দেশটার কি হবে!

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে সিটাগাং যেতে কত সময় লাগে?
তার অাগে বলি ঢাকা থেকে সিটাগাং এর দূরত্ব হলো গিয়ে ২৪৪ কিলোমিটার যা মাইলে দাঁড়ায় ১৫১ মাইল।
 
এই ১৫১ মাইল রাস্তা আমি সর্বশেষ যখন ভ্রমণ করি (২০০৮ সালে) তখন সময় লেগেছিল প্রায় ৮ ঘন্টা; আর যখন প্রথমবার ভ্রমণ করি সেই ১৯৯৬ সালে তখন সময় লেগেছিল ৬ ঘন্টা।
 
মাঝ খানের সময়টাতে যতবার ভ্রমণ করেছি সবসময়ই কমবেশী সময় লাগতো ৬ থেকে ৮ ঘন্টার মধ্যেই- ট্রাফিক জ্যাম কম বেশীর উপর সময়টা নির্ভর করতো।
 
এখন সম্ভবত ৮ থেকে ১০ ঘন্টা সময় লাগে।
দেশ যত উন্নত হয় সময় সম্ভবত ততটাই বেশী লাগে- অন্তত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে!
 
নিউ ইয়র্ক ষ্টেটের রাজধানী আলবেনী থেকে নিউ ইয়র্ক সিটির দূরত্ব ১৫২ মাইল। এই ১৫২ মাইল দূরত্ব ভ্রমণে সময় লাগে ঘড়ি ধরে পাক্কা ২ ঘন্টা ২৯ মিনিট।
 
ঢাকা থেকে সিটাগাং যেতে মাত্র একটাই রাস্তা যেটার নাম সবাই জানে ঢাকা-সিটাগাং হাইওয়ে যদিও তার একটা বিশুদ্ধ নাম রয়েছে যেটা প্রচলিত নয়, আর তার হলো এন১।
 
এবং, ঐ একটাই রাস্তা।
ঢাকা থেকে সিটাগাং যেতে আর কোন রাস্তা নেই। ঐ রাস্তাটির কোথাও কোন কারণে বন্ধ হয়ে গেলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। আর যাওয়া যাবে না।
 
আলবেনী থেকে নিউ ইয়র্ক শহরে যেতে কম করে হলেও ভিন্ন ভিন্ন ৩/৪ টা হাইওয়ে রয়েছে- আপনি যে-কোন একটা হাইওয়ে ধরেই যাতায়াত করতে পারেন। এবং এদেশের রাস্তাগুলি বন্ধ হয়ে যাবার কোন সুযোগ রাখা হয়নি। কোথাও মেরামতির প্রয়োজন হলো বিকল্প এবং স্ট্যান্ডার্ড রাস্তা রেডী রেখে তারপর মেরামতির কাজ চলে। যোগাযোগ বন্ধ হয় না; রাস্তার উপর দিয়ে রেল লাইন চলে যায় না।
 
আমি আমেরিকার সংগে বাংলাদেশকে তুলনায় নিচ্ছি না।
তবে ‘উন্নয়ন’ শব্দটি যখন অধিক ব্যবহার করা হবে তখন আমি ‘উন্নয়ন’ শব্দটি কতটা ভারী সেটার একটা ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করছি মাত্র।
 
এই যে শেখ হাসিনা ও তার মোসাহেববৃন্দ উন্নয়ন উন্নয়ন করে প্রতিদিন গলা ফাটিয়ে যাচ্ছে- তাদের কাছে প্রশ্ন রাখছি ‘উন্নয়ন’ শব্দটির অর্থ তারা জানে কি না?
 
১০ হাজার কোটি টাকায় যে সেতুটা করা সম্ভব, সেই সেতুটা পদ্মার উপর তৈরী করতে খরচ করা হচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। শুভংকরের ফাঁকিতে শুরুতেই ২০ হাজার কোটি টাকা পাবলিক মানি খেয়ে সাবার করে দেয়া হয়েছে।
 
বাংলাদেশে এক মাইল নতুন রাস্তা তৈরীর খরচ এই পৃথিবীর সবচে বেশী। অথচ ঢাকায় একজন রাস্তা তৈরীর শ্রমিকের ৮ ঘন্টার মুজুরী ম্যাক্সিমাম ৫০০ টাকা আর আমেরিকায় মুজুরী দিতে হয় ঐ ৮ ঘন্টার জন্য কম করে হলেও প্রায় প্রায় ১৩,৬০০ টাকা।
 
