পাগল

একজন মানুষ নিতান্তই পাগল না হলে- তিন তিনবার আটলান্টিকের মতো একটা উত্তাল মহাসাগর- সামান্য একটা পাল-তোলা কাঠের নৌকায় পাড়ি দেয়ার চিন্তা করতে পারে না! ক্রিষ্টোফার কলম্বাস বাস্তবিক অর্থেই একজন প্রথম শ্রেণীর পাগল ছিলেন। এবং এই পাগলের পদাংক অনুসরণ করে গত ৫০০ বছর যাবৎ লাখো-কোটি মানুষ বাপ-দাদার ভিটে-মাটি ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছে এই নতুন গ্রহে; হ্যাঁ আমি আমেরিকার কথাই বলছি।
 
বিশাল, ভয়ংকর শক্তিশালী, উত্তাল মহাসাগর এই আটলান্টিক। ইউরোপ থেকে প্রায় ৮,০০০ কিলোমিটার দূরত্ব পাড় হতে হবে আমেরিকায় আসতে হলে। ইওরোপের সাদা মানুষগুলি নিঃসন্দেহে অসম্ভব সাহসী। আর সেই সাহসীদের মধ্যে যারা আরও একটু বেশী সাহসী- তারাই ওই সময় সেই ভয়াল সাগর পাড়ি দিয়ে বসতি গড়েছে আমেরিকায়।
 
ক্রিষ্টোফার কলম্বাসকে অর্থ জোগান দিয়েছিলেন তৎকালীন স্পেনের রাণী। কলম্বাস আমেরিকায় এসেছিলেন পশ্চিম দিকে ভারত আবিস্কার করতে, তার একমাত্র যুক্তি ছিল- যেহেতু পৃথিবী গোলাকার, সেহেতু শুধু পূব দিকে নয়- পশ্চিমেও ভারতকেই পাওয়া যাবে।
কিন্তু, পৃথিবী যে কলম্বাসের চিন্তার চেয়েও অনেক বড় ছিল- সেটা তৎকালে ভাবা সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে।
 
যাই হোক, নাসা আমেরিকার একটি সরকারী গবেষনা সংস্থা। এখানে প্রায় ৩৪,০০০ বিজ্ঞানী গবেষনায় ব্যস্ত মহাকাশ নিয়ে। এবং এদের গবেষনার সকল খরচ বহন করে চলছে আমেরিকান ফেডারেল গভার্ণমেন্ট। ওটা আসলে আরেকটা পাগলা গবেষনাগার!; মার্কিন সরকার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার প্রতিবছর খরচ করে চলছে নাসা’র পেছনে। উদ্দেশ্য ওই একই- নতুন আরেক গ্রহ!
 
আগেই বলেছি সব পাগলের খেলা এদেশে!
আমেরিকায় বলতে গেলে সেভাবে কোন পণ্য প্রস্তত হয় না। ম্যানপাওয়ার অত্যন্ত এক্সপেনসিভ এখানে। এখানকার একজন কাঠ মিস্ত্রি, প্লাম্বার, বৈদ্যতিক মিস্ত্রি বা রং মিস্ত্রি অথবা ড্রাইভারের দৈনিক আয় কম-বেশী ৩০০ ডলার; অর্থাৎ আট থেকে দশ হাজার ডলার মাসে আয় করা যায়- এসব কাজ জানা থাকলে।
আরে না! আমেরিকায় ডিভি পাওয়া বাংলাদেশীরা হলো অত্যন্ত উন্নত এবং সমৃদ্ধশালী দেশ ও পরিবার থেকে আসা; তারা কি এতো নিন্মমানের কাজ করবে! তারা এসব কষ্টের কাজ করতে আগ্রহী নয়। তারা আমেরিকায় এসে রেষ্টুরেন্টে বা গ্রোসারীতে ৫ ডলার আওয়ারে বাসন পেয়ালা মাজবে- ওতেই শান্তি। অবশ্য অনেকেই এখন ট্যাক্সি চালিয়ে অনেক পয়সা আয় করছে- আমি তাদের সাধুবাদ জানাই।
আমেরিকার মূল প্রডাক্ট হলো- এদের মাথার ‘বুদ্ধি’। এরা সারা পৃথিবীতে বুদ্ধি বিক্রি করে খায়। এবং জালানী তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছুই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানী করে আমেরিকা। নিজেরা কিছুই তৈরী করে না। দু’একটা ব্যতিক্রম ছাড়া- সিয়াটলের বোয়িং এর বিমান ও উপগ্রহ, হলিউডের সিনেমা এই সব ছোট খাটো দু’চারটা বিষয়!।
তাছাড়া কমপিউটার, ইন্টারনেট, উইন্ডোজ, ফেসবুক, গুগল আর আইফোন, ইত্যাদি। তারপরও দেখুন না- এই আইফোনটিও কিন্তু আমেরিকায় তৈরী নয়; তৈরী হয়েছে চায়নাতে; শুধুমাত্র বুদ্ধিটুকু এই পাগলাদের।
 
