নিউ ইয়র্কের আকাশে ঝলমলে রোদ!

নিউ ইয়র্কের আকাশে ঝলমলে রোদ!
এক …
আজ একটা গল্প বলি।
একজন ‘বিশিষ্ট ভদ্রলোক’। বিশিষ্ট ভদ্রলোক বললাম একারণে যে, তাঁর নাম বললে সবাই তাঁকে চিনে ফেলবেন; তাই নাম টা বল্লাম না।
যাক, সেই বিশিষ্ট ভদ্রলোকের খুব শখ হলো তিনি কবুতর পুষবেন। কিনতু কবুতর পুষলে তো কবুতরের জন্যও ঘর তৈরী করাতে হবে; যেটাকে আমরা বাঙলায় ‘খোয়াড়’ বলি।
কাঠ মিস্ত্রিকে ডাকলেন, বললেন, ‘সুন্দর একটা খোয়াড় বানাতে হবে, খোয়াড়ের দু’টি দরজা থাকতে হবে। আমি তো দুই জোড়া কবুতর পুষবো- এক জোড়া বড় আরেক জোড়া বাচ্চা কবুতর। কাজেই একটি দরজা হতে হবে ‘বড়’ এবং অপরটি হতে হবে ‘ছোট’।’ এই বলে থামলেন।
অভিজ্ঞ কাঠমিস্ত্রিতো হতবাক! এতবড় একজন বুদ্ধিমান মানুষ- অথচ কি বলছেন এসব!! ছোট দরজার দরকারটা কি!!! একটা ‘বড়’ দরজা দিয়েই তো ছোট এবং বড় উভয় কবুতরই ঢুকতে বা বের হতে পারবে। কিনতু ঐ বিশিষ্ট ভদ্রলোক এতটাই বিশিষ্ট এবং জ্ঞানী ব্যক্তি- তাঁর মুখের উপর যে কথা বলবে এ সাহসও পাচ্ছে না সামান্য কাঠমিস্ত্রি।
অবশেষে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে সে তাঁকে বলল, ‘স্যার, যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলি; ‘বড় দরজা’ দিয়েই তো ছোট এবং বড় উভয় কবুতরই ভেতরে সুন্দরভাবে ঢুকতে এবং বেরুতে পারবে। কাজেই ছোট দরজার আবার কি দরকার যদি আমাকে একটু বুঝিয়ে বলতেন।’।
বিশিষ্ট ভদ্রলোক এবার চমকে উঠলেন! আরে! তাই তো? বলে ফেললেন, ‘আমি এত বোকা?’
সরি, এটা কোন গল্প নয়। বাস্তাব কাহিনী। এবং নাম টা বলে দিই, উনি (মানে সেই বিশিষ্ট ভদ্রলোক হলেন) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন।
আইজ্যাক নিউটন কিনতু চির-কুমার ছিলেন।
প্রেম করতেন একটা মেয়ের সাথে; খুবই ভালও বাসতেন মেয়েটাকে। মেয়েটার হাতের কোমল আঙুল ধরে গল্প করতেন।
তো, একদিন মেয়েটার হাতের অাঙুল ধরে গল্প করছেন এমন সময় হঠাৎ তাঁর মাথায় ক্যালকুলাসের একটি চিন্তা এসে ভর করলো। তিনি গভীর চিন্তায় ঢুবে গেলেন। তাঁর আবার সিগারেটের খুব নেশা ছিল। মেয়েটার আঙুলকে সিগারেট ভেবে- আঙুলটাকে মুখে নিয়ে সেই আঙুলে আগুন ধরাতে গেলেন।
মেয়ে তো ভয়ে এক দৌড়!
সেই সে পালালো ওই মেয়ে আর ফিরে আসেনি।
আর, স্যার আইজ্যাক নিউটন অন্যকোন মেয়েকে বাকী জীবনে ভালওবাসতে পারেননি নি, বিয়েও করা হয়ে উঠলো না।
দুই …
আজ গাধার মতো একটা কাজ করেছি।
এবছর নিউ ইয়র্কে তেমন একটা শীত পরছে না। জানুয়ারীর ২৩ তারিখে একটা ব্লেজার্ড হল সংগে প্রায় পোনে তিন ফুট তুষারে ঢেকে গেল নিউ ইয়র্ক সহ পুরো আমেরিকার উত্তর পূর্বাঞ্চল এলাকার ৭টি রাজ্য। ঐ শুরু, ঐ শেষ।
তারপর সব কিছুই স্বাভাবিক। তাপমাত্রা গড়ে ৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩ বা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। উপভোগ্য চমৎকার ওয়েদার। কোন বৃষ্টিও নেই। অবশেষে গত ৪/৫ দিন যাবৎ নিউ ইয়র্কের তাপমাত্র বেশ নেমে গেল, সেলসিয়াসের হিসেবে গড়ে -১৫ ডিগ্রী। খুব ভাড়ী জামা-কাপড় পড়ে বাইরে বেরুতে হচ্ছে; কিনতু কোন বৃষ্টি নেই; বিষয়টা মজারও। আমি সাধারণত একটা শার্ট, একটা গেঞ্জির সাথে জ্যাকেটের উপর আরেকটি ওভারকোট এবং সেই সংগে কান-টুপি, হাতে চামড়ার গ্লাবস পরে বাইরে বেরুই।
ওহ্, জিনস প্যান্টের নীচে আরেকটি গরম ট্রাউজারসও পরি। কিনতু অদ্ভুৎভাবে লক্ষ করি এই ভয়াবহ শীতের তীব্রতার মধ্যেই একটা দুইটা সাদা মেয়ে (হোয়াইট গার্ল) তাদের অতি ফর্সা উরু বের করে বাইরে বের হয়।
সত্যি বলছি, আমি ওসব দেখে হাসবো না কাদবো ঠিক বুঝে উঠতেও পারি না!
