আমেরিকার নির্বাচন

আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে কিছু কথা বলি।
আচ্ছা তার আগে কয়েকটা ভিন্ন কথাও বলা দরকার।

চীনের সংগে তাইওয়ানের মুল সমস্যাটা কি জানেন?
চলুন সংক্ষেপে একটু বুঝি। বিশাল ভূখন্ড নিয়ে চীন দেশটি গঠিত, শাসন করতো জাতীযতাবাদীরা। দেশটি ছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য। হলো কি, কমিউনিষ্টরা সংগঠিত হলো, আস্তে আস্তে জাতীযতাবাদী সরকারকে হটিয়ে দখল করে নিলো পুরো দেশটি। একদলীয় কমিউনিষ্ট সরকার গঠিত হলো।

আর পরাজিত ও বিতারিত জাতীয়তাবাদীরা পালিয়ে চলে গেলে তাইওয়ান নামের একটি ছোট্ট দ্বীপে। ওখানে গিয়ে তারা ঐ দ্বীপটি দখল করে সেখানে তাদের সরকার গঠন করলো। কিন্তু মজার বিষয়টা হলো তখনও অবধি তারাই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। কারণ তারা দাবী করতে লাগলে যে তারাই আসল চায়নার (মেইন ল্যান্ড চায়না) বৈধ সরকার।

এভাবেই চলছিল।
কিন্তু কমিউনিষ্ট চায়নার সরকারই বা চুপচাপ বসে থাকবে কেন?
ওদিকে কিছু বছর পর আমেরিকাসহ বাদবাকী বিশ্ব ভাবতে লাগলো মেইনল্যান্ড দখলে রেখেছে কমিউনিষ্টরা অথচ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যর মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছে পরাজিত ও বিচ্ছিন্ন ক্ষুদ্র তাইওয়ানের প্রতিনিধিরা! এটা ঠিক মানাচ্ছে না। সংগে রাজনীতির খেলা তো ছিলোই।

তখন, আমেরিকা তাদের বন্ধু পাকিস্তানকে দায়িত্ব দিলো তাদের বন্ধু কমিউনিষ্ট চায়নাকে স্বীকৃতি দিয়ে তাইওয়ানের সরকারের পরিবর্তে নিরাপত্তা পরিষদে মেইনল্যান্ড চায়নাকে যুক্ত করতে। হলোও তাই। বাদ পরে গেল তাইওয়ান। যুক্ত হলো চায়না।

মজার বিষয়টি হলো, এই ঘটনাটা ঘটছিল ১৯৭১ সালে।
আর সেই ১৯৭১ সালে শুরু হলো পুর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা যুদ্ধ। আমেরিকা তাদের বৃহত্তর স্বার্থে চায়নার অন্তভূক্তির লক্ষ্যে পাকিস্তানীদের সহায়তার পাবার লক্ষ্যে (গিভ-এন্ড-টেক পলিসি) বাংলাদেশের পক্ষে না গিয়ে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করলো।

দেখুন তাইওয়ান কিন্তু আজও চীনকে নিজের দেশ মনে করে বা দাবী করে। আবার চীনও তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখন্ড বলেই দাবী করে। বিশ্বের কোন দেশ তাইওয়ানকে স্বাধীন দেশ মনে করলে চায়না তাকে শাসিয়ে দেয়।

৭০র নির্বাচনে আওায়ামী লীগ বিজয়ী হলো।
তারপর, ‘বিজয়ী পক্ষ যুদ্ধ করে বিচ্ছিন্ন হলো’ এবং ‘কোনকালেই তারা অর্থাৎ আওয়ামী লীগ বা বাংলদেশ পাকিস্তানকে নিজের বিচ্ছিন্ন ভূখন্ড বলে দাবী করেনি’। এখানেও কিন্তু চেতনাবাজীবিদের আসল ব্যর্থতাই লুকিয়ে রয়েছে। নির্বাচনে বিজয়ী দল যুদ্ধ করে ক্ষুদ্র অংশের মালিকানা পায় অথচ তাইওয়ানকে দেখেন পরাজিত হয়ে মেইন ল্যান্ড চায়নার তুলনায় অতি ক্ষুদ্র এক দ্বীপ দেশে গিয়ে পালিয়ে থেকেও আজ অর্ধশতাব্দি পরও মেইনল্যান্ডকে নিজেদের অংশ বলে দাবী করার হিম্মাত দেখায়, স্পর্ধা প্রদর্শন করে।

