একটা ঈদ!

পৃথিবী থেকে ১৮১ আলোক বর্ষ দূরে দু’টি গ্রহের সন্ধান পেয়েছে জোর্তিবিজ্ঞানীরা। সেই গ্রহদু’টির পরিবেশ পৃথিবীর চেয়েও সুন্দর, মনোরম এবং প্রানীদের বসবাসের উপযোগী বলে দৃঢ়ভাবে আশাবাদী এই গ্রহের নামকরা বিজ্ঞানীগণ।
 
আমিও দারুণভাবেই আশাবাদী, তবে শুনে শুনেই।
 
এই পৃথিবীটা নিজে নিজে ঘুরে আবার একই সংগেই সূর্যের চুর্তুদিকে বছরে একটা ভ্রমণ কমপ্লিট করে। আবার সূর্যটাও রয়েছে তার পুরো সৌরপরিবার নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে দৌড়ের উপর।
 
আমাদের এই পৃথিবী আমাদের সাথে করে নিয়ে নিজ অক্ষের দিকে দৈনিক একটা করে ঘৃর্ণি খায় ২৪ ঘন্টায়- এটাই আমরা সাধারণভাবে জানি। কিন্তু নির্ভূল হিসাবটা হবে ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিটস ৪ সেকেন্ড; পুরোপুরি ২৪ ঘন্টা নয়।
 
আবার এই একই পৃথিবীটি সুর্য্যকে প্রদক্ষিন করতে সময় নেই একজেক্ট ৩৬৫.২৫৬ দিন।
 
এত জটিল হিসাব তো আর আমাদের মতো অতি সাধারণ মানুষের বুঝে কোন লাভ নেই, সেজন্যই বিজ্ঞানীর বিষয়টাকে সহজবোধ্য করতে প্রতি চার বছর পর পর ‘বছর’টাকে লিপ ইয়ার করে দিয়ে হিসাব ঠিক রাখছেন।
 
সেই লিপইয়ার বছরের ফেব্রুয়ারী মাসটা ২৯ দিনে হযে যায় এবং এতে যাবতীয় হিসাবে আবার ঠিক-ঠাক হয়ে যায়। একটি সেকেন্ডও আর ঝামেলা করে না।
 
এদিকে মঙ্গল গ্রহটি আবার করে কি- পৃথিবীর হিসাবের ৬৮৬.৯৩ দিনে (মঙ্গলের নিজস্ব দিনের হিসাবে নয়) সূর্যকে একটা চক্কর দিয়ে বছর সম্পন্ন করে।
 
আবার দেখুন আমাদের একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ ‘মুন’ যাকে আমরা আদর করে ‘চাঁদ’ বলে ডাকি। এই মুন- পৃথিবীর একটি বছরে মোট ১৩ বারের মতো পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করে, ১২ বার নয় কিন্তু। সে গড়ে ২৮ দিনে একবার পৃথিবীকে পাক খায়। যদিও ২৮ দিন পুরোপুরি হিসাব নয়। মিনিমাম ২৭.৩২ দিন আর ম্যাক্সিমাম ২৯.৫৩ দিন লাগিয়ে ফেলে। পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চাঁদের কক্ষপথটি খুবই গোলমেলে। তারপরও হিসাবটি ১০০% নির্ভূল।
 
আর এই হিসাবটি নির্ভূল বলেই সেই ১৯৬৯ সালের ২১শে জুলাই এই পৃথিবীর মানুষ সেই দূর চাঁদ মামার বাড়ীতে হানা দিতে পেরেছিল। এখনও শক্ত হয়ে চাঁদের বুকে দাঁড়িয়ে রয়েছে আমেরিকার পতাকা।
 
অর্থাৎ নির্ভূল হিসাব।
অর্থাৎ নির্ভূল সময়।
প্রকৃতি তার হিসাবে কোন গড়মিল পছন্দ করে না।
 
এসব অতি জটিল হিসাব নিকাশ আর ভালো লাগছে না।
চলুন আমরা সহজ, সাদামাটা হিসাব নিকাশ নিয়ে বসি।
 
আমি তখন স্কুলের স্টুডেন্ট।
রোজা মানেই আমার কাছে সেরা উৎসব। দীর্ঘ প্রতিক্ষিত রমজান। প্রচুর সময়। কম করে হলেও গোটা বিশেক বই পড়ে ফেলতো পারি এই পবিত্র মাসটাতে। দিনের মধ্যে ৪/৫ ঘন্টা মসজিদে বসেই কাটিয়ে দিই- নামাজ, রোজা, কোরান, হাদিস নিয়ে। অদ্ভুৎ এক উত্তেজনা আমার রক্তে কাজ করে তখন।
 
তারপর যখন ঈদ আসবে- তখন তো উত্তেজনা আরোও বেড়ে যায়। কবে চাঁদ উঠবে, কবে ঈদ হবে!
 
