চলুন আমরা সবাই বাঙালী হয়ে যাই

চলুন আমরা সবাই বাঙালী হয়ে যাই।
 
বাংলাদেশে অনেক-কেই দেখি নিজেকে ‘বাঙালী’ পরিচয় দেয়াটাকেই তাদের ‘জীবনের অস্তিত্ব’ মনে করে।
 
তো, সেটা যদি ‘জীবনেরই অস্তিত্ব’ হয়ে থাকে- তাহলে আমরা সেই অস্তিত্ব থেকে দূরে থাকবো কেন?
 
তার আগে একটা ছোট্ট ঘটনা বলি।
এ ঘটনাটা সম্ভবতঃ আগেও কোন এক লেখায় উল্লেখ করেছিলাম।
 
১৯৯৬। কাঠমান্ডু শহরে জীবনের প্রথম বার বেড়াতে গেলাম।
তাও আবার (ইন্ডিয়ান ডাবল এন্ট্রি ভিসা না পাওয়ায়) নিজেকে ইন্ডিয়ান পরিচয় দিয়ে-ই নেপালে গেলাম।
 
তখন কাঠমান্ডু শহরটি সত্যিই দেখার মতো ছিল।
সাদা টুরিষ্টে ভরপুর একটা শহর।
 
আমি ঘুড়ে বেড়াচ্ছি। প্রচুর ছবি তুলছি। থামেল, চিত্রপতি, রাজা-কা বাড়ী সবই আমার নখদর্পনে ঐ সামান্য কয়েকদিনের ভ্রমনে।
 
একদিন গেলাম কোন একটা শপিং মলে।
চমৎকার সুন্দরী একটা নেপালি মেয়ে- সেখানকার সেলর্সগার্ল।
 
কেনার আগ্রহ না থাকলেও কথা বলতে কে আটকায়?
দোকানের ম্যানেজার এক পর্যায়ে আমার সামনে আসলো। যেচে পরিচিত হলেন ভদ্রলোক, সত্যিই ‘ভদ্রলোক’ সেই নেপালী পুরুষটি।
 
এক পর্যায়ে আমার সম্পর্কে জানতে চাইলেন শো-রূম ম্যানেজার।
নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বললাম, ‘আমি বাঙালী’।
 
আমি বাঙালী শুনে সেই ভদ্রলোকের সে-কি প্রশংসা!
‘আরে বাঙালীরা তো অসাধারণ, তারা অনেক দূর এগিয়েছে, খুবই স্মার্ট, তোমাকে দেখেই আমি অনুমান করেছিলাম হয় তুমি শ্রী লংকান নয় তো বাঙালী- তাই তো পরিচিত হতে নিজেই এগিয়ে আসলাম। তোমাদের খাবারও চমৎকার। আমি বাঙালীদের খুবই পছন্দ করি।’ ইত্যাদি বলতে থাকলেন ভদ্রলো।
 
আমি তো খুশীতে গদগদ।
এতো ছোট বয়সে এতো সম্মান আগে পাইনি। গদগদ হবো না তো কি হবো?
 
আমিও সাই দিলাম ওনাকে।
বললাম, ‘হ্যা, আমরা চেষ্টা করি- এই আর কি!’।
 
এবার ভদ্রলোক প্রশ্ন করলেন, ‘কোলকাতায় আমি অনেক বার গিয়েছি- তা, তোমাদের বাড়ী কোথায়? তোমার এড্রেসটা দিয়ে যাও, আমি ওখানে আবার গেলে তোমার সংগে যোগাযোগ করবো।’
 
এবার তো আমি পুরাই ‘স্পীকার’ (অথবা ‘আবুল’) হয়ে গেলাম!
এখন আমি কিভাবে বলবো যে আমি আমার নিজের সঠিক পরিচয় তোমাকে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছি?
 
আমরা ‘এরকমই বাঙালী’!
 
