আষাঢ়েঁ গপ্প

এতো দিন বেশ কয়েকবার হাতের সামনে আসলেও পড়িনি ইচ্ছে করেই; অনেককেই দেখেছি শেয়ার দিয়েছে লেখাটি।

আজ এমনই একজনের শেয়ার দেয়া পোষ্টে পছন্দের একজনের একটি কমেন্ট দেখে (‘আযান শোনা যায় এটা কেমন দুর্গম বন?’) বুঝতে পারলাম কিছু বিনোদন হয়তো পাওয়া যাবে লেখাটিতে। তাই পড়লাম।

আমি সাধারণত লেখার মান ভালো না হলে, পড়ি না। এটার লেখার মানও কাঁচা। ওই যে আপনারা মাঝে মধ্যে ক্রস-ফায়ার বা বন্ধুক-যুদ্ধের যে গল্প গুলি পড়েন সেই একই কোয়ালিটির গল্প। সুতরাং পড়তে ভালো লাগার কথাও না। তবুও পড়লাম, দেখিই না কি লিখেছে, কেমন সাজালো গল্পটি!

আসলে গল্প তো নয়, ‘জিপিএ-পাইপ বাংলাদেশ’কে তাদের কথিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজেদের কথিত ‘পৌরষ্য ও বীরত্ব’ জাহির করার এক গল্প হিসাবে লিখতে চেষ্টা করেছে মাত্র। ব্যতিক্রম কিছুই নেই। তবে, তারা যে কতটা বেকুব একটি সংগঠন সেটার প্রমাণ দিতেও ভুলে নি।

‘বাংলাদেশ পুলিশ’ এর নিজস্ব কোন মেধা নেই, যোগ্যতাও; এরা গায়ের এবং বন্দুকের জোরে কথা বলে। আইনী প্রটেকশন আর বন্দুক ফেলে কাছে আসতে বলেন- এরা একএকটা ‘রাম-ছাগল’। এই রাম-ছাগলগুলি আমাকে মাঝে মধ্যে হুমকী-ধামকীও দেয়; অনেক বিরোধী মতের আটক নেতাদের রিম্যান্ডে নিয়ে আমার আইডি দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও না কি করে- ‘কি সম্পর্ক আমার সংগে তার’?

যাই হোক, এরা যে ‘রাম-ছাগল’ তারও প্রমাণ দিচ্ছি।যে ছেলেগুলি গহীন বনে হারিয়ে গেল- তাদের উদ্ধার করার দায়িত্ব বাংলাদেশ পুলিশেরই- এটা নিয়ে বাহাদুরীর কিছুই নেই; নিজেদের কাজ নিজেরা করবে এটাই স্বাভাবিক। সেটা নিয়ে মিথ্যা বাহাদুরীর কিছুই নেই। আমি আমার ব্যবসার প্রতিটি ‘ডিল’ শেষে একটি করে গল্প লিখে প্রচার করি না; কারণ ওটাই আমার কাজ। বাহাদুরীর কিছুই নেই।

দুই। বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। মনে আছে বেগম জিয়ার সময়ে সন্ত্রাসী বাংলা ভাইদের কথা। সিলেটে এদের দলেরই কাকে যেন গ্রেফতার করতে অভিযান চালানো হলো (পরে তার ফাঁসিও হয়েছিল)। তাকে খুঁজে পেয়েছিল কিভাবে?

জিপিএস আর মোবাইল ফোনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে। যা কিনা বর্তমান যুগে খুবই সাধারণমানের একটা প্রযুক্তি। মানে হলো, আপনার হাতে যখন একটি ফোন থাকে তখন আপনাকে খুঁজে পেতে কিছুই দরকার পরে না। প্রযুক্তির সহায়তায় আপনাকে খুঁজে পাওয়া শুধুই সময়ের ব্যাপার মাত্র। আপনার একিউরেট লোকেশন নয় শুধুমাত্র আপনার ‘পজিশন’ বলে দেয়া সম্ভব।

যে জিপিএস ব্যবহার করে আমেরিকা ১৫ হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুকে মিসাইল ছুড়ে ধ্বংশ করে দেয়, সেই একটি প্রযুক্তির নাম জিপিএস। তা দিয়ে ১৫ হাজার কিলোমিটার দূরে নয় মাত্র ১ কিলোমিটার সীমার মধ্যেই কোন কিছু খুঁজে বের করা কোন বিষয়ই নয়। এবং সেই প্রযুক্তি পুলিশের হাতেও রয়েছে। প্রতিটি ইঞ্চি পরিমান অংশও খুঁজে বলে দেয়া সম্ভব পজিশনটি কোথায়।

হারিয়ে যাওয়া ছেলেদের হাতে ৩টি মোবাইল ফোন ছিল, এক পর্যায়ে ২টি ফোনের ব্যাটরী শেষ হয়ে যায় কিন্তু একটি ফোন সচল ছিল।