প্রতিক্ষার আনন্দ।
সেই আনন্দ অসীম, বর্ণনায় অসম্ভব।
 
সবে হয়তো ক্লাস সিক্স এ বা ফাইভে পড়ি। আমাদের বাড়ী যেতে একটা ছোট নদী পাড় হতে হয়। সেখানে যেই নৌকাতে করে আমরা এপাড়-ওপাড় হতাম সেই নৌকা আর ঘাটের দায়িত্বে একটা ‘মাঝি পারিবার’ এবং নৌকাকে বলা হয় ‘গুদারা’।
 
সেই পরিবারে মোট ৪-ভাই তারা নিজেদের মধ্যে সময় ভাগ করে নৌকা পরিচালনা করতো।
তাদের সবচে বড় ভাই (দুঃখিত, নাম ভুলে গেছি)- সবচে ভদ্র, পড়াশোনাও করেছিল বলে জানতাম।
 
আমি নৌকা পাড় হচ্ছি, আলোচনা হচ্ছে আজ চাঁদ উঠবে কি না!
সকলে যে যার মতো করে অনুমান নির্ভর কথা বলে যাচ্ছিল। আর আমি সেই ছোট বেলা থেকেই বেশ ভালো স্রোতা, বক্তা নই।
 
সেই গুদারার মাঝি হঠাৎ বলে উঠলেন- ‌’আজ তো চাঁদ দেখা যাবে না। আজ চাঁদ জন্ম নিবে কিন্তু সেটা সন্ধ্যার অনেক আগেই বিলীন হয়ে যাবে- দেখা যাওয়া সম্ভব না। আগামীকাল চাঁদ দেখা যাবে এবং বেশ বড়। আপনাদের ঈদ হবে পরশুদিন এবং রোজা এবার ত্রিশটাই করতে হবে।’
 
ওনার কথার ভংগি আমাকে বুঝিয়ে দিল ‘তুমি অনেক কিছুই জানো বাছা, অনেক হিসাব রয়েছে এবং সবই নির্ভূল হিসাব’।
 
সেদিন সত্যিই চাঁদ দেখা গেল না। ৩০টা রোজাই আমরা করলাম।
 
পরের বছর ১৫ বা ১৬ রোজার দিকে আমি ওনার কাছে এবারের চাঁদের হিসাব জানতে চাইলাম। উনি আমাকে তারপরের দিন হিসাব করে বললেন যে, এবার কিন্তু রোজা ২৯টাই হবে।
 
আমি প্রশ্ন করলাম, ‘আপনি কিভাবে জানেন এসব?’
উনি আমাকে বললেন ‘পঞ্জিকা দেখে’।
 
ব্যস, আমি পঞ্জিকা খোঁজা শুরু করে দিলাম এবং পেয়েও গেলাম একটা পঞ্জিকা যেটা কোলকাতা থেকে ছাপা হতো।
 
এবং দেখলাম, ওদের হিসাব শতভাগ নির্ভূল।
আমদের রোজা, ফজর, মাগরেব সব হিসাবের টাইম-ই সেখানে পরিচ্ছন্ন।
 
তখন আমার মাথায় একটা ভিন্ন হিসাব।
২৫শে ডিসেম্বর খৃষ্টানদের ‘বড়দিন’। সাড়া পৃথিবীতে একটি নির্ধারিত দিনই।
 
আর আমাদের ‘ঈদ’ কবে হবে সেটা আমরা জানি না।
 
আমরা চাঁদের মাটিতে পা রেখেছি।
আমরা মঙ্গলের দিনের হিসাব, বছরের হিসাব নির্ভূলভাবেই জানি।
কোলকাতার বাঙালী হিন্দু বাবুরা নির্ভূল হিসাব করে দিতে পারে কবে রোজা শুরু হবে কবে শাওয়ালের ১ তারিখ আসবে- কারণ ‘মুসলিমদের ধর্মীয় বছরকে চান্দ্র মাস হিসাবে ক্যালকুলেট করা হয়’।
 
