মোবাইল ব্যাংকিং

নাসিবা উসমানোভা উজবেকিস্থানের মেয়ে।
এখন স্বামী সংসার নিয়ে বসবাস সিকাগো শহরে।
 
নাসিবা আমার একজন ক্লায়েন্ট।
আমাকে কিছু টাকা পাঠাবে সে সিকাগো থেকে। আগেও পাঠিয়েছে- আমার ব্যাংক অব আমেরিকার একাউন্টে।
 
সে আমার সেল ফোন নাম্বার বেশ ভালো করেই জানে- কিন্তু কাল সব কনফার্ম হবার পর আমার মোবাইল নাম্বারটি সে ডাবল চেক করে নিল।
 
আমি দেরী করে ঘুম থেকে উঠি। এই বদ অভ্যাসটা কোন ভাবেই ত্যাগ করতে পারছি না।
১১টায় ঘুম ভাঙার পর দেখি নাসিবা’র টেক্সট আমার ইনবক্সে:
‘টাকা পেয়েছো?’
আমি সংগে সংগে আমার একাউন্ট চেক করলাম। উত্তর দিলাম, ‘কৈ- না তো!’
 
সে কিছুটা অবাক হয়ে বলল, ‘আমি তো আরও প্রায় ঘন্টা খানেক আগেই টাকা পাঠিয়েছি তোমাকে’।
 
এমন তো হয় না কখনও। এদেশে রিয়েল টাইম ব্যাংকিং।
আমি বললাম, ‘না আমি তো ব্যাংক একাউন্ট চেক করলাম, কোন টাকাই তো আসেনি আজ’।
 
ও বলল, ‘আমি তো তোমার মোবাইলে টাকা পাঠিয়েছি; দেখ তোমার সেল ফোনে টেক্সট গেছে কি না’।
 
সত্যি বলতে কি আমি আমেরিকায় এসে মোবাইল ব্যাংকিং বিষয়টা ভুলেই গিয়েছিলাম।
তাছাড়া আমেরিকায় কিভাবে মোবাইল ব্যাংকিং করে সেটাও জানি না। প্রয়োজনই হয়নি কোনদিন। মোবাইল ব্যাংকিং কিভাবে করে- তাও জানি না; অবশ্য সেটা সমস্যা না- কিন্তু সমস্যা হলো, সময় নষ্ট হবে কি না!
 
যাই হোক, মোবাইল চেক করলাম।
আমার বাসায় ‘স্পিরিন্ট’ অপারেটরের নেটওয়ার্ক ভাল না, খুবই পোর।
মোবাইল ফোনটি নিয়ে জানালার কাছে গেলাম এবং তখনই একটা টেক্সট পেলাম, ‘নাসিবা উসমানোভা তোমাকে ১০০০ ডলার পাঠিয়েছে; তুমি টাকাটা এক্সেপ্ট করতে নীচের লিংকে ক্লিক করো’।
 
ক্লিক করলাম লিংকটিতে।
টাকার এমাউন্ট বসালাম। অপারেটর থেকে একটা কোড পেলাম, সেটাও বসালাম।
অতপর, জানতে চাইলো আমি কোন ব্যাংকে আমার টাকাটা পেতে চাই। পুল-ডাউন মেনুতে আমেরিকার সবগুলি ব্যাংকের নাম দেখলাম। আমি আমার ব্যাংক সিলেক্ট করে ও একাউন্টটিতে লগইন করলাম। দেখলাম আমার একাউন্টে ১০০০ ডলার জমা হয়ে গেল।
 
কোন চার্য কাটতে দেখলাম না। নাসিবা’র কোন ট্রান্সফার ফি কাটেনি, জানলাম ওর কাছ থেকে।
 
দিস ইজ আমেরিকা।
 
এবার বাংলাদেশের কথা বলি।
দুই বছর আগে দেশ ছেড়েছি- স্মৃতিশক্তি প্রতারণাও করতে পারে।
 
