গুটিবাজি

বিষয়টা অনেকটা ১৯৪৭ সাল পরবর্তী ভারত-পাকিস্তান অঞ্চলের মতোই।
 
বৃটিশরা ভারতবর্ষকে তিনটি ভুখন্ডে বিভক্ত করে দিয়ে দু’টি রাষ্ট বানিয়ে চলে গেল। মধ্যিখানে থাকলো বিশাল ভারত। আর পূর্ব দিকে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিমে পশ্চিম পাকিস্তান।
 
কিছু বছর পরই চলতে থাকলো দুই অঞ্চলের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।
গুটিবাজি চালাতে থাকলো ভারত।
 
যাই হোক, একটা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে দুই পাকিস্তান ভিন্ন দু’টি রাষ্ট্রে পরিণত হলো। আর ভারত তাদের গুটিবাজি অক্ষুন্ন রাখতে শুরু করলো।
 
বলছিলাম ইসরেল নিয়ে।
বলা নেই কওয়া নেই, কোত্থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে আরব ভূমিতে বৃটিশরা একটি অবৈধ রাষ্ট্র জন্ম দিয়ে গেল, নাম ইসরেল। এক সময় আমেরিকানদের কাছে এবং আরেক সময় জার্মানদের কাছে কঠিন মার খেয়ে হতদ্দম অবস্থায় বৃটিশ চক্রান্তে ইহুদীদের একটা রাষ্ট্র জন্ম নিল আরাবিয়ান অঞ্চলে। উচ্ছেদ করা হলো নিজ বসতি থেকে ফিলিস্তিনিদের।
 
তারপর নামকাওয়াস্তে ‘প্যালেস্টাইন’ মুলা ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু সেটাও দু’টি ভিন্ন ভূখন্ডের ঝামেলা জিইয়ে রেখে।
 
একটা অংশ ‘ওয়েষ্ট ব্যাংক’ অপরটি ‘গাজা ষ্ট্রিপ’। মাঝখানে ইসরেল- সমানে চলছে গুটিবাজি।
 
দু’টোই ‘ফিলিস্তিন’ কিন্তু দু’টি ভিন্ন ভিন্ন অংশ।
একে অপরের শত্রু পক্ষ। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না।
 
প্যালেসটাইনের নিজস্ব মুদ্রাও নেই।
তারা ব্যবহার করে ইসরেলী নিউ সিকেল, ইজিপ্টসিয়ান পাউন্ড এবং জর্ডানিয়ান ডিনার।
 
এক অঞ্চল শাসন করে হামাস, অন্য অঞ্চল ফাত্তাহ।
অথচ তারা একটাই দেশ!
 
নিজেরাই অন্তর্দন্দে ভূগছে জন্মলগ্ন থেকেই।
যারা নিজেরাই ঠিক নেই- তাদের আপনি সমর্থন করবেন কিভাবে?
 
মুসলিমরা সারা পৃথিবীতেই দ্বিধাবিভক্ত।
একদিকে শিয়া অন্য দিকে সুন্নি।
 
আমি তো খোদ বাংলাদেশেও একটা গ্রুপকে বলতে শুনি ‘শিয়ারা নাকি মুসলিম-ই না’। বলি, ‘আপনারা সুন্নিরাই যে মুসলিম- তার -ই বা কি প্রমাণ আছে- শুনি?’
 
কতগুলি মাজহাব তো রয়েছেই; পড়াশোনার ব্যবস্থায়ও রয়েছে ভিন্নতা। কেউ পড়ছে কওমী আবার কেউ মানছে মাদ্রাসা শিক্ষা।
 
খোদ আমাদের বাংলাদেশেও অসংখ্য ‘ইসলামী দল’; কারোর সংগেই কারো কোন মিল নেই।
 
এর উপর আবার তৈরী হয়ে রয়েছে কিছু সন্ত্রাসী সংগঠন- তাও ইসলামেরই নামে।
ইন্টারন্যাশনালী আল-কায়েদা, তালেবান, আইএস!
এদেশে বাংলাভাই আরও কত হাবিজাবি কিসব নাম!
 
এই হাজারো বিভক্তি নিয়ে আমরা কিভাবে প্যালেসটাইনের পাশে গিয়ে দাড়াবো?
 
যাদের নিজেদের ভেতরেই ঐক্য নেই- তারা কিভাবে আরেকটি দেশকে সমর্থন করবে? ঠিক আছে- প্যালেসটাইনকে সমর্থন করবেন ভালো কথা- কোন প্যালেসটাইনকে? গাজা না ওয়েষ্ট ব্যাংক- কাকে?
 
আমরা শুধুই পারি বড়বড় কথা বলতে এবং লম্ফজম্ফ করতে।
 
ইসরেল নাকি ইসলামের শত্রু।
ইহুদীরা নাকি অভিশপ্ত জাতি।
 
অথচ, আপনি আমি সেই শত্রু এবং অভিশপ্ত জাতির সবকিছু নিয়েই বেঁচে রয়েছি।
ইহুদী প্রডাক্ট ফেসবুক ছাড়া আমাদের এক মুহূর্তও চলে না।
পায়ে থাকে ইহুদী মালিকের বাটা’র জুতো।
আধা ইহুদী বিল গেটস এর উইন্ডোজ ছাড়া আমাদের কমপিউটার চলে না; ইহুদী মালিক ল্যারী পেইজ এর গুগল আর এনডরয়েড স্মার্ট ফোন ছাড়া আপনার দিনই কাটে না।
 
আবার সেই ইহুদী কমপিউটার, ইহুদী ফেসবুক, ইহুদী স্মার্টফোট ব্যবহার করে আপনি ইহুদীদের গালি দিবেন- তাদের ধ্বংশ চাবেন; বিষয়টা কেমন দ্বি-মুখী হয়ে গেল না!
 
