ব্যবসায় হাতেখড়ি

তখন ক্লাস থ্রি তে পড়ি।ব্যবসায় হাতেখড়ি
সেই আমলে স্কুলে যাবার সময় আমার মা টিফিন খরচ হিসাবে প্রতিদিন চার-আনার একটা সিকি দিতেন। এক সিকি দিয়ে তখন ১টা সিংগারা পাওয়া গেলেও আমি কোন কোনদিন একটি কাঠিওয়ালা আইসক্রিম খেতাম, কোনদিন বা চকলেট (আমেরিকায় ক্যান্ডি বলে); আর বেশীরভাগ সময় কিছুই খেতাম না, টাকা জমাতাম। কদাচিৎ ঝাল চানাচুর বা চাড়া বিস্কুট (আমাদের এলাকার একটি বিশেষ ধরেণর বিস্কুট) খেতাম।

পরিস্কার মনে আছে সেসময় ‘সোয়া সের’ লবনের দাম ছিল পাঁচ সিকি বা ১ টাকা পচিশ পয়সা। আমি সেই আমলের (১৯৮১) টাকার মুল্য বোঝাতে চাইলাম উদাহরণ দিয়ে।

যাই হোক, ঘটনা অন্য।
আমার দাঁত ব্রাশ করার হার্ড-ব্রাশটি নষ্ট হয়ে গেছে- নতুন ব্রাশ লাগবে। মার কাছ থেকে ১৩ টাকা নিলাম একটা ব্রাশ কিনতে। সে আমলে এসব জিনিসের দাম অনেক বেশী ছিল- এখন বুঝতে পারি। একটি সুন্দর লাল রঙ এর ব্রাশ নিয়ে বাসায় ফিরলাম।

বিকেল দেখি আমার ব্রাশটি মিসিং।
মেজাজ হারালাম। কে নিতে পারে। কাউকে অনুমান করতে না পেরে চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিলাম। অবশেষে আমার ছোট আপা এসে বললেন, ‘চিৎকারের কি আছে? ওটা আমি নিয়েছি- তুই টাকা নিয়ে আর একটা কিনে নিয়ে আয়।’

কিন্তু আমি যে আগে থেকেই মহাবদমাইশ!
আমি তাতে রাজী হলাম না। আমার কেনা ব্রাশ কেন সে নিবে? আরও ক্ষেপে গেলাম। চিৎকার চেচামেচি বাড়িয়ে দিলাম।

এবার আমার ছোট আপা, মার থেকে ১৩ টাকা নিয়ে আমাকে এনে দিলেন। বললেন, ‘কাঁদিস না, যা তোর জন্য ব্রাশ নিয়ে আয় নতুন একটা’।

আমি কান্না থামিয়ে বললাম, ‘১৩ টাকায় হবে না, আমাকে ১৫ টাকা দিতে হবে। আমার ব্রাশ আমি ১৩ টাকায় বিক্রি করবো না- ১৫ টাকার নীচে ওই ব্রাশ আমি বেচবো না।’

ভদ্রলোকের এক কথা।
অবশেষ বাধ্য হয়ে ছোট আপা আমাকে ১৫টাকাই দিলেন।

আহা, কি আনন্দ।
জীবনে প্রথমবার ব্যবসা করে ২ টাকা উপার্যন করলাম।

   Send article as PDF