এখন পর্যন্ত যার ‘নিজের পরিচয়’ দেবার সুযোগ হয়নি- সে কিভাবে জানবে যে- ‘কিভাবে নিজের পরিচয়’ দিতে হয়?
 
সেই থেকে আমি বুঝতে পারলাম- ‘জাতীয়তা’ বা ‘জাতীয় পরিচয়’ কিভাবে দিতে হয়।
 
কাঠমান্ডু শহরে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে প্রথম বারের মতো সেলুট জানালাম- আমাদের প্রকৃত ও যৌক্তিক ‘আইডেনটিটি’ নির্ধারণ করে দেবার জন্য।
 
বাংলাদেশটা শুধুমাত্র বাঙালীদের দেশ নয়।
এখানে আরো অসংখ্য ভাষা-ভাষীর বসবাস।
চাটগাইয়া, চাকমা, মারমা, রাখাইন, ত্রিপুরা, গারো, সাওতাল, মনিপুরি সহ আরোও অন্যান্য ভাষা-ভাষীদেরও নিজস্ব ‘ভাষা ও সাংস্কৃতি’ রয়েছে।
 
এখন যদি আমরা তাদের জোর করে ‘বাঙালী’ পরিচয় ধরিয়ে দিই- তাহলে পাকিদের সংগে আমাদের পার্থক্য রইলো কিসে?
 
এই পৃথিবীর অসংখ্য দেশে ‘ইংলিশ’ অফিসিয়াল বা রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, বৃটেন, গায়ানা, নিউজিল্যান্ডসহ আরো দুই ডিজিটেরও বেশী দেশে জাতীয় বা রাষ্ট্রভাষা হিসাবে রয়েছে ‘ইংলিশ’।
 
কিন্তু, শুধুমাত্র ইংল্যান্ডবাসীরাই ‘ইংলিশ’- বাদ বাকী কেউ নিজেদের ‘ইংলিশ’ হিসাবে পরিচয় দেবার মতো ‘হীনমন্যতা’য় ভুগে না।
 
সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের ভিত্তিতে যারা কোন দেশকে মানতে পারে না- তারাই আবার ভাষার ভিত্তিতে কিভাবে একটা দেশের পরিচয় নির্ধারণের ‘দিমূখী ও বিভ্রান্তিকর নীতি’ প্রচার করে- তা আমার মাথায় ঢুকে না।
 
সে যাই হোক- তারপরও আপনি বলবেন, আমরা যেহেতু বাংলায় কথা বলি সেহেতু আমরাও বাঙালী। তাই তো?
 
ওকে।
চলুন তাহলে আমরা বাঙালী হয়ে যাই।
 
তবে, তার আগে চলুন দেখা যাক- ‘বাঙালী’ ঠিক কাদের বলা হয়।
 
‘উচ্চ বর্ণের হিন্দু ও বাংলা ভাষা-ভাষীদেরকেই বাঙালী বলা হয়’- যারা রেফারেন্স নিয়ে ছুটাছুটি করেন- তাদেরকে গবেষনা করে এসে আমার কথার বিরোধীতা করতে আসতে বলবো।
 
আমি শতভাগ না জেনে কোন তথ্য লিখি না।
 
আপনি যদি ‘উচ্চ বর্ণের বাংলা ভাষী হিন্দু হয়ে থাকেন’ তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই আপনাকে ‘বাঙালী’ বলাতে।
 
কিন্তু ওপারের বাঙালীবাবুরা যে আপনাকে বাঙালী না বলে ব্যাংগ করে অর্ধ বাঙালী হিসাবে ‘বাঙাল’ বলে ডাকে- সেটার কি জবাব দিবেন?
 
