শুধু একটা শক্ত নাড়া দরকার

 
ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ!
 
উত্তেজনা সৃষ্টি করে ভারত থেমে গেল!
 
ওদিকে পাকিস্তান কিন্তু নিজেকে এখনও যথেষ্ঠ উত্তেজিতই রেখেছে।আচ্ছা, তার আগে একটা কৌতুক বলি; পুরানা কৌতুক।

পাকিস্তান – ভারত ক্রিকেট ম্যাচ টিভিতে সরাসরি প্রচারিত হচ্ছে।
গ্রামের বাড়ীতে এলাকার লোকজন মিলেমিশে লাইভ ক্রিকট ম্যাচ উপভোগ করছে। বাড়ীর কর্তা চোখে দেখেন না।

পাকিস্তানের এক ক্রিকেটার একটা ছক্কা মেরেছে।
কয়েকজন খুবই উত্তেজিত হয়ে খুশীতে চিৎকার করে উঠেছে। তা শুনে সেই বৃদ্ধ কর্তা জিজ্ঞেস করলেন, ‘গোল করলো কোন দল রে?’।

সবাই হেসে দিল কথা শুনে।
একজন বলল, ‘না কাকা, এটা তো ফুটবল না, ক্রিকেট।’

‘ও আচ্ছা! বাংলাদশে কি জিতলো না হারলো?’
আবার সবাই হেসে দিল, ‘না কাকা, খেলছে তো ভারত আর পাকিস্তান।’

‘তাহলে তোমরা চিল্লাউ কেন?’ বৃদ্ধ চাচার বিরক্তি প্রকাশ।
সেই চাচা বেচে আছেন কি না জানি না।
তবে, এখন সেই দিন আর নেই।

এখন বাংলাদেশের মানুষ ঠিকই নিজ দেশের সাপর্টো করার সুযোগ পাচ্ছে।

ভারত-পাকিস্তান নয়, বাংলাদেশের নিজস্ব খেলা দেখেই মানুষ উল্লাসিত হচ্ছে। আনন্দ পাচ্ছে, লাফাচ্ছে।

এটাই তো প্রকৃত আনন্দ!!!

এবার শুরু করি।
উরিতে ১৮ জন ভারতীয় সেনা সদস্য নিহত হল।

ইন্ডিয়ার সে কে হুংকার। মনে হচ্ছিল- ৫ মিনিটে না ৫ ন্যানোসেকেন্ডেই বুঝি পাকিস্তানের সব কিছু ধূলোয় মিশে যাবে।

তবে, বাস্তবতা হলো যত গর্জে তত বর্ষে না।
ইন্ডিয়ার সেই গর্জন দু’দিনেই থেমে গেছে।

কিন্তু একটু ঠান্ডা মাথায় যদি ঘটনাটা পর্যবেক্ষন করি- তাহলে দেখা যাবে এই স্নায়ূ যুদ্ধটিতে চরমভাবে পরাজিত হয়েছে ইন্ডিয়া।

ইন্ডিয়া সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী দেশ- এটা আমরা সবাই জানি।
অপর দিকে পাকিস্তানের সামরিক শক্তি ইন্ডিয়ার তুলনায় যথেষ্ঠই কম।

কিন্তু বাস্তবতা একটু ভিন্ন হয়, সবসময়ই।

১৩ লাখের বেশী সৈন্য রয়েছে ইন্ডিয়ার। অপরদিকে পাকিস্তানের মাত্র ৬ লাখের কিছু বেশী।
কিন্তু একটা বিষয় সকলের দৃষ্টি কেন এড়িয়ে যায় সেটা আমি বুঝি না।

ইন্ডিয়ার আয়তন প্রায় ৩২ লাখ বর্গ কিলোমিটার এবং পাকিস্তানের আয়তন ৮ লাখ বর্গ কিলোমিটার।

অর্থাৎ ইন্ডিয়া দেশটা পাকিস্তানের চেয়ে ৪ গুন বড়। কিন্তু সৈন্য সংখ্যা দ্বিগুন।
এটা একটা সরল অংক। কার শক্তি বেশী হলো?

পাকিস্তানের জনসংখ্যা ২০ কোটি। সেই হিসাবে ইন্ডিয়ার জনসংখ্যা ৮০ কোটি হলে ঠিক হতো কিন্তু তার ঘারে রয়েছে ১৩০ কোটি মানুষ!

বলুন তো- কার উপর লোড বেশী হলো- ইন্ডিয়া না পাকিস্তান?

