চাপ্টার থ্রি

ঘুম ভেংগে গেল।
শরীরটা বেশ ভালোই লাগছে। মাথাটাও বেশ পরিষ্কার। খুব বেশী সময় মনে হয় ঘুমাইনি।
 
চোখ মেললাম। ঘরে আলো জ্বলে উঠলো সংগে সংগেই।
ইচ্ছে হলো কিছুক্ষণ শুয়ে থাকি। একটু উড়া-মুরি কিছুক্ষন শরীরটাকে মুচড়া-মুচড়ি করতে ইচেছ হলো; আবার কেউ দেখে ফেলবে কিনা সেটাও ভাবলাম এক মুহূর্ত।
 
যা খুশী হবে!
আমার যা ভালো লাগে- তাই করবো।
এবং তাই করলাম।
 
এখন আরও ভাল লাগছে।
মনটাও বেশ শান্ত।
 
কি করবো এখন ভাবছি। মনে হচেছ দুপুর একটা বা দুইটা বাজছে। একটা ঘড়ি দরকার। সময়টা দেখা হচেছ না। আর ঠিক তখনই ওয়ালে একটা ঘড়ি দেখতে পেলাম। হ্যা বেলা পোনে দু’টো বাজে।
 
কোথাও রেডিও বাজছে। মিষ্টি স্বরে রেডিও আওয়াজ ভেসে আসছে। চোখ বন্ধ করে আওয়াজটা বোঝার চেষ্টা করলাম।
 
এতো বাংলায় কথা হচ্ছে। আশ্চর্য্য!
কৈশরে চলে গেলাম। দুপুরে রেডিওতে তখনও ‘অনুরোধের আসর’ বা এই টাইপ কি অনুষ্ঠান খুব জনপ্রিয় ছিল- অনেককেই শুনতে দেখলাম। ঠিক সেই রকম অনুষ্ঠান মনে হচ্ছে! কিন্তু এই ওয়াশিংটন ডিসি হসপিটালে কে সেই দেড়শত বছর আগেকার তাও বাংলাদেশী রেডিওর প্রোগ্রাম শুনবে?
 
গান শেষ হলো। কি গান ঠিক ধরতে পারলাম না।
বিজ্ঞাপন প্রচার হচ্ছে। কিসের বিজ্ঞাপন এটা? কিছুই তো পরিষ্কার হচ্ছে না।
 
কান আরোও তীক্ষ্ন করলাম। পরিস্কারভাবে বিষয়টা বোঝা দরকার।
রেডিওটাকে আমার খুব ঘনিষ্ঠ আত্মিয় মনে হচ্ছে।
এই বিশাল পৃথিবীতে আমার তো পরিচিত কেউ নেই।
 
নট এ সিংগেল পারসন।
আমি একা।
একা।
 
 
কাউকে আমি চিনি না।
কাউকে না।
 
আমার কেউ নেই।
কোথাও কেউ নেই।
 
কিন্তু আমি আছি।
ওহ গড প্লিজ হেল্প মি!
 
বিছানা থেকে নীচে নামলাম। আমাকে দেখতে হবে কে শুনছে সেই ছোট বেলায় আমার শোনা রেডিও। কেন আমাকে ১৯৮০ দশকের কথা মনে করিয়ে দেয়া হচ্ছে!
 
বাথরুমে গেলাম না।
আমাকে খুঁজে বের করতে হবে- কে? কারা?
 
বারান্দায় বের হলাম।
রেডিওর আওয়াজটা আরও তীক্ষ্ন, আরও পরিস্কার। পনের মিনিটরে নতুন মুক্তি পাওয়া বা পেতে যাচ্ছে এমন বাংলা সিনেমার একটা ‘এভার্ট’ প্রচার হতো তখন। সেই প্রোগ্রামটা শুরু হয়েছে। কি ছবি এটা?
 
এখনও কি তাহলে বাংলাদেশী বাংলা সিনেমা মানুষ দেখে।
আমি তো বাংলা সিনেমা পছন্দ করতাম না। হিন্দিও না। শুধুই ইংরেজী মুভি দেখতাম। অথচ আজ বাংলা সিনেমার জন্য আমি হন্যে হয়ে শব্দের দিকে ছুটছি?
 
