জিন-ভুতের সংগে বসবাস

‘আমি জিন এবং মানুষ’কে শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা আয-যারিয়াত ৫১/৫৬)
 
পৃথিবীতে মানুষের পাশাপাশি আরও একটা বুদ্ধিমান বা মুক্ত প্রাণী রয়েছে যা মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছিলেন মানুষেরও সৃষ্টির আগে। মহান আল্লাহ সেই প্রাণীটিকেও (জিন) তাঁর ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছিলেন ঠিক যেমনটা সৃষ্টি করেছেন মানবজাতিকে।
 
মানুষের জন্য সমস্যা হলো জিন’কে তৈরী করা হয়েছে আগুন থেকে এবং তাদেরকে অদৃশ্য হবার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আমেরিকায় প্রচুর পরিমানে জিন রয়েছে। বাংলাদেশে বসবাসকালে জিনের সংগে আমার কখনও পরিচয় ঘটেনি। আমার একটা গল্পে একবার আপনাদের বলেছিলাম এক ভোরে ফজর নামাজের আজানের জন্য আমাকে আমার পরিচিত একজন ডেকে উঠায় সে আমার জন্য নিত্যদিনের মতোই বারান্দায় আমার জন্য অপেক্ষা করছে বলে জানায়। আমি ওজু করে নামাজের জন্য রেডী হয়ে তাকে আর পাইনি; ইভেন সে মসজিদে আসে সূর্য উঠে যাবারও পর। এবং আমাকে অস্বীকার করে যে সে আমাকে সেদিন ডেকে দিতে যায়নি বরং তার ঘুমই ভেংগেছে সুর্য উঠারও পরে! আমি জানতাম সে কোনদিনও অন্তত আমাকে মিথ্যা বলে না।
 
যাই হোক, সেটা আমার ভুলও (শোনা শব্দ) হতে পারে।
 
কিন্তু আমেরিকার ভুতেদের সম্পর্কে আমি আমেরিকায় আসার আগেই ডিসকভারীর অসংখ্যা ডকিউমেন্টরীতে জেনেছিলাম। কিন্তু এখানে আসার পর যে আমাকে এই জিনের খপ্পরেই পরতে হবে- সেটা ভাবিনি কোন কালেও।
 
জুনে আমি ব্রঙ্কসের আপটাউনে আমার বন্ধুর অনুরোধে তার নিজ বাসায় ফাষ্ট ফ্লরে ভাড়া উঠি। বাড়ীটি দীর্ঘ কয়েক বছর খালি ছিল, আমার বন্ধু বছর খানেক আগে বাড়ীটি ‘হাড’ থেকে অকশনে জিতে ক্রয় করে। তারপর কিছু খুটিনাটি মেরামতি কাজ করায়; সে বাংলাদেশে বসবাস করে বছরে কয়েকবার আমেরিকায় আসলে ও বাড়ীতে থাকে। আপটাউনে হওয়ায় এবং ব্লাক পিপল বেশী থাকায় ওদিকটা বাঙালীরা খুব একটা থাকতে চায় না।
 
আমি রাজী হলাম।
বাড়ীর ব্যাক-ইয়ার্ডে একটা ঘড় রয়েছে যেটাতে কেউ থাকে না ইভেন আমার বন্ধুটিও কোনদিন সেটার তালা খুলেনি। ওখানে প্রায়ই বেশ কয়েকটা কালো বিড়াল দেখা যেত, যাদের চোখগুলি সাধারণ বিড়ালের চেয়েও একটু বেশীই ভূয়ংকর।
 
সে যাই হোক, কিচেনে যে রিফ্রেজারেট’টি রয়েছে সেটাতে হঠাৎই একদিন ‘টকটকটকটক’ করে ৫/৭টা টোকা দিল কেউ। তারপর ঐ টোকাগুলি অনেকটাই অনিয়মিতভাবে চলতে থাকলে বিশেষ করে কিচেনে রান্নার সময় সকালে, দুপুরে, সন্ধ্যায়, রাতেও। কেউ একজন তার উপস্থিতি জানান দিতে চাইছে। আমরা অবহেলা করলাম কিন্তু সে তার উপস্থিতি জানান দিবেই।
 
