চেতনায় ভরে উঠুক মহাশূন্য!

ফ্রান্স থেকে ৫০০ কোটি টাকা দামের একটা স্যাটেলাইট কিনে সেটাকে জাহাজ ভাড়া করে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আমেরিকার ফ্লোরিডায় পাঠিয়ে নাসার থেকে একটা রকেট ভাড়া নিয়ে সেই রকেটের সাহায্যে ঐ স্যাটেলাইটটিকে মহাশূন্যে ভাসিয়ে দেয়া হলো। অবশ্য তার আগে ইনভয়েজ করে ৩০০০ কোটি টাকা একনেকে পাস করিয়ে ছাড় করে খেয়ে ফেলাও শেষ। সংগে যুতসই একটা নামও দেয়া হলো ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’।
 
সুতরাং টাকা থাকলে আপনি নিজেও একটা স্যাটেলাইট মহাশূন্যে পাঠিয়ে দিতে পারেন। অন্তত যাদের কাছে ৪ হাজার কোটি টাকা কোন টাকাই না, তাদের নিকট তো ৩ হাজার কোটি টাকা স্রেফ কিছু ন্যাপকিন বই ভিন্ন কিছু হবার কথা না।
 
তাহলে চলুন এবার গল্পের দ্বিতীয় অধ্যায়ে যাই।
রাশিয়া আর চায়না ইতিমধ্যেই মহাশূন্যে শতশত স্যাটেলাইট পাঠিয়ে মহাশূণ্যস্থ বাংলাদেশের আকাশ প্রায় পুরোটাই দখলে নিয়ে রেখেছে। সুতরাং সমস্যা যেটা সৃষ্টি হলো সেটা হলো ঐ ৩ হাজার কোটি টাকার স্যাটেলাইট মহাশূন্যে ভাসানোর জায়গা যেটা পাওয়া গেল সেখান থেকে বাংলাদেশটা শতভাগ সরাসরি দেখার উপায় নেই।
 
স্যাটেলাইটটিকে যে অবস্থানে স্থাপন করা হলো সেখান থেকে বেশ ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে ফিলিপিন্স আর ইন্দোনেশিয়াকে। কিন্তু তাতে কে? ফিলিপিন্স আর ইন্দোনেশিয়ার নিজস্ব স্যাটেলাইট আরও বহু বছর আগে থেকেই মহাশূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছে।
 
এদিকে সমস্যা আরও একটা রয়েছে।
ঐ স্যাটেলাইটটি দিয়ে শুধুমাত্র টেলিভিশন সম্প্রচার করা যায় আর ডিটিএইচ বা ডাইরেক্ট টু হোম সার্ভিস প্রদান করা যায়- অন্য কিছুতে ওটা কোন কাজে লাগে না।
 
বাংলাদেশের যে টিভি চ্যানেলগুলি রয়েছে তাদের ম্যাক্সিমাম গ্রাহক বাংলাদেশে বসবাস করে আর বড় একটা অংশ বসবাস করে মধ্যপ্রাচ্য ও ইওরোপের কিছু দেশে। কিন্তু ঐ স্যাটেলাইট থেকে বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলি মধ্যপ্রাচ্য বা ইওরোপ থেকেও দেখা যাবে না।
 
তাহলে স্যাটেলাইটটি কি কাজে লাগানো যায়?
ইন্দোনেশিয়া-ফিলিপিন্স এর জনগণকে বাংলাদেশের টিভি অনুষ্ঠান খাওয়ানো গেলেও চলতো। কিন্তু ওরা খাবে বলে তো মনে হয় না।
 
সুতরাং আপাতত এই স্যাটেলাইট তেমন একটা কার্যকরি যে হচ্ছে না- সেটা পরিস্কার।
তারচে বরং চলুন আমরা নিজেরাই কিছু বুদ্ধি খুঁজে বের করি- কিভাবে স্যাটেলাইটটিকে কার্যকরী করা যায়।
 
১) ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্সের ব্যবসায়ীদের অফার দেয়া যেতে পারে যে- তাদের কাছে ফ্রিতে ফ্রিকোয়েন্সি দেয়া হবে, তারা যত খুশী রেডিও-টিভি সম্প্রচার করতে পারবে, আমরা কোন টাকাই নেব না। বিনিময়ে শুধুমাত্র প্রতিদিন তিন বেলায় ১৫ মিনিট করে ‘চেতনা গল্প’ প্রচার করতে হবে।
 
২) প্রথম উদ্যোগটি সফল হলে আমরা আরও একটা স্যাটেলাইট মহাশূন্যে পাঠিয়ে দিবো। ৪ হাজার কোটি টাকা যেহেতু কোন টাকাই না, সেহেতু আরও ৩ হাজার কোটি টাকাও কোন সমস্যা হবার কথা না। এটার নাম দেব ‘মিয়া হাসিনা স্যাটেলাইট’।
 