আমার বাংলা ভাষা।
আমার দেশের প্রোগ্রাম!
এতটা টানছে আমাকে? মনটা শান্তিতে ভরে উঠছে আমার।
 
আমার পাশের তৃতীয় রুমটার ভেতর থেকে রেডিওর আওয়াজ আসছে।
একটা কেবিন। নাম্বার ৮০০৪। রোগীর নাম ইংলিশে লেখা ‘আলিয়াস জেভার’।
আমি বাইরে দাড়ালাম। এমনভাবে দাড়ালাম যেন কেউ বুঝতে না পারে আমি ঠিক কি করছি।
 
এবার ভালোমতো শুনতে চেষ্টা করলাম।
ওহ নো! এটাতো বাংলা ভাষা না। স্পানিশ। স্পানিশ ভাষায় উচ্চস্বরে টেলিভিশন চলছে।
 
হঠাৎই মনে পরে গেল ‘স্প্যানিশ’ এর সংগে ‘বাংলা’র উচ্চারণগত মিলের বিষয়টি।
অনেকটা একই রকম এই দু’টির ভাষার উচ্চারণ। তবুও মিনিট পাঁচেক দাড়ালাম।
 
ভালো লাগলো।
নিজের কৈশর। আমার সেই কৈশরের বন্ধুরা? আরশাদ, সোহেল, মাসুদ, অসীম। একে একে আরও অনেকের নাম এবং চেহারাগুলি আমার সামনে ভেসে উঠছে।
 
কত কত আনন্দ সেই কৈশরে আমার।
লাটিম খেলা।
সাতচাড়া।
দাাঁড়িয়া-বাধা।
গোল্লাছুট।
ডাংগুলি।
সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে বানানো ‘তাস’ খেলা।
 
 
কত আনন্দ। সেই আনন্দ আর ফিরে আসবে না।
কোনদিনও না।
 
শীতের সময় আমার অতি প্রিয় খেলা ব্যাডমিন্টন।
আমার বাড়ীর সামনে সেই খেলার মাঠ।
 
ছোট্ট ইছামতি নদীতে সাঁতার কাটা।
নদী পাড় হয়ে উপাড়ে চলে যাওয়ার প্রতিযোগীতা।
 
আমার চোখ ভিজে গেছে। হাতের কাছে টিস্যুও নেই।
একি! বাচ্চাদের মতো আমি কাঁদছি। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছি আমি। নিজেকে সামলাতে পারছি না। একটু চিৎকার করে যদি কাঁদতে পারতাম?
 
মাটিতে শুয়ে হাত-পা নাচিয়ে একটু চিৎকার করে কান্না।
একটু চিৎকার করে কাঁদতে না পারার কষ্ট- সে যে কতটা কষ্টকর!
 
বাইরে দিকে তাকিয়ে ছিলাম; আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে গড়িয়ে আমার টি-শার্টও ভিজে গেছে। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেড়িয়ে এলো। খুব ভালো যে মনটা নিয়ে বারান্দা বেড়ালাম- সেই মনটা এতটা ভারী হয়ে যাবে- ভাবতেই পারিনি।
 
খোলা আকাশের দিকে তাকালাম।
গাড় নীল আকাশ। দেখতে ভালো লাগছে। কষ্ট ভোলার চেষ্টা করছি। দূরে রাস্তা দেখা যাচেছ। গাড়ী ছুটছে দ্রুত গতিতে।
 
চোখের পানি বন্ধ করতে পারছি না।
থাক, দেখি না কতটা কাঁদতে পারি। হয়তো একটু হালকা লাগবে।
 
হঠাৎ পেছন থেকে কেউ এজন অত্যন্ত কোমল হাত আমার ঘাড়ের উপর রাখলো।
‘মি. ইভান। আপনি ঠিক আছেন? আমি আপনার নার্স সিসিলিয়া। কেমন আছেন আপনি? কাঁদছেন কেন? আমাকে কি কাইন্ডলি বলবেন কিছু? আমি শুধু আপনার নার্স-ই নই আপনি যদি আমাকে আপনার সেরা বন্ধু ভাবেন তাতে আমি খুবই আনন্দ পাবো।’
 
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলি বলে থামলো হোয়াইট মেয়েটি। মেয়েটির বয়স চব্বিশ পচিশের বেশী হবার কথা নয়। স্লিম। দেখতে অতি রূপবতী। সবুজ এপ্রোন গায়ে। মেয়েটা আমারচে ইঞ্চ-খানেক লম্বা হবে সম্ভবত যদি তার পায়ে উচু হিল না থেকে থাকে।
 
আমার কান্না কখন থেমে গেল বুঝিনি।
সিসিলিয়া খুব সুন্দর করে হাসছে।
 
‘আমাকে কি বলা যাবে – কেন কাঁদছিলেন?’
মেয়েটির আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ হলাম। ওর সংগে কথা বলতে ইচেছ হলো।
 