তৃতীয় দিন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম বিষয়টা ঘেটে দেখবো- কেন এই শব্দটি হচ্ছে।
ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স দ্রব্যাদির উপর এমনিতে আমার যথেষ্ঠই দখল রয়েছে সুতরাং রিফ্রেজারেটরটি সামনে পেছনে ডানে বামে সড়িয়ে, ভেতের বাহিরে বেশ ভালোভাবেই চেক করে দেখলাম। হঠাৎ হঠাৎ চলা কমপ্রেসারের আওয়াজের মতো ওটা নয়।
 
কিন্তু কোন কিছুতেই কোন কিছু খুঁজে পেলাম না।
আমি যখন চেক করছি তখনও সেই টকটকটকটক আওয়াজ’টি দিল।
 
তাৎক্ষনাত আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, পাওয়ার অফ করলেও ওই আওয়াজটা হয় কিনা সেটা দেখতে পাওয়ার কর্ডটি আনপ্লাগ করে দেখবো এবং তখনই সে টকটকটক করছে বিধায় পাওয়ার অফ করে দিলাম এবং টকটক আওয়াজটি থেমে গেল।
 
আমি শান্ত হলাম।
কিন্তু ‘সে’ চাচ্ছিল আমি অশান্ত থাকি।
 
আর তাই তো ঠিক তখনই সে তার স্থান পরিবর্তন করে সেই একই ‘টকটকটকটক’ আওয়াজটি আবারও শুরু করে দিল রিফ্রিজারেটর এর বিপরীত দিকে রাখা মাইক্রো-ওয়েভ ওভেনটাতে। আমি দেরী না করে সংগে সংগে মাইক্রে-ওয়েভ ওভেনের পাওয়ার কর্ডটিও আনপ্লাগ করে দিলাম। দেখি ব্যাটা এবার তুই কি করিস!
 
এবং সংগে সংসেই সে এবার সেই টকটকটক আওয়াজ করতে শুরু করে দিল পাশেই রাখা একটা কাঠের কেবিনেটে।
 
অর্থাৎ সে পণ করেছে আমাকে বিশ্বাস করাবেই যে সে এখানেই রয়েছে, তার উপস্থিতি আমাকে স্বীকার করতেই হবে। আমি এবার ভয় পেলাম। অশরীরী কারো উপস্থিতি আপনাকে ভয় পাইয়ে দিবেই।
 
জিনের উপস্থিতি পবিত্র গ্রন্থ কোরানে রয়েছে, সুতরাং আমাকে এটা বিশ্বাস করতেই হবে। তবে, দুর্বল ঈমানের জন্য আমরা অনেক সময় ‘জিন-ভুত বলে কিছু নেই’ বলতেই বেশী অভ্যস্ত হয়ে থাকি। এই ঘটনাটি হয়তো আমার ঈমানের দুর্বলাতাটুকু কাটিয়ে দিলো।
 
কিন্তু ভয় করছিল। ডিসকভারীর সেসব ডকিউমেন্টরীগুলি সামনে ভেসে ভেসে আসছিল বারবার।
আরও ভয়ংকর কিছু হয় কিনা সেটাই ছিল আসল ভয়।
 
সে রাতে আর বাসায় থাকলাম না। বালিশ আর ব্লাংকেট নিয়ে অফিসে চলে গেলাম।
বুদ্ধিমান বন্ধুদের সংগে বিষয়টা আলোচনা করলাম, একজন বলল সে আমার বাসায় যাবে। মোরাদ ভাই গেলেন আমার বাসায়। গিয়েই ওনি অজু করে আজান দিলেন, নামাজ পড়লেন। প্রায় ঘন্টা ছয়েক আমার বাসায় থাকলেন। রাতের খাবার খেয়ে বিদায় নিলেন। আমরা কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে রাতে আবার বাসায় থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম।
 
কিচেনে কিছু গোছগাছের কাজ ছিল, ঠিক তখনই আবারও সেই টকটকটকটক শুরু করে দিল। আমরা দ্বিতীয় রাতের মতোই বাসা ত্যাগ করে অফিসে চলে আসলাম।
 
