চেতনার আবিস্কার

ক্রিষ্টোফার কলম্বাসকে আমেরিকার আবিস্কারক বলা হয়। ১৪৯২ সালে আটলানটিকের মতো বিশাল এক মহাসাগর কাঠের নৌকায় পাড়ি দিয়ে একজন ইওরোপিয়ান ক্রিষ্টোফার কলম্বাস আকিস্মকভাবে আমেরিকা নামের দু’দুটি মহাদেশ আবিস্কার করে ফেলেন।
কলম্বাসের চিন্তা ও উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীকে যেহেতু গোলাকার ভাবা হয় সেহেতু ইওরোপ থেকে ক্রমাগত পশ্চিম দিকে যেতে থাকলে এক সময় না একসময় গোলাকার পৃথিবীকে একটি পাক দিয়ে পূর্বের ভারত-বর্ষে পৌছে যাওয়া সম্ভব।

অর্থাৎ ১৪৯২ সাল পর্যন্ত পৃথিবীবাসীর ধারণাও ছিল না যে পৃথিবীটা কতটা বিশাল এবং পশ্চিমের আটলানটিক ও পুবের প্যাসিফিক এর মাঝামাঝি আরও একটি বিশাল ভুখন্ড থাকতে পারে। এবং ছিলও, যেটাকে বলা হয় উত্তর ও দক্ষিন আমেরিকা।

প্রশ্ন হলো, ক্রিষ্টোফার কলম্বাস কিন্তু আমেরিকার মাটিতে পা দেবার পর সেখানে শূণ্য কোন ভূখন্ড পাননি। বরং সেখানে হাজার হাজার স্থানীয় অধিবাসীরা (রেড ইন্ডিয়ান এবং/ বা হিস্পানিক) আগে থেকেই ছিল, তাদেরও আমাদের মতোই স্বাভাবিক জীবন-যাপনও ছিল। তারাও মানুষই ছিল। ব্লাক বা হোয়াইট বা ইন্ডিয়ান কিংম্বা এশিয়ানদের যেমন আলাদা চেহারা বা গাত্রবর্ণ আছে ঠিক তেমনি আমেরিকান আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ান বা হিস্পানিকদেরও নিজস্ব গঠন ও গাত্রবর্ণ বিদ্যমান।

আমেরিকায় যেহেতু আগে থেকেই মানুব-বসতি ছিল সেহেতু ক্রিষ্টোফার কলম্বাসকেই কেন আমেরিকার উদ্ভাবক বলা হলো? এই গুরত্বর প্রশ্নটির সংগে আরও অনেক প্রশ্ন যুক্ত হয়ে যায় যেমন অনেকেই বলে থাকে কোন মুসলিম পর্যটক নাকি আরও হাজার বছর আগেই আমেরিকা আবিস্কার করে ফেলেছে! ইত্যাদি।

আসলে আপনাকে বুঝতে হবে ‘আবিস্কার’ করা বলতে কি বোঝানো হয়?
এই পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব আজ থেকে কম করে হলেও ৪২ লক্ষ বছর আগে। আমরা, আজকের সভ্য মানুষেরা আদিম-সভ্যতা বলতে ম্যাক্সিমাম ৩ হাজার থেকে ৬ বা ১০ হাজার বছর পর্যন্ত ভাবতে পারি; যে সময়টাতে মিশরের পিরামিড, চীনের প্রাচীর, আমেরিকার মায়া সভ্যতা ইত্যাদি খুজে পাওয়া যায়।

দেখুন তো, কম করে হলেও ৩ হাজার বছর আগে এই অনাবিস্কৃত আমেরিকাতেই মায়া নামের এক সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাহলে ১৪৯২ সালে সেটা কিভাবে আবিস্কার হলো?
উত্তরটা আসলে খুবই সহজ। এখানে ‘আবিস্কার’ বলতে বোঝানো হয়েছে ‘কোন বিষয়টা প্রকৃতপক্ষে একটি দিগন্ত উম্মুক্ত করে দিয়েছে’ যেটা আগে হয়নি কখনও।

এখন হাজার হাজার বছর আগে থেকেই আমেরিকায় মানুষ বসবাস করতো। সেখানে সভ্যতাও ছিল, কোন এক মুসলিম নাবিক বা পর্যটক নাকি সেখানে গিয়েওছিল। কিন্তু তাতে কি এসে যায়? এতে কি কোন ‘দীগন্ত উম্মোচিত’ হতে পেরেছিল?
না। পারেনি। সুতরাং ওসবকে আগে হলেও ‘আবিস্কার’ বলা যাবে না, যায় না।

