে চলে যা। কিন্তু ও যে বিদেশ যাবে- টাকার সংস্থান কিভাবে হবে?

এর মধ্যে ঘটনার প্রায় ১২ বছর পার হয়ে গেল।
ওর বাবা কিছু উপার্যিত টাকা ও জায়গা জমি বিক্রি করে ভিকটিমের পরিবারকে অনেক টাকা দিয়ে কোর্টের মাধ্যেমে একটি মিমাংসা করে ফেলল।

মামলা উঠে গেল। আকাশ মুক্ত।
অনেক বছর পর সে নিজেদের বাড়ীতে যাবার সিদ্ধান্ত নিল।
আমাকে এসে ধরলো, ‘মামা, আমি আজ বাড়ীতে যাবো। একা যেতে কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে, তোমাকেও যেতে হবে আমার সংগে’।

আমি রাজী হলাম।
একটি রিক্সা নিলাম। তারপর ওকে বললাম, ‘আজ বলো, তোমাকে বলতেই হবে সেই ঘটনা; কেন হলো? তোমার মতো ছেলে তো খুন করতে পারে না। কি হয়েছিল?’

আকাশের উত্তর ছিল, ‘মামা, আমি এই কথা কাউকে কোনদিনও বলিনি। তবে, আজ তোমাকে বলবো। আসলে আমি বুঝিনি কি হচ্ছিল। ছোট ভাই ভয়ে বাসায় ঢুকে পালানোর চেস্টা করছিল নিজের জীবন বাঁচাতে। ওরা নাকি দা হতে আসছে আমাদের বাসায়, ওকে মারবে। আমি উত্তেজিত হয়ে গেলাম। আমার সামনে আমার ছোট ভাইকে মারবে? সংগে সংগে বটি হাতে নিয়ে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে পরলাম। ওরা আসা মাত্রই গেট খুলে দিলাম এক কোপ। ঘটনা ওখানেই শেষ। ঐ সামান্য কয়েক মিনিটের মধ্যে কি হতে কি হয়ে গেলো- আমি চিন্তাও করার সুযোগ পাইনি। কিন্তু মামা বিশ্বাস করো- আমি এই বিষয়টি মাথা থেকে দূর করতে পারি না। ৫/৬ বছর তো আমি ঘুমাতেই পারতাম না।’

যাই হোক, বছর খানেক পর আকাশ সিংগাপুরে চলে গেলো চাকুরী ভিসায়। সে ভালো ওয়েল্ডার তখন।

২ বছর পর ফিরে আসলো ৩ মাসের ছুটিতে।
আকাশ নষ্ট হয়ে গেছে। নামাজ ছেড়ে দিয়েছে। মেয়ে মানুষ আর মদের দিকে তার নজর চলে গেছে। আমি ওর সংগে ত্যাগ করলাম। কিন্তু ও আমাদের বাসায় আসতো। তাছাড়া আমি তখন আমার ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। কয়েকদিন ও আমার অফিসেও গেছে কিন্তু আমি যতটা সম্ভব ওকে এড়িয়ে চলতাম।

এরপর ও আবার সিংগাপুর ফিরে গেল।
আরও ৩ বছর পর দেশে ফিরে এলো। বছর খানেক পর গেল দুবাই। ২ দুবছর পর দুবাই থেকে দেশে ফিরলো। তখন আমার বিশ্ব ভ্রমনের প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়েছে মাত্র। ইন্ডিয়া, নেপাল, হংকং, চায়না রয়েছে আমার ঝুলিতে বিভিন্ন জনের থেকে তথ্য সংগ্রহ করি সুযোগ পেলেই। আকাশ একদিন দেখা করতে এলো।

আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘সিংগাপুর আর দুবাই- আরব আমিরাত, এই দেশ দু’টোতে কি কি মিল ও অমিল রয়েছে?’

আকাশের উত্তরটি খুব সুন্দর ছিল। বলেছিল, ‘মামা, খুব সুন্দর একটি মিল রয়েছে। দু’টো দেশই খুব উন্নত, পরিচ্ছন্ন, এবং বড় বড় দালান-কোঠা, সুন্দর রাস্তাঘাট। আর অমিলটা অরও মজার।’

আমি বললাম, ‘কেমন মজার?’
ও উত্তরে বলল, ‘ধরো তুমি দুবাইতে। তোমার আগে আগে একটি মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে- তুমি তাকে পেছন থেকে ওর জামা দরে টান দিলে বা মৃদু থাপ্পর দিলে। ওই মেয়ে তোমাকে সংগে সংগে আরবীতে একটা গালি দিবে এবং পুলিশে কল দিয়ে তোমাকে পুলিশের হাতে তুলে দিবে। অপরদিকে, তুমি যদি ঠিক এই একই কাজটা সিংগাপুরের কোন রাস্তায় দাঁড়িয়ে করো তাহলে, মেয়েটি তোমার দিকে ফিরে তাকাবে। খুব মিষ্টি করে হাসবে। তুমি কেমন আছো জানতে চাইবে এবং তোমার কোন সাহায্য প্রয়োজন আছে কিনা জানতে চাইবে।’