জবাব দিলাম, ‘শৈশবের কথা মনে হচ্ছিল খুব। হঠাৎ একটু আবেগ প্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম। এই বিশাল পৃথিবীতে আমার আজ আর কেউ নেই। কোথাও কেউ নেই। আমি সম্পূর্ণ একা। আমার মা। আমার বোন। আমার কত শত শত বন্ধু। আমার ছোট বেলার খেলার সাথীরা। আমার স্কুল, কলেজ, ভার্সিটির বন্ধুরা। কেউ নেই। অথচ আমি রয়েছি। আমি একা। আমি কিছুই ভাবতে পারছি না সিসিলিয়া। আমি কিভাবে বেঁচে থাকবো? আবার নতুন করে শুরু করে কবে আমার অাবার অসংখ্য বন্ধু হবে। খুব আপন করে কি কোনদিন অার কাউকে পাবো কোন দিনও?’
 
সিসিলিয়ার সংগে হাঁটতে হাঁটতে ভারান্দার অন্য পাশে চলে আসলাম আমরা।
‘আপনি যে জীবনটা নিজের ইচ্ছায় বেছে নিয়েছেন- সেই জীবনটা আবারও পূর্ণতা পাবে। আপনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট, আপনার সবকিছু ঠিক আগের মতোই রয়েছে। পৃথিবী অনেক বদলেছে এই একশ বছরে। আমরা নতুন মানুষ। আপনি পুরাতন। কিন্তু তাতে কি?’
 
‘তাতে অনেক কিছু। এমন একটা দিন আমার সামনে এসে উপস্থিত হবে- এটা আমি কোনদিনও ভাবিনি।’
 
‘দেখুন মিষ্টার ইভান। আপনি বুদ্ধিমান মানুষ। আমি আপনার যাবতীয় বায়োগ্রাফী দেখেছি। আপনার অতীতের অনেকটাই আমি জানি। ঠিক আপনার রোবট মনোরী যতটা জানে- ততটা আমি জানি না। আমি তো একজন মানুষ। তবে এডমিনিষ্ট্রেশন আপনার বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক এবং আন্তরিক। তারা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে সার্বক্ষনিক আপনাকে সংগে দেবার জন্য। আমি সানন্দে দায়িত্বটি বুঝে নিয়েছি। আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আজ আমাদের প্রেসিডেন্ট আপনার সংগে দেখা করবেন। তিনি আপনাকে কিছু মুল্যবান কথা বলবেন।’
 
‘আমার সত্যিই কিছু ভাল লাগছে না সিসিলিয়া। আমি কি করবো কিছুই জানি না।’
‘মন খারাপ করবেন না। আপনাকে আজ বিকেলে অনেক কিছুই জানানো হবে। আপনি বুদ্ধিমান মানুষ। কেন এতটা ভেংগে পরছেন আমি বুঝতে পারছি না।’ সিসিলিয়ার স্পষ্ট জবাব।
 
আমি আর কোন উত্তর খুঁজে পেলাম না। সিসিলিয়া আমার বাঁ হাতটি ধরে রেখেছে। মুন ঠিক এভাবেই আমার হাত ধরে রাখতো। মুনের সংগে সিসিলিয়ার বেশ কিছু মিল দেখতে পাচ্ছি। মুনও অনেক লম্বা ছিল।
 
আমরা আবার আমার রুমে ঢুকলাম। সোফায় বসলাম।
‘দুপুরে আজ কি খাবেন? আমি আপনার সংগে লাঞ্চ করবো।’
‘কি খাবো- কিভাবে বলবো? আমি তো জানি না।’ আমি উত্তর দিলাম।
 
সিসিলিয়ার মুখের হাসিটা এতো সুন্দর কেন? আমি সহ্য করতে পারছিলাম না।
মুখে সেই অসহ্য সুন্দর হাসি ধরে রেখেই বলল, ‘আপনি যদি চান তাহলে আজ দুপুরে আপনাদের দেশী রুটি, ভাত এবং চিকেন মাসালা অর্ডার করা যাবে। কাছেই একটা ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্ট রয়েছে। অর্ডার করবো?’
 
