র‍্যাব পুলিশের বাংলাদেশ

র‍্যাবের বেনজির এর বক্তব্য শুনলাম।

তিনি ইসলাম প্রচার করা ‘বড় ভাই’দের খুঁজছেন- উদ্ধত্বপূর্ণ ভাষায় তিনি তাদের হুমকী দিচ্ছেন ‘নিশ্চিহ্ন’ করে ফেলার। শেখ হাসিনার সরকার পুলিশ-রাব কে দায়িত্ব দিয়েছে যে-কাউকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার। পুলিশের শহিদুল আর মনিরুলদের ভাষাও একই।

শহিদুল-বেনজির-মনিরুলরা ‘যাকে’ মন চায় ‘তাকে’-ই সন্ত্রাসী বা জংগী উপাধি দিয়ে সরাসরি গুলি করে হত্যা করে চলছে।

তারাই আইন। তাদের হাতেই মানুষ হত্যার লাইসেন্স।
কোন বিচারের প্রয়োজন নেই।
কোন তথ্য প্রমাণের প্রয়োজন নেই।
প্রয়োজন নেই দেশে কোন বিচারকের-ই।

শহিদুল-বেনজির-মনিরুল এরা তিনজন যাকে যাকে মন চায় তাকে হত্যা করতে পারবে- কেউ কোন প্রশ্নও তুলতে পারবে না।
যদিও কেউ প্রশ্ন তুলেও- তবে সেও সন্ত্রাসী এবং তাকেও হত্যা করা হবে।
তাদের হত্যার নাম হলো ‘ক্রস ফায়ার’ বা ‘বন্ধুক যুদ্ধ’।

আর বাংলাদেশের সো-কলড প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সুপ্রিম কোর্টে বসে বসে ‘বাল ছিড়ছেন’।
(আমি ক্ষমা চাচ্ছি এই অতি বিশ্রী শব্দটি প্রয়োগ করতে। কিন্তু যারা নিশ্চিন্তে রাষ্ট্রিয় ভাবে মানুষ হত্যা করে চলছে- তাদের জন্য আমি এরচে ভাল কোন শব্দগুচ্ছ সত্যিই খুঁজে পাইনি।)
এসকে সিনহা, শহিদুল, বেনজির, মনিরুল এদের বেতনের টাকা কে দেয়?

ওরা যে ওদের স্ত্রী-সন্তানদের ভাত-কাপড় কিনে সেটা কার পয়সায়?
ওদের বন্ধুকের গুলি কিনছে কার পয়সায়?
আমার পয়সায়।
আপনার পয়সায়।

আমাদের খেটে খাওয়া মানুষদের অতি কষ্টের অর্জিত পয়সা থেকে ট্যাক্স নিয়ে ওদের সংসার চলে, ওরা আমাদের টাকায় আনন্দ-ফুর্তি করে।

আর, আমাদের টাকায় কেনা গুলি দিয়ে ওরা আমাদের বুক থেকেই রক্ত ঝড়াচ্ছে!
ঢাকায় থাকতে এক ভয়ংকর বদমাইশ চাঁদাবাজ-কাম-সাংবাদিক আমার পিছু লাগে। আস্তে আস্তে আমি তার আসল রূপ ধরে ফেলি। আমার কাছ থেকে নিয়মিত ভয় দেখিয়ে টাকা নিতো। বাধ্য হয়ে প্রথম প্রথম দিতাম। কিন্তু একটা পর্যায়ে আমি তাকে চ্যালেঞ্জ করে বসি। সেও তার চ্যালা-চামুন্ড নিয়ে আমাকে ভয় দেখাতে থাকে- ক্ষতির চেষ্টা করতে থাকে।

এক পর্যায়ে আমি নয়া পল্টন থানায় তার নামে জিডি করি।
এতে সে আরও ক্ষিপ্র ও ভয়ংকর আচরণ করতে থাকে।

নয়া পল্টন থানায় প্রায় হাফ ডজন এসআই আমার পরিচিত; ওসিও আমার সংগে ভাল সম্পর্ক। ওরা আমাকে বিভিন্ন বুদ্ধি দিতে থাকে পরিত্রাণ পাবার। কিন্তু ওতে তেমন একটা কাজ হচ্ছিল না।
অবশেষে ঐ নয়া পল্টন থানারই এক সাবেক এসআইকে পেলাম যে কিনা তখন রাব-৩ এ কর্মরত। ওকে আমার অফিসে ডেকে আনলাম। বিস্তারিত খুলে বললাম।

