জোড়া চড়

১৯৯৯ সালে সর্বশেষ লোকল পাবলিক বাসে চড়েছি।
লোকল বাস সার্ভিস এক কথায় চরম বিরক্তিকর এবং নষ্টামীপূর্ণ।
সেসব ব্যাখ্যায় আর যেতে চাচ্ছি না।
 
যাই হোক, লোকল বাসে যখন উঠতাম তখন আমি হয়ে যেতাম এই পৃথিবীর সবচে ভদ্র ও সভ্য বাসযাত্রী। আমার কাছে তখন ওটাই ছিল- সেই বিরক্তি এড়ানোর একমাত্র উপায়।
 
একবার ঢাকার কোন এক লোকল বাসে উঠেছি।
আমার ঠিক সামনের সিটে এক লোক, কিছুতেই সে তখন ভাড়া দিবে না- গন্তব্যের কাছাকাছি পৌছে ভাড়া দিবে। কনডাকটার প্রায় সকলের ভাড়াই কেটেছে- সেই লোক তবুও ভাড়া দিতে চাচ্ছে না, কারণ তার নাকি অনেক বাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে বাস সার্ভিস নিয়ে।
 
অবশেষে একটা সময় সে ভাড়া দিতে রাজী হলো ঠিকই কিন্তু সে ভাড়া কিছু কম দিবে।
এবার কনডাকটার তার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারালো।
 
সে তার কালো ও শক্ত দুই হাত জোড়া করে ঐ যাত্রীর দু’গালের কাছাকাছি নিয়ে নিয়ে বললো, ‘শালা তোকে এমন জোড়া চর দিমু না- সারা জীবন মনে রাখবি’।
 
সে ঘটনা সত্যিই আমি ভুলতে পারিনি।
আজ আবারও মনে পরে গেল।
 
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা ও প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে সমালোচনা করায় আজ আদালত কোন এক অধ্যপককে ২৪-ঘন্টার মধ্যে আটকের নির্দেশ দিয়েছে।
 
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা ও বিচারপতিদের নিয়ে ‘বেশ্যার দালাল’ শিরনামে আমার একটা লেখা রয়েছে- অনেকেই পড়েছেন। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি ‘টাকা হলে’ বাংলাদেশের বিচারপতিদের ঘুষ দিয়ে যে-কোন রায় দেয়ানো যায় বা স্থগিত-তথা বাতিলও করা যায়; শুধুমাত্র যদি সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা (ইন্টারেষ্ট) না থাকে। যেমন: তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের নামে রাষ্ট্রিয় হত্যাকান্ডসমূহতে দেয়া ও কার্যকর করা রায়গুলি। বিচার ব্যবস্থাকে গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে ঐ সমস্ত নিন্দনীয়, ‘জঘন্য হত্যাকান্ডে’।
 
কথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ না কি ট্রাইবুনাল (আমি খাড়ায়া যামু, আপনি বসায়া দিবেন) এর বিচারপতিরা তো স্রেফ বেশ্যাপাড়ার দালালেরও নীচে।
 
বহুল সমালোচিত ১৮+ ঐশীর মৃত্যুদন্ডের রায়ের বদলে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের বক্তব্য হলো- ‌নিম্ন আদালত কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে ওই রায় দিয়েছিলো’ মানে, আদালত নিজেই বলে দিচ্ছে যে আদালত আবেগপ্রবণ হয়েও ফাঁসি দিতে পারে।
 
‘রাত ২টায় হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী চেতনানাশক ও ছুরি কেনা ছিল আগেই। রাতে কফির সাথে চেতনানাশক মিশিয়ে রাখে ঐশী। রাত ২টার দিকে গভীর ঘুমে যখন বাবা-মা আচ্ছন্ন, তখন বাবা-মায়ের রুমে হত্যার উদ্দেশ্যে যায় ঐশী। প্রথমে সে বাবার গলায় ছুরি চালায়। ছুরির ‘কৌশলি’ আঘাতে শ্বাসনালি কেটে যায় বাবার। এরপর কোনো ছুরিকাঘাত করেনি ঐশী।
মায়ের ওপর তার প্রচন্ড ক্ষোভ ছিল। তাই মাকে হত্যার সময় সে আরো বেশি হিংস্র হয়ে উঠে। মা স্বপ্নার শরীরে উপর্যুপরি ১১টি ছুরিকাঘাত করে। গলায়, ডান পাঁজরে, বুকে, পেটে ও পিঠে ছুরিকাঘাত করে রক্তাক্ত করে মাকে। হত্যাকান্ড শেষে ধারালো ছুরিটি নিজেই পরিষ্কার করে রেখে দেয় ড্রয়ারে।`
 
আদালতের আজকের রায়ে বোঝা যাচ্ছে, ‘পিতা-মাতাকে হত্যা করলে যাবজ্জিবন দেয়া যায়’।
 
সাউথ আফ্রিকায় প্রথমবার মানুষ হত্যা করলে মাফ করে দেয়া হয়, দ্বিতীয়বার হত্যা করলে অল্পস্বল্প কিছু জরিমানা করা হয়; তৃতীয়বার কাউকে হত্যা করলে বেশ করে ধমকে দেয়া হয়!
 
বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে- সাউথ আফ্রিকা উন্নত দেশ; তাকে অলরেডী স্পর্শ করার পথে।
 
গোলাম আজমের ছেলে বিগ্রেডিয়ার আজমী আজ অনেক মাস হলো গুম হয়ে রয়েছেন; আরও হাজার হাজার বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীকে পুলিশ, ডিবি ও রাব দিয়ে গুম বা ক্রস ফায়ারে হত্যা করা হয়েছে অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায়।
 
বাংলাদেশের বিচার, আইন, বিচারপতি, প্রধান বিচারপতিরা সেসব দেখার সময় পায় না। ওরা নাকি আইনের রক্ষক!
 
প্রধান বিচারপতি নিজে প্রকাশ্য আদালতে বলেছে মীর কাশের আলীর ছেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক- আবার সেই একই সিনহা বাবু বলেছেন কাউকে ২৪-ঘন্টার বেশী আদালাতের বাইরে আটক রাখা যাবে না।
 
এই হচ্ছে আপাত বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা যা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের মহাসড়কে!
 
আমি আজ মনে মনে মহাসড়কের সেই ১৯৯৯ সালের বাস কনডাক্টরকে খুঁজছিলাম। ওকে যদি পাওয়া যেত তাহলে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা’র দুই গালে ওকে দিয়ে জোড়া চড় দিতাম সংগে সিনহা বাবুর মুখে কিছু থুথুও!
 
শখটা পূরণ হলো না।
 
আমি আবারও প্রকাশ্যে বাংলাদেশের সো-কলড আদালত ও প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র বাবুকে অবমাননা করলাম সংগে বোনাস থুথুও।
 
সিনহা বাবুর আদালত কি আমাকে ২৪-বছরের মধ্যে ‘আদালত অবমাননা’ করার জন্য আটক করার ক্ষমতা রাখে?
   Send article as PDF