তার মানেটা দাঁড়াচ্ছে শুধুমাত্র খুঁজে বের করলে চলবে না, সেটার যে যুগান্তকারী গুরুত্ব রয়েছে সেটাও উদঘাটন করতে হবে। আরও সহজ করে বলি, আমাদের দেশের স্যার জগদিশ চন্দ্র বোসকে অনেকেই ‘রেডিও আবিস্কারক’ বলে থাকেন। কিন্তু বিজ্ঞানী মার্কনীর আবিস্কারটিই শুধুমাত্র প্রথমে বাস্তবিক প্রভাব ফেলেছিল, চাহিদা পুরণ করেছিল এবং প্রকাশও পেয়েছিলো- যেটা স্যার জগদিশ চন্দ্র বোসের মাধ্যমে হতে পারেনি। আর সেজন্যই স্যার বোস মুকুটটি পড়তে পারেননি।

এবার আসুন অন্য দিক দিয়ে আরও একটু বোঝার চেষ্টা করি।মহাশূণ্যে প্রথম বারের মতো রকেট উৎক্ষেপন করেছিল বা মহাশূন্যে প্রথমবারের মতো স্পেস-ওয়াক করেছিল সোভিয়েট ইওনিয়ন দেশটি। বিষয়টি সোভিয়েটভুক্ত দেশগুলির জন্য অবশ্যই অত্যন্ত আনন্দদায়ক সংবাদ কিন্তু শেষ বিজয় কিন্তু তারা আর ধরে রাখতে পারেনি। কারণ আমেরিকা মহাকাশে দ্বিতীয় অবস্থানে থেকেও মোট ৬-ছয়বার চাঁদের মাটিতে মানুষ পাঠিয়েছে; ১২ জন আমেরিকান চাঁদের মাটিতে হাঁটা-চলা করেছে। কিন্তু সোভিয়েট ইওনিয়ন বা রাশিয়া আজ অবধি সমর্থ হয়নি চাঁদের মাটিতে মানুষ পাঠাতে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে আমেরিকা মঙ্গলের মাটিতেও মানুষ পাঠানোর মিশন সম্পন্ন করার টার্গেট নিয়েছে। ভয়েজার ১ ও ২ নামের দু’দুটো স্পেস-প্রোব আজ এই পৃথিবী থেকে প্রায় ২৭ বিলিয়ন মাইল দূরে এখনও ছুটে চলছে; শুধুমাত্র চাঁদ, শুক্র, মঙ্গলই নয় আমেরিকানদের তৈরী মহাকাশ যান মাটি ছুঁয়েছে (সফল ল্যান্ডিং) শনি গ্রহের উপগ্রহ টাইটানেও। এতএত সফলতার কাছে ম্লান হয়ে পরে রাশিয়া-চায়না-জাপান-ইওরোপ বা ভারতের ছোট-খাটো (অথচ বাস্তবতায় অনেক বিশাল সাফল্য) মহাকাশ মিশনও। সুতরাং মহাকাশ জয়ের হিসাব সামনে আসলে আমেরিকার সামনে কেউ দাঁড়াতেও পারে না; প্রথমবার মহাকাশে পৌছেও রাশিয়া আজ গৌন।

শুনলাম, আবুধাবীও মঙ্গলে মহাকাশ যান পাঠাচ্ছে। মহাকশ যানটি উৎক্ষেপন করবে জাপান, তৈরী করে দিয়েছে আমেরিকার ৩টি ইওনিভার্সিটি মিলে। তাহলে আবুধাবী করেছে টা কি? ঐ সব গবেষকদের টাকা দিয়েছে, জাপানকে টাকা দিয়েছে তারপর উৎক্ষেপন করবে। অর্থাৎ তেল-বিক্রির মুফতে কামানো টাকার বাহাদুরীতে একটি স্পেসপ্রোভ মঙ্গলে পাঠানোর নাম কিনছে?

এই সাফল্যকে আপনি কি বলবেন?

গরীবের ঘোড়া রোগ নাকি টাকার বাহাদুরীতে লোক-দেখানো মস্করা?

