ব্যবসা করবেন? ব্যবসা!

যে-কোন ব্যবসা-ই আপনি করতে পারেন।
 
সব ব্যবসা-ই লাভজনক যদি বিক্রয়ের স্থান, কাল ঠিক থাকে- ঐ প্রডাক্টের পর্যাপ্ত ক্রেতা থাকে এবং সবচে বড় হিসাব হলো আপনাকে বিক্রি করে প্রফিট করার চেয়ে ক্রয়ের সময় লাভ করতে হবে সর্বাগ্রে।
 
কথাটা কি বললাম?
কেনার সময় লাভ করতে হবে। মানেটা পরিস্কার, কিনতে হবে জিতে।
 
আরও পরিস্কার করে বললে, যখন পন্যটি আপনি ক্রয় করবেন দোকানে বিক্রি করার জন্য তখনই আপনাকে জিততে হবে অর্থাৎ ম্যাক্সিমাম কম মূল্যে ক্রয় নিশ্চিত করতে হবে- তবেই না অপনি বিক্রি করে বেশী লাভ করতে পারবেন?
 
বোঝা গেল বিষয়টা?
 
এখন, যে-কোন ব্যবসাই আপনি করতে পারেন।
চাল, ডাল, আলু, পেয়াজ, রসুন, বিকেল বেলা কাঁচা রসের চা, সিংগারা বা আলু-পুরি, ভাতের হোটেল, পানের দোকান, তাজা ফরমালিন ছাড়া বা সহ মাছ, গরুর গোস্ত, অথবা ফার্নিচারের দোকান, কিংম্বা ইন্টারনেট সার্ভিস বা মোবাইল ফোনের ব্যবসা নয়তো সরাসরি মোবাইল অপারেটর, বিমান সার্ভিসও দিতে পারেন যদি বেশী টাকা বিনিয়োগ সামর্থ থাকে।
 
চলুন আজ দু’টি ভিন্ন ভিন্ন ব্যবসার লাভ-ক্ষতি নিয়ে আলোচনা করা যাক। মানুষ ব্যবসা করে লাভের জন্য, কেউ ক্ষতি হবে সেই আশা নিয়ে ব্যবসা করে না। আমরাও লাভ নিয়েই আলোচনা করবো।
 
বাংলাদেশে মোবাইল অপরারেটররা ‘ইন্টারনেট সেবা’ বিক্রি করে অনেক অনেক টাকা ব্যবসা করে বলে বিস্তর অভিযোগ, আন্দোলনও দেখা যায়।
 
‘সেলফোন অপারেটররা সরকারী বৈধ সোর্স থেকে প্রতি মেগাবিটস পার সেকেন্ড (এমবিপিএস) ব্যান্ডউইডথ কিনছে ৩৯০ থেকে ৫৫০ টাকায়। এক এমবিপিএস গতির সংযোগে মাস শেষে ডাটা ব্যবহারের পরিমাণ সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫৯২ গিগাবাইট (জিবি)। এ হিসেবে প্রতি জিবি ডাটা কিনতে অপারেটরদের ব্যয় হয় ১৫-২১ পয়সা। তবে সংযোগ বিচ্ছিন্নতাসহ অন্যান্য খাতে ৩০ শতাংশ অপচয় সমন্বয় করা হলেও তা দাঁড়ায় ১ হাজার ৮১৪ জিবি। এতে প্রতি জিবি ডাটা কিনতে অপারেটরদের ব্যয় হয় সর্বনিম্ন ২২ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৩০ পয়সা, দুটোর গড় করলে যা দাঁড়ায় ২৬ পয়সা।’
 
‘বাট, মোবাইল কোম্পানিগুলো গ্রাহকের কাছে এই ইন্টারনেট সেবাটুকুই বিক্রি করছে গড়ে ২১৭ টাকা দামে।’
 
২৬ পয়সায় কিনে মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে তারা গ্রাহকপ্রতি বিক্রি করছে ২১৭ টাকা। বিশাল ব্যবসা, এর উপর কি কোন ব্যবসা আছে? বিদেশী কোম্পানীগুলি দেশের মানুষের টাকা লুটে-পুটে নিয়ে যাচ্ছে।
 
এবার চলুন আমার মোবাইল অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে পরি, গাড়ী ভাংগি, হরতাল ডাকি, লাগলে পিকেটিংও করা যাবে সংগে ফ্রি ভাংচুর, জালাও-পোড়াও।
 