৩) এভাবে তৃতীয় আরেকটা, চতুর্থটা, পঞ্চমটা, ষষ্ঠটা এভাবে গুনে গুনে সর্বমোট ১৫টি স্যাটেলাইট আমরা মহাশুন্যে পাঠিয়ে দিবো- চেতনায় চেতনায় ভরে উঠবে আমাদের মহাশূণ্য। প্রশ্ন আসতে পারে ১৫টি কেন পাঠাবো? উত্তরটিও সহজ, সিংগাপুর-থাইল্যান্ড’কে বাস্তবিক অর্থেই তখন আমরা স্যাটেলাইট প্রতিযোগীতায় টপকে যেতে পারবো। বুদ্ধিটা খারাপ কি?
 
৪) স্যাটেলাইটগুলির নামও হবে দারুন দারুন ও বুদ্ধিদীপ্ত। প্রথম ৯টা হবে বঙ্গবন্ধু ১ থেকে বঙ্গবন্ধু ৯। তারপর বাকী ৬টা হতে পারে পারে যথাক্রমে ‘মিয়া হাসিনা স্যাটেলাইট’, ‘শেখ রাসেল স্যাটেলাইট’ তারপর ধরেন- ‘ধর্ষক কামাল স্যাটেলাইট’, ‘ফুটবলার জামাল স্যাটেলাইট’, ‘সজীব ওয়াজেদ গুগল স্যাটেলাইট’, ‘বৃটিশ টিউলিপ ও রেহানা স্যাটেলাইট’, এবং আরেকটির নাম ‘মৃণাল স্যাটেলাইট’।
 
৫) মিয়া হাসিনা স্যাটেলাইট টির কাজ হবে বিশ্বব্যাপী ‘গোপন ভিডিও’ ফাঁস করে ভাইরাল করে দেয়া।
 
৬) ‘শেখ রাসেল স্যাটেলাইট’টি ব্যবহৃত হবে শেখ মুজিব শিশু অবস্থায় কিকি করেছে সেসব ফ্রিতে বিশ্ববাসীকে দেখানো। শেখ মুজিবের প্রথম হিসু দিবস, শেখ মুজিবের প্রথম পেট খারাপ দিবস, শেখ মুজিবের প্রথম সুন্নতে খৎনা, শিশু বয়সে শেখ মুজিবের বাল্য বিয়ে নিয়ে সচিত্র ফিচার ইত্যাদি।
 
৭) ‘ধর্ষক কামাল স্যাটেলাইট’টিতে সম্প্রচার করা হবে কিভাবে ব্যাংক ডাকাতি করা হয়, কিভাবে অন্যের বিবাহিতা স্ত্রীকে ধর্ষন করা যায়, কিভাবে বিশ্ববাসীকে হুমকী-ধামকী দিয়ে দাবিয়ে রাখা যায় এসব বাস্তবভিত্তিক ট্রেনিং। যা দেখানো হবো সম্পূর্ণ ফ্রিতে।
 
৮) ‘ফুটবলার জামাল স্যাটেলাইট’ সারাদিন শুধুমাত্র আবাহনীর ফুটবল খেলাই দেখাবে, দেখাতেই থাকবে, দেখাতেই থাকবে। সম্পূর্ণ ফ্রি। বিশ্ববাসী দেখবে কিভাবে ফুটবল খেলা শিখতে হয়। শেখ মুজিবের ফুটবল জীবনের খুটিনাটিও এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমেই দেখানো হবে।
 
৯) ‘সজীব ওয়াজেদ গুগল স্যাটেলাইট’। প্রতিবন্ধী হয়েও যে কতকিছু করা সম্ভব এবং মাসে ২ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয়া সম্পর্কিত ট্রেনিং এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমেই সম্প্রচার করা হবে।
 
১০) ‘বৃটিশ টিউলিপ ও রেহানা স্যাটেলাইট’- আই এম নট বাংলাদেশী সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী এই স্যাটেলাইটটি বিশ্ববাসীকে ‘চেতনা ও কুটনীতি’ সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান প্রদানে নিজেকে উৎসর্গ করবে।
 
১১) ‘মৃণাল স্যাটেলাইট’ ফুলের বাগানে চেতনা বীজ বপন সংক্রান্ত ‘চেতনা ও কৃষি’ নামক একটাই অনুষ্ঠান বারবার সম্প্রচার করতেই থাকবে, করতেই থাকবে।
 
এভাবেই বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা চলতে পারে। ১৫টি স্যাটেলাইট পাঠাতে খরচা হবে মাত্র ৪৫ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়নের রোল মডেলের কাছে এটা কি কোন টাকা?
 
চেতনায় চেতনায় ভরে উঠুক এই মহাশূন্য।
১০ টাকায় চা সিংগারা সমোচা বিক্রি হোক মহাশূন্যেও।
   Send article as PDF