যাক, এবার একটু অন্য দিকে যাই।

পাকিস্তানের চারপাশে ইন্ডিয়া ছাড়া তার আর কোন শত্রু রাষ্ট্র নেই- যার সংগে পাকিস্তানের অস্ত্র বা যুদ্ধের কোন প্রতিযোগীতায় থাকতে হয়। তাদের একমাত্র শত্রু ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানের সম্পূর্ণ সামরিক শক্তি শুধুমাত্র ইন্ডিয়াকেই ধ্বংশ করার জন্য তৈরী!

অপরদিকে মাত্র ১৩ লাখ সৈন্য নিয়ে ইন্ডিয়াকে যুদ্ধের ঝুকিতে শুধুমাত্র পাকিস্তানের জন্যই থাকতে হয় না, বিশ্বের বর্তমান দ্বিতীয় সুপার পাওয়ার চায়নাই হলো ইন্ডিয়ার আসল ভয়।

পাকিস্তানের সংগে যুদ্ধে জড়ালে ইন্ডিয়া সর্বোচ্চ তার তিন ভাগের ১ ভাগ সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারবে; ইন্ডিয়া বিশাল দেশ। চায়নার সংগে তার দীর্ঘদিনের শত্রুতা রয়েছে। ইন্ডিয়া তিব্বতের দালাইলামাকে তার ভুখন্ডে রাজকীয়ভাবে শুধু রাখেই নি- ইন্ডিয়ান ভুখন্ড ব্যবহার করে চায়নার বিরুদ্ধে ষঢ়যন্ত্র করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাছাড়া চায়না এখনও অরুনাচল প্রদেশকে নিজেদের অংশ দাবী করে এবং যে কোন সুযোগে চায়না ‘অরুনাচল প্রদেশ’কে এক ঝটকায় দখল করে নেবে।

এখানে উল্লেখ্য, ইন্ডিয়ান কোন নাগরিকের পাসপোর্টে তার জন্মস্থান অরুনাচল প্রদেশ লেখা থাকলে- চায়না তাদেরকে ভিসা দেয় না; কারণ, চায়না দাবী করে যেহেতু অরুনাচল প্রদেশ চায়নারই একটি প্রভিন্স সেহেতু তাদের চায়না যেতে ভিসা লাগবে না! এজন্যই তাদের ভিসা দেয়া হয় না। তারা চায়না ভ্রমনে যেতেও পারে না।

এছাড়া কাশ্মিরের Shaksgam Valley এবং Aksai Chin সহ আরও কিছু অংশ চায়নার অধীনে রয়েছে- যা নিয়ে ইন্ডিয়ার সংগে চায়নার দন্দ্ব রয়েছে। উত্তরখন্ড ও হিমাচল প্রদেশ নিয়েও চায়নার শক্ত দাবী রয়েছে ইন্ডিয়ার উপর।

ইন্ডিয়ান কোন অবস্থাতেই তার এই বিশাল অংশ চায়নার কাছে অরক্ষিত রেখে পাকিস্তানের সংগে যুদ্ধে যাবার সাহস পাবে না। সেই সংগে সেভেন সিষ্টারস এর পুরো অংশটাই সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে কবে তারা ইন্ডিয়া থেকে বের হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হবে।

পাকিস্তানের সঙগে ৬৫ সালের দুঃস্মৃতিময় যুদ্ধ, অধুনাকালের কারগিল যুদ্ধে মার খাওয়া- কোথাও ইন্ডিয়ার বিজয়ের কোন চিহৃ নেই।

ইন্ডিয়া শুধু পারে হায়দ্রাবাদ, সিকিম, নেপাল, শ্রী লংকা আর মালদ্বিভস এর সংগে; আর এখন স্বেচ্ছায় ধরা দিয়েছে বাংলাদেশে। নেপালে বর্তমানে ইন্ডিয়ার প্রভাব যথেষ্ঠই কম। আমার নিজের ১৯৯৬ সালে দেখা নেপাল আর ২০০৮ সালে ১২ বছরের ব্যবধানে দেখা নেপালের অনেক পার্থক্য। এছাড়া ২০১২-১৩ তে চায়নার অবস্থান নেপালে এখন আরও সংহত। ইন্ডিয়াকে নেপালের কথা আস্তে আস্তে ভুলে যেতে হবে।