আমি ওর এই উত্তরটিতে খুব মজা পেয়েছিলাম।

আকাশ চাপ্টার শেষ করি।
ওর প্রসংগে আর কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না।
অন্য প্রসংগে যাই।

তখন আমার কমপিউটার স্কুল এর ব্যবসা শুরু করেছি মাত্র।
ষ্টুডেন্টসও প্রচুর। বন্ধুরাও অনেকে আসে আড্ডা দিতে। আমি যেহেতু আড্ডাবাজ, তাই আমিও চুটিয়ে গল্প করি বন্ধুদের সংগে। হঠাৎ সেই বন্ধুদের দলে একটি অপরিচিত ছেলেকে দেখতে পাই।

ছেলেটি আমার সংগে পরিচিত হলো।
নিজের নাম বললো, ‘আকাশ’। আমি চমকে উঠলাম।

কিন্তু ঠিক কেন চমকে উঠলাম আমি জানি না।
ছেলেটা বেশ মিশুক প্রকৃতির। আমাদের বয়সী। টিউশনি করে চলে। এতটুকুই ওর পরিচয়। এরচে বেশী ওর সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না। ও বলেও না। তার মুখের ভাষায় অন্য জেলার আঞ্চলিক টান খুজে পাওয়া যায়।

নিয়মিত আমার অফিসে আকাশ আসা যাওয়া শুরু করলো।
গল্প, দুষ্টমী, খাবার, আড্ডা। চলছিলো। একদিন আব্দার করলো ওকে কমপিউটার শিখাতে হবে। কিন্তু ওর কাছে কোন টাকা নেই। আমি রাজী হলাম ওকে কমপিউটার শিখাতে। মাস তিনেক ট্রেনিং নিলো। তারপর থেকে আমার অফিসের কাজে ও সাহায্য করতে শুরু করলো। এভাবেই চলছিল।

আমার দৃষ্টিশক্তি ভীষন রকমের প্রখর, একথা আগেও বলেছি।
আমি আকাশকে খুব লক্ষ্য করতাম। ওর ভেতরে অনেক কিছুর অসমানজস্য খুঁজে পেতাম।

একদিন আকাশকে ছাদে নিয়ে গেলাম।
বললাম, ‘তোকে আজ কয়েকটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবো। আমাকে তোর সঠিক উত্তর দিতে হবে। দিবি কি না বল। যদি প্রতিজ্ঞা করিস উত্তর দিবি- তাহলেই প্রশ্ন করবো। আর যদি উত্তর না দিতে চাস- তাহলে কাল থেকে আর আমার অফিসে আসবি না। আজই তোর সঙগে আমার বন্ধুত্ব শেষ।’

আকাশ আমার মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকালো।
কিছুটা সময় নিয়ে বললো, ‘বল, আমি উত্তর দিবো।’

আমি কোন ভনিতা না করে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করলাম, ‘তোর প্রকৃত নাম কি? এবং তুমি কবে, কোথায় এবং কাকে কেন খুন করেছিস- সেটা আমাকে বিস্তারিত বলবি। তুই যে এখানে খুন করে এসে পালিয়ে রয়েছিস সেটা আমি জানি।’ একটা শক্ত ঢিল ছুড়ে মারলাম আকাশকে।

আকাশ দাঁড়ানো ছিল।
আমার প্রশ্নে ও বসে পরলো মাটিতে।
কয়েক মিনিট পর নিজেকে প্রকৃতস্থ করে উঠে দাঁড়ালো।
তারপর বললো, ‘এই কথা আর কে কে জানে?’
আমি বললাম, ‘কেউ জানে না। আমি কাউকে জানাবোও না। তবে, আমাকে জানতে হবে বিস্তরিত।’
আকাশ প্রশ্ন করলো, ‘তুই জেনে কি করবি?’
বললাম, ‘কিছুই করবো না। কাউকে জানাবোও না। আমি শুধুমাত্র বিস্তারিত জেনে রাখবো। তোকে ভালো বুদ্ধি দিবো। তুই তো বুঝেই ফেলেছিস- আমি কতটা প্রখর দৃষ্টিতে দেখতে পাই। আমাকে বল বিস্তারিত।’

আকাশের দু’চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পরতে লাগলো।
আকাশ উত্তর দিলো, ‘আমি বলতে পারবো না। তবে তুই যা বলেছিস তা সত্য। কিন্তু আমি ওকথা ভাবতেও চাই না। আমি স্থির থাকতে পারি না। ঘুমাতে পারি না। আমার খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। প্লিজ প্রয়োজনে আমি তোর পা ধরে অনুরোধ করবো- কেউ যেন জানতে না পারে।’

আমি বুঝলাম ও ঠিক কি বলতে চাইলো।
বললাম, ‘ঠিক আছে। আমি কাউকে কিছুই বুঝতে দিবো না। তবে, দ্বিতীয় কোন অন্যায়ের সংগে কোনদিন জড়িত হবি না। আর সাবধানে থাকিস। আমার মতো অনেকেই হয়তো ধরে ফেলতে পারে।’

আকাশ বার বার জানতে চাচ্ছিলা, আমি কিভাবে বিষয়টা ‘গেস’ করলাম।
আমি আকাশকে কিছুই বলিনি।

   Send article as PDF