আমি নিজেকে যেহেতু ‘বাঙালী’ বলে গর্ব করতে পারি না- সেহেতু আমার কোন জবাব দেবার দায় নেই।
 
এবার আসুন আরেকটি ভিন্ন কিন্তু অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও ‘আনএভয়েডেবল’ প্রসংগে।
 
হ্যাঁ। তারপরও আমি মেনে নিচ্ছি আপনি বাঙালী।
তা বেশ। ভালো ভালো। খুব ভালো।
 
তাহলে বাঙালীদের কি কি ঐতিহ্য রয়েছে- চলুন একটু বিশ্লেষন করি।
রোমান্টিকতা দিয়েই শুরু করি, চলুন না হয়।
 
যেহেতু আপনি ‘প্রাউড বাঙালী’, সেহেতু আপনাকে যা যা করতে হবে-
 
– বিয়ে করার সময় আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমান যৌতুক নিতে হবে- এটা দুর্দান্ত বাঙালীয়ানা। যৌতুক ছাড়া কোন বিয়ে করা চলবে না। তাহলে কিন্তু আপনার বাঙালীয়ানা চলে যাবে, সাবধান।
 
– আপনার বিবাহিতা স্ত্রীকেও শাখা, সিদুর পরে থাকতে হবে। এর অন্যথা চলবে না। কপালে শুধু মাত্র ‘বড় টিপ’ দিয়ে কিন্তু হাফ-বাঙালী হওয়া যায়- ‘বাঙালী’ না। সুতরাং বাঙালী মানেই হাতে শাখা, সিথিতে সিদুর, কপালে বড় টিপ।
 
– আপনি মারা যাবার পর আপনার স্ত্রীকে অতি অবশ্যই আপনার সংগে জীবিত কবরে যেতে হবে। এটাও বাঙালীয়ানার শর্ত। সুতরাং আজই আপনার স্ত্রীকে তৈরী থাকতে বলুন। নো কনসিডারেশনস। ‘বাঙালী’ হতেই হবে আপনাকে।
 
– যদি স্ত্রীকে জীবিত কবরে নিতে না চান- তাহলে তার জন্য কয়েক ডজন ‘সাদা কাপড়’ কিনে রেখে যাবেন আপনার মৃত্যুর পর যেন সবসময় সাদা কাপড়ে চলে এবং খবরদার বিধবা বিয়ে বা দ্বিতীয় বিয়ে করা কিন্তু চলবেই না।
 
আপনি বাঙালী বলে কথা। বাঙালীত্বের অপমান সহ্য করা হবে না।
 
থাক, আর না এগুলাম।
 
তো, প্রাউড বাঙালী বাবুরা- পারবেন তো এসব পালন করতে? না কি অর্ধেক মুসলিম হয়ে যৌতুককে না বলবেন, বিধবা সাজকেও না বলবেন, সতিদাহকেও না বলবেন আবার ধর্মকেও না বলবেন!
 
ঠিক কি চান আপনারা একটু খোলাখুলি বলবেন কি?
 
আসলে আপনি যে কি- সেটা তো আপনি নিজেও জানেন না!
কিন্তু কথা বলার বেলায় তো ‘বাবা-মা’কেও বাদ দেন না।
 
‘আমেরিকা’ নিয়ে আমার চার মাসের অভিজ্ঞতার আলোকে একটা ছোট্ট পোষ্ট দিয়েছিলাম।
 
সেখানে ‘দেশপ্রেমিক’দের ছড়াছড়ি দেখতে পেলাম।
আমার বাবা-মা’কে তুলেও ‘অনেক দেশপ্রেমিক’ নোংরা ভাষায় কথা বলেছেন।
 
সেখানে দেখলাম প্রাউড বাঙালী, বাংলাদেশকে নিয়ে প্রাউডদের কি সুন্দর সুন্দর উগ্র মন্তব্য!
 
কাউকে কাউকে আবার দেখলাম আমাকেসহ আমেরিকাকেও ‘গালি’ দিয়ে ধর্ষনের আনন্দ নিচ্ছেন!
 
এবং আমি নিজেকে বাংলাদেশী হিসাবে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করি বলে- তাদের সে কি দুঃখ, সেকি কান্না!
 
