হাহা এবং আরাফাত-নামা

আরাফাতের কোন লেখাই আমি পড়ি না।
প্রথমত সে ‘ম্যানার’ জানে না, শরীরের জোরে কথা বলে- যেখানে যুক্তি অনুপস্থিত। দ্বিতীয়ত সে ‘চেতনা’বাজদের জন্য লেখে, চেতনা নিয়ে লেখে যা যুক্তির সংগে সবসময়ই সাংঘর্ষিক।


তৃতয়ত তার পড়াশোনা কম, একমুখী বক্তব্য যা লেখা হয় শুধুই তাদের চেতনা-মাতা শেখ হাসিনাকে খুশী করে ‘হালুয়া-রুটির ভাগ’ নেয়ার প্রতিযোগীতাপূর্ণ।

চতুর্থত সে তার প্রোফাইলের পাবলিক কমেন্টবক্স বন্ধ করে রেখেছে; অর্থাৎ সে ‘মত-প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়’ অর্থাৎ অন্যের মতকে সম্মান করা শিখেনি- যে শিক্ষাটা সাধারণত পরিবার থেকে বংশানুক্রমিক অর্জিত হয় সেই শিক্ষাটা তার পরিবার জানেই না।
আরও একটা কারণও রয়েছে, আমি বছর খানেক আগে তার একটি বহুল প্রচারিত লেখায় কমেন্ট করেছিলাম তার ‘পেইজ’এ- ৪/৫টা যুক্তি দিয়ে কিন্তু সে ১ ঘন্টার মধ্যেই আমার কমেন্টটি রিমোভ করে দেয়। অর্থাৎ সে যুক্তি নিবেও না- মানে সে মোটা দাগের আওয়ামী লীগ যারা যুক্তির ধার ধারে না- শেখ হাসিনা যা বলবে সেটাই তাদের কাছে ‘শেষ কথা’।
সুতরাং এমন একজনের লেখা আমি কেন পড়তে যাবো? আমার সময়ের মূল্য অনেক বেশী। আমি ‘কোয়ালিটি আর্টিকেল’ ছাড়া যা-তা কোন লেখা পড়ি না। কিন্তু তারপরও আওয়ামী লীগ মারা গেলে আমরা যে ‘হাহা’ দিই সেটার বিরুদ্ধে সে একটি আর্টিকেল লিখেছে যেখানেও কোন কোয়ালিটি বা যুক্তি নেই অথচ ‘জিপিএ-পাইপ’ পত্রিকাগুলি বেশ গুরুত্বদিয়েই সেই লেখাটি প্রচার করে যাচ্ছে।

বাধ্য হলাম লেখাটি পড়তে এবং উত্তর লিখতে। তাছাড়া আমার টাইমলাইনেরও কিছু বিরোধী মতের মানুষ রয়েছেন যারা এই ‘হাহা’ রিয়েক্টের বিরুদ্ধে বা আওয়ামী মৃত্যুতে উল্লাসে অখুশী। তাদের কিছু জবাব দেয়া দরকার। সেজন্যও আরাফাতের লেখাটি পড়া। আমি জানি আরাফাতরা তাদেরই প্রতিনিধিও বটে।

আরাফাতের কিছু অংশ পড়ুন, নীচে দিলেম।
“আমার যেকোন লেখা বা বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজাকার শাবকগুলো তাদের মন্তব্যে যেরকম ঘৃনার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় তাতে মনে হয় ওরা আমার মৃত্যু কামনা করে এবং আমার মৃত্যুতে ওরা ‘উল্লাস’ প্রকাশ করবে। আমার অপরাধ কি ওদের কাছে? আমি কি ওদের পাকা ধানে মই দিয়েছি? হ্যা, দিয়েছি। আমি প্রগতিশীলতার কথা বলি, আমি অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলি, আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলি। বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বার্থেই আমি, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ওদের মিথ্যা অপপ্রচারের জবাব দেই। আর এই জন্যই ওরা আমাকে ঘৃণা করে। একই কারণে ওরা অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের মৃত্যু কামনা করে, অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মৃত্যুতে ‘উল্লাস’ প্রকাশ করে।”