৩২ কোটি মানুষের দেশ আমেরিকার বার্ষিক গড় আয় জন প্রতি ৫৫,০০০ ডলার। পৃথিবীর সবচে বড় অর্থনীতি এটাই। ক্রিষ্টোফার কলম্বাসের পথ ধরে আসা বিল গেটস, মার্ক জোকারবার্গ, ষ্টিভ জবসরা এদেশেরই মানুষ। এই তিন জন লোকের ব্যক্তিগত সম্পত্তি- পৃথিবীর অনেক দেশের টোটাল অর্থনীতির চেয়েও কয়েকগুন বেশী।
 
যাই হোক, ভূমিকা দিলাম।
 
আমাকে অনেকেই ইনবক্সে আমেরিকায় বসবাস করার সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে জানতে চান। আজকের লেখাটা মূলত তাদের সম্মানে।
আমেরিকা হলো সারা পৃথিবীর মানুষের দেশ। আমেরিকায় অরিজিনাল আমেরিকান বলে কেউ নেই- এখানে সবাই ইমিগ্রান্ট। কেউ নিজে, কারো বা বাবা, দাদা অথবা তারও পূর্ব কোন পুরুষ। কাজেই এখানে কেউ বৃটিশ আমেরিকান, কেউ বা আরাবিয়ান আমেরিকান, কেউ বা চাইনিজ আমেরিকান, ইন্ডিয়ান আমেরিকান অথবা বাংলাদেশী আমেরিকা ইত্যাদি।
এদেশে যে-কেউ যে-কোন দেশ থেকে এসে বসবাস করতে পারে। আমেরিকা থেকে কাউকে কোনদিনও জোড় পূর্বক বের করে বা ডিপোর্ট করে দেয়া হয় না। তবে, প্রধান কথা হলো- আমেরিকা সবচে অপছন্দ করে, কেউ অবৈধভাবে আমেরিকায় প্রবেশ করলে।
 
অনেকেই মেক্সিকো দিয়ে খাল বা মরুভূমি পার হয়ে দালালের মাধ্যমে হেঁটে হেঁটে মার্কিন ভূখন্ডে প্রবেশ করে। এটা গুরুত্বর অন্যায়। আমেরিকা এটা কোন ভাবেই সমর্থন করে না।
এখানকার মানবাধিকার আইন অত্যন্ত শক্তিশালী। কাজেই কেউ কেউ নিজেকে সত্যিকার উদ্বাস্ত এবং নিজ দেশের রাজনীতির হয়রানীর স্বীকার প্রমাণ করে গ্রীনকার্ড পেয়েও যায় বাট, এটাকে আমেরিকা খুবই অপছন্দ করে।
 
সম্প্রতি যে কিছু বাংলাদেশীকে পুশ ব্যাক রা হয়েছে- তারা এভাবেই মার্কিন ভূখন্ডে ঢুকেছিল এবং সঠিক কোন যুক্ত বা তথ্য উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে যে তারা সন্ত্রাসী নন। আমেরিকা সন্ত্রাসকেও মারাত্মক অপছন্দ করে। কাজেই অবৈধভাবে আমেরিকায় ঢুকার চেষ্টা থেকে বিরত থাকাটাই সবচে বুদ্ধিমানের কাজ। যদিও অসংখ্য বাংলাদেশী অবৈধভাবে আমেরিকায় বসবাস করে চলছে; এমন অনেককেই আমি চিনি।
নিউ ইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া এবং টেক্সাস হলো অবৈধদের জন্য সবচে সুন্দর বসবাসযোগ্য স্থান। এসব ষ্টেটে অবৈধরা কোন সমস্যা ছাড়াই বসবাস করতে পারে। অবৈধদের জন্য বৈধ হবার একমাত্র সহজ সমাধান হলো- কোন আমেরিকান সিটিজেনকে বিয়ে করা। এছাড়া আর কোন ভাল সলিওশন নেই তাদের জন্য। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে অনেকেই পাড় পেয়ে যান- সেটাও কিছুটা রিস্কি।
 
