চলুন ১৮০ ডিগ্রী উল্টে যাই

বেশ কিছুদিন দেশে পেঁয়াজ এর উচ্চ মূল্য নিয়ে প্রচুর আলোচনা চলছিল।
 
এমনকি ‘মুরগী দিয়ে পেঁয়াজ না পেয়াজ দিয়ে মুরগী’ রান্না হবে- সেটাও ছিল আলোচনার বিষয়বস্তুর অন্তর্ভূক্ত।
 
এখন কি অবস্থা জানি না, তবে নিউ ইয়র্কে ১০ পাউন্ড পেঁয়াজ মাত্র ২ ডলারেই কিনতে পাওয়া যায়।
 
সেটাও বিষয় না।
 
শুধু পেঁয়াজই নয়, দেশে চাউলের মূল্যও সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
 
আসল বিষয়টা হলো সবকিছুরই মূল্য অনেক বেশী।
বেশী রিক্সা ভাড়া, গাড়ী ভাড়া, বাসা ভাড়া, ডাক্তারের ভিজিট, ডলার, পাউন্ড, ইউরো ইত্যাদি ইত্যাদি সব কিছুরই মূল্য ক্রয়ক্ষমতার অনেক উর্ধ্বে!
 
সবাই চায় সবকিছুর মূল্য কমুক।
 
আমি তখন ছোট, প্রাইমেরী স্কুলে যাই হয়তো। পরিস্কার মনে আছে সোয়া-সের লবন পাওয়া যেত পাঁচ-সিকিতে মানে সোয়া একটাকায়। আমি নিজে দেখেছি এক হালি ডিম ১ টাকায় বিক্রি হতে, দুধ ২ টাকা কেজি, কেরোসিন তেল ৫ টাকা কেজিতে।
 
এই তো সেদিনও ২০০২ সালেও এক ভরি স্বর্ণ বিক্রি হতো মাত্র ৫০০০ টাকায়।
 
এখন সবকিছুই অনেক বেশী দাম।
আর দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মূল্য কমানোর জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে- কিন্তু সেটা সোনার হরিণ।
 
কমে তো না-ই বিপরীতে বাড়তেই থাকে, বাড়তেই থাকে।
পেয়াজ হয়ে যায় ১২৫ টাকা কেজি, চাউল ৬০ টাকা।
 
আমরা চাই মূল্য কমুক।
 
এবার চলুন আমরা ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে যাই- দেখুন তো কেমন লাগে?
 
বাংলাদেশের মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু গড় আয় এখন কমবেশী ১৫০০ ডলার, মানে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আরও সহজ করলে দাঁড়াচ্ছে একজন মানুষ গড়ে মাসে আয় করতে পারছে ১০ হাজার টাকা।
 
মানে সপ্তাহে একজন মানুষের আয় আড়াই হাজার টাকা হিসাবে দৈনিক আয় মাত্র ৩৫৭ টাকা।
 
সমস্যাটা কিন্তু এখানেই।
আপনি যদি দৈনিক মাত্র ৩৫৭ টাকা আয় করেন এবং এক কেজি পেয়াজ যদি ১২৫ টাকা কেজি হয়, এক কেজি চাউল যদি হয় ৬০ টাকা, ডিম ৩০ টাকা হালি আর স্বর্ণের ভরি ৫০ হাজার টাকা- তাহলে তো আপনার কষ্ট হবেই।
 
বলছিলাম ১৮০ ডিগ্রী উল্টে যাবো।
তাহলে এবার ধরুন পেয়াজের মূল্য ১২৫ টাকা।
 
আমাদের মূল্য কমানো কোন প্রয়োজন নেই- জাতিয় আয় টা বাড়িয়ে ফেলি।
অর্থাৎ প্রতিটি মানুষের শ্রমমূল্য বৃদ্ধি করি। যে মানুষটা আজ দৈনিক মাত্র ৩৫৭ টাকা আয় করছে তার আয়টাকে আমরা বৃদ্ধি করে দৈনিক ৩৫৭০ টাকায় উন্নিত করি।
 
এরপর দেখুন তো ১ কেজি পেয়াজ যদি ১২৫ টাকা হয়- আপনার তাতে কিছু যায় আসে কি না?
 
এখানেই একটা দেশের অর্থনীতির আসল খেলা।
এখানেই একটা উচ্চাভিলাষী ও শিক্ষিত সরকারের বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষা হয়।
 
আজ থেকে ৫০ বছর আগে যখন সিংগাপুর স্বাধীন হয় মালয়েশিয়া থেকে- তখন তারাও তাদের বাজারের পন্যের মূল্য নিয়ে খুবই কস্ট ভোগ করছিল।
 
না, সিংগাপুরে পন্যের মুল্য কমানো হয়নি- তবে তাদের জাতিয় আয় বাড়ানো হয়েছে; এখন একজন সিংগাপুরিয়ান দৈনিক আয় করছে গড়ে প্রায় ১৫ হাজার টাকা।
 
সিংগাপুরের লোকরা তাদের দেশে পেয়াজের মূল্য নিয়ে চিন্তা করারও টাইম পায় না।
 
বাংলাদেশের সবচে বড় প্রাকৃতিক সম্পদ হলো দেশের মানুষ। আশরাফুল মাখলুকাত।
 
এখন এই মানুষের ‘মেধা ও টেকনিক্যাল শ্রম ভিত্তিক আয়’ এবং একটা সাহসী, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মেধাবী ও উচ্চাভিলাষী সৎ সরকার প্রতিষ্ঠা করলেই পন্যের মূল্য না কমিয়ে শ্রম মূল্য বাড়ানো পদক্ষেপ নিতে পারে।
 
আর শ্রমমূল্য বাড়ানো- এটা অত্যন্ত সহজ ও সরল একটা বিষয়; পৃথিবীতে এরকম ভুরি ভুরি উদাহরণ ও বাস্তবতা রয়েছে শুধু অনুকরণ করলেও চলবে।
 
এভাবে আর বাংলাদেশকে চলতে দেয়া যায় না।
 
প্লিজ সবাই ঘুড়ে দাঁড়ান।
১৭ কোটি মানুষের ৩৪ কোটি হাতকে সুশিক্ষিত করে তুলুন।
 
তারপর পেয়াজের মূল্যকে ৫০০ টাকা কেজি হতে দিন- কোন সমস্যা দেখি না। আপনি তো তখন দৈনিক ১০ কেজি পেয়াজ কিনতে পারবেন!
 
কি করবেন তখন এতো পেয়াজ দিয়ে?
 
আসল তত্বটি হলো- পণ্যমূল্যকে স্বাধীন করে দিন, শ্রমমূল্যকে শুধু বাড়িয়ে দিন সীমাহীনভাবে।
শুধুমাত্র তখনই একটা দেশ দাঁড়িয়ে যেতে পারে।
   Send article as PDF