একটি ব্রান্ড নিউ আর্টিকেল

আপনি যেদিন থেকে বুঝে ফেললেন যে, লক্ষ্য পূরণে ‘আপনার চুড়ান্ত নেতা’ পেয়ে গেছেন- ঠিক সেদিন থেকেই আপনার ‘নিজস্বতা, বুদ্ধিমত্তা, একাগ্রতা, সৃষ্টিশীলতা’ লোপ পেতে শুরু করবে এবং আপনি সীমাবদ্ধ হয়ে যাবেন।
 
নিজের যোগ্যতার উপর আস্থা হারাতে নেই।
 
আপনি যদি আওয়ামী লীগ করেন তাহলে আপনার কাছে শেখ মুজিব এর অবস্থান ঈশ্বরেরও কাছাকাছি। আপনি মনে করেন, বিশ্বাস করেন ‘শেখ মুজিব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী’। শেখ মুজিবের উপর কেউ নেই- শেখ মুজিবের চেয়ে বড় হওয়া সম্ভব না। শেখ মুজিব না জন্মালে বাংলাদেশ হতো না ইত্যাদি।
 
অর্থাৎ আপনি একজন সীমাবদ্ধ মানুষ।
আপনার চিন্তা শক্তি ম্যাক্সিম্যাম শেখ মুজিব পরিবার পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে। আপনি ক্ষুদ্র। আপনার চিন্তা ক্ষুদ্র। আপনার মানসিকতাও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র।
 
আপনি নিজস্ব কিছু চিন্তা করার যোগ্যতা হারিয়েছেন- আপনার নিজস্ব বিশ্বাস থেকে।
 
আপনি ভাবেন শেখ হাসিনা যেটা ভাল বুঝেন সেটাই শেষ কথা।
শেখ হাসিনার চিন্তার বাইরে নতুন কোন কিছু চিন্তা করারও সুযোগ নেই।
 
অর্থাৎ আপনি প্রথমেই নিজেকে ‘বামন চিন্তাবিদ’ হিসাবে উপস্থাপন করে ফেললেন।
 
এবং এই ক্ষুদ্রতা থেকে আপনি আর বের হতে পারবেন না।
দুঃখজনক সত্য হলো- আপনি যদি বের হতেও চান তাহলে ‘ম্যাক্সিম্যাম ড. কামাল হোসেন’ পর্যন্ত যেতে পারবেন।
 
তোফায়েল আহমেদ যখন শেখ হাসিনার প্রথম মন্ত্রী সভায় মন্ত্রীত্ব বঞ্চিত হলেন, এমনকি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম থেকেও বাদ পরলেন তখন তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেবার কথা ভেবেছিলেন। তিনি নিজে আমাকে বলেছেন, ‘আমি কি করবো? আমি তো ড. কামাল হতে পারবো না। আওয়ামী লীগের বাইরে আমার কোন অস্তিত্ব নেই। তারচে বরং প্রয়োজনে রাজনীতি থেকেই অবসর নেবো।’
 
আমি সত্যিই অবাক হয়েছিলাম, হতবাক হয়েছিলাম। তোফায়েল আহমেদ এর মতো একজন সাহসী, দূরদর্শী নেতাকেও কতটা ক্ষদ্রাতিক্ষুদ্র ‘বামন চিন্তাবিদ’ এ পরিণত করেছে এই আওয়ামী লীগ।
 
সজীব ওয়াজেদ জয়, যিনি কিনা ইন্ডিয়া থেকে পড়াশোনা করে ঢাকার ধানমন্ডিতে আইটিসিএল এ কমপিউটার সেলসম্যান কাম হার্ডওয়ার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে দীর্ঘদিন জব করেছেন তাকে বানিয়ে দেয়া হয়েছে ‘প্রধানমন্ত্রীর আইটি উপদেষ্টা’- মাসিক ২ লাখ ডলার বেতন নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে যা ফরেন রেমিটেন্স থেকে পরিশোধ করা হচ্ছে।
 
আজ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতার কাছে এই সজীব ওয়াজেদ জয় একজন ‘বিখ্যাত বিজ্ঞানী’, একজন কথিত প্রযুক্তিবিদ! বাজারের একজন মুরগী বিক্রেতা যে প্রাণীবিজ্ঞানী নন – সেটা মানুষকে কে বোঝাবে?
 
আপনি যদি আওয়ামী লীগ হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে সেটা কবুল করতে হবে। মানতে হবে। বিশ্বাস করতে হবে। আপনার রক্তের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে হবে যে সজীব ওয়াজেদ জয়ের মতো বড় প্রযুক্তিবিদ পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টা নেই।
 
আপনি কতটা ক্ষদ্রতায় মিশে গেলেন- সেটা কি একটিবারও ভেবে দেখেছেন?
 