তো, ভাইজানেরা আপনারা তো বাংলাদেশটাকে বড্ড বেশী ভালবাসেন- সেটা বুঝতে পারলাম।
 
আপনাদের ‘ভালবাসা’ দেখে আমি অভিভূত। সত্যিই অভিভূত।
 
আর যারা যারা আমাকে দয়া বা করুণা করে গালিগুলি দিয়েছেন- দুঃখিত আমি তা নিতে পারছি না- ওগুলি আপনারই থাক।
 
ওই গালিগুলির আপনিই প্রকৃত মালিক।
আমি যেহেতু গালাগালি দিতে শিখিনি তাই গ্রহণও করতে পারিনি।
 
তবে, আমি বাস্তবতা, সভ্যতা, সাহসীকতা এবং যুক্তি দিয়ে কথা বলা শিখেছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমার এই ‘অস্ত্র’ আপনাদের অযৌক্তিক কথাবার্তা বা আপনার দেয়া গালির চেয়েও শক্তিশালী, ধারালো এবং ভয়ংকরও।
 
সুতরাং আমি এভাবেই বলবো।
আমাকে এভাবেই বলে যেতে হবে।
 
আমি বিশ্বাস করতে চাই- আপনি না বুঝে ‘এসব কথা বলছেন’ অথবা আমার কোন একটা লেখার ২/৩টি লাইন পড়েই ‘সবকিছু বুঝে গেছেন’। আপনি ‘বড় পন্ডিত ব্যক্তি’- বুঝতেই পারেন; আপনারা মতো পন্ডিতরাইতো দেশটাকে নেতৃত্ব দিচ্ছে- নইলে দেশের এই করুণ হাল হবে কেন?
 
আমি দু’টি কঠিন বাক্য ব্যবহার করেছিলাম।
 
‘পূর্বজম্নে কেউ কঠিন কোন পাপাচারে লিপ্ত থাকলেই শুধুমাত্র তার বাংলাদেশে জন্ম হওয়া সম্ভব’।
‘আমি লজ্জ্বিত নিজেকে বাংলাদেশী হিসাবে পরিচয় দিতে হয় বলে।’
 
আমি পূর্বজন্ম বিশ্বাস করি না। তারপরও ‘সাহিত্যের সৃষ্টিতে’ কিছু ভাষার প্রয়োজন হয়- এখানেও সেটাই হয়েছিল।
 
‘কঠিন পাপাচার’ শব্দগুলি ব্যবহৃত হয়েছে- যা অনেকেই মেনে নিতে পারেননি।
 
বাংলাদেশের ‘অধিকাংশ মানুষ’ অলস, অকর্মা, কথা বেশী বলে- তাও অপ্রয়োজনীয় কথা, মোটেও বুদ্ধিমান নয়, সাহসী তো নয়-ই, কোনই দূরদৃষ্টি নেই, নকলে পটু নিজের কোন উদ্ভাবনী শক্তি ব্যবহার করতে জানে না বা পারে না।
 
এর মধ্যেই সাহসী কেউ একজন কোন কাজে ঝুঁকি নিয়ে একবার সফলতা দেখাতে পারলে তার আশে-পাশের চৌদ্দগুষ্টি সেই একই কাজে লেগে পরে কোন যুক্তি বা বাস্তবতার তোয়াক্কা না করে।
 
একটা ফ্যামেলীতে মাত্র একজন মানুষ, পুরুষ মানুষ কাজ করে এবং বাকীরা বসে বসে খায়।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করেও চাকুরী পায় না। ঠিকমতো ইংলিশে একটা রিজুমী বা এপ্লিকেশনও লিখতে পারে না।
 
মেধাহীন একটা জাতি।
 
এবং এসবই বাংলাদেশীদের ঐহিত্য।
হাজার হাজার বছরের ঐহিত্য আমাদের এটাই।
 
কেউ কেই বলবে, বাংলাদেশীরা না কি একসময় ‘সোনার বাংলা’ ছিল।
তো বলুন তো দেখি কিসের যোগ্যতায় সোনার বাংলা ছিল?
 