সে আমার কাছে দেড় লাখ টাকা চাইলো। বিনিময়ে সে ঐ চাঁদাবাজ-কাম-সাংবাদিককে ক্রস ফায়ারে হত্যা করবে বলে ওয়াদা করলো।

আমি ওদিন সত্যিই হকচকিয়ে গিয়েছিলাম।
মাত্র দেড় লক্ষ টাকায়ও ঢাকা শহরে নিশ্চিন্তে মানুষ মেরে ফেলা যায়!

তাহলে সাধারণ কাউকে রাব দিয়ে হত্যা করাতে তো ম্যাক্সিমাম পঞ্চাশ হাজার টাকা হলেও চলে!!!
আমি ঐ রাবকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে এক জোড়া বোট জুতা কিনে বিদায় করে দিলাম। তারপর আর ওর সংগে যোগাযোগ করিনি।

পরবর্তীতে অবশ্য ‘রাব তিন’ দিয়েই ঐ বদমাইশকে ‘সাইজড’ করিয়ে স্ট্যাম্পে আন্ডারটেকিং নিয়ে থামিয়েছিলাম। সেটা ছিল চমৎকার একটা কৌশল- পরে আর আমাকে ডিষ্টার্ব করার সাহস পায়নি।
ঘটনাটা এজন্য বললাম, আমাদের দেশের মানুষের জীবনের মূল্য কতটা (!) – তা দেখানোর জন্য এবং রাবের কার্যক্রম কিভাবে চলে তা তুলে ধরতে।

এই রাবের বেনজির এর কথার স্টাইল শুধু একটা ‘ভয়ংকর সিরিয়াল কিলার’ এর কথাই মনে করিয়ে দেয়।
হ্যাঁ। শহিদুল, বেনজির আর মনিরুলরা বাংলাদেশের এক একজন অতি ভয়ংকর সিরিয়াল কিলার।

এসব সিরিয়াল কিলার-রা রাষ্ট্রের লাইসেন্স প্রাপ্ত।
তারা যখন যাকে মন চায় হত্যা করতে পারবে।
কারো কাছে কোন কৈফিয়াত দিতে হয় না।

সিলেটে দেখলাম দিন কয়েক আগে, ঢাকার গেন্ডারিয়ার কথাও ভুলে যাই নি- যেখানে পুলিশ বাহিনী স্থানীয় মুসলিমদের কিভাবে নির্যাতন করে চলছে। ভারতের কাশ্মির অথবা ফিলিস্থিন ভুখন্ডে ইসরেলী সেনাদের নির্যাতনের কথাই মনে করিয়ে দেয় এসব দেখলে।

কিন্তু ভারত তো হিন্দু রাষ্ট্র, সেখানে হিন্দু সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী সরকার ক্ষমতায়। ইসরেলের ইহুদী সেনারা ফিলিস্থিনিদের নির্যাতন হত্যা করছে।

কিন্তু বাংলাদেশে!
এ দেশের শতকরা ৮০ ভাগ জনগন না কি মুসলিম!

কিন্তু বাস্তবতা হলো এদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় এখন হিন্দুরা অথবা ঐ হিন্দুদের নাতনীই (শেখ হাসিনা) এখন কথিত প্রধানমন্ত্রী। প্রশাসনে হিন্দুদের সরাসরি আধিপাত্য।

মনে পড়ে গেল তৎকালিন জাতিয় সংসদের হুইপ জয়নুল আবেদিনকে কিভাবেই না এক হিন্দু পুলিশ অফিসার তার বাহিনী নিয়ে প্রাকাশ্য রাজপথে হত্যার উদ্দেশ্যে পিটিয়ে জখম করেছিল।

একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তার কর্মচারীর হাতে প্রকাশ্যে পিটুনি খায়- এবং ঐ পুলিশ পরবর্তীতে পুরুষ্কার সহ পদোন্নতি পায়!
এদেশে ৭১ সালের আগে পাকিস্তানীদের গালি দেয়া হতো। বলা হতো- তারা আমাদের টাকায় কেনা অস্ত্র আমাদের বুকে তাক করে কেন?
পাকিস্তানী পুলিশ কিন্তু এভাবে মানুষ হত্যার কোন সুযোগ বা লাইসেন্স পায়নি। কিন্তু শেখ হাসিনার পুলিশ এখন আমাদের টাকায় কেনা অস্ত্র দিয়ে আমাদের গুলি করে হত্যা করে যাচেছ- তার কোন প্রতিবাদও করা যাবে না!