কিন্তু সারা পৃথিবীর মুসলিমরা এতটাই মুর্খ যে তারা জানেই না কবে কয়টায় চাঁদ উঠবে আর কয়টায় নতুন মাস শুরু হবে- তারা অপেক্ষা করে আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের চোখে দেখবে বলে।
 
আজ থেকে পনেরশত বছর আগে মুহাম্মদ (সা) সপ্তম আসমান পরিভ্রমন করে এসেছেন তখন রকেট বিজ্ঞান ছিলো না- কিন্তু সেখানে-ই বিজ্ঞানের অস্তিত্বকে নির্দেশ করা ছিলো।
 
একজন আরব গণিতবিদ মুহামেদ ইবনে মুসা আল-খাওয়ারিজমি’র লেখা ‘হিদাব আল-জাবের ওয়াল-মুকুবালা’ থেকে যদি গণিতের আলজেবরা’র উৎপত্তি হতে পেরেছিল কিন্তু আজ মুসলিমরা চাঁদের হিসাব জানে না।
 
আমি একজন অতি সম্মানিত ব্যক্তির একটা বিষয়কে সামনে আনবো- যেখানে আমার কথাকে আপনি ‘অবহেলা’ করতে পারেন কিন্তু তাতে আমার কিছু যায় আসে না। তিনি হানাফি মাজহাবের প্রধান আবু হানিফা অন-নুমান ইবনে তাহবিত।
 
আবু হানিফা জীবনে কোনদিন তরমুজ খাননি। কারণ, তিনি জানতেন না যে মুহাম্মদ (সা) ঠিক কিভাবে তরমুজ খেতেন।
 
কিন্তু আমি আবু হানিফা’র সংগে একমত নই। এটা আমার ধৃষ্টটা হতে পারে- আমি কেয়ার করি না।
ধর্মকে যদি ওভাবেই মানতে হয় তাহলে তো আমাদের ফেসবুক চালানো, কমপিউটার ব্যবহার করা, নতুন কোন খাবার-দাবার, বিমানে চড়া, মোটর গাড়ী ব্যবহার সবই ছেড়ে দিতে হবে। সুতরাং আমি হানাফি হতে পারবো না।
 
ইসলাম ধর্মটা অত্যন্ত যৌক্তিক, সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, আধুনিক এবং বিজ্ঞানময়। ‘পবিত্র কোরাণ’ তো আরও বেশী অত্যাধুনিক ও আধুনিক বিজ্ঞানের বড় উৎস।
 
আর সেই বিজ্ঞানময় ধর্মানুসারী মুসলিমরা তাদের ঈদের হিসাবটাই জানেন না।
 
পুবের দেশ অষ্ট্রেলিয়া, জাপানসহ ফারইষ্ট আর মধ্যিখানের মিডিলইষ্টর্নরা এবং সেই সংগে সর্ব পশ্চিমের দেশ আমেরিকা কানাডাও একই দিনে সৌদী আরবের সংগে মিল রেখে ঈদ পালন করছে কিন্তু অল্প কিছু দেশ যা মুলত পাক-ভারত উপমহাদেশ কেন্দ্রিক তারা ঈদ করে একদিন বা দুই দিন পর!
 
ভাবতেও আমার হাসি পায়। মুর্খতারও একটা সীমা থাকা দরকার।
 
৫০টি মুসলিম কান্ট্রি’র ১.৫ বিলিয়ন মুসলিম এই পৃথিবীতে বসবাস করছে।
৫০টি দেশ একটা একক ‘দিন’, একক ‘মাস’ হিসাব করতে ব্যর্থ।
 
এটা ‘আদর্শ ইসলাম’ হতে পারে না।
 
উত্তর মেরু বা দক্ষিন মেরুতে- যেখানে ৬ মাস দিন বা ৬ মাস টানা রাত- সেখানে কিভাবে রোজা, নামাজ পড়তে হবে তারও কোন প্রকৃত ও একক নির্দেশনা খুঁজে পাওয়া যায় না।
 