কি ছিল বাংলাদেশের?
কি ছিল মাত্র শতবৎসর আগেও?
 
সুনীলের প্রথম আলো ১-২ পড়েছেন?
না পড়ে থাকলে পড়ে আসুন- বুঝতে পারবেন কি ছিলেন তখন!
 
১০ হাজার মাইল দূরে থেকে সামান্য একটা ‘প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী’র কয়েকজন মালিক এসে আপনাদের বিশাল ভারতবর্ষকে দখল করে নিয়ে ১০০ বছর শাসন করে গেল- আপনার সামান্য একটা কোম্পানীর সংগে লড়াই করে হেরে গেলেন- আবার ঐহিহ্যের বড়াই করেন?
 
মুর্খতা ছাড়ুন।
লজ্জা সরম থাকলে- বলতেন না যে ওরা আমাদের শাসন করে গেছে।
 
আপনি যোগ্য হলে আমি কিভাবে আপনাকে শাসন করবো?
আপনি কেন আমাকে শাসন করার যোগ্যতা রাখেন না?
 
বৃটিশ গভার্ণমেন্ট কিন্তু ভারতবর্ষ দখল করেনি- বৃটেনের লন্ডনের একটা সামান্য প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী (ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী) আপনাদের বিশাল ভুখন্ডকে দখল করেছে।
 
এবং ১০০ বছর কোম্পানী আইনে শাসন করেছে- তারপর বাকী ১০০ বছর শাসন করেছে সরাসরি বৃটিশ গভর্ণমেন্ট ‘ভারতবর্ষ’কে কোম্পানীর কাছ থেকে অধিগ্রহন করে।
 
১৫০০ মাইল দূরে থেকে উড়ে এসে পাকিস্তানীরা আপনাদের শাসন করে গেল- আপনারা কি করেছেন? আপনারা কেন ওদেরকে করাচী গিয়ে শাসন করার যোগ্যতা দেখাতে পারেন নি?
 
কিসের যোগ্যতার বড়াই করেন?
 
আপনারা ‘মসলিন’ না কি কোন কাপড় তৈরী করেছিলেন?
কিসের মসলিন?
 
কি হতো ঐ মসলিন দিয়ে?
একটা দিয়াশলাই বাক্সের ভেতরে ভরে রাখতেন?
কি হতো তাতে?
কি কাজে লাগতো ঐ কথিত মসলিন?
 
আপনাদের কথা যদি সত্যিও হয়- তাহলেও তো সেই মসলিন আদৌ কোন কাজেই লাগতো না!
 
কোন মেয়ে ঐ কাপড় পড়লে তো তাকে ‘লেংটু’ই মনে হবার কথা! তখন কি তাহলে বাংলাদেশের মেয়েরা ঐ মসলিন পরে লেংটু হয়ে ঘুরে বেড়াতো না কি মশাই?
তাহলে কি কাজে লাগাতেন ওসব ফালতু আর কথিত মসলিন?
 
আদতে, আপনাদের কোন কালেও কোন যোগ্যতার বালাইমাত্রও ছিল না।
 
সত্যকে স্বীকার করে নি।
 
একটা রেল লাইন বা ইঞ্জিন বানিয়েছেন?
বৈদ্যুতিক বাতি? চাকা? কি বানিয়েছেন আপনারা?
 
বিশ্ব সভ্যতায় কোথায় আপনাদের অংশগ্রহণ? একটা মাত্র প্রমাণ দিন না- দেখি আপনাদের যোগ্যতা!
 
আমিও একটু বাহাবা নিই!
বাংলাদেশী হিসাবে গর্বিত হই!
 
