উপদেশ

বাংলাদেশের মানুষ অবলীলায় দু’টি কাজ করে খুব আনন্দ পায়। প্রথম কাজটি হলো ‘উপদেশ’ আর অন্যটি ‘গালি’ দেয়া।
আমাদের দেশে তো সবাই এক এক জন মহা-পন্ডিত ব্যক্তি; বিশেষ করে যারা বাম রাজনীতি করে এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগের নৌকায় আশ্রয় নিয়েছে। এর অবশ্য কারণও রয়েছে- এরা এক সময় ঢাকসুতে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করেছে, মার্কসবাদ, লেলিনবাদ পড়েছে এবং তারা এতটাই জ্ঞান অর্জন করে ফেলেছে যে- নিজেরাই নিজেদেরকে ঈশ্বর মনে করা শুরু করে দিত; যদিও একসময় মস্কোয় বৃষ্টি হলে না-কি এরা ঢাকায় বসেই ছাতা ধরে রাখতে; নিজের গা-ভেজা ঠেকাতে।
আর এদেরই উত্তরসূরীরা এখন এক একজন নামকরা ব্লগার। তারা মোহাম্মদ (সা) কে কোন কারণ ছাড়াই গালি দিয়ে ইওরোপের সিটিজেনশীপ বাগিয়ে নিতে সিদ্ধহস্ত। আর এদের দলের নেতৃত্বে তো ড. জাফর ইকবাল, ড. আনিসুজ্জামান-রা রয়েছে-ই সংগে আছে ডা. ইমরান সরকার থেকে শুরু করে আরো নাম না জানা অনেকই- যারা রয়েছে বিখ্যাত হবার তালিকায়।
সবচে মজার বিষয় হলো এদের কাছ থেকে বাংলাদেশ কোনদিনও কিছু পায়নি। এবং কোনদিন কিছু পাবেও না। এরা গালি দেয়া ছাড়া আর কিই বা দিতে পেরেছে?
বাংলাদেশের মানুষ সব-সময় শর্ট-কাটে ‘বড়’ হতে চায়; এরা পরিশ্রমও নয়, মেধার জোড়েও নয়- শর্ট-কার্ট রাস্তা খোঁজে। অনেকে পেয়েও যায়। আর বাম হলেতো কথাই নেই। তারা তো মহা-পন্ডিত!
আরেকটা মজার বিষয় হলো- অত্যন্ত সূক্ষভাবে এসব বস্তাপচাঁ এবং তথা-কথিত জ্ঞানী লোকগুলির নেতৃত্বেই পরিচালিত হচ্ছে দেশের মিডিয়া সমূহ এবং সাংস্কৃতিক অংগন। এবং তারা সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগাচ্ছে।
এরশাদের যেমন সবচে বড় ভূল (!) ছিল ছাত্র রাজনীতিতে নিজের দলকে সম্পৃক্ত না করা তেমনি খালেদা জিয়ার রাজনীতির সবচে বড় ভূল (!) হলো- নিজের দলে যথেষ্ঠ পরিমান সাংবাদিক বা সাংস্কৃতিক কর্মী তৈরী করতে পারার ব্যর্থতা। অতএব, আওয়ামী লীগ সেই সুযোগটাই এখন পুরোপুরি কাজে লাগাচ্ছে। পরিণামে- দেশের মিডিয়া-ই ঠিক করে দিচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে এগুবে। সরকারও তাই করে যাচ্ছে এবং বিএনপিও সেই পাতানো ফাঁদেই পা বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং আরও ভূলের জন্ম দিচ্ছে।
শেখ হাসিনা যে হারে দেশের মানুষ ও মানুষের কষ্টের টাকার উপর জুলুম, অন্যায়, চুরি, ডাকাতি এবং ক্রস ফায়ার, গুম, আটকাদেশ চালিয়ে যাচ্ছে- তার ১০০০ ভাগের এক ভাগও যদি বিএনপি করতো- তাহলে এতো দিনে তারা অস্তিত্বহীন হয়ে যেত। সামান্য হাওয়া ভবনের কারণেই আজ বিএনপি বা তারেক রহমানকে কতটা অসহায় অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে; অথচ তারচে জঘণ্যসব অন্যায় ও কুকর্ম করেও হাসিনা দিব্বি জমিদারী চালিয়ে যাচ্ছে।
এরা (বামপন্থি ও নাস্তিক বা অাওয়ামী লীগরা) একটা অতি মজার এবং চমৎকার কাজে করে। আর তা হোল- সারাক্ষন বাংলাদেশের মানুষদের ‘অতি-তোষন’ করে বেড়ায়। কথায় কথায় বলে থাকে, বাংলাদেশের মানুষ খুবই বুদ্ধিমান, খুব পরিশ্রমি। তার অত্যন্ত গণতন্ত্র সচেতন, রাজনীতি সচেতন ইত্যাদি তেল-মাখা কথাবার্তা। যাতে অতি সাধারণ মানুষগুলি এদের প্রতি তুষ্ট থাকে। এদের ধাপ্পাবাজি বুঝতেও পারে না।
আমি এই কাজটা কখনওই করি না। আমার যুক্তি ভিন্ন। আমার কথা হলো- আমি যদি আমার দোষটাই না বুঝতে পারি; তাহলে নিজেকে সংশোধন করবো কখন?