আরাফাত তার বক্তব্য শুরুই করেছে ‘রাজাকারের শাবকগুলো’ শব্দ দু’টি ব্যবহার করে। অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও সে গণহারে দেশের অধিকাংশ মানুষকে ‘রাজাকারের শাবকগুলো’ বলে ডিক্লেয়ার করেছে। অর্থাৎ প্রথমেই সে একটি গালি ব্যবহার করেছে যেটাতে ‘ম্যানার’ এর বড্ড অভাব। দ্বিতীয়ত সে দেশকে শুরুতেই দু’ভাগে ভাগ করে দিয়েছে- যেখানে একদল রাজাকারের শাবক এবং অপরদল সে নিজে যা কিনা ‘চেতনাওয়ালা’ খ্যাত মুক্তিযুদ্ধের কথিত স্বপক্ষ শক্তি।

যে লোকটি প্রথমেই নিজের দেশকে দু’ভাগে ভাগ করে ফেলে- তাকে আমি মানুষ হিসেবে গণ্য করতে কোন যুক্তি খুঁজে পাই না। আরাফাত একটি ‘ওয়াইল্ড-ম্যান’ বা ‘বনমানুষ’ যা সোজা বাংলায় জংলী। জংলীর কথার উত্তর দেবার কোন কারণ নেই।

আর আমরা তো বেশ ভালো করেই জানি যে, বাংলাদেশে যারা ডাকঢোল পিটিয়ে ‘প্রগতিশীলতা’ আর ‘অসাম্প্রদায়িকতা’র প্রচারণা চালায় তারা ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী গো-মুত্রখোর বিজেপির দেশীয় শাখা পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত; যারা কিনা ওদেশেও দেশকে অলরেডী দু’ভাগে ভাগ করে ফেলেছে। আরাফাতরা ভারতের নাগরিক হলে এতোদিনে ওদের খাবার টেবিলে গো-মুত্র দেখা যেত।

আরও বলতে হয়, আরাফাত ‘প্রগতিশীল’ এবং ‘অসাম্প্রদায়িকতা’ শব্দের আড়ালে দিনভর প্রস্তরযুগের (আদিমকালের) গল্প শোনায় যেখানে মানুষ নগ্ন থাকতো, কাঁচা মাংস খেত (হয়তো তখন গো-মুত্র খেতো- আরাফাতের পুর্বপুরুষগণ) এবং অসাম্প্রদায়িকতা বলতে আরাফাত বুঝে সকালে-বিকেলে রুটিন করে দু’বেলা ইসলামধর্মের বিরুদ্ধে, মুসলিম-ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে নোংড়া কথা বলাকে উৎসাহিত করা এবং তাদের ‘গণপিতা বাংলার নবী’ খ্যাত শেখ মুজিবের আওয়ামী ধর্মকে প্রতিষ্ঠায় কাজ করা। আরাফাত অসাম্প্রদায়িকতা বা প্রগতিশীলতা বানানটুকু (স্পেলিং)ই জানে- এর আদৌ অর্থ সে শিখেনি। একজন প্রগতিশীল মানুষ নিজের কমেন্টবক্স এ পাবলিককে ঢুকতে দেয় না- সে কেমন প্রগতিশীলতা?

আরাফাত বলেছে যে, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বার্থেই আমি, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ওদের মিথ্যা অপপ্রচারের জবাব দেই।’

শেখ হাসিনাটা কে? যে কি না দেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, যে কিনা গণতন্ত্র ধ্বংশ করেছে (ঠিক তার বাবার চেয়েও জঘন্যভাবে), যে কিনা হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে- যারা তাকে সমর্থন করে না তাদের। আর আরাফাত এমন একজন খুনী, হত্যাকারী, গণতন্ত্র-ধ্বংসকারী, ভোটাধিকার-হরণকারীর পক্ষে ‘অপপ্রচার’ এর জবাব দেয়ার ঠিকাদারী নিয়েছে। আহা, কি তার যোগ্যতা! কি একটি প্রাণী সে! এজন্যই বলেছিলাম আরাফাত হচ্ছে একটা বনমানুষ যে ভুলক্রমে চলে এসেছে একবিংশ শতাব্দিতে।

মৃত্যু কামনা এবং উল্লাস প্রসংগে একটু পরেই আসছি, ধৈর্য্য ধরুন।তার আগে, আরও একটু আছে- এটুকুও পড়ুন।
“লুকিয়ে থাকা পাকি প্রেতাত্মা-রাজাকার-দালাল গং বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের পর বিজয় মিছিল করেছিল ঢাকা শহরের অলিতে-গলিতে। ১৫ আগস্ট ছিল ওদের জন্য উৎসবের দিন। এরাই ১৫ আগস্টে কেক কেটে মিথ্যা জন্মদিন পালন করার নামে আসলে করে ‘উল্লাস’।”