মোবাইল ফোনে শুধুমাত্র ফোন কলের প্রযুক্তিই থাকে না সেই সংগে জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিষ্টেম)ও থাকে। অর্থাৎ আপনার মোবাইলই এড্রেস করে দিবে আপনি ঠিক কোন পজিশনে রয়েছেন। এমনকি আপনার ফোনে যদি সীমকার্ড নাও থাকে বা নেটওয়ার্ক না থাকে- তাতেও কিছুই যায় আসে না; জিপিএস সর্বশেষ অবস্থান (পজিশন) ডিটেক্ট করে দেয়। আর পুলিশের হাতে সেই ‘প্রফেশনাল ডিটেকটর’ রয়েছে বহু বহু বছর আগে থেকেই।

তিন। তাদের কেন মোবাইল এর জিপিএস বাদ রেখে মসজিদের মাইক ব্যবহার করে মানুষ খুঁজতে হবে? এটা কি ১৪২০ সাল না কি যে জিপিএস ডিটেকটর তাদের কাছে নেই? তারা তো বিরোধী পক্ষের নেতাদের গ্রেফতার করতে মসজিদের ফোন ব্যবহার করে না। বিরোধী বহু নেতাকে তারা গ্রেফতার ও গুম করেছে মোবাইল ফোন এর সূত্র ধরে।
ওই বাচ্চাদের খুঁজতে সেই মোবাইল ব্যবহার না করে মসজিদের মাইকে ডাকতে হবে কেন?

চার। আর বার বার গল্পে বোঝানো হচ্ছে যে তারা সুন্দর বনের গহীন জঙ্গলে হারিয়ে গেছে! আশ্চর্য্য! সেটা গহীন জঙ্গল হয় কি করে যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক থাকে, মসজিদের আজান শোনা যায়? গভীর জঙ্গলের কোথাও কি মসজিদ রয়েছে যেখানে বাঘেরা নামাজ পড়ে বা আজান দেয়?

পাঁচ। সুন্দরবন মানেই কাঁদা-মাটি আর অসহ্য গরম পরিবেশ। কৈশরে আমি নিজেও ওই বনের ভেতরে গিয়েছি, হারিয়েও দেখেছি কতটা ভয়বহ এবং ম্যাক্সিমাম কতটুকু ভেতরে ঢোকা যায়। বাচ্চারা ম্যাক্সিমাম ১ কিলোমিটারও ভেতরে ঢুকতে পারেনি। চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি। নৌকা নিয়ে বনের ভেতরে যাওয়া সম্ভব; কিন্তু পাঁয়ে হেঁটে যাওয়া অসম্ভব।
আসলে, বাংলাদেশ পুলিশ এর গ্রহনযোগ্যতা বর্তমানে শূন্যের কাছাকাছি বা নীচে। তারা মাঝে মধ্যে এরম কিছু গল্প লিখে নিজেদের বাহাদুরী দেখাতে চায়। ওদের একজন ডিআইজি মনিরুল ইসলাম তো দিন-রাত ২৪-ঘন্টাই ফেসবুকে লেখা-লেখি নিয়ে ব্যস্ত থাকে; কখন কাজকর্ম করে কে জানে! কবে তার মায়ের বিয়ে হলো, কবে তাদের গরু বাচ্চা জন্ম দিয়েছে সেসব গল্প একজন পুলিশের ডিআইজি রসিয়ে রসিয়ে লিখে মুল্যবান সময় নষ্ট করে আর নিজেকে সেলিব্রেটি ভাবে- আর হাজার হাজার ‘জিপিএ-পাইপ’ নাগরিক তাতেও তোষামদী করতে থাকে। কি এক মজার সংগঠন এরা!

এরা শুধু পারে অনৈতিকভাবে বিরোধী মতকে দমন করতে; সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিতে।

আর মাঝে মধ্যে এরম দু’চারটে গল্প লিখে আত্মতৃপ্তি উপভোগ করে সেই সংগে কিছু ‘জিপিএ পাইপ’ প্রজন্মের কাছ থেকে লাইক সংগ্রহ করতে।

এসব পুলিশের কাজ না।পুলিশের কাজ মানুষকে প্রটেকশন দেয়া, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষা করা, মানবধিকার ও গণতন্ত্রকে পাহাড়া দেয়া।
বাংলাদেশ পুলিশ তা করে না।বরং বাংলাদেশ পুলিশ বর্তমান বিশ্বের সর্বনিকৃষ্ট সন্ত্রাসী সংগঠন।

এদের বোঝা উচিত জনগনের টাকায় এদের জীবন চলে, তাদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যার মুখের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান সবই হয় দেশের জনগনের টাকায়; শেখ হাসিনার টাকায় না।
কিন্তু তারা আজ শুধুই শেখ হাসিনার পাহাড়াদার।

   Send article as PDF