এটা কোন দেশ হতে পারে না।

সেদিন আওয়ামী লীগেরই এক সুবিধাবাদী নেতা গোলাম মাওলা রনির মুখেও শুনতে পেলাম- ‘শেখ মুজিব’ আর ‘শেখ হাসিনা’ সরকারের মিল ও অমিলগুলি।

রনি বলছিলেন, শেখ মুজিবের বাকশাল না কি আরও সহনসীল ছিল; শেখ হাসিনা নির্যাতন ও খুনে তার বাবাকেও ছাড়েয়ে গেছে!

দেশের মানুষ সব মুখ বন্ধ করে বসে আছে।
মুখ খুললে তাকেও হত্যা বা নির্যাতন করবে পুলিশ এই ভয়ে।

একটা সম্পূর্ণ বৈধ ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের কোন কর্মী চোখে পড়লেই তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং দিন কয়েকের মধ্যে ক্রস ফায়ারের নামে হত্যা করা হচ্ছে।

দেশের কেউ কোন প্রতিবাদ করছে না।

একদিন যে আপনাকেও এভাবেই হত্যা করা হবে- সেদিনও কিন্তু আরেকজন কোন প্রতিবাদ করবে না।
এটা কোন দেশ হলো?

জালিম ফেরাউনও শেখ হাসিনার চেয়ে শতভাগ সভ্য ছিল তার দেশবাসীর প্রতি।
শেখ হাসিনার অপশাসন শেখ মুজিবের কুশাসনকেও ছাড়িয়ে গেছে!
দেশে ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির।
নতুন কোন বিনিয়োগ আসছে না।
কিভাবে আসবে? কে আসবে এই গজবের দেশে?

পুলিশের দেখা-দেখি ছাত্র লীগ ‘নামিও আতংক’ সারাদেশে হত্যা, খুন, লুটতরাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনে ছাত্র লীগ প্রকাশ্যে পুলিশ প্রটেকশনও পাচ্ছে!

সারা দেশে চলছে লুটতরাজ।
উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হচ্ছে। রডের বদলে বাশ দিয়ে তৈরী হচ্ছে ব্রীজ-কালভার্ড- যেগুলি ভেংগে দু’দিন পর মারা যাবেন আপনি- আমি।

শেখ হাসনিার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় কেন্দ্রিয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে টাকা হ্যাকিং করে খেয়ে ফেলছে!

বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৫,০০০ কোটি টাকা মেরে দিয়ে ড. আতিয়ার এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করাচেছ! ছাত্রদের সে নগদ ও ব্যাংকিং চুরিবিদ্যা শিখাবে!

কেউ কোন প্রতিবাদ করছে না।

শেখ হাসিনা সারাজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য নগদ টাকা ঢেলে পুলিশ-রাব-বিজিবিকে তো ধ্বংশ করেছেই। সেই সাথে বাংলাদেশের একমাত্র অহংকার সেনাবাহিনী’র জেনারেলদের প্রচুর টাকার বিনিময়ে ‘নপুংসক খাসী’ বানিয়ে ছেড়েছে!

দেশের এই করুণ অবস্থা দেখেও দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ‘নপুংসক’ না হলে চুপচাপ বসে থাকতে পারে না।

আমি মানছি- শেখ হাসিনার বিকল্প খালেদা জিয়া নন।
আমি এও মানছি শেখ হাসিনার কাছ থেকে ক্ষমতা নিয়ে দেশকে লিড দেবার মতো কোন নেতা প্রকাশ্যে দেখা মিলছে না।

কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে- ‘প্রকৃতি কখনোই শূন্যতা মানে না’।

একজন বা কেউ একজন ঠিকই চলে আসবে সামনে- যে শেখ হাসিনার এই দুঃশাসন থেকে অন্তত মুক্তি দেবে বাংলাদেশকে।

আপনাকে আমাকে।

   Send article as PDF