না রে আরাফাত। লুকিয়ে থাকা কোন ব্যক্তিবিশেষ না, সারা বাংলাদেশের ৭ কোটি মানুষ শেখ মুজিবের মৃত্যুতে উল্লাস প্রকাশ করেছিল, ইত্তেফাকের ১৭ই আগষ্ট ১৯৭৫ সালের প্রথম পাতায় বড়বড় হরফে ছাপা শিরোনাম ছিল, ‘জনসাধারণের স্বস্তির নিঃস্বাস’ এবং সেখানে লেখা হয়েছে- ‘ঈদের খুশীর মতো’ একে অপরকে আলিঙ্গন করিয়া কুশল বার্তা বিনিময় করেন’। ওহ, ইত্তেফাকের মালিক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আপনাদের শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার-সংশ্লিষ্ট একজন বটে, তাকে জিজ্ঞেস করেও মিলিয়ে নেয়া যেতে পারে। অপরদিকে শেখ মুজিবের মৃত্যুর জন্য যারা রাস্তায় উৎচকিত ছিল, ট্যাংকের উপর লাফিয়ে নৃত্য প্রদর্শন করেছে তারা মতিয়া চৌধুরী এবং হাসানুল হক ইনুরা শেখ হাসিনার মন্ত্রীত্ব এমপিত্ব করে যাচ্ছে- দুঃখের বিষয় আরাফাতকে কিন্তু মন্ত্রী-এমপি করা হয়নি।
হ্যা, ৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট দেশের ৭ কোটি মানুষ মুক্তির স্বাদ পেয়েছিল কারণ যেই স্বপ্ন নিয়ে তারা শেখ মুজিবকে ৭০রের নির্বাচনে ভোট দিয়েছিল সেই স্বপ্ন শেখ মুজিবের হাতে পরে দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। শেখ মুজিব মাত্র ৩ বছরের শাসনমলে হত্যা করেছে ২৫ হাজার নীরিহ মানুষকে, ক্রস-ফায়ার গুম ছিল তার নিত্যদিনের রুটিন-ওয়ার্ক, গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল প্রণয়ন, ৭৪রের দুঃভিক্ষ দিয়ে দেশের মানুষকে না খাইয়ে মেরে (যেখানে লবনের দাম হয়েছিল সেই আমলের ৩০০ টাকা সের), মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে স্তব্ধ করে দেয়ার পর তার মৃত্যুতে দেশের মানুষরা মুক্তি পেয়েছিল- এক জল্লাদের হাত থেকে। যেই জল্লাদকে তারা বিশ্বাস করেছিল একদিন, ভালবেসেছিল একদিন। শেখ মুজিব দেশের ৭ কোটি মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলেছিল।

অথচ, আরাফাত দেখুন, তারপরও কিন্তু ১৫ই আগষ্ট দেশের কোন মানুষ বলেনি যে, ‘শেখ মুজিব নিজের শরীরে রঙ মেখে সিড়িতে শুয়েছিল’; অথচ আমরা দেখেছি ৫ই মে শতশত মানুষকে রাতের আধারে হত্যা করে শেখ মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা (আপনি যাকে খুশী রাখায় দায় নিয়েছেন) বলেছিল ‘ওরা গায়ে রঙ মেখে শুয়েছিল’।

অথচ, তারপও মৃত মানুষকে নিয়ে রসিকতা জননী হিসাবে আমি শেখ হাসিনার নাম ঘোষনা করতে অপারগ। একচুয়েলি মৃত মানুষকে নিয়ে রসিকতাটারও জনক ছিল আপনাদের আওয়ামী প্রজাতীর জনক শেখ মুজিব। সিরাজ সিকদারকে হত্যা করে মহান সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষনা দিয়ে শেখ মুজিব অট্টহাসিতে ফেটে পরে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘কোথায় আজ সিরাজ সিকদার!’।

আরাফাত। মৃত মানুষ নিয়ে রসিকতা করা কি ভালো কিছু হলো? আপনি তো হাচিনা-মুজিবের পক্ষে লিখতে বসেছেন- এখন কি বলবেন যে ‘ওসময় রসিকতা করা যায়েজ ছিল’?

হ্যাঁ, আমরা জানি- আপনি তাও বলতে পারবেন। কারণ ‘আপনি’ আর বাজারের একজন ‘পতিতা’ তো আসলে একই বস্তু- যাদের কোন চরিত্র থাকতে নেই। সবসময় শুধু পক্ষে বললেই চলবে। নইলে ‘হালুয়া-রুটির ভাগ’ জুটবে কিভাবে- বলুন তো?