কিছু লোকল জমিদার আর রাজাদের প্রজা ছিলেন- আপনারা।
 
বর্গা জমি নিয়ে কৃষি কাজ করে ফসল ফলানো হতো অাপনাদের দিয়ে- বিনিময়ে কিছু চাল ডাল পেতেন।
 
নদীতে কিছু মাছ ছিল বলে দু’বেলা খেতে পারতেন।
 
স্রেফ পশু-পাখিদের মতোই জীবন ছিল আপনাদের- ওটাকে মানুষের জীবন বলে না।
 
মানুষ হতে হলে সভ্যতার জ্ঞান থাকতে হয়। নতুন কিছু আবিস্কার করতে হয়। মানুষকে আলোর পথে আনতে হয়। আপনারা কি করেছেন? একটা মাত্র প্রমাণ দিন না!
 
লেংটির মতো করে কিছু একটা পড়ে লজ্জা নিবারণ করেছেন মাত্র দেড়শত বছর আগেও। সেই লেংটিই আজ লুংগিতে পরিণত হয়েছে আর মেয়েদের সেই দু’পাটা লেংটির একটা পেটিকোট আর অপরটি হয়েছে ব্লাউজ- যার উপর দিয়ে কাপড় জড়ানো শিখেছেন মাত্র একশ বছর আগে।
 
অপরদিকে দেড়শ বছর আগে ‘এরা’ (পশ্চিমা সাদারা) তাদের মাটির নীচ দিয়ে শত শত কিলোমিটার সুরঙ্গ খুড়ে রেললাইন বা সাবওয়ে তৈরী করেছে- যা আপনারা স্বপ্নেও ভাবার যোগ্যতা রাখেন না।
 
পশ্চিমা সাদারা দুর্বলদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে বিশ্বব্যাপী। দখলদাররা আমেরিকায় বা অষ্ট্রেলিয়ায় আদিবাসীদের মেরেছে। তারা অন্যায় করেছে- কিন্তু সেই অন্যায়ের কথা আমাকে শুনিয়ে আপনার কি লাভ? আমি কি সেটাকে সমর্থন করছি না কি আমি সাদাদের প্রতিনিধিত্ব করছি?
 
ওসব গল্প আমিও জানি।
সংগে আরও কি জানি- জানেন?
 
তারাতো সেসব করেছে আজ থেকে ২০০ বছর আগে।
আর ‘আপনারা এখন’ ঠিক ঐ ‘একই কাজ’ করে যাচ্ছেন এখন।
 
এই আধুনিক সভ্য যুগে- আপনারা জনগনের টাকায় বেতন নেয়া পুলিশ দিয়ে জনগণকেই গুম, খুন, ক্রসফায়ার করে যাচ্ছেন। মানুষকে কথা বলতে দিচ্ছেন না। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছেন গত ৫-৭ বছরে।
 
অস্বীকার করতে পারবেন যে- করছেন না?
 
হ্যা, আপনি এখন উত্তর দিবেন- সেটা শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার করছে- আপনার দায় নেই! তাই তো? আপনি তো দু’মুখো হয়ে গেলেন!
 
সাদাদের ক্ষমতাবানরাও তখন ওসব অন্যায় করেছে- সাধারণ জনগণ করেনি।
 
নিজের পেছনটা আগে কতটুকু পরিস্কার সেটা দেখবেন- অন্যকে জ্ঞান দেবার আগে।
 
আজ এই পৃথিবী কোন বিপদে পড়লে- বিশ্ববাসী ঐ ওয়াশিংটন ডিসির দিকেই তাকিয়ে থাকবে- আপনিও।
 
এখনও বাংলাদেশে একটা ভুমিকম্প বা সাইক্লোন আঘাত হানলেও আপনাকে ঐ ওয়াশিংটন ডিসি আর নাসা’র দিকেই করুণার হাত পাততে হয়।
 
আমেরিকা বা নাসা না থাকলে- সাইক্লোনে আপনাদের উপকুল ধ্বংশ হবার পরই জানতে পারতেন যে ‘সাইক্লোন হয়ে গেল’; আগাম তথ্য কোনকালেও পেতেন না- সেই যোগ্যতাও নেই আপনাদের।
 
