বাংলাদেশী

১৯৯৬তখন আমার বয়স আর কতো? আহামরি তেমন কিছু না।
জীবনের প্রথম বার কাঠমান্ডু গেলাম।২/৩ দিন এটা সেটা দেখলাম, বেড়ালাম, হিমালয় কন্যাকে উপভোগ করলাম।
৪র্থ দিন গেলাম শপিং এ।এটা সেটা কেনা-কাটা করছিলাম।এক দোকানীর সংগে বেশ আলাপ জমে উঠলো।
দোকানী ভদ্রলোক এক পর্যায়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি শ্রী লংকান?আমি উত্তর দিলাম, ‘কেন? আমাকে কি শ্রী লংকান মনে হচ্ছে?’ভদ্রলোক উত্তর করলেন, ‘হ্যাঁ, আমার তো তাই মনে হচ্ছে।’
আমি হেসে দিলাম।হেসে হেসে বললাম, ‘না আমি বাঙালী’।
ঘটনাটা এখানেই শেষ হতে পারতো।কিন্তু ঘটনাটা এখানেই শেষ হলে- আজ লেখার এই উপকরণটা পেতাম না।
এর পরের ঘটনাটা বলি।ভদ্রলোক মিষ্টি হেসে বললেন, ‘সত্যি বাঙালীরা ভীষন স্মার্ট এবং ট্যালেন্টেড।’
আমি তো খুশীতে প্রায় গড়াগড়ি খাই-খাচ্ছি অবস্থা।হেসে তাকে প্রশ্ন করলাম, ‘তুমি কিভাবে জানো? এখানে কি প্রচুর বাঙালি কাষ্টমার আছে?’
এবার ভদ্রলোক আমাকে যে উত্তরটি দিলেন- তার জন্য আমি প্রস্তত ছিলাম না।তিনি হাসতে হাসতে বললেন, ‘না- ঠিক তা না। আমি তো অনেকবার কোলকাতায় গিয়েছি। আমার অনেক অভিজ্ঞতা। বাঙালী বাবুরা সত্যি সত্যি খুবই বুদ্ধিমান এবং প্রতিভাবানও। তোমাকে দেখেও তাই মনে হয়েছে। তবে তোমার চেহারাটা একটু শ্রী লংকান টাইপ- তাই কনফিউসড ছিলাম।’
এবার আমি হাসবো না কাঁদবো সেটা ভাবতে লাগলাম।আমি এমন একজন মানুষ- ‘যে তার নিজের আত্ম-পরিচয় জানে না।’আমি এমন একজন মানুষ- ‘আমি কিভাবে আমার নিজেকে অন্যের কাছে পরিচিত করিয়ে দেব সেই শিক্ষাটাও পাইনি।’
নিজেকে খুব অসহায়, হতভম্ব এবং বোকা বোকা লাগছিল।কথা বলতে পারছিলাম না।
দোকান থেকে বের হলাম।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে কয়েক কোটি সালাম দিলাম মনে মনে।তিনিই তো আমাদের শিখিয়েছেন- ‘আমরা বাংলাদেশী’।
এই শিক্ষাটা যদি আগে থেকেই জানতাম, তাহলে আজ এতটা অপমানিত হতাম না।
স্যালুট প্রেসিডেন্ট জিয়াকে।

   Send article as PDF