কেপলার থেকে

২১২০ | কেএসই

প্রিয় পৃথিবীবাসী,
কেমন আছেন আপনারা? আজ প্রায় ১০ বছর হয়ে গেল অর্থাৎ ২১১০ সালে আমরা পৃথিবী থেকে ‘কেপলার সুপার আর্থ’ বা পৃথিবীর প্রথম উপনিবেশিক গ্রহ ‘কেপলার সিষ্টেম’ এর কেএসই বা কেপলার সুপার আর্থ (যার অফিসিয়াল নেইম ‘কেপলার-৪৫২বি) এ অভিবাসী হয়েছি।

পৃথিবীকে, পৃথিবীবাসীদের আমরা সত্যিই ভীষনরকমভাবে মিস করি প্রতি মুহূর্তে। না, আমরা এখানে পৃথিবীবাসীর চেয়েও শতগুন ভালো আছি, তাতে কোনই সন্দেহ নেই। কিন্তু তারপরও যেহেতু জন্মটা আমাদের আপনাদের পৃথিবীতেই- সেহেতু নিজের জন্মভূমিকে কে না মিস করে বলুন?

আমি যখন পৃথিবী ত্যাগ করি তখন আমার বয়স ছিল ৩২ বছর। আর আপনারা তো জানেনই যে, পৃথিবীর ক্যালেন্ডার, পৃথিবীর সময় আর আমাদের কেএসই (কেপলার সুপার আর্থ) এর সময়, ক্যালেন্ডার ইত্যাদি হিসাবে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান- যদিও এখানে পৃথিবীর সময়সুচীকেই যদ্দুর সম্ভব নকল করা হয়েছে। আমাদের এখানে একটি বছর হতে ৩৮৫ দিন সময় লাগে যা আপনাদের চেয়ে ২০ দিনের মতো বেশী। আমাদের এখানে ফেব্রুয়ারী মাসটি ৩৩ দিনে হয়; বছরের অন্যান্য মাসগুলো সবই ৩২দিনে হয় এখানে। আর আমাদের এখানেও ২৪-ঘন্টা হিসেব করা হয় একটি পূর্ণ দিনের দৈর্ঘ্য। আপনাদের মতোই নিজস্ব ঘড়ি, ক্যালেন্ডার রয়েছে আমাদেরও।

মজার বিষয়টি হচ্ছে এই গ্রহে পৃথিবীর একজন মানুষ এসে প্রায় ২০০ বছরেরও বেশী আয়ু ভোগ করে। এখান পরিবেশ, আবহাওয়া এবং আমাদের কেপলার (সূর্য) এর তাপের কল্যানে এমনটা হয় বলেই গবেষকরা জানিয়েছেন। এসব তো আপনারা জানেনই।

আর আপনারা এটাও তো জানেন যে, আমরাদের এই নতুন বিশ্বে প্রথম উপনিবেশ গড়া হয় আজ থেকে মাত্র ২০ বছর আগে, ২১০০ সালের জুলাই মাসের ৪ তারিখে। আর এখান ক্যালেন্ডারও শুরু হয়েছে আপনাদের পৃথিবীর জুলাইয়ের ৪ তারিখে আমার ১ সালের ১লা জানুয়ারী হিসাবে ধরে। অর্থাৎ আপনাদের সংগে আমাদের হিসাব সম্পূর্ণ অন্যরকম; মিলবেই না কিছু।

আপনারা জানেন এখানকার ভূমিপুত্ররা (প্রায় ৯০% পৃথিবীর মানুষের মতোই দেখতে এবং তারাও পৃথিবীর হিসাবে খৃষ্টপূর্ব ১০০০ সালের অনুরূপ সভ্যতাসম্পন্ন) আমাদের বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছে এবং আমাদের উপর প্রধান দায়িত্ব বর্তেছে এদেরকে আধুনিক মানুষ হিসাবে তৈরী করে নেয়া।

আমি এখানকার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করি। আমরা এদেরকে ইংলিশ ভাষায় দক্ষ করে গড়ে তুলছি। এদের মধ্যে বেশী বুদ্ধিমানরা ইতিমধ্যেই আধুনিক মানুষদের স্রোতে মিছে যাবার প্রতিযোগীতায় ব্যস্ত। এরা অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির। এদের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ তেমন একটা দেখা যায় না; তবে এরা ভীষন রকমের সাহসী ও যোদ্ধা প্রকৃতির। এখানেও অনেক রকমের প্রানীজগৎ রয়েছে। এখানকার একটি পাখি যার স্থানীয় নাম ‘মরিয়ঁচা’ কি যে অদ্ভূৎ রকমের সুন্দর এবং চমৎকার গলায় গান করে। আমি চেষ্টা করবো কিছু ভিডিও পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেবার।