যার করুনায় এখনও রক্ষা পাচ্ছেন- তাকেই গালাগালি করবেন এটাইতো আপনাদের স্বভাব।
 
স্বভাবটা এবার পরিবর্তন করুন। সভ্য হোন।
 
এই যে এয়ারক্রাফটে উড়ছেন, বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন, কমপিউটার চালাচ্ছেন, ফেসবুকিং করছেন- একটু লজ্জা করে না? কোন কৃতজ্ঞতা নেই? কার দয়ায় এসব ব্যবহার করতে পারছেন? কার দয়ায়? আপনারা বানিয়েছেন এসব কিছু?
 
সামান্য একটা মোবাইল ফোনও চায়না থেকে কিনে আনতে হয়- আমেরিকার দেয়া ডিজাইনে।
 
আপনারা এতো এতো হাজার বছরের ঐহিত্য নিয়ে কি করতেছেন?
১৮ কোটি জনসংখ্যা হয়ে রয়েছেন? মানুষ তো হতে পারেন নি!
 
আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি যেন আমারা এই ১৮ কোটি জনসংখ্যা থেকে ১৮ কোটি মানুষে পরিণত হতে পারি।
 
সেটা আপনাদের চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চেষ্টা করি।
আপনারা তো শুধুমাত্র বোকাই নন- অন্ধও। চোখ থাকতেও অন্ধ।
 
শাহবাগে গিয়ে চিৎকার করে ফাঁসি চাই ফাঁসি চেয়ে, দেশের মানুষকে দু’ভাগে ভাগ করে, শহীদ মিনারে গিয়ে ল্যাংটা পায়ে হেঁটে বেড়ালে দেশপ্রেমিক হওয়া যায় না।
 
চোর, টাউট-বাটপার হওয়া যায়।
বড় বড় লেকচার দিয়ে বাচালতা প্রমাণ করা যায়- দেশপ্রেমিক না।
 
দেশ প্রেমিক হতে হলে- কাজ করতে হয়, মানুষকে সচেতন করতে হয়, সভ্যতা শিখতে হয়।
 
আপনি এরমধ্যে ঠিক কোনটা করেছেন?
 
নিজেকে বড় ভেবে ‘দেশকে ভালবাসি’ বলা আর ধর্ষন করে আনন্দ উপভোগ করা- স্রেফ একই কথা।
 
আপনি স্রেফ একজন ধর্ষক।
প্রেমের অভিনয়টুকুই শুধু জানেন।
 
মানুষ হতে চাইলে আগে তো আত্মসমালোচনা করা শিখতে হবে।
যে আত্মসমালোচনা-ই না করতে পারে- সে আবার মানুষ কিসের?
 
আত্মসমালোচনা তো করবে না পশু-পাখি-মাছ আর অন্য এনিমেলরা।
 
আগে তো মানুষ হোন- তারপর না হয় দেশ-প্রেমিক হবেন।
অবশ্য মানুষ হলে অটোমেটিকলিই দেশ-প্রেমিক হতে পারবেন।
 
শেষটায় আমাকে যারা ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেছেন- তাদের বলছি, আমাকে আপনার মতো কিছু লোক কি বলল- সেটা নিয়ে ভাবনার সময় আমার নেই।
 
আমার অনেক কথাই অংহকারী মেজাজে হয়ে যায়- তারপরও বলছি, আমার জায়গায় আসতে পারার যোগ্যতা থাকলে গালি দিতেন না; বাস্তবতা ও যুক্তি দিয়ে প্রতিবাদ জানাতেন।
 
যুক্তির বদলে গালি ওসব এখন পুরাতন পাপ।
 
বাংলাদেশকে আমি গত বিশ বছরে যা দিয়েছি- আপনি ১০০ বছরেও তা দিতে পারবেন না। এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র থেকে একটা সূতাও নেয়নি।
 
