কোটা

অযোগ্য, অথর্ব লোকের হাতে ক্ষমতা দেয়াকে-ই বলা হয় ‘কোটা’।
 
বাংলাদেশ তার জন্মলগ্নকাল থেকেই বিভিন্ন কোটা’য় বন্দি হতে হতে আজ কোটা-প্রথায় ক্ষমতাপ্রাপ্তদের হাতেই আটকে বসে রয়েছে।
 
আমার কৈশরে দেখেছি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মারাত্মক বৈসুম্যপূর্ণ নারী কোটা। সেখানে ছেলেদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হতো ন্যূনতম গ্রাজুয়েট কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে মেট্রিক পাশ হলেই নাকি ‘যোগ্য’‍!
 
এরপরও আবার নারীদের জন্য বরাদ্দ থাকতো অলমোষ্ট ৬০% কোটা।
সেই কোটায় যুক্ত মেট্রিক-পাশ নারীরা নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। তৈরী হচ্ছে জিপিএ-পাইপ প্রজন্ম।
 
ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।
এখানেও রয়েছে নারী কোটায় নির্বাচিত একজন ভাইস চেয়ারম্যানসহ আরও কি কি!
 
দেশের লোকল গভর্ণমেন্টকে নেতৃত্ব দিচ্ছে ওসব যোগ্যতাহীন, অথর্ব চেহারা-সর্বস্ব কোটাযুক্ত নারীরা- আর চলছে বাংলাদেশ লাফিয়ে লাফিয়ে।
 
জাতিয় সংসদ।
যেখানে বসে তৈরী হবার কথা দেশের আইন। সেখানেও নাকি ৫০/৬০জন মহিলাকে কোটার জোরে সংসদ সদস্য, মানে আইন-প্রণেতা। এদের একজনকে কিছুদিন আগে দেখেছিলাম দেখে দেখে বাংলাটা ঠিকমত রিডিংও পড়তে পারে না।
 
এরা তৈরী করবে আইন- আর দেশ যাবে এগিয়ে! হা-হ হাহ!
 
স্বামী মারা গেলে স্ত্রী, পিতা মারা গেলে সন্তান- এ আরেক ‘অঘোষিত কোটা’য় চলছে দেশে রাজনৈতিক নেতা নির্বাচন। শেখ হাসিনা, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, সজীব জয়, রওশন এরশাদরা এভাবেই নেতৃত্ব দিচ্ছে দেশকে!
 
এই কোটায় যারা তোষামদী করে- তারা কেন অন্য কোটার বিরোধীতা করবে?
 
অযোগ্য, অথর্ব লোকের হাতে ক্ষমতা দেয়াকে-ই বলা হয় ‘কোটা’।
শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিলেন প্রায় সাড়ে তিন বছর।
 
বিশাল একটা হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন তিনি। ওনার কাছে চাটুকারীতাযুক্ত কোন আবদার নিয়ে কেউ গেলে তিনি সেই ‘আবদার’ অপূর্ণ রাখেননি কোন কালেও।
 
কেউ যেতেন বাজার থেকে কেনা ‘নিজ পুকুরের বড় মাছ’ নিয়ে; চাকুরীর আবদার- পেয়ে যেতেন।
কেউ যেতেন হাত কচলিয়ে কচলিয়ে তোষামদীতে মুখ দিয়ে ফেনা বের করে- কিছু নগদ অর্থ সাহায্য চাইতে- সেটাও পেয়ে যেতেন।
কেউ যেতেন ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগানে শ্লোগানে- ধর্ষন বা খুন বা চুরি কিংম্বা ডাকাতি করে; ক্ষমা চাইতে- বিশাল হৃদয়ে শেখ মুজিব তাকেও ক্ষমা করে দিতেন মুহূর্তেই।
 
এসব ক্ষমাপ্রাপ্ত খুনী, ধর্ষক, চোর, টাউট, বাটপাররা এবং মুলত মিষ্টি মিষ্টি কথা বলায় অভ্যস্ত তোষামদরাই স্বার্বক্ষনিক বেষ্টিত থাকতো শেখ মুজিবের চারপাশে।
 
বিশাল হৃদয়ের শেখ মুজিব তার ‘ব্যক্তিগত ক্ষমতার কোটা’ ব্যবহার করে তাদের দিয়েই নেতৃত্ব দিতেন এই অভাগা দেশটার।
 
আর তার পরিণামে ছিল ‘কম্বল চোর’, ‘লবন চোর’, ‘রক্ষী বাহিনী’, ৭৪’র দুঃভিক্ষ এবং শেষটাই দুঃখজনক পনেরই আগষ্ট।
 
যাই হোক, এভাবেই আস্তে আস্তে দেশে একটার পর একটা কোটা ব্যবস্থা ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছায় দেশের সাধারণ মানুষের ঘাড়ের উপরে গেড়ে বসেছে।
 
বেগম খালেদা জিয়া প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই ‘মেয়েদের শিক্ষা’ ফ্রি এবং ‘মেয়েদের শিক্ষার বিনিময়ে টাকা’ এজাতিয় এক কোটা ব্যবস্থা চালু করলেন। কৈ কাউকে তো তখন এই কোটার বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখা যায়নি।
 