আমরা কেএসই গ্রহের বিষুব অঞ্চলে বসবাস করছি। এখানে উত্তর ও দক্ষিন গোলার্ধে অসম্ভব শীত প্রায় সারা বছর জুড়েই। আর বিষুব অঞ্চলে গড় তাপমাত্রা প্রায় ৫৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট থাকে যা খুবই উপভোগ্য।
আপনারা পৃথিবীর মানুষ তো জানেনই যে এই মুহূর্তে এই গ্রহে পৃথিবী থেকে আসা অভিবাসীর সংখ্যা মাত্র ২৭,২৪৫ জন। এখানে আসার পর প্রায় ২০০ অভিবাসী স্থানীয়দের সংগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে এবং সন্তানাদিও হচ্ছে। এখানে স্থানীয় অধিবাসী কন্যা উনয় আমার প্রতি নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে যাচ্ছে, মেয়েটির বয়স মাত্র ৩৭ বছর। এই গ্রহে সাধারণ বিয়ের বয়স ধরা হয় ৫০; এই যা সমস্যা। উনয় নামের এই অতিরূপবতী মেয়েটি এখনও কিশোরী, একটি কিশোরী মেয়েকে গ্রহন করা ঠিক হবে কি না- আমি সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছি।

কেএসই গ্রহের একক শাসনকর্তা পৃথিবী’র ইউএসএ থেকে নিয়োগকরা একজন গভর্ণর। আগামী বছর এখানে প্রথম বারের মতো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তাকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে নিয়োগ দেয়া হবে; যদিও তিনি ইউএসএ এর ওভারসীস ওয়ার্ল্ড এর আওতাধীন থাকবেন।

আমাদের এখানে অনেক সুন্দর সুন্দর পরিকল্পিত রাস্তাঘাট তৈরীর কাজ এখনও চলছে। এখানে পৃথিবীর প্যাসিফিক ওসেন এর চেয়েও বড় বড় ১১টি মহাসাগর রয়েছে। স্থানীয় অধিবাসীর সংখ্যা কমবেশী (এখনও গণনা শেষ হয়নি) ৭০০ মিলিয়ন হবে। ওরা আমাদের খুবই সম্মান করে, তাদের বাড়ীঘরে নিয়ে বসায়, স্থানীয় ফলমুল আমাদের খেতে দেয়। সুস্বাধু সব খাবার সেসব।

আরও প্রায় ১০ বছর পর আমরা পৃথিবীতে ভ্রমনে যাবার অনুমতিপ্রাপ্ত হবো; অধীর আগ্রহভরে অপেক্ষায় রয়েছি আমরা পৃথিবীতে ভ্রমণে যাবার। আপনারা তো ইতিমধ্যেই জেনে গেছেন যে কেপলার সিষ্টেমটি আপনাদের সোলার সিষ্টেম থেকে ১৪০২ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। ১০০ বছর আগেও পৃথিবীর মানুষ চিন্তাই করতে পারতো না যে মাত্র ৩ মাসেই ১৪০২ আলোকবর্ষ দূরত্ব পৃথিবীর তৈরী কোন স্পেসশীপের পক্ষে পাড়ি দেয়া সম্ভব হবে। কিন্তু উনবিংশ, বিংশ, একবিংশ এই তিন শতাব্দীতে বিজ্ঞানের বিশেষ করে চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং মহাকাশ বিজ্ঞানের যে অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে- তা ১০০ বছর আগেও পৃথিবীর মানুষ অনুমানও করতে পারতো না; তাদের কাছে স্রেফ কল্পনাই মনে হতো।
অথচ আজ সবই বাস্তব।

যাই হোক, একটি বিষয় মনে করিয়ে দেবার জন্য আপনাদের কাছে এই লেখাটি। আপনারা কি জানেন যে পৃথিবীবাসীর বিজ্ঞান গবেষনার এই যে দুর্দান্ত উন্নতি, তার মুলে ছিল আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর আগের একটি মহামারী যার জন্য দায়ী ছিল করোনা ভাইরাস গ্রুপের একটি ভার্সন।
সেই মহামারীটি ছিল আমাদের মানবজাতির জন্য একটি আশীর্বাদ মাত্র। ইতহাস বলে পুরো পৃথিবীর বাঘা বাঘা গবেষকরা তখন উঠেপরে লেগেছিল সেই ভয়বাহতম কোভিড-১৯ এর প্রতিশেষক আবিস্কারের নেশায়; তারা পেরেছিলও। কিন্তু তারপর শুধুমাত্র সেই করোনা ভাইরাসই বিলুপ্ত হয়নি- নতুন করে কোন মহামারী পৃথিবীতে আসার রাস্তায় এখন প্রায় ৫০% সংকুচিত।

এবং সেই গবেষনার প্রতিযোগীয় নাসাও নেমে পড়েছিল নতুন পৃথিবীতে অভিজানের জন্য স্পেসশীপ তৈরীতে।

মানুষ তো সফল হবার জন্যই জন্ম নিয়েছে।

আপনারা ভালো থাকুন।
পৃথিবীতে ভ্রমনে আসার অপেক্ষায় দিন গুনছি আমি।

   Send article as PDF