পরদিন মোরাদ ভাই সব শুনে আবারও আমার বাসায় যাবেন এবং রাতে থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। গেলেন, সারারাত থাকলেন। আমরাও থাকলাম। সে রাতে আর কোন আওয়াজ দিলো না। তারপর আরও দু’দিন আর কোন আওয়াজ পাইনি।
 
তৃতীয় দিন থেকে আবারও তার টকটকটক আওয়াজ শুরু করে দিলো।
আমরা তবুও বাসায় থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। এরমধ্যে আমি নিয়মিত নামাজ আদায় এবং কোরান তেলওয়াত করা শুরু করে দিয়েছি। প্রায় প্রতি ওয়াক্তেই আজান দিই ঘরে। একটু সাহস পাচ্ছিলাম।
 
আমি বেশী বেশী করে আয়তুল কুরছি পরা শুরু করলাম। ইউটিউবে বেশী ভলিউমে কোরান তেলওয়াত, রোকাইয়া ইত্যাদি চালিয়ে রাখি। কিন্তু সেসবে জিন কোন কেয়ার করে না।
 
আমি নিজেও ছাড়ার পাত্র নই, আমিও কিচেনে গিয়ে জোরে জোরে আয়তুল করছি পরি, আজান দিই। সে থামে না। রীতিমতো আমার সংগে যেন তার যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। প্রচন্ড যুদ্ধ। এক অশরীরি সংগে আমার যুদ্ধ।
 
এর মধ্যে একজন আমাকে বুদ্ধি দিল ‘ঘর বন্ধ’ করে ফেলার জন্য। কিভাবে করতে হবে সেটাও সে বলে দিল। আমি তাও করলাম, ঘরের চারদিকে ভেতরে বাইরে থেকে তিনবার করে আয়তুল কুরশী পরে হাতে তালি দিলাম মোট ৮ বার।
 
কিন্তু সে থামেনি।
রাত তখন দু’টো। বেডরুমে শুয়েছি। এবং এই প্রথম টের পেলাম সে বেডরুমের জানালার মধ্যে টকটকটকটক করছে!
 
সত্যিই সেদিন প্রচন্ড ভয় পেলাম। সংগে সংগে দৌড়ে গাড়ীতে উঠলাম। আবারও অফিসে।
অতঃপর আর এ বাসায় থাকবো না বলে সিদ্ধান নিলাম। একটা সাবলেট বাসা ঠিক করলাম মাসের বাদবাকী ২ সপ্তাহের জন্য, সেখানেই থাকলাম এবং খুবই দ্রুত ব্রঙ্কস থেকে অনেক দূরে (প্রায় ২০ মাইল) লং আইল্যান্ডে একটা বাসা ভাড়া নিলাম।
 
পরের মাসের ১ তারিখে নতুন বাসায় উঠবো, মনে শান্তি জিনের হাত থেকে রক্ষা পাবো।
কিন্তু নিয়তির পরিহাস বলে একটা কথা থাকে।
 
আমেরিকায় বাসা বদল করা সবচে কঠিন কাজ। অনেক কষ্টে মালামালগুলি নতুন বাসায় আনলাম, যেদিন ফার্নিচারগুলি নিয়ে আসলো ঠিক সেদিন এই নতুন বাসার কিচেটে মালামাল গোছাচ্ছিলাম। এবং এই বাসার এই রিফ্রেজিরেটরের ভেতরে সেই একই টকটকটকটক আওয়াজ করে উঠলো।
 
কলিজা শুকিয়ে যাবার মতো অবস্থা!
কিন্তু এবার আমি শক্ত হলাম। শেষ দেখে ছাড়বো। আর ভয় করবো না। আমি আশরাফুল মাখলুকাত। সৃষ্টির সেরা জীব। ও তো আমার’চে শক্তিশালী নয় কোনকিছুতেই। মহান আল্লাহ আমাকে তৈরীর পর জিনকে বলেছিল আমাকে সেজদা করতে। এবং আল্লাহ হুকুম পালন করেনি বলেই ওরা আজ অভিশপ্ত। সুতরাং আমি ওকে ভয় করবো কেন?
 