আপনি যদি আওয়ামী লীগ করেন তাহলে আপনাকে মানতে হবে শেখ মুজিব পরিবারের বাইরের কেউ দেশের ‘সরকার প্রধান’ হতে পারবে না- আপনি নিজে তো নন-ই।
 
অর্থাৎ আপনি নিজে নাকে খত দিয়ে রাজনীতি শুরু করলেন যে, আপনি রাষ্ট্রনায়ক হবার অযোগ্য।
 
সব যোগ্যতাই মুজিব পরিবারের।
 
আপনার মতো অযোগ্যদের কাছ থেকে দেশ কি পেতে পারে?
কিছুই না। আপনি শুধু দেশটাকে চুষে খেতেই পারবেন- কিছুই দেবার মুরোদ নেই আপনাদের মতো অযোগ্যদের কাছে।
 
আর যেহেতু যোগ্যতাই নেই আপনার, সেহেতু নিজেকে ক্ষমতার কাছাকাছি রাখতে আপনি একজন ‘অতি বড় মাপের ব্যক্তিত্বহীন মোসাহেব’ এ পরিণত হয়ে উঠেন।
 
তোষামদী-ই শক্তি।
 
একজন ‘পুরুষ’ও আজ আওয়ামী লীগে বা বিএনপিতে খুঁজে পাওয়া সম্ভব না।
 
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র সৎ, যোগ্য, ভদ্র রাজনীতিবিদ ছিলেন এবং দেশের উন্নয়নে অক্লান্ত কাজ করে গেছেন। বাংলাদেশকে প্রকৃতপক্ষে একটি দেশের ইনফ্রাস্ট্রাকচার দিয়েছিলেন বাস্তবে জিয়াউর রহমানই।
 
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে ‘গণতন্ত্র’ ফিরিয়ে দিয়েছেন- যে গণতন্ত্র শেখ মুজিব ‘বাকশাল’ নামের এক একনায়ক ও পারিবারিক খাঁচায় বন্দ্বি করে ফেলেছিলেন।
 
এমনকি জিয়াউর রহমান সেই বিলুপ্ত আওয়ামী লীগকেও রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন- গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য।
 
কিন্তু আজ বিএনপি-কে আওয়ামী লীগ থেকে আলাদা করার কোন উপায় নেই।
 
আপনি যদি বিএনপি করেন- তাহলে আপনিও বিশ্বাস করেন বেগম খালেদা জিয়াই সকল যোগ্যতার উর্ধ্বে! তারেক রহমান-ই একমাত্র দেশকে নেতৃত্ব দেবার যোগ্যতা রাখে।
 
এবং আপনি নিজে একজন স্বঘোষিত নপুংসক।
আপনি দেশকে নেতৃত্ব দেবার যোগ্যতা রাখেন না।
 
আপনিও এখন শুধুই একজন বড়মাপের তোষামদ বা মোসাহেব।
কাজী নজরুল ইসলাম সাহেব যে আপনাকে নিয়েই তার সেই ‘সাহেব কহেন চমৎকার’ কবিতাটি লিখেছিলেন- সেটা কি আপনি জানেন?
 
আপনি গণতন্ত্র শব্দটির মানেই জানেন না।
আপনি কিসের গণতান্ত্রিক দল করেন?
 
গণতন্ত্র মানে হলো, এই ‘নপুংসক আপনি’ও যদি ‘যোগ্যতা’ দেখাতে পারেন- তাহলে আপনিও দেশের রাষ্ট্রনায়ক হতে পারবেন- কিন্তু সেটা আপনি প্রথমেই অস্বীকার করেছেন, সেই ‘রাষ্ট্রনায়ক’ পদটি আপনি বেগম জিয়া অথবা তারেক রহমান এর বাইরে চিন্তা করার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
 
আপনি কি একটিবারও ভেবে দেখেছেন কেনিয়ান পিতার কালো সন্তান সাধারণ বারাক ওবামাও শুধুই যোগ্যতার গুনে আমেরিকার মতো সাদাদের দেশের ‘প্রেসিডেন্ট’ হয়েছিলেন।
 
ওটাই গণতন্ত্র।
 
কিন্তু আজ বাংলাদেশে শেখ বা জিয়া পরিবারের বাইরে কেউ ‘সরকার প্রধান’ হবার স্বপ্ন দেখতে পারে না।
 
এটা এদেশের আজন্ম পাপ।
একটা পাপিষ্ঠ জাতির পক্ষেই শুধুমাত্র এমনটা হতে পারে।
 
আমি তারেক রহমান সাহেবকে উপদেশ দিয়ে একটা আর্টিকেল লিখেছিলাম বেশ কয়েক মাস আগে। সেখানে বেশ কিছু বিএনপি নেতা-কর্মী আমাকে প্রশ্নবানে বিদ্ধ করেছে। তারেক রহমান না কি অনেক বড় নেতা- তাকে আমার পরামর্শ দেয়া ঠিক হয়নি।
 
আমি কিন্তু ‘বামন চিন্তাবিদ’ নই। আমি ক্ষদ্রতায়ও ভুগি না। তারেক রহমান বা সজীব ওয়াজেদ জয়’কে যে-কোন বিষয়ে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করার সাহস আমি রাখি। আমি ‘সরকার প্রধান’ হিসাবে শেখ বা জিয়া পরিবার’কে-ই মানি না। তাদের আমি আমারচে যোগ্যও মনে করি না। কিন্তু বাংলাদেশ যে যোগ্যতমদের জন্য নয়! বাংলাদেশ চাটুকারদের জন্য, বাংলাদেশ মোসাহেব আর তোষামদকারীদের আস্তানা।
 