যাই হোক, বৈধভাবে যে-কোন ভিসা নিয়ে আমেরিকায় আসুন। বি১বি২ বা বিজনেস-টুরিজম সবচে সুবিধাজনক ভিসা যা ৫ বছরের জন্য প্রদান করা হয়ে থাকে- কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছাড়া। এফ১ বা ষ্টুডেন্ট ভিসা, বা এফ২ স্পাউস অব ষ্টুডেন্ট হিসাবে আসা যায় খুব সহজেই। যারা শীপে জব করে- তারা সি১ এবং অনেকে ট্রানজিট ভিসা নিয়ে আসতে পারেন। (সি১ ভিসায় আগতরা বিয়ে করেও গ্রীনকার্ড পাবার অযোগ্য; তবে রাজনৈতিক আশ্রয় করতে অসুবিধা নেই।)
 
আমেরিকায় বৈধভাবে ঢুকলে আপনাকে একটা আই-৯৪ নাম্বার দেয়া হবে। যার আই-৯৪ রয়েছে সে ভিসার বৈধতা না থাকলেও অবৈধ হিসাবে গণ্য হয় না; তাকে বলা হয় আনডকুমেন্টেড। আনডকুমেন্টেডদের শুধুমাত্র হোমল্যান্ড সিকিউরিটি পুলিশ, আমেরিকায় ঢোকার সময় দেয়া ঠিকানানুযয়ী খোঁজ করে এবং ধরতে পারলে সরাসরি এয়ারপোর্ট দিয়ে নিজে দেশে ব্যাক করিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু অন্য ঠিকানায় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি পুলিশ কাউকে খোঁজ-খবর করে না; রাস্তা ঘাটে তো নয়ই।
আর ষ্টেট বা সিটি পুলিশ ফেডারেল গভার্ণমেন্টের আওতাধীন নয় বিধায়- তারা কোন ব্যক্তিকে কোন ভাবেই তার বৈধতার বিষয়ে কোন প্রশ্ন করার ক্ষমতাও রাখেন না- বিশেষ করে নিউ ইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া ও টেক্সাসে। এমনকি কোন আনডকুমেন্টেড ব্যক্তি যদি কোন ক্রাইমও করে- সেক্ষেত্রে ষ্টেট গভার্ণমেন্ট এর কোর্টে তার সাজাও হতে পারে কিন্তু এসব তথ্য হোমল্যান্ড ডিপার্টমেন্টকে জানানো হয় না। নিউ জার্সীসহ কিছু ষ্টেট একটু ভিন্ন আইনে চলে। ওসব ষ্টেটে আনডকুমেন্টেডরা নিরাপদ নন।
আমেরিকায় আসার পর, সকলেরই মূল লক্ষ্য থাকে গ্রীন কার্ড পাওয়া; যাতে ন্যায্য শ্রমের মূল্য সে পায় এবং ৩/৪ বছর পর সিটিজেনশীপ পেতে পারে। কিন্তু অনেকেই এখানে এসেই বড় একটা ভূল করে ফেলে। নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশী এটর্ণীরা পলেটিকাল এসাইলাম বা রাজনৈতিক আশ্রয় এবং ষ্টুডেন্ট ভিসা’র বাইরে তেমন একটা ধারণা রাখে না। এসব এটর্ণীরাই মূলত বৈধভাবে আগতদের বিভ্রান্ত করে দেয়। বাংলাদেশের কথিত বট-তলার উকিলদের মতোই এখানকার ম্যাক্সিমাম বাংলাদেশী এটর্ণীদের যোগ্যতা। অপরদিকে অধিকাংশ বাংলাদেশীই ইংলিশকে খুব ভয় পায় বিধায় মেইনষ্ট্রিমের এটর্ণীদের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে না বা চেষ্টাও করে না।
 
আমেরিকায় আগতরা খুব সহজে বৈধ হবার সুযোগ গ্রহন করতে পারে। বিশেষ করে ভাল ব্যবসায়ীরা এখানে নূন্যতম বিনিয়োগের মাধ্যমে এলওয়ানএ, ই২ ভিসায় পরিবর্তিত হতে পারেন। যা থেকে শর্তাসাপেক্ষে গ্রীনকার্ড পাবার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া ১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে সরাসরি গ্রীনকার্ডও পাওয়া যায় এখানে (অলস বিনিয়োগে নয়; ব্যবসায়িক বিনিয়োগে)। ইভিফাইভ এর আরও একটা কোটা হলো- এক্সট্রা অর্ডিনারী পার্সন। নিজ দেশে সফল সেলিব্রেটি, জাতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অথবা সফল ও খুবই পরিচিত ব্যক্তিত্বরা সরাসরি আমেরিকায় গ্রীনকার্ড পেতে পারেন মাত্র ২১ দিনেই; এমনকি নিজ দেশে বসেও এঁরা আবেদন করে সরাসরি গ্রীনকার্ড নিয়ে আমেরিকায় চলে আসতে পারেন যে-কোন সময়।
 