চলেন জিনের আরও কিছু গল্প শুনি।

কাল গাড়ীতে গ্যাস ভরার পর রিসিপ্টটা নিয়ে ববি একটা ছোট নৌকা বানিয়ে গাড়ীর ড্যাশ বোর্ডে রেখে দিয়েছে; আমি বাসায় ফেরার পথে বললাম ওটা ফেলে দাও- দেখতে ভাল লাগছে না। ও ফেলে দিল।

আজ বাসায় রাতের খাবার পর গারবেজগুলি প্যাকেট করে নীচে ফেলতে যাবো; পরিস্কার ফ্লোর, হঠাৎ দেখি সেই গতরাতের ফেলে দেয়া কাগজের নৌকাটা রিফ্রিজারেটর এর সামনে পরে রয়েছে!

আমার তো শরীরের লোমগুলি সংগে সংগে শক্ত হয়ে গেল।

ববিকে জানতে চাইলাম, ‘কাল নৌকাটা গাড়ী থেকে কোথায় ফেলেছিলে মনে আছে?’

আমেরিকায় যেহেতু উম্মুক্ত স্থানে কোন কিছু ফেলা যায় না বা ফেলি না তাই আমার মাথায় চিন্তাটা জেগে উঠলো।

অনেকটা শান্ত হয়ে ও বলল, ‘ওটা তো পলিথিন ব্যাগে ফেলেছিলা, আর তুমি সেই ব্যাগ গার্বেজ করেছো।’

আমিও যুক্তি মিলিয়ে নিলাম; না ওটা গতকাল পলিথিন ব্যাগেই আটকে ছিল; আজ নতুন গার্বেজ ব্যাগ দেবার সময় ওই পলিথিনটা প্লাষ্টিক ব্যাগের উপরে দেবার সময় নৌকাটা ফ্লোরে পরে যায়।

নাহ্।
ভুতের গল্পটা ঠিক জমলো না; হিসাব মিলে গেল। অপ্রয়োজনীয় বিধায় আমার স্মৃতিশক্তি প্রতারণাও করতে পারে! বাদ দিন।

তাহলে অন্যটা বলি, কেমন?
দিন কয়েক আগের কথা।

সকালে অফিসে যাবো।
বাসা থেকে বের হলাম। দরজা খুলে গাড়ীতে ড্রাইভিং সীটে বসতে যাবো- আতকে উঠলাম।

সামনের দু’টো সীটেই প্রচুর পরিমান আমেরিকান হোয়াইট মানুষের আধা পাকা ও সোনালী ছোট ছোট চুলে ঠাসা; কিছু হোয়াইট মেয়েদের চুলও রয়েছে ফ্লোরে। প্রচুর।

আপনারা তো জানেনই যে আমি যে গাড়ীটা ব্যবহার করি সেটা অত্যাধুনিক মডেলের মার্সিডিজ-বেঞ্জ। সম্পূর্ণ কমপিউটার নিয়ন্ত্রিত। গাড়ীটির কোন চাবি নেই, এন্টি থিপ রিমোট কন্ট্রোল। অর্থাৎ গাড়ীতে রিমোট কন্ট্রোল না থাকা অবস্থায় কেউ যদি এটার খুব কাছে চলে আসে বা হাত দেয় তাহলে সে খুব জোরে হর্ণ বাজাতে থাকে। গাড়ীতে সামান্য একটু ডাষ্ট ঢোকার মতোও সুযোগ রাখা হয়নি।

সেই গাড়ীর ভিতরে আমাদের বসার সীটের উপর এরম চুল পরে রয়েছে! আমার এই গাড়ীটি কেনার পর কোন হোয়াইট আমেরিকান আমার গাড়ীতে উঠেনি।

কি ব্যাখ্যা দিবেন?

তারপর, আরও একটু শুনে যান।

চুলগুলি পরিস্কার করে পলেথিনে গার্বেজ করলাম।
গাড়ী স্টার্ট দিলাম। দেখি ‘ব্রেক’ রেড-সাইন দেখাচ্ছে। অবাক হলাম। আমার গাড়ী আগামী ৬ মাসের মধ্যে ব্রেক নষ্ট হবে না কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে! তারপরও ভাবলাম হতেই পারে! কাল মার্সিডিজ-বেঞ্জ সার্ভিসিং সেন্টারে যাবো- ঠিক করে নিয়ে আসবো; কোম্পানীর ফুল ম্যানুফ্যাকচারিং ওয়ারেন্টি রয়েছে প্লাস আমি আও ২ বছরের সার্ভিস ওয়ারেন্টি কিনে রেখেছি।

