করোনা যুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবী

১৯০৩ সালে বিমান আবিস্কার হলো, রাইট ব্রাদার্স খুলে দিলেন এক বিস্ময়কর উড়ো জাহাজ আবিস্কারের দিগন্ত। তারপর, ১৯২৮ সালে প্রথম বারের মতো একটি বিমান আমেরিকা থেকে উড়াল দিয়ে ইওরোপে ল্যান্ড করলো আটলান্টিকের মতো বিশাল এক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে।

মানুষের জয়যাত্রা শুরু হলো।যাই হোক, প্রায়ই আমি একটা বিষয় ভাবি, যতটা না ক্ষতিকর ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধটি পৃথিবীর জন্য, তারচেও বহুবহুগুন বেশী প্রয়োজনীয়তা ছিল এই যুদ্ধটির। এই একটি যুদ্ধ-ই এই পৃথিবীকে অনেকদূর পৌছে দিতে পেরেছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ না হলে পৃথিবীর মানুষ এতটা উন্নত সভ্যতায় পৌছতে পারতো বলে আমার বিশ্বাস হয় না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধটি ছিল একটা প্রতিযোগীতা। সত্যিকারের মানব-সভ্যতার প্রতিযোগীতা; হ্যাঁ, প্রতিযোগীতার উদ্দেশ্যটি অসৎ ছিল- মানছি; কিন্তু পরিণতিটা গিয়ে মিছেছে সভ্যতায়। মানুষ সত্যিকারার্থেই সুসভ্য হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই।

আর, আপনার মনের কোনাতে যতই ক্ষোভ থাকুক না কেন- অস্বীকার করার কোন সুযোগই নেই যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর সুসভ্যতার প্রতিযোগীতায় নেতৃত্ব দেয় আমেরিকাই। বলা যেতে পারে একটি অসুস্থ্য প্রতিযোগীতা শেষটায় সুস্থ্য প্রতিযোগীতার পথ সৃষ্টি করেছিল।

এবার ব্যাখ্যায় আসি। যুদ্ধ সবসময়ই অসুস্থ্য চিন্তা, অসুস্থ্য কর্মকান্ড। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তো বলতে গেলে দুনিয়ার সবচে ভয়াবহতম এক নারকীয় সংঘাত। ৫৬ মিলিয়ন মানুষ এই যুদ্ধে সরাসরি মৃত্যুবরণ করে; এবং আরও প্রায় ১৯ থেকে ২৮ মিলিয়ন মানুষ পরোক্ষভাবে এই যুদ্ধের কারণেই পরবর্তীতে মারা যায়। অর্থাৎ কমবেশী ৮০ মিলিয়ন মানুষ মারা যায় এই যুদ্ধে।

এবার চলুন ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গিয়ে চিন্তা করি।৮০ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু-পরবর্তী বিশ্বটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পেরেছে? ১৯০৩ সালে বিমান আবিস্কার না হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধটি হতে পারতো না বা হতো না। মুলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেই ব্যাপকভাবে যুদ্ধবিমানগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। আর এই পৃথিবীর সেরা বিজ্ঞানীরা দিবারাত্র কাজ করেছেন বিমানের উন্নয়নের জন্য। হাজার হাজার যুদ্ধ যুদ্ধবিমান, সংখ্যাটি ঠিক করে বলি শুধুমাত্র আমেরিকাই এই যুদ্ধটিকে কেন্দ্র করে তৈরী করেছে সর্বমোট ২ লক্ষ ৭৬ হাজার যুদ্ধ বিমান। এছাড়া ১২ হাজার হ্যাভী বোম্বার বিমান এই যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে।

এই যে প্রায় ৩ লক্ষ অত্যাধুনিক বিমান তৈরী করতে হলো, সেটা করতে কতটা মেধা ব্যবহৃত হয়েছে কল্পনা করতে পারেন? শুধু কি যুদ্ধবিমান? পারমানবিক বোমা তৈরীতে কাজ করেছে আরও শতশত বিজ্ঞানী।