অনেকে এসেই ষ্টুডেন্ট ভিসায় কনর্ভাট করে ফেলেন- এটা একটা বড় ধরণের বোকামী। ষ্টুডেন্ট ভিসায় আগতদের সোসাল সিকিউরিটি নাম্বার এবং ওয়ার্ক অথরাইজেশন দেয়া হয় না। কাজেই সে বৈধভাবে কোন ইনকাম করতে পারবে না এবং তাকে অত্যন্ত উচ্চ হারে টিউশন ফি নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে। তদুপরি- নিজ দেশে ভ্রমনের কোন অধিকারও তার থাকে না।
আরেকটি চমৎকার সুযোগ হলো- এমপ্লয়মেন্ট বেইজড গ্রীনকার্ড। কেউ যদি একটা জব এরেঞ্জ করতে পারেন- তহলে মাত্র ১৮ মাসের মধ্যেই গ্রীনকার্ড পাওয়া সম্ভব এদেশে।
আমেরিকার ভূখন্ডে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষই এক এক জন মানুষ। প্রত্যেকেরই রয়েছে মানবাধিকার। সে কোথা থেকে এসেছে, কি তার পরিচয়, কোন জাতি এতে কিছুই এসে যায় না। ইওরোপের কোন কোন দেশের মতো আমেরিকার কোথায় হিজাব পরাও অবৈধ নয়। এখানে সকলে তার নিজ নিজ ধর্ম সুন্দর মতো পালন করার অধিকারও পান; পান পুলিশি সহায়তাও।
 
কাজেই যে-কোন কোন ডকুমেন্ট উপস্থাপন ছাড়া শুধু একটা আবেদন পত্র পূরণ করেই রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারেন। মজার বিষয়টি হলো, সঠিকভাবে পূরণ করা প্রতিটি আবেদন পত্রই প্রাথমিকভাবে গ্রহিত হয় এবং পরবর্তী ৫ মাস পর তাকে সোসাল সিকিউরিটি নাম্বারসহ ওয়ার্ক অথরাইজেশন দেয়া হয়। অর্থ্যাৎ সে আমেরিকায় বৈধ ব্যক্তি হিসাবে সকল অধিকার পেয়ে যায় শুধুমাত্র নিজ দেশে ভ্রমণ করা ব্যতিত।
তাকে নির্ধারিত সময়ে একজন ইমিগ্রেশন অফিসার ইন্টারভিও এর জন্য ডাকেন এবং তার আবেদিত তথ্যাদির ভিত্তিতে চুল-চেরা প্রশ্ন করা হয়। ইমিগ্রেশন অফিসার যদি সন্তুষ্ট হন- তাহলে মিলে যায় স্বাপ্নের গ্রীনকার্ড। আর যদি অফিসার খুশী না হন- তাহলে তাকে ডিপোর্ট অর্ডার দেন। কিন্তু আবেদনকারীর অধিকার থাকে আপিল করা। এবং এভাবে সে আপিল এর মাধ্যমে কোর্ট, হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট ইত্যাদি পার করে মোটামুটি ১০ থেকে ১২ বছর বৈধভাবে আমেরিকায় বসবাস করতে পারেন।
এবং সবচে মজার বিষয় হলো, সে যদি এই ১০/১২ বছর কোন ক্রাইম ছাড়া আমেরিকায় বসবাস করে এবং নিয়মিত ট্যাক্স প্রদান করে; তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন না কোন একটা সুযোগ তার সামনে চলে আসে গ্রীনকার্ড পাবার।
 