আমি মাথা ঝাকালাম।
‘আপনাকে আজই এই হসপিটালের বাইরে যাবার অনুমতি দেয়া হবে। ডিনার আপনি বাইরে গিয়েও খেতে পারবেন। আপনি একটু বসুন আমি আপনার খাবারের ব্যবস্থা করে ফিরছি।’
 
সিসিলিয়া চলে গেল।
আমি বাথরুমে ঢুকলাম।
 
ভদ্রলোক সাড়ে ছয় ফুট লম্বা। বিশাল শরীর। হোয়াইট। পুরু গোফ; সাদা। মাথার চুলগুলিও শতভাগ সাদা। সাদা সার্টের সংগে একটা লাল টাই পরেছেন। কালো সুটে দারুন দেখাচেছ ওনাকে।
 
আমার সংগে হাত মেলালেন। ‘অামি ড. জর্জ জেফারসন। এই হসপিটালের সিইও ও প্রেসিডেন্ট। আপনার সংগে কথা বলার জন্য আমি উগদ্রিব হয়ে রয়েছে বিগত কয়েক সপ্তাহ। অাপনাকে আমি ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার দেখে গিয়েছি। প্রতিবারই আপনি ‘শীতনিদ্রা’য় ছিলেন। আপনাকে আজ এভাবে দেখে আমি অভিভূত। আজ এই দিনটির জন্য আমি অপেক্ষায় ছিলাম দীর্ঘ ২২ বছর। আপনাকে এই পৃথিবীতে আবারও স্বাগতম।’
 
‘থ্যাংক য়্যূ’ আর কিছু বলতে ইচ্ছে হলো না আমার।
ড. জেফারসন কথা বলেই যাচ্ছেন, ‘মিষ্টার ইভান। আপনি শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ্য। আপনার চিকিৎসা গবেষনায় নিয়োজিত বোর্ড সার্বক্ষনিক রিপোর্ট আমাকে উপস্থাপন করেছে। আপনি চমৎকার রয়েছেন। সে যাই হোক। আমি আপনাকে আজ আপনার মানসিক অবস্থা যেন শতভাগ সুস্থ্য থাকে- সেজন্য আপনাকে কিছু কথা বলবো এবং কিছু তথ্য দিবো।’
 
আমি ভদ্রলোকের দিকে তাকালাম। সিসিলিয়া আমার ডানপাশে বসেছিল। ও আরেকটু ঘনিষ্ঠ হয়ে বসলো। আমার বাম হাতের কানি আংগুলে হাতলা চিমটি কাটলো।
চিমটি এতটা আনন্দদায়কও হয়!
 
‘মিষ্টার ইভান। আপনাকে আজ ডিসচার্জ করা হলো। কিন্তু আপনি চাইলে আরও এক সপ্তাহ এই রুমটাতেই থাকতে পারবেন। আপনি সম্পূর্ণ স্বাধীন চিন্তা করে যা মন চায় তাই করবেন। আপনাকে কিছু কথা বলা অত্যন্ত জরুরী। সিসিলিয়া আপনাকে অনেক তথ্য শেয়ার করবে। কিন্তু আমার মুখ থেকেও আপনার কিছু কথা জানতে হবে।’
 
ড. জেফারসন সোডার ক্যান খুলে চুমুক দিলেন।
‘হ্যা। যা বলছিলাম। আপনি ৯৯ বছরের পুরাতন মানুষ। এই শতবর্ষে পৃথিবী অনেকটাই চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। আমি তারই সামান্য কিছু ধারণা আজ আপনাকে দেব। প্রথমতঃ যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। আমরা ডাটাবেজ ঘেটে দেখেছি সেই ২০০০ সালের দিকে দুবাই থেকে নিউ ইয়র্ক আসতে আকাশ পথে সময় নিতো প্রায় ১৪ ঘন্টা; আর এখন এই সময়টা নেমে এসেছে মাত্র ২ ঘন্টায়। আপনি চাইলে নিউ ইয়র্ক থেকে মুম্বাইও যেতে পারবেন মাত্র ২ ঘন্টাতেই। অবশ্য এজন্য এয়ারক্রাফ্ট এর ডিজাইন, গতি, এবং টেক অফ, টেক অন বিষয়গুলিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। ইন্টারনেট এখন ইলেকট্রিক স্পীডে কাজ করছে। ডাউনলোড আপলোড শব্দগুলি এখন শুধুই ইতিহাস। আপনাকে সহজভাবে যদি বুঝাই তাহলে ক্যামেরায় ছবি তোলার গতিতে এখন ইন্টারনেট কাজ করে। টেলিফোন, ফ্যাক্স বা মোবাইল সিষ্টেমটি অত্যন্ত পুরাতন হয়ে যাওয়া আমেরিকা তা বাতিল ঘোষনা করেছে। টেলি-যোগাযোগের জন্য এখন আর কোন নাম্বার এর প্রচলন নেই। সরাসরি আপনি যে-কাউকে তার নাম ধরেই কল করতে পারবেন। গত মাস থেকে মার্স ও মুনে রেগুলার স্পেসফ্লাইট শুরু হয়েছে। মার্কিন কোম্পানীগুলি সেখানে ট্যুর প্যাকেজ শুরু করেছে- যদিও ভ্রমণ প্যাকেজগুলি সামান্য ব্যয়বহুল- বাট আপনার মতো বিলিওনিয়ারদের জন্য সেটা কোন বিষয়ই না।’
 