আগে তো আমাকে জানতে হবে কোনটা আমার ভুল, কিভাবে ভুল। তারপর নিজে যদি নিজের দোষগুলি জানতে পারি- তখনই না সুধরাবো। তোষামদী তো টাউট-বাটপারদের কাজ।
আর এটা তো সবাই জানে যে ‘যে যুক্তিতে হেরে যায় তার একমাত্র অস্ত্রই হলো ‘গালি’ দেয়া’। যেটা খুব ভালো করে পারে বাংলাদেশের একটা চেতনাজীবি গ্রুপ; যারা চেতনা ফেরী করে বেড়ায়।
এই সব বামেরা খুব সুক্ষ চাল ও যুক্তি দিয়ে দেশের মানুষকে দুই’ভাগে ভাগ করেছে। একদল না কি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি। আর একদল পাকিস্তানপন্থী! বাংলাদেশে কোন বোকাচোদা আছে যে না কি ১৫০০ মাইল দুরের পাকিস্তানের কথা মনে রাখে? আমি তো কাউকে খুঁজে পাই না।
তবে, বর্তমানে এসব বাম আর আওয়ামী লীগাররা যে ভারতীয় রাজাকারে পরিণত হয়েছে- সেটা বুঝতে কিন্তু পিএইডি লাগে না। এসব সবাই বুঝে।
আমার উপরে ওসব বাম’রা প্রায়ই খুবই ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে এমনকি কেউ কেউ আমাকে ইনবক্সে হুমকী-ধামকীও দিতে কার্পণ্য করে না। কিন্তু সুবিধা-জনক ভাবে আমি এমন মাটির উপর অবস্থান করছি যে- তাদের গালিগুলি তাদের নিজেদের উপরই বর্ষিত হয়ে যায়; আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে এতদূর অবধি পৌছতেও পারে না।
আমি এসব নিয়ে চিন্তিত নই মোটেও। আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি এবং যাবও। সবচে বড় কথা আমি যতটা না ‘গালি’ পাচ্ছি তার’চে কয়েক লক্ষ্য গুণ ভালোবাসা পাচ্ছি নিয়মিত- যেটা আমার কাছে অনেক বড়। আর এই ভালোবাসাই আমাকে আরও সামনে যেতে উদ্ধবুদ্ধ করে চলছে প্রতিনিয়ত।
আমি নিজেও একজন বাংলাদেশী হওয়া-তে সেসব থেকে খুব একটা মুক্ত নই হয়তো; তবে নিজেকে সবসময়ই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাই। যেমন আমি কাউকে কখনওই কোন ‘উপদেশ’ বা ‘গালি’ দিই না। কিন্তু তারপরও অনেকেই অামার কাছে অনেক বিষয়েই উপদেশ চায়। আমি সাধারণত দিতে চাই না; কিন্তু যদি বুঝতে পারি যে সে সত্যিই বিপদে রয়েছে এবং আমার উপদেশে তার সমস্যার সমাধান হবে- তাহলেই যুক্তি দিয়ে তাকে বিষয়টা সবিস্তরে বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা করি। এতে হয়তো কেউ কেউ উপকৃত হয়ও।
কিন্তু সত্যি কথাটা হলো- আমি নিজে কতটুকুই-বা জ্ঞান রাখি যে অন্যকে উপদেশ দিবো!
কিন্তু তারপরও আমি অনেক-কেই একটি মাত্র উপদেশ দিয়েছি এবং এখনও মাঝে মধ্যে দিই।
আমার সেই উপদেশটা এরকম- ‘কখনও কারো সাথে কোন প্রকার তর্কে জড়াবেন না বা তর্ক করবেন না। আপনি যদি বুঝেনও যে, সে ভুল বলছে বা মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করছে- তখন প্রয়োজনে ব্যারিষ্টার মওদুদের মতো মিটিমিটি করে হাসবেন কিন্তু তবুও তর্ক করবেন না। খুব কাছের কেউ বা বুদ্ধিমান লোক হলে- তাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলতে পারেন; তবে সেটা তখনই না। অনেক পরে এবং না বুঝলে দ্বিতীয়বার আর কিছু বলবেনও না।’
তবে জোড় দিয়ে বলতে পারি, এই একটা ‘তর্ক না করা’র উপদেশ যদি আপনি মেনে চলতে পারেন; তাহলে তা-ই আপনার জীবনকে অনেক বেশী পাল্টে দেবে।
হ্যাঁ তর্ক অবশ্যই করবেন, তবে সেটা হতে হবে যুক্তিযুক্ত, গ্রহনযোগ্য প্লাটফর্মে এবং উপযুক্ত পাত্র-পাত্রীর সাথে। গণহারে তর্কে জড়ায় তো শুধুমাত্র রিক্সাওয়ালারা ও টোকাইরা।
 
আপনি-আমি কেন?
   Send article as PDF