কিন্তু আমি চাই, রাষ্ট্র শুধু নিবে না। রাষ্ট্রের প্রধানতম কাজ হবে জনসাধারণকে দেয়া। ফ্রি উন্নত শিক্ষা দেয়া, দেশবাসীকে ফ্রি মেডিকেল সুবিধা দেয়। শিক্ষা শেষে কাজ বা ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়।
 
দেশের প্রতিটি মানুষের ব্যক্তি নিরাপত্তা, স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারযুক্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা।
 
এটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্রকে এই দায় নিতেই হবে।
 
নইলে দরকার নেই কোন অসভ্য রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার।
 
আমার কাজ মানুষকে সচেতন করা। তার ভেতরে জেদের বীজ বপন করে দেয়া। দেশের প্রতিটি মানুষের ভেতরে আমি ‘প্রকৃত বড়’ হবার বীজ বপন করবো। এটাই আমার কাজ। আর এই কাজে আমি সফল হবোই একদিন- হয়তো আরও ২০ বছর বা ৩০ বছর আমাকে লেখালেখি করে যেতে হবে এভাবে; আমি তৈরী।
 
থামবো না।
আমি পরাজয় বা ব্যর্থতা মানি না, বুঝিও না।
পরাজয়কে ব্যর্থতা বানানোর কৌশল আমি বেশ ভালোই জানি।
 
এবং মানুষ যেদিন সচেতন হবে, সেদিন আমাকে দরকার পরবে না- তারাই রাষ্ট্রকে নতুন করে তৈরী করে নিতে পারবে।
 
এবং ফাইনালী, নিজেকে শুদ্ধ করতে হলে আগে নিজের দোষগুলি জানতে হবে; নিজের দোষই যদি জানতে না পারলেন- তাহলে নিজেকে শোধরাবেন কিভাবে?
 
অন্যের দোষ খোঁজার আগে যদি নিজের দোষগুলি একটু খুঁজে পান- তাহলেই শুধুমাত্র সামনে এগুনো সম্ভব।
 
আপনি যে কতটা পেছনে পরে রয়েছেন- সেটা আপনার চিন্তারও বাইরে; আর তাই সারাজীবন অন্যকে গালাগালি করে এবং নিজেকে ‘বড়’ ‘বড়’ ভেবে জীবনটাই শেষ করে দিলেন এবং যখন মারা গেলেন- তখন রেখে গেলেন আপনার নিজের মতোই আরও কিছু ‘ব্যর্থ উত্তারাধিকার’।
 
এভাবে উত্তোরণ সম্ভব নয়।
আর সম্ভব নয় বলেই আজ ‘এমনই’ বাংলাদেশ আমরা দেখে যাচ্ছি।
 
এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না।
আমি চলতে দেব না।
 
কিছুতেই না।
 
আমার লেখার পক্ষে আমি ৯৯% পজেটিভ রেসপন্স পাই। আপনার মতো ১% কে নিয়ে আমি মোটেও চিন্তিত নই; তবুও আপনাদের বিরুদ্ধে লিখি- কারণ ‘আপনারাই এখন বাংলাদেশটাকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন’।
 
ব্যর্থ নেতৃত্ব।
অযোগ্যের নেতৃত্ব।
 
আপনাদের এই ১%কে আমরা ৯৯% অবশ্যই চিরতরে সড়িয়ে ফেলবো। ফেলবোই।
 
আপনারা যদি পারেন মানুষ হোন। সভ্য হোন। নইলে সড়ে যান অথবা সড়ে যাবার জন্য তৈরী থাকুন।
 
সড়ে আপনাকে যেতেই হবে।
অযোগ্যতার বিদায় নেবার সময় এসেছে।
 
আপনাদের সড়িয়ে ফেলাটা ‘সময়ের দাবী’।
এবং, সময়ের চেয়ে বড় বিচারক আর কেউ নেই।
 
   Send article as PDF