থাক, আন্দোলনে যাবার আগে চলুন আরেকটু হিসাব করি।
 
‘গ্রামীনফোন কোম্পানী দেশের বাজারে সর্বপ্রথম মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সেবা চালু করে। বিটিআরসি আয়োজিত নিলামে গ্রামীণফোন ১০ মেগাহার্টজ তরঙ্গের থ্রিজি প্রযুক্তি কিনে যা দেশের বাজারে অন্যান্য মোবাইল অপারেটরের তুলনায় দ্বিগুণ শক্তিশালী।
 
এই ক্ষমতার তরঙ্গ দিয়ে ফোরজি প্রযুক্তি পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা দেওয়া সম্ভব বলে কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান।’
 
আপনি কি জানেন যে এই ১০ মেগাহার্টজ তরঙ্গের থ্রিজি প্রযুক্তি’র লাইসেন্স নিতে গ্রামীন ফোনকে কতটাকা গুনতে হয়েছে?
 
“৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ঢাকায় থ্রিজি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। ওই নিলামে প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের (স্প্রেকটাম) সর্বোচ্চ মূল্য উঠে ২১ মিলিয়ন মর্কিন ডলার।”
 
প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের থ্রিজি প্রযুক্তি কিনতে বিনিয়োগ করতে হয়েছে ২১ মিলিয়ন ডলার, তাহলে ১০ মেগাহার্টজ তরঙ্গের জন্য দিতে হয়েছে কতো যেন? একটু নিজে নিজে হিসাবটা করুন না এবার? ক্যালকুলেটরে জায়গা হবে না- কমপিউটার নিন।
 
এবার চলুন আমরা একটু হিসাব করি- কেনার সময় কি এরা জিতেছে খুব বেশী?
 
না। জিততে পারেনি।
তাছাড়া এত বিশাল অংকের একটা বিনিয়োগও তাদের এককালীন করতে হয়েছে!
 
আপনি হলে কি করতেন?
বিনিয়োগের টাকা তুলতে মাত্র ২১৭ টাকায় বিক্রি করে তারা কি খুব বেশী একটা লাভ করতে পারবে? এর বাইরে তাদের উচ্চমূল্যে ম্যানপাওয়ার, ইফ্রাসট্রাকচার, ইকুইপমেন্টস এসব কোত্থেকে আসবে, কোথায় যাবে রক্ষনাবেক্ষন হিসাবে?
 
এই পুরো টাকাটাই যাচ্ছে বাংলাদেশের নিরীহ বোকা মানুষদের পকেট থেকে।
আপনি ফেসবুক চালাচ্ছেন, আপনি ইমো ভাইবার চালাচ্ছে আপনার পকেট থেকে আস্তে আস্তে কেটে নিচ্ছে এই টাকা এবং সেখান থেকে মেগাহার্টজ প্রতি ২১ মিলিয়ন ডলার খাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। মোবাইল অপারেটরগুলো আর কত নিতে পারছে? নিজেই হিসাব করুন না!
 
নাহ্।
তাহলে মোবাইল অপারেটরগুলো খুব বেশী একটা ব্যবসা করতে পারছে না।
 
তাহলে মানেটা কি দাড়ালো- সরকার বিদেশী মোবাইল অপারেটরগুলো থেকে আগেই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মুল্যের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে যা সবশেষে আপনার আমার পকেট থেকে কেটে নেয়া হচ্ছে নিয়মিত।
 
তো মশাই, আন্দোলনটা কি এখন গ্রামীন ফোনের বিরুদ্ধে করবেন না কি সরকারের বিরুদ্ধে?
 
তাহলে এই ব্যবসা বাদ। চলুন অন্য ব্যবসা খুঁজি।
 
ফারুক খানের নাম শুনছেন তো, আম্লীগের গত মেয়াদের মন্ত্রী ছিল। সে আর তার ভাই আজিজ খান মিলে সামিট গ্রুপের মালিক। এদের একটা ব্যবসা আছে।
 
এই ব্যবসাটা কিন্তু অন্য রকম।
এরা দুই ভাই কিছু বড় বড় জেনারেটর কিনে আনছে বিদেশে থেকে।
ঐ বড় বড় জেনারেটরগুলোর পোষাকী নাম বার্জমাউন্টেন। একটু কঠিন নাম সবাই ঠিক ঠাক উচ্চারণও করতে পারে না। তো, ঐ বার্জমাউন্টেন মানে- জেনারেটরগুলো চলে ডিজেল দিয়ে।
 
তারা ডিজেল কিনে সরকার থেকে, তারপর সেই জেনারেটরগুলি চালায়।
ভট ভট অাওয়াজ করে তৈরী করে বিদ্যুৎ বা ইলেকট্রিসিটি। তারপর তার ঐ বিদ্যুৎ কোথায় বিক্রি করে শুনবেন?
 