আমি দেশের সকলকে বলবো, নিজের যোগ্যতায় উঠে দাড়ান।
আপনিও প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করে নিজেকে দেশের ‘সরকার প্রধান’ হিসাবে চিন্তা করে নিজেকে সামনে এগিয়ে নিন।
 
এখনই সময় নিজেকে প্রতিযোগীতায় নিয়ে আসার।
 
প্রায়ই সোসাল ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া’য় দেখি বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে তারেক রহমান বা তারেকের অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রী ড. জোবায়দা এমনকি কাওকে কাওকে এও দেখি যে তারেক রহমানের মেয়ে’কে নিয়েও বাড়তি উচ্ছাস প্রকাশ করতে- আমি লজ্জিত হই যে এদের সংগেই আমি একই ভূমিতে জন্মগ্রহন করেছি।
 
ঘৃণা হয় আমার নিজেকে নিয়ে।
 
ব্যারিষ্টার নাজমুল হুদা এক বানীতে বলেছিলেন ‘জিয়া পরিবারের প্রতিটি সদস্যই আমার নেতা’। সেই নাজমুল হুদা আজ আর নিজেই বিএনপিতে নেই। চাটুকার বা মোসাহেবদের চাটুকারীতা চেঞ্জ হবে এটাই স্বাভাবিক- এদের তো ‘খাসি করিয়েই’ নেতা বানানো হয়েছিল।
 
আজ শুধু একজন ‘নপুংসক’ নাজমুল হুদা নয়, সারাদেশ ভরে গেছে হাজার হাজার ‘নপুংসক’ নেতাদের ভীড়ে!
 
বাংলাদেশ আজ একটা নপুংসক জাতিতে পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি’র রাজনীতিগুনে।
 
নপুংসকতা থেকে বের হয়ে আসুন আপনি।
এভাবে দেশটাকে ধ্বংশ হতে দেয়া যায় না। আপনি যতদিন নপুংসক থাকবেন ততদিন এ জাতির ভাগ্য পরিবর্তন হবে না।
 
কোন ভাল বাবা কখনও চাবে না যে তার সন্তান তার চেয়ে ছোট হোক; বরং ভালো বাবা-মা চাবেন যে তার সন্তান যেন ’উচ্চতায়’ তাকেও ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ বিএনপিতে শেখ মুজিব বা জিয়াউর রহমানের চেয়ে বড় হওয়া বারণ।
 
বিএনপি আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জন্য কোন ভাল অভিভাবক হতে পারেনি।
 
শেখ হাসিনার বিকল্প বেগম জিয়া নন।
হাসিনা-খালেদা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
 
এরা কেউ গণতন্ত্র জানে না, বুঝে না।
এরা পরিবারতন্ত্র নামের এক জমিদারী শাসন চালাচ্ছে, চালাবে।
 
এবং এটাই আওয়ামী লীগ বিএনপির মিশন।
 
আপনি সেখানে হয় শুধুই প্রজা; আপনাকে বেকুব, মুর্খ-অথর্ব বানিয়ে রাখতেই এদের আনন্দ। আপনাকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায়ও এরা ‘জিপিএ-পাইপ’ বানিয়ে রাখবে। আপনাকে উম্মুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা তারা দিবে না। আপনাকে সুশিক্ষিত হতে দিবে না। আপনাকে ‘লিমিটেড শিক্ষিত’ বানিয়ে বড় বড় সার্টিফিকেট ধরিয়ে দিবে।
 
কারণ আপনি বুদ্ধিমান হলে, আপনি যোগ্য হলে তখন যে আপনি তাদের কর্তৃত্বকে অস্বীকার করবেন। কোনও যোগ্য মানুষ তার নিজের চেয়ে অযোগ্যের শাসন মেনে নিতে পারে না।
 
ঠিক এজন্যই আপনাকে ওরা লিমিটেড শিক্ষায় শিক্ষিত করবে। আপনাকে তাদের অধিনস্ত করে রাখবে। অথবা আপনি হবেন ম্যাক্সিমাম নপুংসক সুবিধাভোগী নেতা। আপনি দেশের সরকার-প্রধান হবার স্বপ্ন দেখা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকবেন।
 
ওখান থেকে বের হয়ে আসুন। নিজেকে যোগ্য ভাবুন। নিজের যোগ্যতার ভরসা রাখুন। কারো প্রজা হয়ে থাকার জন্য তো আমি জন্মগ্রহন করিনি। আপনিও করেননি- যদি আপনি নপুংসক হয়ে জন্ম না নিয়ে থাকেন।
 
তোষামদী ছেড়ে যোগ্যতার প্রতিযোগীতায় নেতৃত্ব দিন।
এটাই সময়।
   Send article as PDF