সুযোগ না আসলেও- ফাইনালী তাকে ‘ডিপোর্ট’ অর্ডার দেয়া হয়। এবং ব্যস। ঐ পর্যন্তই। ডিপোর্ট অর্ডার কোনদিনও কার্যকর করা হয় না। সে ডিপোর্ট অর্ডার নিয়েও সারা জীবন আমেরিকায় বসবাস করতে পারে।
আমেরিকায় আসা ১৮ বছরের নীচের প্রতিটি শিশুরই রয়েছে অফুরন্ত অধিকার।
তার পড়াশোনা, চিকিৎসা সম্পূর্ণ ফ্রি। স্কুলে দুপুরের টিফিনও ফ্রি। বাবা-মা ট্যাক্স দিলে সন্তানদের জন্য ট্যাক্স বেনিফিটও পাওয়া যায়- যা কমবেশী ৮/১০ হাজার ডলার প্রতি বছর।
এই সন্তান বৈধ না অবৈধ, কোন পিতা-মাতার, কোন জাতি বা দেশ থেকে এসেছে- সেটা বিবেচ্য নয়।
আমেরিকার মাটিতে বা আকাশ সীমায় জন্মগ্রহনকারী প্রতিটি শিশুই জন্মসূত্রে আমেরিকান সিটিজেন। কিন্তু তাই বলে- জন্মদাতা বাবা-মা’র কিন্তু কোন বেনিফিট নেই। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির হাতে ধরা পরলে সেই বাবা-মা’কেও ডিপোর্ট করে দেয়া হতে পারে। তবে সন্তান যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হবে এবং আয়-রোজগার করতে পারবে অর্থাৎ ২১ বছর বয়স হবার পর ঐ সব বাবা-মা গ্রীনকার্ড পাবার যোগ্যতা অর্জন করবেন। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ঠিক এভাবেই বিদেশী পিতার ওরষ্যে আমেরিকায় জন্ম নেয়া সিটিজেন; যদিও তার মা একজন হোয়াইট আমেরিকান ছিলেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনে একমাত্র কঠিন শর্তটি হলো- জন্মসূত্রে আমেরিকান নাগরিক হতে হবে। এছাড়া অন্য যে-কোন পদে নির্বাচনে অংশগ্রহনের জন্য জন্মসূত্রে নাগরিক হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। আর্নল্ড শোয়াজনিগার্ভ (হলিউড তারকা, বডিবিল্ডার ও ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক গভর্ণর) অথবা ম্যাডেলিন অলব্রাইট (সাবেক ফরেন সেক্রেটারী) ভিন্ন দেশ থেকে গ্রীনকার্ড নিয়ে আসার পর আমেরিকান সিটিজেনশীপ পেয়েছেন।
 
আমেরিকায় বসবাস করার জন্য মূলত দু’টি কাগজের দরকার পরে। একটি সোসাল সিকিউরিটি নাম্বার এবং অপরটি ষ্টেট আইডি বা ড্রাইভিং লাইসেন্স। আর কোন পেপারসের দরকার হয় না। বি১বি২ বা ষ্টুডেন্টি ভিসায় আগতরাও ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে পারেন। নিজ দেশের পাসপোর্ট দিয়ে সব কাজই চালানো যায় এখানে। কে আমেরিকার সিটিজেন বা গ্রীনকার্ড হোল্ডার- এসব বিষয়সের কোন বালাই নেই এদেশে।
ব্যবসায় করতে হলে- ওসবও লাগে না। শুধু একটি ইনকর্পোরেশন এবং ইআইএন। এসব পেতে কোন বৈধ কাগজেরও প্রয়োজন পরে না এমনকি সোসাল সিকিউরিটি নাম্বারেরও দরকার নেই। আমেরিকায় সব কিছুই করতে পারবেন; শুধু নির্বাচনে ভোট দিতে হলে আপনাকে সিটিজেন হতে হবে।
 
আমার মনে হয়- অনেকেই ইতিমধ্যে অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন। সবাই ভালো থাকুন।
 
পৃথিবীর অনেক দেশেরই অনেক প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীদেরও রয়েছে আমেরিকার নাগরিকত্ব। বাংলাদেশের সজীব ওয়াজেদ জয় আমেরিকান সিটিজেন। অর্থমন্ত্রী মি. মালও যদ্দুর জানি আমেরিকান সিটিজেন।
আমেরিকা, তার দেশের কোন নাগরিককে বিশ্বের কোন প্রান্তেই কৃত অপরাধের জন্য শাস্তি পেতে দেয় না। যে-কোন মূল্যে তাকে নিজ দেশে ফেরত নিয়ে আসে। বাংলাদেশে হিরোইন পাচারের দায়ে শাস্তি পাওয়া আমেরিকান তরুনীকে ১৯৯৪ সালে মার্কিন জালানী মন্ত্রী নিেজে এসে সাথে করে উড়িয়ে নিয়ে যান। বিল ক্লিন্টন কয়েক বছর আগে শত্রু রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়া থেকে একজন অপরাধীকে ছাড়েয়ে নিয়ে যেতেও কোন কিছুর পরোয়া করেননি।
 
কে না চায়- এই বদ্ধ পাগলের দেশ আমেরিকার একটি পাসপোর্ট?
   Send article as PDF