স্যার, এটাই দেশপ্রেম। যা চাইনিজদের আছে, আমাদের নেই।
আসলে আমরা তো ভাবতেই শিখি নাই। আমরা বসবাস করি অতিক্ষুদ্র এক গন্ডিতে। আর সেই ক্ষুদ্রতা আস্তে আস্তে আরও বেশী ক্ষুদ্রতার দিকে এগুচ্ছে দিনকে দিন। অপরদিকে পুরো পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে উন্নতির পথে।

আজ থেকে ৫০ বছর আগে আমেরিকা চাঁদের মাটিতে পতাকা উড়িয়েছে আর আমাদের ক্ষুদ দেশের কিছু ‘অতিক্ষুদ্র মানুষ’ এখনও কান্নাকাটি করে, ‘না না না, মানুষ চাঁদে যায় নাই’! পাথ্যর্কটুকু বুঝুন!

যাই হোক, আমেরিকার কথা বলবো বলেছিলাম- তাই-ই বলি।

হলো কি সেই প্রায় আড়াইশত বছর আগে জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে আমেরিকানরা দখলদার বৃটিশদের সংগে যুদ্ধ করে তাদের বিতারিত করে একটি নতুন দেশ ইউনাইটেড ষ্টেটস অফ আমেরিকা গঠন করলো।

যেমনটা গঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ।
শেখ মুজিবর রহমান হয়ে গেলেন জাতির পিতা (আরও অনেক কিছু- প্রচুর বিশেষন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ হাবিজাবি ইত্যাদি); করাচী থেকে লন্ডন-দিল্লী হয়ে ঢাকা এয়ারপোর্টে নেমেই অভিনন্দন জানাতে আসা প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদকে দেশটির রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর বললেন, ‘তাজউদ্দিন আমি কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হবো’।

ব্যস হয়ে গেলেন। নো নির্বাচন, নো পাবলিক ম্যান্ডেট!
কোথায় সংবিধান, কোথায় কি- কার কি বলার আছে? তারপর কিছুদিন প্রধানমন্ত্রী, কিছুদিন বাকশালী প্রেসিডেন্ট হয়ে তারপর পচাত্তরে অক্কা! আগষ্টে অক্কা না পেলে এতোদিন তিনি বাংলাদেশকে উত্তর কোরিয়া বানিয়ে ফেলতেন- তার পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশকে তাদের জমিদারী হিসাবেই পরিচালিত করতো।

আর ওদিকে কি হলো?
বিজয়ী নেতা জর্জ ওয়াশিংটন কিভাবে নবগঠিত এই দেশটাকে এই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ দেশ হিসাবে তৈরী করা যায় সেই চিন্তা-ভাবনা শুরু করলেন। তিনি এককভাবে নিজেকে নন, ৮-জন ফাউন্ডিং ফাদার্স প্রস্তাব করা হলো। এমন একটি সংবিধান গঠন করা হলো যেখানে দেশের জনগনকে দেয়া হলো সবচে বেশী ক্ষমতা। ব্যক্তি স্বাধীনতা, মানবাধিকার, এবং পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হলো। লেখা হলো বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ও মানবিক কন্সটিটিউশনটি।

সেই কন্সটিটিউশনটির বদৌলতে এই দেশটি আজ বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ দেশ। এই দেশের মাটি আজ পৃথিবীর সবচে শক্ত মাটি।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে।
জর্জ ওয়াশিংটন হিসাব কষে দেখলেন মাত্র ১০টি বড় শহরের ভোটেই একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন। অথচ বিশাল এই দেশটিতে শতশত শহর-গ্রাম রয়েছে। শহরের চেয়ে গ্রামেই বেশী মানুষ বসবাস করে। যদি এমন হয় যে মাত্র ১০টি বড় শহরই নির্ধারণ করে দিবে কে হবে প্রেসিডেন্ট তাহলে তো বিশাল দেশটির অনেক বড় বড় অঞ্চল অনুন্নত থেকে যাবে অথবা গুরুত্বহীন হয়ে পরবে!