এমতাবস্থায় নরেন্দ্র মোদীর মতো তুখোর একজন নেতা- পাকিস্তানের কাছে নিজের ইজ্জত খোয়াতে যাবে? এটাতো ভাবাই যায় না! এবং অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই মোদীজি সেই স্পর্ধা দেখাননি। কোনদিন দেখাবেনও না।

আমেরিকা অধুনাকালে ইন্ডিয়াকে বেশ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে মুলত দু’টি কারণে।
এক. চায়নার প্রভাব থেকে ফারইষ্ট ও সাউথ এশিয়াকে কিছুটা হলেও মুক্ত করতে।
দুই. ভারত মহাসগরীয় অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে।

এখানে বলে রাখা ভালো, আমেরিকা সরাসরি কোনদিনই ইন্ডিয়াকে সহায়তা দেবে না কোন সামরিক যুদ্ধে। শুধু তাই না- ইরাক যুদ্ধে আমেরিকার অর্থনীতির যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে; ভবিষ্যতে আমেরিকা আর কোন যুদ্ধে জড়াবে কিনা- সেটাও বিস্তর গবেষনার বিষয়।

এবং সবচে মজার বিষয়টা হলো পাকিস্তানের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছে তুরষ্ক, সৌদী আরাবিয়া, চায়না। ইরান কোন যুদ্ধে জড়াবে না; সেখানে বুদ্ধিমান লোকদের বসবাস। তবে ইরান আদর্শিকভাবে পাকিস্তানকে বুদ্ধি-পরামর্শ দিবে। কিন্তু চায়না সামান্যতম সুযোগ পেলেই ইন্ডিয়ার উপর হামলে পড়বে- সেটা আজ হোক আর কাল হোক।

এশিয়া ও ওসেনিয়া অঞ্চলে এই মুহুর্তে চায়নাকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ নেই। তাছাড়া চায়নার অর্থনীতি এতটাই বিশাল এবং আরও বেশী মাত্রায় উদিয়মান যে- চায়নার ধারে-কাছে কেউ ভেরারও চিন্তা করতে পারবে না।

সেদিন মোদীজি যুদ্ধের ডামাডোল পিটিয়ে শেষটায় পিছুটান দিয়ে তার কোন এক ভাষনে বলছিলেন ইন্ডিয়া না কি সফটওয়ার রপ্তানী করে।

আমি সত্যিই অনেকক্ষন হাসলাম। ইন্ডিয়ার সফটওয়ার এর মান দেখার জন্য কষ্ট করে ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া’ সফটওয়ার খোঁজার দরকার নেই- ইন্ডিয়ান হাইকমিশনের ভিসা এপ্লিকেশন সফটওয়ারটি দেখলেই বোঝা যায় ওটা গরুর মুত্র খেয়ে তৈরী হওয়া একটা সফটওয়ার- যার না আছে কোন বুদ্ধিমত্তা আর না রয়েছে চেহারা। ওরা করে রপ্তানী?
ইন্ডিয়ানরা খুব ভালো ‘ইন্ডিয়ান ইংলিশ’ জানে- কোন সন্দেহ নেই।

চায়নিজরা ইংলিশ জানে না। তারপরও চায়নায় তৈরী যে-কোন একটা সফটওয়ার দেখে আসুন। ইন্ডিয়া চায়নার সামনে কোন যুক্তিতেই দাঁড়াতে পারার ক্ষমতা রাখে না।

কিন্তু সব কিছু ছাড়িয়ে মুল কথাটায় আসি।

কাশ্মির।
কাশ্মিরের ৩টি অংশ। দুটি নয়।

বড় অংশটি ভারত নিয়ন্ত্রত জম্মু ও কাশ্মির।
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রত আজাদ কাশ্মির।
আর চায়না নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির।

কাশ্মিরীদের কোন স্বাধীন দেশ নেই। কিন্তু তারা স্বাধীন একটা দেশ চায়।
পাকিস্তান, চায়না বা ইন্ডিয়া- কেউ-ই কাশ্মিরের স্বাধীনতার পক্ষে নয়।

কাঠমান্ডুতে আজরাফ নামে আমার একজন কাশ্মিরী বন্ধ আছে। সে নেপালেই স্থায়ী ভাবে বসবাস করে, শ্রীনগর থেকে কাশ্মিরী মালামাল এনে নেপালে ব্যবসা করে।
নিউ ইয়র্কেও আমার একজন কাশ্মিরী বন্ধ রয়েছে, ও হুমায়ন।