পরিস্কার বিষয়টা হলো- আমরা এই পৃথিবীতে বসবাস করি। একটাই পৃথিবী। আমরা ইসলাম ধর্ম পালন করি। একটাই ধর্ম। আমাদের সকলেরই নবী মুহাম্মদ (সা)। একজনই নবী। এবং তিনি বলেছেন চাঁদ দেখে দিন নির্ধারণ করতে- সেটা বলেছেন এই পৃথিবীবাসীদের সকলকে।
 
এমনও হয়েছে সেই ৬০০ শতকেও দূরবর্তী মদিনায় চাঁদ দেখা গেলে তার সংগে মিলিয়ে মক্কায়ও ঈদ পালন করা হয়েছে একসংগে।
 
প্রেসিডেন্ট (খলিফা) উমরের আমলে তাঁর শাসিত এই বিশাল পৃথিবীর অর্ধেক অঞ্চলেও একই দিনে ঈদ পালিত হয়েছে। তখনও ভৌগলিকতার দোহাই আসেনি।
 
পাক ভারত উপমহাদেশের আলেম-সমাজ তো আর মঙ্গল বা অন্য কোন গ্রহে বসবাস করছেন না যে তারা নিজেদের চোখে চাঁদ না দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না! তারা যা করছেন সেটা ইসলামের সংগে যায় না বরং সাংঘর্ষিক।
 
পুরো পৃথিবী একই দিনে ঈদ করতে পারলেও শুধুমাত্র এই পাক-ভারতীয়দের ই ভিন্নতা দেখা যায়- তাদের আবার সমর্থকও প্রচুর।
 
আসলে মানুষের কাজ না থাকেই তারা তরল চিন্তায় ব্যস্ত থাকে আর সেটা থেকেই তৈরী হয় বিভেদ।
 
পাক-ভারত উপমাদেশীয়রা প্রচন্ড অলচ এবং তারা তরল চিন্তায় মগ্ন। তাই তাদের নিজেদের চোখেই সব দেখতে হবে। বিজ্ঞানও নয়, বিদেশও নয়- এমনকি এই পৃথিবী তো নয়-ই। তারা তো আলাদা একটা গোত্র। তাই তারা আলাদা দিনে ঈদ করে। আলাদা তারিখে ঈদ করে।
 
তবে, বিষয়টা সৌদী আরবে চাঁদ দেখার সংগে মিলানোটা অন্যায় হবে- বিষয়টা হতে হবে এই পৃথিবীর মাটি থেকে চাঁদ দেখা যাওয়ার বিষয়ে। মুসলিম দেশগুলিকে একতাবদ্ধ হয়ে, প্রয়োজনে ওআইসি’র মাধ্যমে একটা আন্তর্জাতিক চাঁদ দেখা কমিটি করা যেতে পারে এবং সেখান থেকেই দিনক্ষন নির্ধারণ করা হলে বিষয়টা সুন্দর হবে, পরিচ্ছন্ন হবে।
 
আমরা একটা চমৎকার, একক আর পবিত্র দিন চাই।
একটা একক দিন একটা এক ধর্মাবলম্বীদের জন্য।
 
এবং শেষটায় বলছি, সব স্থানেই লোকল ক্লক অনুসরণ করা হবে কিন্তু সারা বিশ্বের একটাই একক দিন ধার্য থাকবে চান্দ্র মাস নির্ধারণে। অর্থাৎ ‘লোকল ক্লক’ বা স্থানীয় সময় অনুযায়ী দিন অতিবাহিত হবে কিন্তু চান্দ্রমাস একটি নির্ধারিত ‘ক্যালেন্ডার ডে’ তে পালিত হবে- সেটা নিয়ন্ত্রণ করবে ইসলামী বিশ্ব বিজ্ঞানের সহায়তায় এবং চাঁদ দেখে। সেটা সৌদী আরব কেন্দ্রিক হবার কোনই যৌক্তিকতা নেই- একক বিশ্বকেন্দ্রিক হতে হবে। বিশ্বের যেখানেই চাঁদ উঠুক- সেটাই কার্যকারি হবে সারা বিশ্বের জন্য। এটাই আমার দাবী।
 
মহান আল্লাহ পাক তাতেই বেশী সন্তুষ্ট হবে।
 
বলতে গেলে বাদবাকী বিশ্বের সংগে ১ বা ২দিন পরে বাংলাদেশে শবে কদর পালিত হয়। তাহলে সেই পালিত শবে কদর আর কাতারে পালিত শবে কদরের দিনও কিন্তু আলাদা।
 
আল্লাহ কি দুই ভুখন্ডের জন্য দু’টা আলাদা শবে কদরের দিন নির্ধারন করে রেখেছেন?
 
