ভ্রমণ স্মৃতি

আমি আমার জীবনের প্রথম ভ্রমনে গিয়েছিলাম অনেকটা বাড়ী থেকে পালিয়ে। এক বন্ধুর সংগে তার এক আত্মীয়র বাড়ী কুড়িগ্রামের রাজীবপুরে।

আমার আব্বা আমাকে যেতে দিবেন না কিছুতেই।
আর আমি যাবোই, নাছোরবান্দা। এবং গিয়েও ছিলাম, বাড়ীতে কিছু না জানিয়ে। মাকে জানিয়েছিলাম, মাও অনুমতি দেননি। আমার মা কখনওই আমার আব্বার কোন সিদ্ধান্তের বাইরে যেতেন না।

এজন্য আমার আব্বা আমার সংগে ১ বছর কোন কথা বলতেন না।
আমিও কথা বলতাম না, আমার কথা কেন যেতে দিবেন না? এতো কড়াকাড়ি ভালো না।

তারও বছর খানেক পর আমি ইন্ডিয়া যাবো।
সব ঠিক-ঠাক। এবারও অনুমতি নেইনি। যেদিন যাবো সেদিন সকালে আব্বার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম, ‘আমি ইন্ডিয়া যাচ্ছি বেড়াতে’।

আব্বা আমাকে তার বুকের সংগে জড়িয়ে ধরলেন।
আমি কান্না সংবরণ করতে পারিনি, তার চোখেও পানি দেখেছিলাম।

আব্বা আমাকে একটা স্বর্ণের চেইন আমার হাতে দিয়ে বললেন, ‘এটা সবসময় গলায় পরে থাকবে। যদি কখনও সব টাকা পয়সা হারিয়ে যায় বা ছিনতাই হয়ে যায়- বিদেশের বাড়ী আত্মীয়-বন্ধুতো কেউ নেই; তোমাকে কে হেল্প করবে? তখন এটা বিক্রি করে অন্তত হোটেল ভাড়া, খাওয়া আর বাড়ী ফিরে আসার ব্যবস্থা করতে পারবে।’

আমি চেইনটি নেইনি। চেইনতো গলায় পরবে মেয়েরা, আমি কেন?
বলেছিলাম, ‘আল্লাহ ভরসা। কিছুই হবে না। আমি অনেক সতর্ক। আপনি শুধু দোয়া করে দেন।’

আমি আমেরিকায় আসার বছর খানেক পর আমার আব্বা মারা যান। আজ আব্বার কথা খুব মনে পরছে; আর দু’চোখও বাধা মানছে না।

   Send article as PDF