না সেটা তো হতে দেয়া যাবে না। (বাংলদেশ তো নয় যে এরশাদ রংপুরকে আর হাসিনা গোপালগঞ্জকে উন্নত করে দিবে- বাদবাকী দেশ পিছিয়ে থাকবে)। চিন্তা ভাবনা শুরু হয়ে গেল। কি করা যায়? অবশেষে একটি প্রস্তাবনা উঠে আসলো- ইলেকট্ররাল কলেজ পদ্ধতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবে। অর্থাৎ সারা দেশের প্রতিটি এলাকাই গুরুত্ব পাবে এই নির্বাচন পদ্ধতিতে। কাউকে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ থাকবে না। একজন প্রার্থীকে পুরো দেশের সবগুলো অঞ্চলকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। নইলে ধরা।

এটাই হলো সেই ইলেকট্ররাল কলেজ সিষ্টেম।
আজ থেকে আড়াইশত বছর আগে তারা এটা ভেবে বের করেছেন। আর আজ থেকে সেই আড়াইশত বছর আগে বাংলাদেশ কি ছিল? বলতে পারবেন? ওই সময় ছেলেরা একটি সাদা নেংটি পড়তো আর মেয়েরা ২টো নেংটি পরতো। শাড়ী, ব্লাউজ, জামা প্যান্ট কিছুই ছিল না তাদের। আমেরিকার কাছে বেদম মাইর খেয়ে বৃটিশরা তখন ভারতবর্ষ দখলে মরিয়া। ভারতীয়রা সাদা চামড়ার বৃটিশদের দেখে দেবতা ভেবে তাদের পা-চাটা শুরু করে দেয়। তাদের তৈরীকৃত সেনাবাহিনীতে যোগদান করে এবং নিজেদের দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, মীরজাফরদের মতো বিট্রে করে- দেশটিকে বৃটিশদের হাতে তুলে দেয় ২০০ বছরের জন্য। এটাই বাস্তব ইতিহাস।

বাংলাদেশের মানুষদের অনেককেই বলছি শুনি ‘পপুলার ভোট’, ‘পপুলার ভোট’। যে জাতি ভোট কি জিনিস সেটাই জানে না- তারা যখন পপুলার ভোট উচ্চারণ করে তখন অমার হাসি পায়। ইলেকট্ররাল কলেজের দেশে পপুলার ভোট পেলেই কি, আর না পেলেই বা কি? এতে কার কি এসে যায়? অথচ বাঙাল ঠিকই পপুলার ভোট নিয়ে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দেয়।

অনেকেই ভাবেন আমেরিকায়ও বুঝি রাতের ভোট, কারচুপির ভোট এসব সম্ভব! মৃত মানুষের ভোট বা কেন্দ্র দখল করে সবকিছু করে ফেলা সম্ভব। অতপর শেখ হাসিনা হয়ে জনগনের ঘাড়ের উপর বসে থাকাও সম্ভব। অথবা ভোট না পেয়েও বুঝি পুলিশ আর সেনা বাহিনী দিয়ে ক্ষমতা দখল করে রাখা সম্ভব!

না। আপনাকে আমেরিকার নির্বাচন ব্যবস্থা জানতে হবে।
এই দেশটিতে এসব সম্ভব নয়।

কারণ, আমেরিকা বাংলাদেশের মতো একটি একরাষ্ট্র বিশিষ্ট দেশ নয়। আপনাকে দেশটির গঠন সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। নইলে এসব বোঝা কষ্টকর।

দুঃক্ষের বিষয় হলো আমরা বাংলাদেশে বসে নির্বাচন বা ভোটাধিকার তো বুঝিই না; তদ্রুপ দেশও বুঝি না, প্রদেশ বা ষ্টেটও বুঝি না। আর বুঝি না বলেই ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রূয়ারীর ‘ভাষা আন্দোলন’কে বানিয়ে ফেলি ‘রাষ্ট্র ভাষা’র পরিবর্তে ‘প্রাদেশিক ভাষা’! বলি পাকিস্তান নাকি আমাদের বাংলা ভাষায় কথা বলতেই নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল! (যত্তসহ গাদার দল!) পাকিস্তান সেদিন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক ভাষা নয়- পুরো পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে কথা বলেছিল- এতটুকু বোঝার মতো বোধ বুদ্ধি যে জাতির নেই; তারা কিভাবে আমেরিকার গঠন, ভাষা, নির্বাচন বা ভোট ও ভোটাধিকার খুব সহজে বুঝে ফেলবে?