একটু চিন্তা করুন, এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভাবন, পারমানবিক গবেষনা, যুদ্ধাহতদের জন্য চিকিৎসা-বিজ্ঞানের উপর্যূপুরী গবেষনা সবই হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে কেন্দ্র করেই।

সুতরাং, প্রতিযোগীতার দিকটি যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলে মানতে হবেই যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবন তৈরী হয়েছিল বলেই মানুষ প্রযুক্তির দিকে দুর্দান্ত রকেট গতিতে এগিয়ে যেতে পেরেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলো। তারপর?
সেই প্রতিযোগীতাটুকু কিন্তু থেমে থাকেনি।

আমেরিকার আর রাশিয়ার মধ্যে সৃষ্টি হলো মহাকাশ প্রতিযোগীতা।শুরুটা রাশিয়া ভালো করলেও, শেষ ভালোটা আমেরিকারই হলো, তারা এক্ষেত্রে নেতৃত্বে চলে আসলো- বিজয়ী হলো।

তারপর? মানুষ পৌছে গেল চাঁদের মাটিতে; শুধু কি তাই? আরও অনেক দূরে শনি গ্রহের উপগ্রহ টাইটান এও আমেরিকান বিজ্ঞানীদের তৈরী করা নভোযান হাইজেন্স সাফল্যজনকভাবে অবতরণ করতে সমর্থ হলো। ভয়েজার-১ ও ভয়েজার-২ সৌরজগতকে জয় করে এখনও ছুটে চলছে মহাবিশ্বের অজানাকে আবিস্কারের নেশায়; ইতিমধ্যেই ২৫ বিলিয়ন এরও বেশী পথ তারা অতিক্রম করে ফেলেছে!

তারপর? নেক্সট টার্গেট মঙ্গল গ্রহ। আমরা আগামী ম্যাক্সিমাম ১০ বছরের মধ্যেই, অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যেই পৌছে যাবো মঙ্গলের লাল মাটিতে। পরোক্ষভাবে যদি ভাবি, তাহলে এই সবই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সুফল।

আমি কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে কিছুই লিখতে বসিনি আজ। এটা ছিল লেখাটির ভূমিকা বা শানে নজুল। লিখতে বসেছি করোনা ভাইরাস নিয়ে। আসলে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আমরা দেখিনি, আমাদের কাছে সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার নিশকই একটি গল্পের মতো। অবশ্য যারা ইওরোপ, আমেরিকা বা জাপানে বসবাস করছেন- তাদের কাছে গল্প মনে হয় না; তারা এসব দেশের প্রতিটি পরতে পরতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এঁকে দেয়া দাগগুলো দেখতে পান ছড়ানো ছিটানো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম পৃথিবীব্যাপী আরও একটি যুদ্ধ আমরা পৃথিবীবাসী আজ প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়েছি বা প্রতি নিয়ত প্রত্যক্ষ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যেই ২.২ মিলিয়ন এরও বেশী মানুষ প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, মারা গেছে ইতিমধ্যেই প্রায় ১৫৫ হাজার মানুষ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধরত প্রতিপক্ষ ছিল দু’টি ভাগে বিভক্ত কিছু দেশ। আর আজ এই ‘যুদ্ধে’ একটি পক্ষ পুরো বিশ্ববাসী আর আমাদের একমাত্র প্রতিপক্ষ অদৃশ্য একটি ভাইরাস যার অফিসিয়াল নেইম কোভিড-১৯।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে যোদ্ধাদের ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল। ট্রেণিং ছিল। বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীদের রাতজাগা গবেষণা করার পূর্বসুযোগ ছিল। আমেরিকা একাই প্রায় ৩ লক্ষ যুদ্ধবিমান তৈরী করে ফেলেছিল। পারমানবিক বোমাও তৈরী ছিল।

কিন্তু আজ?খালি হাতে আমরা যুদ্ধ শুরু করেছি। প্রতিপক্ষকে আমরা চোখে দেখি না। সর্বত্র তার উপস্থিতি এই পৃথিবীতে। আমাদের হাতে কোন অস্ত্র নেই, গবেষনা ছিল না, আমরা প্রস্তত ছিলাম না।