তবে পরিষ্কার মনে আছে ব্রাক ব্যাংকের ‘বিকাশ’ নামের মোবাইল ব্যাংকের ১০,০০০ টাকা গ্রহণ করতে আমাকে প্রায় ২২৫ টাকা সার্ভিস ফি দিতে হতো।
 
টাকাটা তুলতে আমাকে বিকাশের এজেন্ট এর দোকানে যেতে হতো, নিজে না গেলে কাজ হতো না। অনেক সময় এজেন্টের কাছে টাকাও থাকতো না। অন্য এজেন্টের কাছে যেতে হতো।
 
বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের মানুষকে না কি ডিজিটাল সেবা দিচ্ছে- ‘ডিজিটাল সেবা’র মানে বুঝে ড. আতিয়ার? পিএইডি করলেই শিক্ষিত হওয়া যায় না- সার্টিফিকেট হয়তো পাওয়া যায়। ওরা তো কিছু হলেই দলবল নিয়ে ইওরোপ আমেরিকায় ‘সরকারী ভ্রমন’ এ বের হয়- কি শিখে ইওরোপ আমেরিকা থেকে?
 
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলিতে আরও একটা ‘সেবা’ চালু রয়েছে- ‘এসএমই ব্যাংকিং’।
 
মনে করেন আমি ব্যাংক।
আপনি আমাকে ১০ লক্ষ টাকা দেবেন। বিনিময়ে আপনি ১২% ইন্টারেষ্ট পাবেন।
আর, এর বিনিময়ে আপনাকে আমি ২০ লক্ষ টাকা দেব- এসএমই লোন হিসাবে।
– ১ লক্ষ টাকা সার্ভিস চার্য নিবো ঐ এসএমই লোনটি প্রসেস করতে।
– আপনি আমাকে সকল ‘হিডেন ফি’সহ ২৫% ইন্টারেষ্ট দিতে বাধ্য থাকবেন।
– যদি না দেন- তাইলে আপনার বাড়ীতে গুন্ডা-মাস্তান পাঠিয়ে আপনার চৌদ্দগুষ্টিকে উদ্ধার করবো।
– আপনি আমাকে ৩টি আপনার সিগনেচার করা ব্লাংক চেক দিবেন, জামানত হিসাবে।
– সরকার এনআইএক্ট করে দিয়েছে আমি ওখানে ঐ ২০ লাখ টাকার ৩গুন এমাউন্ট বসিয়ে আপনার বিরুদ্ধে এনআইএক্ট এ মামলা করে দেবো- টাকা উদ্ধারের জন্য।
– আমার টাকা হলো ‘পাবলিক মানি’; আর আপনার টাকা হলো গরু-ছাগলের টাকা- ওটার কোন মূল্য নেই।
– এবং সবশেষে অর্থঋণ আদালতে আপনার বিরুদ্ধে ৬০ লাখ টাকার মামলা করে দেব।
 
এবার আপনি ব্যবসা করেন।
ব্যবসা করতে পারেন আর নাই বা পারেন-
– ট্রেড লাইসেন্স ফি দিতেই হবে।
– বছর শেষে ইনকাম ট্যাক্স দিতেই হবে।
– ভ্যাট নিয়মিত পরিশোধ করতেই হবে।
 
আপনি এবার মারা যান- নো প্রোবলেম। আপনার মতো গরু-ছাগল বেঁচে থাকলেই দেশের কি আর মারা গেলেই বা দেশের কি।
 
সব কিছুর তো মালিক তারেক রহমান আর সজীব ওয়াজেদ জয়।
 
বাংলাদেশে কিভাবে ২০টা বছর ব্যবসা করেছি- এখন ভাবতেও পারি না।
 
জাহান্নামও বাংলাদেশের চেয়ে ঢের ভালো হবার কথা।
   Send article as PDF