আমেরিকায় ৫০টি ষ্টেট রয়েছে। আপনি যদি ভেবে নেন ৫০টি স্বাধীন দেশ রয়েছে আমেরিকার ভেতরে তাহলেও কিন্তু খুব একটা ভুল ভাবনা হবে না সেটা।

৫০টি স্বাধীন ষ্টেট নিয়ে আমেরিকা গঠিত।
প্রতিটি ষ্টেটে একজন করে নির্বাচিত গভর্ণর রয়েছে- গভর্ণর ষ্টেটের প্রধান। প্রতিটি ষ্টেটে ষ্টেট এসেম্বলী রয়েছে, পার্লামেন্ট রয়েছে, সরকার রয়েছে। সকলেই গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত। আবার প্রতিটি ষ্টেটেই শতশত সিটি এবং সিটি কাউন্সিল রয়েছে, সেখানে নির্বাচিত মেয়র রয়েছে। সিটি গভর্ণমেন্ট রয়েছে। পুলিশ সিটির অধিনে কাজ করে- ষ্টেট এর জন্য আলাদা ট্রুপস রয়েছে। এদের কারোর সংগেই আমেরিকার ‘ফেডারেল’ বা কেন্দ্রিয় প্রেসিডেন্ট এর দূরতম কোন সম্পর্কও নেই।

কি বুঝলেন?
এদেশে ষ্টেট এর নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই ষ্টেট পরিচালনা করে। ফেডারেল প্রেসিডেন্ট নন। বলতে গেলে ষ্টেটের ভেতরে (দেশের ভেতরে) প্রেসিডেন্টের কোন ক্ষমতাই নেই কোন কিছু পরিচালনা করার বা কোন অর্ডার দেবার। ষ্টেট গভর্ণররাই সর্বেসর্বা। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পুরো পৃথিবীর কাছে সবচে শক্তিশালী ব্যক্তি হলেও আমেরিকার ভেতরে বলতে গেলে তার হাতে আহামরী কোন ‘শক্তি’ নেই। তার কথা শুনতে কোন ষ্টেট গভর্ণর বাধ্য নন। কারণ ষ্টেট গভর্ণর একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি, তিনি শুধুমাত্র জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। প্রেসিডেন্টের কাছে নন।

এবার আসুন নির্বাচন ব্যবস্থা।
এই যে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হচ্ছে- এখানেও প্রেসিডেন্ট এর প্রভাব বিস্তার করার কোন সুযোগই নেই। কারণ বাংলাদেশের মতো আমেরিকার কোন কেন্দ্রিয় নির্বাচন কমিশন বা প্রধান নির্বাচন কমিশনারও নেই। যিনি নুরুল হুদার মতো বা সেনা কিংম্বা পুলিশ প্রধানের মতো করে বলবেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠ হয়েছে’!

তাহলে এখানে কিভাবে নির্বাচন হয়?
খুবই সহজ। ষ্টেটগুলো স্বাধীন, সে তো আগেই বললাম।
নির্বাচন তো করে ষ্টেটগুলো। ফেডারেল সরকার তো নির্বাচন করার কোন সুযোগই পায় না। প্রতিটি ষ্টেটে ষ্টেট গভর্ণমেন্ট এর অধীনে নির্বাচন আলাদা আলাদাভাবে পরিচালিত হয়। কোন কোন ষ্টেটে রিপাবলিকানরা ক্ষমতায়, আবার কোন কোনটিতে ডেমোক্রেটরা ক্ষমতায়। কিন্তু তাতে কি? ক্ষমতায় থাকলেই ক্ষমতার অপব্যবহারের কোন নোংরা মানসিকতা এদেশে প্রাকটিস নেই। সকলে সবকিছু স্বাধীনভাবে পরিচালনা করে এখানে। কারণ ষ্টেট এর অধীনে নির্বাচন হলেও- ষ্টেট এর (ট্রুপস) পুলিশের তো কোন ক্ষমতা নেই যে সিটির কাজে হাত দিবে! সিটির তো আবার নিজস্ব পুলিশ রয়েছে স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলার রক্ষার কাজে। সিটিতে হয়তো অন্য পার্টি ক্ষমতায়। সুতরাং ষ্টেট চাইলেও সিটিতে হস্তক্ষেপ করতে পারছে না। এখানে কেউ তো কাউকে বহিস্কারও করতে পারবে না। সকলেই শুধুমাত্র, হ্যা ‘একমাত্র জনগণের কাছে দায়বদ্ধ’।