কিন্তু্, আজ প্রায় ৪ মাস পার হতে চললো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৩৯ সালে আর শেষ হয়েছে ১৯৪৫ সালে; মানে টানা প্রায় ৭ বছর চলেছে এই যুদ্ধটি। আর করোনা ভাইরাসটি আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে মাত্র ৪ মাস।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং যুদ্ধউত্তর স্নায়ুযুদ্ধ নামে পরিচিত আমেরিকা-রাশিয়ার কোল্ড-ওয়ার শেষ হয় ১৯৯১ সালে সোভিয়েট ইউনিয়ন ধ্বংশ হবার মধ্য দিয়ে; আমেরিকার একক পরাশক্তি হিসাবে আবির্ভূত হবার মধ্য দিয়ে। মুলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই মিত্ররাষ্ট্র সোভিয়েত ইওনিয়ন আমেরিকার প্রতিপক্ষ হিসাবে আবির্ভুত হয় এবং সেই শীতল যুদ্ধে আবারও বিজয়ী হয় আমেরিকা। সেজন্য বিশাল মুল্য দিতে হয়েছিল সোভিয়েট ইওনিয়নকে।

তারপর? তারপর বিগত প্রায় ৩০ বছর এই বিশ্বে আমেরিকা সম্পূর্ণ এককভাবে বিনা-প্রতিদন্দীহীনতায় নেতৃত্ব দিয়ে গেছে। প্রতিদ্বন্দী ছাড়া সবকিছুই কেমন যেন শূণ্য শূণ্য মনে হয়, প্রতিযোগীতারও একটা আলাদা সৌন্দর্য্য আছে, থাকেও। পৃথিবীবাসী সেই সৌন্দর্য্য থেকে দীর্ঘকাল বঞ্চিত ছিল। দীর্ঘ প্রায় ৩০ টি বছর।

আশার খবর হলো, সেই সৌন্দর্য্য বঞ্চিত বিশ্বাসী এবার একটা প্রতিদ্বন্দী পেল। বিশ্ববাসী ভার্সেস কোভিড-১৯। এখনও পর্যন্ত এই যুদ্ধ একটি পক্ষের দখলে, সেটা কোভিড-১৯। আমরা এখন শুধুই ডিফেন্সিভভাবেই যুদ্ধ করে যাচ্ছি, অর্থাৎ শুধুই নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা। ডিফেন্সিভ-ওয়ার।

কিন্তু এভাবে তো চলতে পারে না!ওয়ারটাকে ওফেন্সিভ ওয়ারে পরিণত করাটাই এই পৃথিবীর জন্য চ্যালেঞ্জ, এবং এটা করতেই হবে। আমরা যতদিন ওফেন্সিভ ওয়ারে মুভ করতে না পারছি ততদিন আমাদের একটু ভুগতেই হবে। এখনটা যেমন ভুগছি।

আমরা ধরে নিতে পারি এই যুদ্ধে ইতিমধ্যেই বিশ্ববাসী ওফেন্সিভ ওয়ারের দিকেই টার্ণ নিতে যাচ্ছে; অন্তত হোয়াইট হাউজ থেকে শীর্ষ বিজ্ঞানী ড. এন্থনী ফাউসী ইতিমধ্যেই সেই ঘোষনা দিয়েও ফেলেছেন; তিনি পরিস্কার করে বলেছেন, ‘আমাদের ওফেন্সিভভাবে যুদ্ধ করতে হবে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে’।

সুতরাং আমরা ধরে নিতেই পারি আসল যুদ্ধ শুরু হয়েছে। অবশ্য ড. ফাউসি আরও একটি ভীতিকর কথাও বলেছেন যে, ‘করোনা কখনও ধ্বংস হবে না। এ ধরনের রোগ-জীবাণু কখনও ধ্বংস হয় না। বিশ্বে হয়তো সেই স্বাভাবিক জীবন আর নাও ফিরতে পারে।’