ভাবলাম, আস্তে আস্তে ড্রাইভ করে অফিসে যাবো।
গাড়ী টান দিলাম কিন্তু গাড়ী এবার স্লো হয়ে কমান্ড দিলো ‘রিলিজ হ্যান্ড ব্রেক’।

আধুনিক গাড়ীগুলিতে ‘হ্যান্ড ব্রেক’ জায়গা পাল্টিয়েছে, ওটা এখন আর হাতে নেই; বাঁ পায়ে চলে এসেছে। 
আর আমি এই গাড়ীট কেনার পর কোনদিনও হ্যান্ড ব্রেক এ একটি বারের জন্যও হাত দেইনি।

ইভেন, হ্যান্ড ব্রেক কিভাবে রিলিজ করে সেটাও বুঝতে পারছিলাম না; ব্রেকই তো করিনি কিভাবে জানবো?
গুগল করতে করতে চোখ আটকে গেল গাড়ীর হ্যান্ডব্রেক এর উপরে একটা ‘ট্রে’র মতো দেখতে যেখানে ‘পি’ মানে পার্ক লেখা রয়েছে; লক্ষ্য করলাম ওটা সামনে বের হয়ে রয়েছে।

আমি ওটাকে ঠেলা দিতেই হ্যান্ড ব্রেক রিলিজ হয়ে গাড়ী ঠিক হয়ে গেল।

আমার গাড়ীতে কেউ হাত দেয় না, বা দেবার সুযোগও নেই! রিমোটটা যে আমার কাছেই থাকে।

 
যাই হোক। সকাল বিকেল রাতে ও এখনও রয়েছে আমার এই বাসার রিফ্রেজিরেটরে।
এর মধ্যে অনেকের সংগে আলাপ করেছি। হুজুর এসে আমার বাসায় দোয়া-কলাম পরে পানি ছিটিয়ে দিয়ে গেছে। বাংলাদেশেও অনেক হুজুরের সংগে কথা বলে কয়েকটা আমল আমি টানা করে যাচ্ছি। কিন্তু সে অনঢ়। আমার বাসা থেকে বিদেয় হচ্ছেই না।
 
এরমধ্যে প্রথম দিকে একটু ভয় বেশী পেতাম, বিশেষত রাতে।
তাই আমার একজন পরিচিত সাহসী ভদ্রলোককে অনুরোধ করলাম আমার বাসায় রাতে থাকার জন্য। সেও নাকি জিন টিন এসব নিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। সে রাজী হলো। টানা প্রায় ১ মাস থাকলো আমার বাসায়। প্রথম ৩/৪ দিন কোন আওয়াজ করতো না, কিন্তু যখন বুঝতে পেরেছে এই ভদ্রলোক এই বাসায় স্থায়ী হয়েছে তখন থেকে তার সামনেই সেই টকটকটকট আবারও শুরু করে দিল।
 
এই ভদ্রলোক নোয়াখালীর, সেও ছাড়ার পাত্র নয়। যা-কিছু সে জানে তার সবই সে এপ্লাই করলো জিনের উপর।
এর মধ্যে আমরা আরেকটু সাহসী হয়ে উঠেছি। ও ব্যাটা ঐ টকটকটকটক ছাড়া আর কি-ই বা করার ক্ষমতা রাখে। তাছাড়া আমি এখন নামাজেও নিয়মিত, কোরান তেলওয়াত করি, বিভিন্ন আমলও করে যাচ্ছি, চার-কুল দিনের মধ্যে অসংখ্যবার পড়ি; আসতাগফিরুল্লাহ পড়ি শতবারেরও বেশী। এসব সত্যিই আমাকে বাড়তি শক্তি জোগাড়, সাহস তৈরী করে।
 
ঐ ভদ্রলোকের কষ্ট হয় সেই ব্রুকলিন থেকে এসে আমাকে কোম্পানী দেয়ায়, নিজের কাজেও কষ্ট হয়; তাই তাকে ধন্যবাদ দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বললাম ‘আমরা থাকতে পারবো এখন, বেশী সমস্যা হলে আপনাকে জানাবো’।
 