শেখ হাসিনার সরকার ঐ ডিজেল তেল দিয়ে জেনারেটরে তৈরী ‘ইলেকট্রিসিটি’ পাবলিক মানি দিয়ে- মানে আপনার আমার পকেটের টাকা দিয়ে ক্রয় করে প্রতি ইউনিট ২৯ টাকা দামে।
 
অার সেই ২৯ টাকা দামের বিদ্যুৎ বিক্রি করছে মাত্র ৬ টাকা করে।
 
এটা কি কোন কথা হলো?
৬ টাকায় কিনে ২৯ টাকায় বিক্রি করতে পারলে বুঝতাম কিছু একটা করছে- এখানে তো ঠিক উল্টোটা ঘটেছ!
 
তাহলে ঘটনা কি?
 
আসল ঘটনা খুবই সহজ।
শেখ হাসিনা ঐ বিদ্যুৎ কিনছেন তার নিজের টাকা দিয়ে নয়, নয় তার পিতা শেখ মুজিবের বা তার আমেরিকান পুত্র জয়ের টাকায়।
 
বেশী দামে কিনে কম দামে বিক্রি করলে লাভ কোথায়- এটাই তো এখন প্রশ্ন; তাই না?
 
লাভটা তো শুরুতেই ব্যাখ্যা করেছি, ‘কেনার সময় জিততে হবে’।
 
শেখ হাসিনা কেনার সময় জিতেছেন। জনগণের টাকা দিয়ে কিনতে তো তার কোন অসুবিধা হয় না। অসুবিধা হয় না অর্থ মন্ত্রী আবুল মালেরও।
 
প্রতিদিন ১৪৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে ঐ ফারুক খানসদের সামিট গ্রুপ থেকে। তারা ডিজেল পুরিয়ে জেনারেটার দিয়ে বিদ্যুৎ বানায় আর সরকার কিনে ২৯ টাকা প্রতি ইউনিট।
 
ব্যবসাটা ঐ কেনা পর্যন্তই!
যেই বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ পরে ম্যাক্সিমাম ৩ টাকা ইউনিট প্রতি সেই বিদ্যুৎ তথাকথিত উন্নয়নের দোহাই দিয়ে কেনা হচ্ছে ২৯ টাকা প্রতি ইউনিট।
 
আমার আপনার কষ্টের টাকায়, আমার আপনার ট্যাক্সের টাকা থেকে ঐ ২৯ টাকা করে দেয়া হচ্ছে ফারুক খানসদের একাউন্টে।
 
প্রতি ইউনিটে (২৯-৩) অতিরিক্ত ২৬ টাকা হিসাবে সামিট গ্রুপকে দেয়া হচ্ছে দৈনিক ১৪৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মুল্য হিসাবে গত প্রায় ৭ বছর যাবত!
 
কত লক্ষ হাজার কোটি টাকা সামিট গ্রুপ বাংলাদেশের মানুষের টাকা থেকে আত্মস্মাৎ করে যাচ্ছে- একবার হিসাবে করেছেন? এই টাকা বড় ভাগটি যাচ্ছে সজীব ওয়াজেদের জয়ের একাউন্টে।
 
ব্যাংকগুলি একটার পর একটা খালি হয় কিভাবে?
ব্যাংকগুলিতে তারল্য সংকট দেখা দেয় কিভাবে?
রিজার্ভের টাকায় টান পরে কিভাবে?
সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে আমেরিকায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের মামলার কথা শোনা যায় কিভাবে?
 
এই সব প্রশ্নের উত্তর মিলে যায় ফারুক খানসদের ঐ ২৬ টাকা ইউনিট প্রতি ১৪৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎের হিসাবের মধ্যেই।
 
বাংলাদেশে এখন এটাই সেরা ব্যবসা।
 
খেয়ে ফেলুন পাবলিক মানি।
কারও কোন দায় নেই!
 
ঐ টাকা দিয়ে কিনে ফেলবেন নপুংসক পুলিশ, নপুংসক রাব, নপুংসক সেনাবাহিনীর জেনারেল, নপুংসক বিচারপতি, নপুংসক আমলা, নপুংসক এমপি, নপুংসক মন্ত্রী।
 
শেষমেষ দেশটাই আজ নপুংসক!
   Send article as PDF