ড. এন্থনী ফাউসী যা বলেন, এই মুহূর্তে অন্তত সেটা আমেরিকারই সরকারী ভাষ্য। সুতরাং তার কথাকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার কোনই বিকল্প নেই। অর্থাৎ আগামী আরও অন্তত ২ বা ৩ বছর পর্যন্ত বিশ্ববাসীকে এই করোনা-যুদ্ধে লড়ে যেতে হবে।

আমি ২ বা ৩ বছর বলার পেছনে নিজস্ব যুক্তি ব্যবহার করেছি। গবেষকরা বিশ্বব্যাপী গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছেন, ইতিমধ্যে কম করে হলেও ১০ থেকে ১২টি দেশে করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন বা টিকা আবিস্কারও হয়েছে; টেষ্ট চলছে। আমেরিকান বিশেষজ্ঞরা বলেছেন আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ভ্যাকসিন বাজারে চলে আসবে- ১২ বা ১৮ মাস পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে না। আমি নিজেও তাই বিশ্বাস করি।
কিন্তু ৭৫০ কোটি মানুষকেই এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। এটা সর্বোচ্চ গতিতে করলেও ২ থেকে ৩ বছর সময় লেগে যাবে। সুতরাং যুদ্ধটা শেষ হতে সময় লাগবে। আমার কথায় পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে যে আমারা মানে বিশ্ববাসীই বিজয়ী হতে চলছি কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে।

এটাও আমার আজকের আর্টিকেলের মুল বিষয় নয়। প্রকৃত পক্ষে আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে প্রতিটি ধ্বংশই একটি নতুন কিছুর জন্ম দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যেমন জন্ম দিয়েছিল সভ্যতার পথে প্রতিযোগীতা, জ্ঞান বিজ্ঞানের পথে প্রতিযোগীতা, প্রযুক্তির পথে প্রতিযোগীতা। ঠিক তেমনি কোভিড-১৯ এই পৃথিবীতে যে ধ্বংশলীলা চালাচ্ছে সেটার সমাপ্তিতে বিশ্ব কিন্তু থেমে যাবে না।

পৃথিবীব্যাপী আরও অনাগত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া কিংম্বা অন্যকোন অজানা, আনকোরা জীবানুর বিরুদ্ধে আমারা এখন থেকেই পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে দিতে পারবো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ না হলে প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতি সম্ভব হতো না; আমরা আজ ইন্টারনেট প্রযুক্তির দেখা পেতাম কি না বা মোবাইল প্রযুক্তি তৈরী হতো কিনা তা সন্দেহই থেকে যেতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গতির জন্যই বিশ্ব আজ এতটা অগ্রগতি দেখতে পেরেছে।

ঠিক তেমনি, কোভিড-১৯ এর এই চলমান আক্রমনটি বিশ্বকে যেভাবে নাড়া দিয়েছে, তা থেকে আমি অবশ্যই খুবই ভালো কিছু, খুবই বড় কিছু আশাবাদ ব্যক্ত করতেই পারি। মানুষ মঙ্গলে যাবে। মঙ্গল একটি মৃত গ্রহ। এমন কি হতে পারে না যে সেখান থেকে মানুষ হয়তো এমন কোন এক নতুন রোগ নিয়ে ফিরে আসলো এই পৃথিবীতে? তখন?

হ্যাঁ, এই চিন্তা অবশ্যই নাসার বিজ্ঞানীদের মাথায়ও ভর করে রয়েছে।তার উপর আজকের কোভিড-১৯ এর মতো ভয়ংকর ভাইরাস তো শুধুমাত্র একাই না; এই দলে আরও যে নতুন কোন আরও ভয়ংকর ভাইরাস তৈরী হচ্ছে না- সে নিশ্চয়তাই বা কোথায় পাবো?

বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গবেষকরা আগামী ৪-পাঁচ বছর যদি এসব ভাইরাস বা অন্যান্য রোগব্যাধী নিয়ে তাদের চলমান গবেষনা অব্যহত রাখেন- আমি বলে দিতে পারি ‘চিকিৎসা বিজ্ঞান’ এর নতুন উচ্চতায় পৌছে যাবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান যতটা উচ্চতায় উঠেছে, পৃথিবীর চিকিৎসা প্রযুক্তি কিন্তু ততটা উন্নত করতে পারেনি- আসলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে পৃথিবীতো কোন ধাক্কাই খায় নি এযাবৎকাল পর্যন্ত।

বিজ্ঞানের দায়-দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে; এই ওফেন্সি দৌড় যদি চলতে থাকে- চিকিৎসা বিজ্ঞান কোথায় পৌছে- সেটা দেখার লোভ আমি সামলাতে পারছি না।

আর করোনা-যুদ্ধের অর্থনৈতিক ধাক্কা!এটা পৃথিবীবাসী ঠিকই সামলে নিবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর পরিস্থিতি যেহেতু সামলাতে পেরেছে, সুতরাং করোনা যুদ্ধ-উত্তর অর্থনীতিও পৃথিবী ঠিক-ঠাক সামলে নিবে। আমেরিকার অর্থনীতি থেমে গেছে কথাটা সত্যি কিন্তু তাই বলে বিশ্বের অন্য কোন অর্থনীতি কিন্তু নেতৃত্ব দিতে পারছে না। চায়নার অর্থনীতিও বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, তাদের রফতানী বাণিজ্য সম্পূর্ণ বন্ধ আজ ৪-মাসের বেশী।

আরও একটা ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি হবে এই বিশ্বের।
সেটা হলো, ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ ব্যবস্থাটির। অধিকাংশ কোম্পানী তাদের কর্মচারীদের কাজকর্ম বাড়ীতে বসে যেন অনলাইনেই করে ফেলা যায়- তেমন করেই প্রযুক্তির ব্যবহার ঘটবে ব্যাপক আকারে। প্রাতিষ্ঠানিক অফিসের পরিবর্তে এটা ভালো ব্যবস্থা হবে। সেই সংগে অসংখ্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীও অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা নিয়ে বাজারে উপস্থিত হবে।

সুতরাং করোনা যুদ্ধ-উত্তর পৃথিবী নতুনভাবে শুরু হবে। সবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। আমরা আবারও চেরী ব্লাজম দেখতে দলবেধে বাইরে বের হবো। বন্ধুদের হাগ করবো। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আইসক্রিম কিনে খাবো। ৭০ মাইল স্পীড লিমিট রাস্তায় পুলিশ আর ক্যামেরাকে ফাঁকি দিয়ে আবার ১২০ মাইল স্পীড তুলবো। ষ্টেট ট্রুপ এসে গাড়ী থামালে হাসি ও দুষ্টমী দিয়ে কথার যুদ্ধে একজন অপরজনকে পরাজিত করার চেষ্টার খেলা খেলবো।

রাস্তায় দাঁড়িয়ে বুক ভরে শ্বাস নিবো আবারও।এই পৃথিবী আমার, আমার পৃথিবীতে আমি স্বাধীনভাবে যাচ্ছে তাই করবো, আবারও।

আমার পৃথিবীতে আমি এভাবে বন্দি থাকতে পারবো না।
এবং শেষটায়, আমি দেখতে চাই এই পৃথিবীরই কোন এক প্রান্ত থেকে অনেক বছর পর আমার মতোই অন্য কেউ এসে ঠিক এমনি একটি আর্টিকেল লিখবে যে, ‘করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ যতটা না ক্ষতিকর ছিল, তারচে বহুগুন প্রয়োজনীয় ছিল পৃথিবীবাসীর জন্য। কোভিড-১৯ উত্তর পৃথিবী আরও বেশী সমৃদ্ধ, আরও বেশী প্রযুক্তিময়; পৃথিবীর চিকিৎসা ক্ষেত্রে অভাবনীয় উচ্চতায় পৌছে গিয়েছে’।

হয়তো সেদিন, অন্য কোন দূর গ্রহ থেকে অন্য গ্রহবাসীরা এই পৃথিবীতে আসবে উন্নত চিকিৎসা গ্রহনের জন্য।

আমাদের পৃথিবীকে তো সেই দিনটির জন্য প্রস্তুত থাকতেই হবে।

   Send article as PDF