তাহলে বাংলাদেশ কি করলো?তার আগে বলি, আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারত কিন্তু মহাকাশ নিয়ে যথেষ্ঠ গবেষনা করছে। তারা এই তো সেদিন নতুন একটি উপগ্রহ পাঠালো যেটা দিয়ে আবহাওয়া ও টিভি ও ইন্টারনেট সেবাও দেয়া যাবে, এজন্য তারা খরচা করেছে মোটে ৩০০ কোটি রুপি। আর বাংলাদেশ একখান স্যাটেলাইট পাঠাইলো যেটা দিয়ে শুধুমাত্র স্যাটেলাইট টিভি চালানো যাবে (আর কিছুই করা যাবে না) এবং যেটার বাজার মুল্য ম্যাক্সিমাম ৩০০ কোটি টাকা কিন্তু বাংলাদেশ সেটাতে ব্যায় করেছে ৩ হাজার কোটি টাকা।
অর্থাৎ ২৭০০ কোটি টাকা হরিলুট করা হলো, প্রকাশে, দিবালোকে!কিন্তু, তারপর কি হলো? নিজেরা নিজেরাই বড় বড় কামান দাগা শুরু করে দিল বাংলাদেশ নাকি মহাশূণ্যে কি নাকি ছিড়ে ফেলেছে!

এসবের অর্থ কি? এটা গরীবের ঘোড়া রোগও না, টাকা দিয়ে মস্কারাও না। এটা দেশের মানুষের টাকা ডাকাতি করে খেয়ে ফেলা। আর এটাকে যারা সাফল্য বলবে, এটাকে নিয়ে যারা দেশের অহংকার হিসাবে প্রচার করবে- তারা হলো চেতনাজীবি।
তাহলে কেন? বলছি।

ঐ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের পর চেতনাজীবিদের দেখেছি ‘স্যাটেলাইট ক্লাবে’ নাম লিখতে পেরে সে কি সুখ? তো, বাংলাদেশ ঐ স্যাটেলাইট ক্লাবে নামটা লিখে কি অর্জন করতে পেরেছে? কোন বাংলাদেশী গবেষক কি এই স্যাটেলাইটের সংগে যুক্ত ছিল? বাংলাদেশ কি ঐ স্যাটেলাইটটি আবিস্কার করেছিল? বাংলাদেশ কি বিগত ৩ বছরে ৩০০ টাকাও আয় করতে পেরেছে ঐ স্যাটেলাইটটি থেকে? না কিছুই পারেনি। শুধুশুধু ৩ হাজার কোটি টাকা গচ্ছা আর বছরে বছরে রক্ষনাবেক্ষন খরচা তো থাকছেই।

কিন্তু বাংলাদেশী চেতনাজীবিদের দেখবেন উল্লাসের কোন শেষ নেই। কেন উল্লাস প্রশ্ন করুন, উত্তর দিতে পারবে না। উত্তর দেবার মতো মাথাই যাদের নেই- তারা উত্তর দিবে কোত্থেকে? বলবে আমাদের স্যাটেলাইট আছে- অথচ স্যাটেলাইট বানানটাও তারা করতে পারবে না ঠিকঠাক।

অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেক নামের লাইসেন্সহীন একটি কোম্পানী নাকি করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন ‘আবিস্কার’ এর ঘোষনা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন দেশের প্রায় ১৪০টি গবেষনা প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষনা চালাচ্ছে; আমেরিকা-বৃটেনের হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হিউম্যান ট্রায়ালে যেতে পেরেছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান ঘোষনায় বলছে তারা যেটা আবিস্কার করতে পারছে সেটা দিয়ে হয়তো ১-২ বছরের জন্য প্রতিরক্ষা দেয়া যেতে পারে। সেখানে কয়েকটা খরগোসের উপর এন্টিবডি পরীক্ষা চালিয়েই বাংলাদেশ ভেউ ভেউ করে চেতনা ঝড়িয়ে ফেলল।
আবিস্কার শব্দটি অত্যন্ত ভারী শব্দ।পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করা হলো; দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে, গণমানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করা হবে। বৈষ্ণুম্য দূর করা হবে। অথচ মুজিব সাপ ক্ষমতা নিয়েই ঘোষনা দিলেন- বাংলাদেশে কোন অবাঙালী বসবাস করতে পারবে না, সকল অবাঙালীকে তিনি বাঙালী হয়ে যাবার নির্দেশ দিলেন অথবা দেশ ছাড়তে বললেন। গণতন্ত্র হত্যা করলেন, মানবাধিকার ধ্বংশ করলেন। একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করলেন। এবং চেতনাজীবিরা এটাতেও সুখ পেল। এতটুকু ক্ষুদ্রতা নিয়ে মুজিব সাপও আজ আওয়ামী জাতির পিতা হয়ে বসে পরেছে। বুঝুন অবস্থা? মুজিব সাপ নাকি বিশাল মনের মানুষ! লে হালুয়া! তাহলে উর্দূকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষনা দিয়ে জিন্না সাহেব কি অন্যায়টা করেছিলেন?