এই বাংলাদেশী মোসাহেব জাতি- সেদিনও চুপ ছিল।
 
সরকারী চাকুরীতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বা তার সন্তান, নাতি-পুতিদের জন্য রয়েছে অদ্ভুৎ কোটা ব্যবস্থা। দেশের কোটা ব্যবস্থার আওতায় আসা এসব ক্ষমতাসীনরাই এসব কোটা ব্যবস্থার প্রচলন করেছে- কাউকে তখন বিরোধীতা করতে দেখা যায়নি।
 
মুক্তিযোদ্ধারা কি যুদ্ধে গিয়েছিলেন কোটা সুবিধা পেতে?
এসব অনৈতিক সুবিধা দাবী করাই কি তাদের দেশপ্রেমের নমুনা?
মুক্তিযোদ্ধার ছেলে, নাতি-পুতি, তারপর কারা আসবে- শুনি?
 
বাংলাদেশে চাকমা জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার হার সবচে বেশী।
অনেক যোগ্য ছেলে মেয়ে দেখা যায় চাকমাসহ উপজাতীয় অন্যন্য গোষ্ঠীতে। আপন যোগ্যতায় তারা বলিয়ান; কিন্তু তারপরও তাদের জন্য সরকারী চাকুরীতে রয়েছে কোটা ব্যবস্থা। কেন?
 
বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষকদের সন্তানরা বিশেষ কোটায় নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারেন- প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকলেও তাদের চলে। কেন?
 
সরকারী আমলাদের বা কর্মকর্তারা ফৌজদারী অপরাধ করলেও নাকি তাদের গ্রেফতারে প্রশাসনিক বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। এটা কোন কোটা?
 
দেশের যে-কোন মেয়ে কোন একটা ছেলের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন অাইনে মামলা করলেই ঐ ছেলেকে অজামিনযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা হয়, জেলে পোড়া হয়। এমনকি সেই মামলা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ভূয়া বা হয়রানী মামলা ছিল। এটা কোন কোটা?
 
অার শেষটায় দেখা যায় দেশে কোন আন্দলোন হলেই পুলিশ ব্রাশ ফায়ার করে সাধারণ মানুষকে হতাহত করে ফেলে আন্দোলন দমনের নামে। পুলিশের কোন বিচার নেই। পুলিশ ইচ্ছে করলেই খুন, ক্রস ফায়ার, গুম, চোখ তুলে নেয়া, নির্যাতন করে পুংগ করে দিচ্ছে। পুলিশের একটা লোমও কেউ ছিড়তে পারছে না। এটাই বা কোন কোটার আওতায়?
 
বিক্ষিপ্তভাবে কোনকিছুই কখনও সফলতার মুখ দেখে না।
আজ যে কোটা-বিরোধী আন্দোলন হচ্ছে, সেই আন্দোলনে বহন করা হচ্ছে শেখ মুজিবের ছবি। তোষামদীরও একটা সীমা থাকে। এরা সব সীমা অতিক্রম করেছে।
 
কেউ কেউ বলবেন এটা কৌশল।
কৌশল করে, তোষামদী করে, পুলিশের অনুমতি নিয়ে যারা আন্দোলন করে- তারা তো স্রেফ ‘নিজের নাম ফোটানোর জন্য’ই রাস্তায় নামে; মাইক্রোফান ধরে টিভি ক্যামেরার সামনে। এরচে বেশী কিছু কি হয় এতে?
 
বাংলাদেশের বর্তমান ঐ সংবিধান নামের অশ্লীল-গ্রন্থটি আগে পুড়ে ফেলুন।
তারপর চলুন নতুন একটা পবিত্র সংবিধান তৈরী করি; যে সংবিধান শুধুই সাধারণ মানুষের কথা বলবে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, প্রতিটি মানুষের সমঅধিকার, ন্যায় বিচার, শৃঙ্খলা ও সভ্যতার পথ দেখাবে- যার একটাও নিশ্চয়তা বর্তমান সংবিধান দেয় না।
 
আর নয়তো এভাবে চলতেই থাকবে।
পারিবারিক কোটায় ক্ষমতায় আসা শেখ হাসিনারা কোনদিনই সাধারণ জনগণের পক্ষে কোটামুক্ত দেশ উপহার দেবার সক্ষমতা রাখেনা। সেই সক্ষমতা অর্জন করে শেখ হাসিনা, বেগম জিয়ারা কোনদিনই ক্ষমতায় যেতে পারবে না।
 
এবং
তোষামদী ত্যাগ করুন।
তোষামদী দিয়ে আন্দোলন হয় না।
 
শেষটায় আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলবো, বাংলাদেশের ততদিন পর্যন্ত কোন আন্দোলনই সফল হবে না- যতদিন পর্যন্ত না পুলিশের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী একটা সশস্র আন্দোলন হবে; পাক হানাদারবাহিনীকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে ঠিক সেভাবে বেশ কিছু হানাদার পুলিশ অফিসার হত্যা করতে পারলেই একমাত্র আন্দোলনে করে সফলতা পাওয়া যাবে।
 
অন্য আর একটাও বিকল্প রাস্তা খোলা নেই।
শুধু শুধু আন্দোলনের নামে কিছু নিরীহ ছেলেকে রক্তাক্ত করে কোনই লাভ নেই।
   Send article as PDF