গত ৩/৪ দিন আগে সে আমাকে ফোনে জানালো ওই হারামী জিন তার নিজের বাসার রিফ্রিজারেটরেও ঐ টকটকটকটক আওয়াজ করে ওখানেও তার উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে।
 
আমেরিকানরা জিনকে দেখে প্যারানরমাল এক্টিভিটিজ হিসাবে বা সুপারন্যাচারাল কিছু মনে করে। তাদের ধারণা কোন মৃত মানুষের অতৃপ্ত আত্মা পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে যেতে পারছে না- বা কেউ যদি খুন হয়, আত্মহত্যা করে থাকে বা অকাল মৃত্যুতে তাদের আত্মারা পৃথিবীতেই থেকে যায় এবং মানুষকে বিরক্ত করে। আমেরিকায় অসংখ্যা ‘প্যারানরমাল সোসাইটি’ রয়েছে। আমি দু’টি সোসাইটির সংগে যোগাযোগ করেছি। তাদের একটা লং আইল্যান্ডের অপরটি স্ট্যাটান আইল্যান্ডের। আমি যেহেতু লং আইল্যান্ডে রয়েছি সেহেতু আমার জুরিডিকশনের সোসাইটিটি আমার বাসায় আসতে চায় যন্ত্রপাতি নিয়ে চেক করার জন্য; তারা ডেট দিয়েছে ৪ঠা অক্টোবার যদিও আমি ততদিন এই বাসায় থাকবো না। আর স্ট্যাটান আইল্যান্ডের সোসাইটি আমাকে পবিত্র কোরাণ পরে আমল করার পরামর্শ দিয়েছে। তারা এটাও বলেছে ভয় না পেতে- ওরা আমার কোন ক্ষতিই করতে পারবে না, সে ক্ষমতা তাদের নেই- ওই ভয় দেখানো পর্যন্তই। সেই সংগে তারা আমাকে কিছু এডভান্স পরামর্শও দিয়েছে। আমি যে আমলগুলি করি সেগুলি করার সময় যেন কল্পনায় একটা ‘বাবল’ তৈরী করে এমন একটা দৃশ্য কল্পনা করি যে ওই বাবলটির ভেতরে আমরা রয়েছি অত্যন্ত সুরক্ষিত এবং ঐ অশরীরি আত্মা সেই সুরক্ষিত বাবলের ভেতরে আসতেই পারবে না। সুতরাং আমরা সম্পূর্ণ সেইফ। চমৎকার পরামর্শ। ওরা আমাকে বারবার করে বেশী বেশী পবিত্র কোরাণ তেলওয়াতের পরমর্শও দিয়েছে, অনেক সাহস দিয়েছে।
 
ওহ, এরমধ্যে আরও কিছু ঘটেছে, জিনটি আমার গাড়ীতেও প্রায়ই থাকে, বিরক্ত করে, আওয়াজ করে; এবং ঐ ভদ্রলোককে শারীরিকভাবেও হয়রানী করে, ‘প্রেসার’ দেয় সম্পূর্ণ শরীরে। ববি নিজেও বলেছে তাকেও মাঝে মধ্যে কেমন একটা প্রেসার দেয়, গাড়ীতে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় ইত্যাদি।
 
কোন ভাবেই একে আমাদের থেকে তাড়াতে পারছি না।
বিরক্ত রীতিমত। কি করবো বুঝতে পারছি না। এমন কাউকে খুঁজছি যে জিন’কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আমাদের নবী হযরত সুলায়মান (আ) জিনদের নিয়ন্ত্রণ করতেন; বাদশাহ সুলায়মান (আ) কে প্রচন্ড ভয় পেত জিনেরা।
 
শুনেছি অনেক হুজুর রয়েছেন যারা জিনকে বোতলে ঢুকাতে পারে। ইতিমধ্যে ২/৩ জন ভন্ড হুজুরের সন্ধান পেয়ে গেছি। প্রকৃতপক্ষেই ‘ক্ষমতাবান’ কেউ যদি আপনার পরিচিত থেকে থাকে- আমাকে তার ফোন নাম্বার দিলে উপকৃত হবো।
 
খুব বিপদে আছি।
   Send article as PDF