আসলে ‘চেতনাজীবি’ হতে আলাদা করে কোন যোগ্যতা অর্জন করতে হয় না। শর্টকার্টে লাভ করা যায় বা বড়লোক হবার রাস্তা থাকে এমন চিন্তা-ধারায় যারা মানুষ হয়- তারাই চেতনাজীবি। এরা কোন বিষয়েরই গভীরতায় যেতে পারে না। গবেষনাও করতে পারে না। এদের বেসিক কিছু পড়াশোনার বাইরে কোন যোগ্যতা থাকে না।

আমি বেশ কিছু ‘চেতনাজীবি’কে চিনি, যারা বাংলাদেশে ভালো কর্পোরেট জব করতো। তারপর আমেরিকায় এসে যখন বুঝে ফেলে যে সে আসলে যোগ্যতাহীন- তখন তার চেতনা আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, আমেরিকাকে গালি দিতেও কার্পণ্য করে না। শেষ মেশ হয় হাফ পুলিশের পোষাক গায়ে জড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশের টিকিট বিলি করে না হয় উবার বা ট্যাক্সিক্যাব চালায়। এদের কাউকেই আমি বড় কোন কাজের (বুদ্ধিবৃত্তিক) সংগে সম্পৃক্ত হতে দেখিনি। আমেরিকায় চেতনা প্রকাশের কোন সুযোগ নেই বিধায় এরা বড্ড অসহায় হয়ে পরে এদেশে।

ভাবুন তো, খালি পায়ে শহীদ মিনারে গিয়ে বছরে একদিন কিছু ফুল দিয়ে আসতে হবে; ২৬শে মার্চ আর ১৬ই ডিসেম্বর একটু ‘ভুংবাং’ করবেন মাথায় পট্টি-ফট্টি বাঁধলে আরও ভালো হয়; আর কথায় কথায় ‘বাংলাদেশ’ বাংলাদেশ’ বলবেন, প্রোফাইলে লাল-সবুজ কিছু একটা ঝুলিয়ে রাখবেন। ব্যস আপনার দেশপ্রেম হয়ে গেল। আপনি বিরাট মাপের দেশপ্রেমী। আপনার চেতনা উঠলে উঠবে।

এরপর আপনি যেহেতু দেশপ্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হয়ে গেলেন- এবার আর আপনাকে পায় কে? ভারত যখন বাংলাদেশ সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা করবে তখন আপনি মাথায় লাল-সবুজ পট্টি পরে ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী অক্ষুন্ন থাকবে’ ব্যানার লাগালেও চেতনায় কোন আঘাত আসবে না। আপনি পাকিস্তানকে শুধু জায়গা মতো গালি দিতে পারলেই আপনার চেতনা ঠিক। অথচ ৫০ বছর হয়ে গেছে পাকিস্তান বিদেয় হয়েছে- যাদের সংগে বাংলাদেশের বিন্দুমাত্র সংযোগের সম্ভাবনা নেই, তাদের গালি দিবেন। বুঝেন গালিটাও কত নিরাপদ- পাকিস্তান তেড়ে আসবে না। তারা হিসাবও বেশ বুঝে, ভারতকে গালি দিলে উল্টো চর-থাপ্পর খাবার ভয় এরা পায়। তাই ভারতীয় দালালীও তাদের চেতনার মধ্যেই পরে।