অনেকেই এদেশে দীর্ঘ শত বছরের প্রচলিত ধ্যান ধারণাকে সামনে নিয়ে আসছেন।
হ্যাঁ। আপনাদের প্রচলিত ধ্যান ধারণায় থাকতে হলে তো হুজুরদের কোরবানীর পশুর মাথা দিয়ে দিতে হবে- তাই না? লাভ তো ভালই!
 
এবং আরও একটা কথা আর সেটা হলো যুক্তি ও ধর্ম।
ইসলাম শতভাগ যুক্তিযুক্ত ধর্ম। ইসলামে, মুহাম্মদ (সা) এর জীবনে আমি অন্তত অযৌক্তিকতা পাইনি। আর পাইনি বলেই এবং মুহাম্মদ (সা) কে যেখানে ‘জীবন্ত কোরান’ বলা হয়েছে- সেখানে অযৌক্তিক কোন কথা আমি মেনে নিতে পারি না, পারবো না।
 
যুক্তিহীনতার অপর নাম ভন্ডামী।
পীর, ফকিররাও যুক্তির ধার ধারে না।
 
এনিওয়ে যারা ইসলামে যুক্তি খুঁজে পান না বা যুক্তিতে যেতে চান না- তাদের বিষয়ে আমি করুনা প্রকাশ করছি।
 
একটাই পৃথিবী।
একটা নির্ধারিত দিন- ১.৫ বিলিয়ন মুসলিমকে এক করতে পারে না।
অভিন্ন ‘শুক্রবার’ আমরা জুম্মার নামাজ পড়তে পারি সারা বিশ্বে কিন্তু ‘ঈদ’ এর জন্য একটা অভিন্ন তারিখ নির্ধারণ করতে পারি না।
 
আমার ফেলে আসা গ্রামের গুদারা ঘাটের হিন্দু মাঝিও নির্ভূল বলে দিতে পারে কবে চাঁদ উঠবে কিন্তু ইসলামী ফাউন্ডেশনকে মিটিং এ বসতে হয়!
 
অনেকেই একটা অত্যন্ত দুর্বল হাদিসের উদাহরণ টানতে পারেন যে, চাঁদ দেখে রোজা রাখতে এবং রোজা ভাংগার কথা। তাদেরকে বলছি- টানা এক সপ্তাহ আকাশে গাঢ় মেঘের জন্য শুধু চাঁদ কেন সূর্যও দেখা গেল না, তখন আপনাদের এই হাদিস কি জবাব দিবে?
 
আরেকটা কাজ করা যায়- এই হাদিস অনুযায়ী, যারা যারা চাঁদ দেখতে পারেনি তারা তারা ঈদ করবেন না। কেমন হয়?
আপনি নিজের চোখে চাঁদ দেখে- তবেই ঈদ করবেন! চলবে তো?
 
যাই হোক, ইসলাম একটা বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক জীবনব্যবস্থার নাম। মুহাম্মদ (সা) যদি ৫৭০ সালে জন্ম না নিয়ে ১৯৭০ জন্ম নিতেন- তাহলেও কি তিনি ঐ উকিঝুকি মেরে চাঁদ দেখে ঈদ করার ঘোষনা দিতেন?
 
প্রশ্নই আসে না- মুহাম্মদ (সা) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। আপনাদের মতো যুক্তিহীন, বিজ্ঞানহীনতা আর গোড়ামী নিয়ে তিনি মানবজাতিকে সভ্যতার পথ দেখাতে আসেন নি।
 
মুহাম্মদ (সা) তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ করেছেন।
আপনাদের হিসাবে এখনও তো তাহলে সেই পারমানবিক বোমার বিরুদ্ধে তলোয়ার নিয়ে নামা উচিৎ যুদ্ধ করতে- তাই না?
 
শিশুসুলভ যুক্তিহীন আবেগী চিন্তা-ভাবনা চেতনা শাহবাগে চলে- ইসলামে না।
 
মনে রাখতে হবে বিজ্ঞানের অবস্থান আবেগের অনেক উপরে।
আবেগ দিয়ে কোনদিন কিছুই হয়নি- হবেও না।
 
আবেগটুকু পরিবারকে দিন- সংসার সুখের হবে।
 
   Send article as PDF