উচ্চতার লড়াই

আজ থেকে প্রায় ৮৬ বছর আগে, অর্থাৎ ১৯৩১ সালে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক সিটির ম্যানহ্যাটনের থ্রি ফিফটি ফাইভ, ফিফথ এভিনিউতে তৈরী হয়েছিল বিশ্বের বিশ্ময় হয়ে সবচে উচ্চুতম ভবন এম্পেয়ার ষ্টেট বিল্ডিং- যার উচ্চতা ১২৫০ ফুট।
 
এবং সবচে দীর্ঘ সময় জুড়ে, অর্থাৎ সেই ১৯৩১ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এই এম্পেয়ার ষ্টেট বিল্ডিংটিই ছিল পৃথিবীর সবচে উচ্চতম ভবন।
 
১৯৭১ সালে এসে এই ভবনটির উচ্চতাকে হার মানায় এই ম্যানহ্যাটনেরই আরও একটা বিল্ডিং- টুইন টাওয়ারস খ্যাত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার; যদিও তার স্থায়িত্ব হয়েছিল মাত্র দুই বছর (যে ভবন দু’টি ২০০১ সালের ওয়ান এলেভেন এ আল-কায়েদার বিমান হামলায় ধ্বংশপ্রাপ্ত হয়েছিল)। সে অন্য গল্প।
 
যাই হোক, ১৯৭৩ সালে বিশ্বের সর্বচ্চ ভবনের জায়গাটা দখল করে নেয় শিকাগো শহরের বিখ্যাত শিয়ার্স চাওয়ার, যার স্থপতি ছিলেন বাংলাদেশী আমেরিকান ফজলুল খান।
 
শিকাগো শহরের ঐ শিয়ার্স টাওয়ারের বুক উচিয়ে থাকার সেই গর্বের স্থায়িত্বকাল ছিল ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত; অর্থাৎ প্রায় ১৪ বছর।
 
১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর সর্বোচ্চ ভবনের স্থানটি দখল করে নেয়- কুয়ালা লামপুরের পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারস; উচ্চতার রাজত্ব করে মাত্র ৬ বছর।
 
এরপর সেই রাজত্ব দখল করে নেয় তাইওয়ানের তাইপে ওয়ান জিরো ওয়ান। তাইপে ওয়ার্ল্ড ফিনান্সসিয়াল সেন্টার তার দাপট অব্যহত রাখে মাত্র ৫ বছর।
 
আরব আমিরাতের দুবাইয়ের ‘বার্জ দুবাই’ সেই বাহাদুরী ছিনিয়ে নেয় ২০০৮ সালে এবং এখনও সগর্বে সেই রাজত্ব চালিয়ে নিচ্ছে বার্জ দুবাই।
 
সৌদী আরবের জেদ্দা শহরের ‘জেদ্দা টাওয়ার’ আসছে ২০২০ সালে সেই ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে পুরো দমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ১.২৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিতব্য ৩৩০৭ ফুট উচ্চার এই ভবনটি তাক লাদিয়ে দেবে সারা বিশ্বকে- কোন সন্দেহ নেই।
 
উচ্চতম টাওয়ারগুলির গল্প শুনলেন।
১৯৯৭ সাল পর্যন্ত বিশ্বের উচ্চতম টাওয়ারগুলির একছত্র অধিকারী আমেরিকা থাকলেও, ১৯৯৮ সালে সেই সক্ষমতা দখলে নিয়ে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়েছে শুধুই এশিয়ান দেশগুলি যার মধ্যে রয়েছে মালয়েশিয়া, চায়না, তাইওয়ান; আর শেষটায় এই লড়াইয়ে যুক্ত হয়েছে আরব আমিরাত ও সৌদী আরাবিয়া-ও।
 
আপনারা জানেন ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর সকালে বিমান হামলায় ধ্বংশপ্রাপ্ত হয় এক সময়ের বিশ্বের সর্বচ্চ টাওয়ার, আমেরিকার গর্ব ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারটি। সেই বর্বরচিত হামলায় ২৯৭৭ নিরাপরাধ মানুষ নিহত হয়।
 
নিহত সেই ২৯৭৭ জন মানুষের স্মৃতিকে জিইয়ে রাখতে সেই ভবনদু’টির স্থানে বিশাল বিশাল দু’টি গর্ত করে তৈরী করা হয়েছে ‘গ্রাউন্ড জিরো’ এবং সেই গ্রাউন্ড জিরো’র চারপাশে খোদাই করে লেখা হয়েছে নিহত সেই মানুষগুলির নাম।
 
এবং সেই ধ্বংপ্রাপ্ত স্থানটিতেই এখন তৈরী হচ্ছে নবউদ্দমে ৭টি সুউচ্চু ভবন।
 
মুল ভবনটির নাম ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, যার নির্মাণকাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করে ভবনটি উম্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। ৭টির প্রতিটি ভবনের নামই হবে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার যা ওয়ান, টু এভাবে সেভেন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার নামে নামাংকিত হবে। ২০১৮ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে এই ৭টি ভবন; যার একটার মধ্যে থাকবে নাইন-ওয়ানওয়ান মেমোরিয়াল ও মিউজিয়ামটিও।
 
ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারটি এই মুহুর্তে আমেরিকার সর্বোচ্চ ভবন।
 
এই ছিল উচ্চতার লড়াইয়ের গল্প।
   Send article as PDF