যাক যা বলছিলাম।
প্রতিদিনই আমি মোবাইলে ওয়েদার এপস দেখে বাইরে বের হই। আমার এখন দু’টি ছাতা। একটি খুব শক্তিশালী ও বড় এবং অপরটি ছোট ও ভাজ করা যায়। ঝড়-বৃষ্টি দেখলে বড়টি এবং শুধুমাত্র সামান্য বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলে ছোটটি নিয়ে বের হই। নইলে কোন ছাতা নিই না।
আজ সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখলাম বাইরে চমৎকার স্নো পড়ছে। নয়ানভিরাম শ্বেত-শুভ্র সবকিছূ। সে এক অসাধারণ সুন্দর দৃশ্য। স্নো দেখতে দেখতে মোবাইলের এপস দেখার কথা ভুলে গেলাম। অফিসে গেলাম। সারাদিন ধরে স্নো পরছে।
সন্ধ্যায় পর রাত সাড়ে নয়টার পর বাসার উদ্দেশ্যে অফিস থেকে বের হলাম। সাবওয়েতে ঢুকার মুহুর্তে হঠাৎ আমার মোবাইলের এপসে্ ওয়ানিং পেলাম ‘‌১৫ মিনিটের মধ্যে ৯৫% বৃষ্টি শুরু হবে’!
বুঝতে পারলাম, আমি এখনও গাধাই রয়ে গেছি। আমেরিকা এসেও মানুষ হতে পারলাম না। অগ্যতা, যা হবার- তা-ই হলো। সাবওয়ে থেকে (ক্যাসেল হিল স্টপ) বের হয়ে ১০ মিনিট বৃষ্টিতে ভাড়ী জামা-কাপড় সহ প্রচন্ড এই শীতের মধ্যে কাক-ভেজা হয়ে বাসায় ফিরলাম।
সান্তনা একটাই, নিউ ইয়র্ক ষ্টেট গর্ভাণমেন্টের হেলথ ডিপার্টমেন্টের কল্যানে আমার বার্ষিক ‘ফুলু শর্ট’ দেয়া আছে। কাজেই ঠান্ডা, কাশি, সর্দি, জ্বর বা অন্য কোন ছোয়াচে রোগ আমার ধারে-কাছেও ভিড়তে পারবে না।
এবং তিন …
হুমায়ুন আহমেদ বাংলাদেশের মানুষকে পুর্ণিমার চাদ এবং বৃষ্টিতে ভেজা শিখিয়েছেন। তা ভাল, বেশ বেশ।
কিনতু ‘এই ভদ্রলোক’ এর জন্ম যদি বাংলাদেশে না হয়ে নিউ ইয়র্কে হতো- তাহলে ওনি কিভাবে মানুষকে বৃষ্টিতে ভেজাতে শেখাতেন, সেটাই ভাবছিলাম। আর যদি সেটা হতো ‘ফ্রিজিং রেইন’!
ড. হুমায়ুন আহমেদ আমার অত্যন্ত প্রিয় একজন মানুষ। মারা যাবার আগে তিনি এই নিউ ইয়র্কের একটি হসপিটালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বসবাস করতেন ‘সাটফিন ব্ললেবার্ড’ নামক বাঙালী অধ্যুষিত এলাকায়।
ওই সময় তিনি প্রথম আলো পত্রিকায় ‘নিউ ইয়র্কের আকাশে ঝলমলে রোদ’ নামে লেখালেখি করতেন; আমি প্রতিটি লেখাই মুগ্ধ হয়ে পড়তাম।
ড. হুমায়ুন আহমেদ স্যার, ঝলমলে রোদ দেখেছেন; ফ্রিজিং রেইনটা মনে হয় দেখেননি।
টিকা: বৃষ্টি থেকে একটু বাঁচার জন্য ব্যাগে থাকা একটা প্লাষ্টিক এক হাত দিয়ে মাথার উপর ধরে রেখে হেঁটেছি। আমার বাঁ হাতটা বরফ হয়ে গেছে; এখনও প্রচন্ড জ্বলছে। যাই- দেখি হিটারের গরমে হাতটা শুকাতে পারি কি না!
যদি-ই বা একটু আরাম হয়!
   Send article as PDF