আমি ওদের সংগে কাশ্মির বিষয়ে আলোচনা করতাম।

ওদের একটাই কথা, ‘আমরা সম্পূর্ণ আলাদা একটা জাতি’। আমরা ইন্ডিয়ান, চায়নিজ বা পাকিস্তানী এর কোনটাই নই। আমরা কাশ্মিরী; আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য রয়েছে। আমরা অামাদের মতো নিজেদের একটা দেশ চাই। আমরা একটা সম্পূর্ণ স্বাধীন কাশ্মির চাই।
কিন্তু আমাদের কে দেবে নিজেদের দেশ? আমরা কার সংগে যুদ্ধ করবো? ইন্ডিয়া? চায়না? পাকিস্তান? কেউ তো আমাদের নিজস্ব দেশ দেবে না! তারা ৩টি দেশই চায় সম্পূর্ণ কাশ্মির দখলে নিতে। চায়না চায় ভারত ও পাকিস্তানের টুকু। ইন্ডিয়া চায় পাকিস্তান ও চায়নার অংশ আর পাকিস্তান চায় ভারত ও চায়নার অংশ।

এ এক ভয়ংকর তিন টুকরো ভুখন্ড!
বৃটিশ, জাতিসংঘ কেউ কোন দিন কাশ্মিরের দিকে তাকায়নি।
কাশ্মিরীদের কেউ কোনদিন মানুষ ভাবেনি।

কিন্তু, মজার বিষয় হলো সেদিনের সেই ইন্ডিয়ান ১৮ সেনা মৃত্যু ‘কাশ্মিরীদের’ আন্তর্জাতিকীকরন করতে পেরেছে।

সারা বিশ্ব এবার নড়েচড়ে বসেছে।

শুধু বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন অবৈধ ‘গোপালগঞ্জ সরকার’ পক্ষ নিয়েছে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ভারতের।

ভারত সন্ত্রাসবাদী একটা দেশ।
তাদের নিজেদের জন্যই তারা আঞ্চলিক সন্ত্রাস ছড়ায়।

ভারত বাংলাদেশের পাবর্ত্য চট্রাগ্রামে সন্ত্রাস ছাড়িয়েছে।
ভারত সেভেন সিষ্টারস এর মানিপর, নাগাল্যান্ড, আসাম এ সন্ত্রাস লালন করছে। তারা শ্রী লংকায় সন্ত্রাস ছড়িয়েছে।

এবং সেদিন তারা ঢাকার গুলশানেও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটিয়ে ২০জন বিদেশীকে হত্যা করিয়েছে।

এবং বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদী দল আওয়ামী লীগ, তার ছাত্র লীগ, তার পুলিশ লীগ সেই সন্ত্রাসে প্রত্যক্ষভাবে নিজেরা জড়িত হয়ে প্রতিদিন মানুষ হত্যা করে যাচ্ছে এবং দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষদের উপর।

এতদিন ভারত নিজেকে ‘সাধু বাবা’ পরিচয় দিয়ে চালিয়ে আসতেছিল।
কিন্তু এবার এই মুত্রখাওয়া সাধুবাবা’র আসল রুপ পাকিস্তান বের করে দিয়েছে।

কিন্তু বিশ্ব সম্প্রদায় এবার কাশ্মির নিয়ে, কাশ্মিরে ভারতের রাষ্ট্রিয় সন্ত্রাস এর বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেছে। তুরষ্ক, সৌদী আরাবিয়া এগিয়ে এসেছে। সৌদী আরবের এগিয়ে আসা মানে অনেক বড় অর্জন। ইরানও যোগ দেবে আদর্শের প্রশ্নে। রাশিয়া ইন্ডিয়ার পক্ষ নেবে না।

আমরা যদি একটু বাস্তবতা ঘাটি- তাহলে দেখতে পাবো, অস্ত্র নয় ইন্ডিয়া আর রাশিয়া আসলে ব্যস্ত নিজেদের খাদ্য জোগাড়ে। বাকীটুকু ওদের ‘ওপর দিয়ে ফিটফাট আর ভেতর দিয়ে সদরঘাট’।

শুধু একটা শক্ত নাড়া দরকার।
একটা শক্ত নাড়া ঝেলে ফেলে দেবে ইন্ডিয়াকে।
৩০টি খন্ডে ভেংগে পড়বে ইন্ডিয়া।

আর আরও একটা শক্ত নাড়া বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ সারকারেরও যবনিকাপাত ঘটাবে।

কোন সন্দেহ নেই।

 
 
   Send article as PDF