মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র চেতনা ছিল গণতন্ত্র
সাল ১৯৭১ সাল। স্থান পূর্ব পাকিস্তান। “একদল সন্ত্রাসী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে; তারা রাষ্ট্রের অখন্ডত্বের জন্য হুমকী।”
– আচ্ছা এই সন্ত্রাসীরা কারা জানেন?
আমরা।
মানে বাংলাদেশের মানুষ।
পাকিস্তানের তথা বিশ্বের অনেক দেশের কাছেই তখন আমরা ছিলাম সন্ত্রাসী।
তবে, আমরা জানতাম এবং বিশ্বাস করতাম যে, ‘আমরা সন্ত্রাসী না। আমরা মুক্তিযোদ্ধা।’ ১৯৭১ সালে ওটা ছিল আমাদের ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ’। ওটা আমাদের বিদ্রোহ ছিল এবং বরং পাকিস্তানাীরাই ছিল আমাদের কাছে হানাদার; সন্ত্রাসী।
তার মানে টা দাড়াচ্ছে- ‘সন্ত্রাসী’র কোন সংগা নেই। সন্ত্রাসীর সংগা হয় না।
হিটলার যখন ইউরোপের ইহুদীদের মেরে মেরে ‘তক্তা’ বানিয়ে দিচ্ছিল তখন (হিটলারের পরাজয়ের পরই) বৃটিশদের সহায়তায় আরবের ফিলিস্তিন অঞ্চল জবর দখল করে সেখানে জোরপূর্বক একটি নতুন দেশ তৈরী করা হয় যার নাম ‘ইসরেল’। সারা পৃথিবীতে একমাত্র ইহুদী রাষ্ট্র।
লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো- যাদের অবৈধভাবে নিজ বসতবাড়ী থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হলো, সেই ফিলিস্তিনিরা তাদের মাতৃভূমি ফেরত পেতে যুদ্ধ করতে গেলে তারাও হয়ে যাচ্ছে ‘সন্ত্রাসী’।
তাহলে ‘সন্ত্রাসী’ হওয়াটা তেমন একটা দোষনীয় নয়! তাই তো?
জম্মু এবং কাশ্মির এ যখন মুসলমানরা ভারতের বিপক্ষে অথবা চেচনিয়ার মুসলমানরা তাদের সায়ত্বশানের পক্ষে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে, তখন তারাও ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা পেয়ে যায়।
বিদেশের কথা বাদ।
দেশের কথা বলি।
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্রগ্রামের সংখ্যালঘু পাহাড়ীরা যখন তাদের সায়ত্বশানের পক্ষে অস্ত্র ধরেছিল তখন তারা ছিল ‘সন্ত্রাসী’। এদের সন্ত্রাস বন্ধ করার জন্য আমাদের সেনা বাহিনী এখনও ওখানে অবস্থান করছে।
অথচ, সেই ‘সন্ত্রাসে’র প্রধান ব্যক্তি শন্তু লারমা কিন্তু তাদের কমিউনিটির কাছে একজন হিরো। যাই হোক, অবশেষে বাংলাদেশ বেশ সফলভাবেই সে সমস্যা অতিক্রম করেছে।
এবার অন্য কথা বলি।
বাংলাদেশ ভূখন্ডটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে পরিচালিত হচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ শাসন করছে ভারতের সহযোগীতায় আওয়ামী লীগ নামের একটি দল যার প্রধান শেখ হাসিনা। ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির অপশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্ধ দেশবাসী ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদী আওয়ামী লীগের চমৎকার শাসন ব্যবস্থার প্রতি ভালবাসা দেখিয়ে ২০০৯ সালে বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগকেই ক্ষমতা নিয়ে আসে। দলটি ২০১৪ পর্যন্ত ম্যান্ডেট পায়।
কিন্তু, এবার আওয়ামী লীগ তার প্রকৃত রূপ নিয়ে আবিভূত হয়।
শেখ মুজিব যেভাবে ১৯৭৫ সালে দেশ থেকে গণতন্ত্র উচ্ছেদ করে; ঠিক তারচেও নোংড়া পদ্ধতিতে শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্র উচ্ছেদ করে।
যেই গণতেন্ত্রে জন্য বাংলাদেশীরা ১৯৭১ সালে সন্ত্রাসী আখ্যা পেয়েছিল; সেই গণতন্ত্রকে ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব হত্যা করেছিল। ‘মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র চেতনা ছিল গণতন্ত্র’। শেখ মুজিব সেই গণতন্ত্র হত্যা করতে কুন্ঠিত হয়নি। তার প্রতিদান সে পেয়েছে খুবই নির্মমভাবেই; ওটা তার প্রাপ্যই ছিল।
শেখ হাসিনা, তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্রকে উচ্ছেদ করে এবং ভারতের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগীতায় জোরপূর্বক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে।
অার এখন বিএনপি আন্দোলন করতে গেলে তাদের বলা হচ্ছে সন্ত্রাসী।
আর বেগম খালেদা জিয়া ও তার সাংগ-পাংগরা বর্তমান এই অবৈধ এবং গণতন্ত্র হত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যেয়ে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা পাওয়ার ভরে লেজ গুটিয়ে ঘরে বসে রয়েছে।
আওয়ামী লীগ পাখির মতো গুলি করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করে চলছে ‘দেশের মূল সন্ত্রাসী বাহনিী’ পুলিশ ও রাব দিয়ে। বিএনপি এই কথাটাও প্রচার করার মতো ক্ষমতা রাখে না যে মূল সন্ত্রাসী তো বাংলাদেশ পুলিশ ও রাব।
যে দলটি মুখ দিয়ে কথা বলারই যোগ্যতা রাখে না- তারা কিভাবে দুই মেয়াদে দশ বছর দেশ চালিয়েছে- বোঝা খুবই মুশকিল।
সন্ত্রাসীরা কখনওই আত্মবিশ্বাসী হতে পারে না।
তারা মাসনিকভাবে সবসময়ই অত্যন্ত দুর্বল প্রকৃতির হয়।
তার সুন্দর প্রমাণ তো দিল পুলিশ ও রাব। শহিদুল ও বেনজির নিজেরা উপস্থিত থেকে ৪/৫ হাজার সুসজ্জিত আমর্ড পুলিশ নিয়েও সামান্য ৬জন সন্ত্রাসীর ভয়ে প্রাকাশ্য রাজপথে নিজ নিজ জামা-কাপড় ভিয়ে ফেলে; সেখানে একটু শক্ত হয়ে কয়েক লাখ শক্ত মানুষ ঢাকায় এলে শহিদুল আর বেনজির তাদের বাহিনী নিয়ে যে ভারতে পালায়ন করবে সেটা তো পরিষ্কারই বোঝা গেল।
সন্ত্রাস শব্দটাকে এতো ভয়? বিএনপির উচিৎ রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে নিজ নিজ ঘড়ে বসে ডিম পারুন।
   Send article as PDF