কোথায় ৫০০ আর কোথায় ১৩,৬০০!
তারপরও বাংলাদেশে রাস্তা তৈরীর খরচ বেশী।
 
ইউরোপে চার লেনের নতুন মহাসড়ক নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হচ্ছে ২৮ কোটি টাকা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এ ব্যয় ১০ কোটি টাকা। আর চীনে তা গড়ে ১৩ কোটি টাকা। তবে বাংলাদেশের তিনটি মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে ব্যয় ধরা হচ্ছে কিলোমিটারপ্রতি গড়ে ৫৯ কোটি টাকা।
 
বাংলাদেশে উন্নয়নের বন্যা বইয়ে চলছে- এটা হাসিনা ও তার চাটুকারদের কথা যা প্রতিদিন কয়েকবার করে জপা হচ্ছে রেডিও, টিভি আর নিউজপেপারগুলিতে।
 
উন্নয়নটা তাহলে কোথায় কিভাবে হচ্ছে- সেটাই তো মিলাতে পারছি না!
 
উন্নয়ন হলো সেটা যেখানে একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অাঁকা থাকবে।
একট কান্ট্রিওয়াইড রোড নেটওয়ার্ক তৈরী করতে হবে যেটা কোন কালেই তৈরী হয়নি। ১৭ কোটি মানুষের অতি ছোট একটা ভূখন্ড এই বাংলাদেশ। এখানে এমনভাবে মাকরশার জালের মতো করে রোড নেটওয়ার্ক তৈরী করতে হবে যেন দেশের যে-কোথাও থেকে ঢাকায় পৌছতে ম্যাক্সিমাম আড়াই থেকে তিন ঘন্টা সময় লাগবে। আবার একই ভাবে দেশের বড় ১৫-২০টি শহরকে কেন্দ্র করে জেলা নেটওয়ার্কও তৈরী করতে হবে একই পরিকল্পনার আন্ডারে।
 
মানুষের যাতায়াত নেটওয়ার্ক সহজ করাকেই উন্নয়ন বলে।
বাংলাদেশের জন্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ রোড নেটওয়ার্ক কি কোন কালেও প্রণয়ন করা হয়েছে?
 
এদেশে প্রধানমন্ত্রীর আপ্যায়ন খরচ দেখানো হয় ৪ হাজার কোটি টাকা!
এদেশে পদ্মা সেতু তৈরীর কথা বলে খেয়ে ফেলা হয় ২০ হাজার কোটি টাকা!
এদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ১৫ হাজার কোটি টাকা হারিয়ে যায়, ৮১ মিলিয়ন ডলার হ্যাক হয়ে যায়, সোনা হয়ে যায় তামা আর কয়েকশ কোটি টাকার কয়লা পর্যন্ত উধাও হতে সময় লাগে একদিন!
৫ টাকা দামের ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ কেনা হয় ২৬ টাকা দামে- বিদ্যুৎ উন্নয়নের নামে লুটপাট করা হচ্ছে দৈনিক হাজার কোটি টাকা!
 
এই লুটের টাকা দিয়ে দেশে অনায়াসে তৈরী করে ফেলা যেত একটা চমৎকার রোড-নেটওয়ার্ক। একাধিক জাতিয় সড়ক সংযুক্ত করতো দেশের প্রতিটি জেলাকে, রাজধানী হতে পারতো যে-কোথাও থেকে ম্যাক্সিমাম ৩ ঘন্টার দূরত্বে আয়ত্বে।
 
এখানে সেখানে, মন্ত্রীর বাড়ীর পাশে তার জন্য পারিবারিক সেতু তৈরী করে দেয়াকে উন্নয়ন বলে না।
 
কোটাধারী অযোগ্য অর্থব লোকজন যতদিন দেশের নেতৃত্ব দিবে ততদিন তৈরী হতেই থাকবে জিপিএ পাইপ প্রজন্ম, প্রজন্মের পর প্রজন্ম। দেশের সাধারণ মানুষ ঘুরে দাঁড়াবার প্রয়োজন বোধ করে না আর আমলা-মন্ত্রী এবং লুটেরার দল দেশের টাকা লুটে পুটে বিদেশে পাচারে ব্যস্ত সময় পার করে যাচ্ছে।
 
আর হাসিনা তার চাটুকার সমতে চিৎকার করে যাচ্ছে উন্নয়নের বন্যা বয়ে যাচ্ছে চারদিকে!
 
এই দেশটার কি হবে!
   Send article as PDF