আমি চমকে উঠলাম!
অস্পষ্ট স্বরে উচ্চারণ করলাম, ‘বিলিওনিয়ার! আমি? মানে?’
 
ড. জজ জেফারসন হো হো করে হেসে উঠলেন। ‘মিষ্টার ইভান। আপনাকে তো আপনার সম্পর্কে আসল তথ্যগুলিই দেয়া হয়নি। নিউ ইয়র্কের ফোর্ডহামে আপনার নিজের সেই এপার্টমেন্টটি ঠিক আগের মতোই করে রাখা রয়েছে- আমি অাপনাকে চাবিটি হস্তান্তর করবো একটু পরই। আপনি যখন নিজেকে বিজ্ঞান চর্চায় ‘উৎসর্গ’ করলেন পুরো আমেরিকা আপনার বীরত্বে, আপনার সম্মানে সম্মানিত হয়ে উঠলো। তৎকালিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আপনার জন্য টু বিলিয়ন ডলার বাজেট বরাদ্দ করলেন। আরও বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ইউএন, হু সহ আর বেশী কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থাও আরও প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার সেই তহবিলে প্রদান করেছেন। এবং এই সমুদয় অর্থই আপনার একক মালিকানায় এবং সব মিলিয়ে আপনার নগদ অর্থের পরিমাণ এখন প্রায় সাড়ে পাঁচ বিলিয়ন ডলার। আমি আপনাকে আপনার ব্যাংক কার্ডটিও আজ হস্তান্তর করবো- যার নাম মুলতঃ এখন ‘ওয়ান কার্ড’। মজার বিষয় হলো আমি আপনাকে যে ব্যাংক কার্ডটি দিচ্ছি সেটা একই সংগে আপনার ব্যাংক কার্ড- যেখানে ব্যালেন্স রয়েছে সাড়ে পাঁচ বিলিয়ন ডলার এবং আপনাকে আরও প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার ক্রেডিট ফ্যাসালিটি দেয়া রয়েছে এই একই কার্ডে কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংক থেকে। এখন আর আলদা আলাদাভাবে ভিন্ন ভিন্ন কার্ড হয় না। আপনার এই ‘ওয়ান কার্ড’টিই আপনার কমিউনিকেশন্স ডিভাইস হিসাবে কাজ করবে। সিসিলিয়া আপনাকে সমস্যা হলে দেখিয়ে দেবে। আপনার কার্ড শুধুমাত্র আপনার আংগুলের ছোয়া পেলেই কাজ করবে- অন্যথায় এটা ডিএকটিভেট থাকবে।’
 
আমার মাথা ঘুড়াতে লাগলো। আমি ঠিক কি শুনছি বুঝে উঠতে পারছি না।
সিসিলিয়া আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে।
 
ড. জেফারসন আমার হাতে একটা ট্রান্সপারেন্স কার্ড দিলেন। কার্ডটি একটি ক্রেডিট কার্ডের মতোই। কিন্তু বেশ ভারী। একটা ছোট মেশিনে আমার দশ আংগুলের বায়োমেট্রিক ফিংগার প্রিন্ট নিলেন। অামাকে কার্ডের পাসওয়ার্ড সেট করে নিতে বললেন এবং এক্সেস কোড তৈরী করে নিতে বললেন। আমি নিজে নিজেই করে নিলাম। এই প্রথম আমি এই সময়ের কমপিউটার ব্যবহার করছি।
 
অপারেটিং সিষ্টেমটি বুঝতে পারছি না। তবে সব কাজই যে অনলাইনে হচ্ছে এবং ইলেকট্রিক স্পীডে হচ্ছে সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে।
 
ড. জেফারসন আমার হাতে আমার আমেরিকান পাসপোর্টটি বুঝিয়ে দিলেন। আমার এপার্টমেন্টের চাবি হিসাবে নাকি আমি আমার এই ‘ওয়ান কার্ড’টিই ব্যবহার করতে পারবো।
   Send article as PDF