আপনি একজন, হ্যা মাত্র একজন ‘চেতনাজীবি’ কে দেখান বাংলাদেশে যার সামান্যতমও ‘অবদান’ আছে। একজন চেতনাজীবিকে দেখান যার নৈতিক চরিত্র বলে কিছু আছে। একজন চেতনাজীবিকে দেখান, যে নিজের স্বার্থ না বাঁচিয়ে কথা বলতে পারে। একজন চেতনাজীবিকে দেখান ব্যক্তি জীবনে যে অসৎ নয়, অসংখ্য মামলার আসামী নয়। একজন চেতনাজীবিকে দেখান সে ১০টা কথা বললে তার মধ্যে কমপক্ষে ৫টি কথা মিথ্যা নয়। একজনও পাবেন না। তাহলে তো চেতনাজীবিই হওয়া যাবে না।

চেতনাজীবিরা দেশকে কিছুই দেয় না, শুধু নেয়। দেশের টাকা চুরি করে বেঁচে থাকাই এদের কাজ। চেতনার যোগ্যতায় নিয়োগ পাওয়া পদের লোকগুলিকে দেখবেন কিভাবে তারা বিভিন্ন প্রজেক্টের নামে দেশের টাকা পয়সা লুটতরাজে ব্যস্ত থাকে। পাপিয়া শাহেদরা চেতনায় বলিয়ান হয়েই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মন্ত্রী-মিনিস্টারদেরসংগে পোজ দেয়; ধরা খাবার পর এরা আর আম্লীগ থাকে না।

১৭৫৭ সালে ভারত-বর্ষ বৃটিশদের কাছে স্বাধীনতা হারায়। তার ঠিক ১৯ বছরের মাথায় এই বিশ্বের অপর প্রান্তে এই অসীম ক্ষমতাধর বৃটিশদেরই বিতারিত করে গঠিত হয় নতুন একটি দেশ আমেরিকা। আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে আমেরিকার জাতির পিতাগন (ফাউন্ডিং ফাদারস) প্রথম যে কাজটি করেছিলেন সেটা হলো আমেরিকাকে একটি সম্পূর্ণ গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও অপুর্চনিটির দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে শক্তিশালি একটি ‘কন্সিটিটিউশন’ তৈরী করা। করেছিলেনও তারা তেমন একটি কন্সিটিটিউশন; আর সেই সংবিধানের জোড়েই আজ এই বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারছে আমেরিকা।

বাংলাদেশ কি করলো?

১৯৭১ সালে স্বাধীন হলো। তারপর বৃটিশরা যে সংবিধানটি তৈরী করেছিল ভারত-বর্ষের জন্য, পাকিস্তানীরা সেটাকেই বেসিক ধরে ‘বৃটিশ-ভারত’ এর স্থানে যেখানে যেখানে ‘পাকিস্তান’ বসিয়েছিল ড. কামাল সাহেবেরা ঐ ‘পাকিস্তান’ শব্দগুলিকে মুছে তার স্থলে ‘বাংলাদেশ’ বসিয়ে হয়ে উঠলো বাংলাদেশের সংবিধানের রচয়িতা! বুঝুন কি মাপের সংবিধান রচয়িতা এরা?

কমপিউটার যারা চালাতে জানেন, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড যারা ইউজ করেন তারা যানেন যে একটি সম্পূর্ণ আর্টিকেলের মধ্যে থেকে একটি নির্দিস্ট শব্দকে কত সহজে একটি মাত্র কমান্ডের মাধ্যমে ‘রিপ্লেস’ করে ফেলা যায়। বৃটিশ-ভারতের স্থলে পাকিস্তান এবং পাকিস্তানের স্থলে বাংলাদেশ প্রতিস্থাপন করাকে ‘সংবিধান রচয়িতা’ বলে না।
এতো সোজা না কোন কিছু রচনা করা বা আবিস্কার করা।তাহলে একজন দুইজন ক্রিষ্টোফার কলম্বাস বা একজন দুইজন মার্ক জাকারবার্গ অথবা জর্জ ওয়াশিংটন কিম্বা ইলন মাস্ক এই পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াতেন না।

চেতনা বিক্রি করে বিল গেটস হওয়া যায়না, চেতনা মার্কেটিং করে সজীব ওয়াজেদ জয় হওয়া যায়। চেতনা বিক্রি করে ষ্টিভ জবস বা সুন্দর পিচাই হওয়া যায় না, তবে চেতনা মার্কেটিং করে অনায়াসেই ইমরান এইচ সরকার হওয়া যায়।

   Send article as PDF