জনগণ ছাড়া অন্য দ্বিতীয় কাউকে খুশী করার কোনই দায়বদ্ধতা আমেরিকার কোন নির্বাচিত প্রতিনিধির নেই। আর প্রতিটি নির্বাহী পদেই নির্বাচিতরা দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারী অফিসার বা পুলিশ তাদের অধীনে। নির্বাচিত নির্বাহীদের ক্ষমতাও কয়েক বছরের জন্য লিমিটেড- তারপর আবার ফিরে যেতে হবে জনগণের কাছে।

কে কার দায় নিবে এদেশে- স্যার? বলতে পারবেন?
কাজেই, শেখ হাসিনা বা ডোনাল্ড ট্রাম্প কারোরই কোন পাত্তা নেই এই দেশে।

সবকিছুই সিষ্টেমের সৌন্দর্যের হাতে আবদ্ধ।

নির্বাচন তো হলো। তারপর ফলাফল ঘোষনা করবে কে?
হ্যা, প্রতিটি ষ্টেট তাদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর কেন্দ্র থেকেই স্থানীয় ফলাফল ঘোষনা শেষ করে ষ্টেট ক্যাপটল-এ পাঠাবে সেখান থেকে ফলাফল ঘোষনা হবে এবং সেই ফলাফল পাঠিয়ে দেয়া হবে সিনেটের কাছে। ওখানে সব ফলাফলের ভিত্তিতে (বেসিকেলি নির্বাচিত ইলেকট্ররাল কলেজ এর সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে) প্রেসিডেন্ট কে হলেন সেটার আনুষ্ঠানিকতা সাড়া হয়। তারপর জানুয়ারী মাসের ২০ তারিখে প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহন করে দায়িত্ব নিবেন।

সবকিছু সংবিধান কর্তৃক নির্ধারিত।
কারোরই হাত দেবার কোনই সুযোগ নেই।

তাহলে এবার বলুন তো ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্প কোথায় ক্ষমতা রাখেন ফল প্রত্যাখান করার? সিক্রেট সার্ভিস ২০ তারিখে সকাল বেলা নতুন প্রেসিডেন্টকে সাথে করে নিয়ে আসবে হোয়াইট হাউজে আর পুরাতনকে হেলিকপ্টারে তুলে পাঠিয়ে দিবে তার নিজের বাড়ীতে। সেটা যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পও হয়ে- হবে।

হোয়াইট হাউজ ছেড়ে না যেতে চাইলে ঘাড় ধরে হেলিকপ্টারে তুলে দেয়া হবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তো আর শেখ হাসিনা মতো ইন্ডিয়ান ‘র’র সদস্যরা পাহাড়া দেয় না- যারা পাহাড়া দেয়- তারাও আমেরিকার শ্রেষ্ঠ সন্তান। তারা সংবিধান অনুসারে চলে।

হ্যা, এর মধ্যে কোথাও কোন হিসাবে বা ঘটনার টেকনিক্যাল ব্যতয় ঘটলে দেশের ফেডারেল কোর্ট রয়েছে সংবিধান অনুযায়ি তার সুরাহা করার জন্য।

সেখানে কিন্তু বিচারপতি মানিক বা বিচারপতি সিনহা কিংম্বা সেই কেয়ারটেকার সরকার বাতিল করা প্রধান বিচারপতিরা দায়িত্ব পালন করছে না- এরা সুসভ্য মানুষ। যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে এরা বিচারপতি হয়েছে এদেশে।

দুই নাম্বারী ঘটার কোন সুযোগ আমেরিকার সংবিধানে রাখা হয়নি।

   Send article as PDF