মুসলিমরা প্রকৃতপক্ষে বাস্তববাদী নয়।
একটা সময় পর্যন্ত মুসলিমদের জয়জয়কার ছিল ঠিকই- কিন্তু এখন?
দুই একটা টুইন টাওয়ার্স ধ্বংশ করে, কিছু বোমা ফুটিয়ে আর ওআইসি’র মতো একটা মেরুদন্ডহীন ভাংগা সংগঠন নিয়ে লম্ফজম্ফ করে কি করবেন বলুন?
 
যেখানে স্বয়ং সৌদী আরাবিয়া নিজেরাই আজ ইহুদীদের দালালীতে ব্যস্ত।
 
আমাদের বাংলাদেশে আজ মসজিদে বসে ধর্মগ্রন্থ পড়তেও দ্বিতীয়বার ভাবতে হচ্ছে- জংগী ট্যাগ খাবেন কি না! দেশে আজ দাড়ি-টুপি পড়তেও ভয় পায় মানুষ পাশে না হাসিনার পুলিশ বাহিনীর ক্রস ফায়ারে দিয়ে জংগী ট্যাগ লাগিয়ে দেয় আপনাকেই।
 
অথচ আমরা মুসলিমরা বাংলাদেশের সংখ্যাগড়িষ্ঠ ৮০ শতাংশ।
আমরা কি ঐক্যবদ্ধ!
 
৮০ শতাংশ মুসলিম এক হলে শেখ হাসিনার মতো ‘মহিলা দজ্জাল’ কয়দিন টিকে থাকতে পারে?
 
অামরা হাচিনাকেই উচ্ছদ করার ক্ষমতা রাখি না- জেরুজালেমকে প্যালেসটাইনের রাজধানী বানিয়ে দেবো!
 
এসব চিন্তা করাও মুর্খতা বৈ কিছুই না।
 
আমরা বিশ্ব বাস্তবতা বুঝি না, বোঝার চেষ্টাও করি না।
আমরা নিজেরাই দু’বেলা দু’মুঠো খাবারটাই ঠিক-ঠাক জোগাড় করতে ব্যর্থ।
নিজ দেশে স্বাধীনতা, মানবতা, গণতন্ত্র অর্জন করতে ব্যর্থ।
 
সেই আমরা ব্যস্ত রয়েছি ইসরেল এর রাজধানী নিয়ে!
বিষয়টা আমার কাছে স্রেফ বিনোদন-ই মনে হয়।
 
আমেরিকা বর্তমান বিশ্বের সুপার পাওয়ার; তার অংগুলি হেলনে বিশ্ব চিৎ-কাত হয়!
আমেরিকা তার নিজের স্বার্থ দেখবে, নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। এটাই বাস্তবতা। এটাই সত্য। তদ্রুপ আপনাকেও আপনার স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে।
 
কিন্তু আপনি তো ঠিক-ঠাক জানেনই না যে আপনার স্বার্থটা কি?
 
আমেরিকার ইসরেলকে প্রয়োজন। তাই সে তার স্বার্থে ইসরেল এর জন সম্ভাব্য সবকিছু করবে- এটাই স্বাভাবিক, যৌক্তিক এবং বাস্তবতা।
 
টার্কিশ প্রেসিডেন্ট এরদোগান সাহেব বড় বড় লেকচার দিচ্ছেন- অথচ তার নিজের দেশটিও ইসরেল এর সংগে কুটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। এসবই দ্বিমূখীতা।
 
মালয়েশিয়া, ইরান তো ইসরেল এর সংগে কুটনৈতিক সম্পর্ক রাখেনি। কিন্তু আপনি ইরানকে বলবেন শিয়া! আপনার সুন্নি সৌদী আরাবীয়া কি করে চলছে?
 
যাই হোক, আমরা বাংলাদেশীরা ঐক্যবদ্ধ নই।
আমরা বাংলাদেশীরা আমাদের দেশীয় ‘ইহুদী হাচিনা’-কেই উচেছদ করতে পারছি না!
 
আর কিনা লাগতে যাচ্ছি ইসরেল এর সংগে!
 
আপাতত ইসরেল আমেরিকার মতো সুপার পাওয়ার নিয়ে ভাবনা চিন্তা না করে দেখতে থাকেন সাকিব খান তার অপু বিশ্বাসকে ডিভোর্স দিলো কি না। দেখতে থাকুন ক্রিকেট বিশ্বে কবে আর কোন খেলাটা মিস না হয়!
 
এছাড়া বাংলাদেশের আর দৌড় কতটুকু!
আগে যথাযথ যোগ্যতা অর্জন করুন- তখন আমেরিকাও আপনাকে নিয়ে মেতে থাকবে; এখন যেমন মেতে থাকছে ইসরেলকে নিয়ে।
   Send article as PDF