নাহ, আপনি যেহেতু একজন ‘পুরুষ পতিতা’ বা বনমানুষ- তাই আপনি বলেই চলবেন- “কিন্তু আমরা ওদের মতো বন্য নই। আমরা ওদের মতো অসভ্য নই। আমরা আছি ন্যায্য লড়াইয়ে। আমরা দীর্ঘদিনের রুদ্ধ মহা অন্যায়ের বিচারের রায়ে ‘উল্লাস’ প্রকাশ করি, কারো মৃত্যুতে নয়।”

ওহ আচ্ছা। শাহবাগে দাঁড়িয়ে সরকারী আর ভারতীয় হাই-কমিশনের সহযোগীতা নিয়ে দিনের পর দিন ‘ফাঁসী চাই, ফাঁসি চাই’ বলে চিৎকার কারা করেছিল- ভুলে গেছেন? আরাফাত, আপনি; হ্যাঁ আপনারাই সেদিন ‘ফাঁসির উৎসবে’র জন্য গলা ফাটিয়ে চিৎকার করেছিলেন। আপনারাই মিথ্যা স্বাক্ষী, মিথ্যা হাতে বানানো নকল ফটোকপি সাজিয়ে দেশের ইসলামী চিন্তাবিদদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ‘রাষ্ট্রিয় হত্যাকান্ড’ বাস্তবায়নে অগ্রনী ভূমিকা রেখেছিলেন। ভুলে গেছেন? সহজ সরল নীরিহ একজন মানুষ যে কিনা ৭১রের যুদ্ধের সময় কলেজ ষ্টুডেন্ট (আব্দুল কাদের) তাকে সেই সময়ের ৪৫-উর্দ্ধ এক ‘বিহারী কসাই কাদের’ বলে চালিয়ে দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে লাফালাফি করেছেন- উল্লাস করেছেন।
মৃত্যু নিয়ে উল্লাস, উম্মাদনা কারা শুরু করেছিল?কোথাকার কোন দেলোয়ার সিকদার নামের এক ব্যক্তির দোষ ইনোসেন্ট মাওলানা দেলোয়ার হোসেন নামের দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানটিকে মিথ্যা মামলায়, মিথ্যা সাক্ষীর সাহায্যে জেলে আটক রেখেছেন। তাঁর মৃত্যু কামনা করেছেন, শাহবাগে মিছিল করেছেন- আর আজ মুনতাসির মামুনের মতো, জাফর মাষ্টরের মতো কিছু নষ্ট কীটের মৃত্যু কামনায় কষ্ট হয়? মৃত্যু কামনার সম্পূর্ণ দায় তো আপনাদের- কিভাবে অস্বীকার করবেন?


লজ্জা করে না- ঠিক যে কাজটি আপনি নিজে করেছেন সেই আপনার দেখিয়ে দেয়া একই কাজটি অন্যে করলে তার ‘প্রতিবাদ’ জানাতে? আগেই বলেছি আপনি হচ্ছেন বাজারের সস্তা পতিতা। বাজারের পতিতা শরীর বিক্রি করে খায়- আপনিও মাথা-ওয়ালা শরীর বিক্রি করে হালুয়া-রুটি-ই খাচ্ছেন। কোন পার্থক্য আছে- থাকলে নিজেই বলেন; অপশন দিয়ে রাখলাম।

কোন মুখে দাবী করেন যে, আপনি প্রগতিশীল। ইতিবাচক রাজনীতির পক্ষে। সহনশীলতার পক্ষে। ঘৃণার বিপক্ষে।

বাড়ীতে আয়না (মিরর) নেই? দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতে পান? অবশ্য আপনার মতো পতিতার আয়না থাকলেই কি আর না থাকলেই কি?

আর আরাফাতের লেখাটা শুরু হয়েছিল এভাবে, “অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন যখন করোনা আক্রান্ত হলেন, এদেশের পাকি প্রেতাত্মাগণ ‘উল্লাস’ প্রকাশ করলো।”
আরাফাত প্রথমেই খুঁজে খুঁজে বের করলো ‘পাকি-পেতাত্মাগণ’দের।আচ্ছা বলেন তো, স্বাধীনতার এই ৫০ বছর পর এসে এমন কোন বেকুব কি বাংলাদেশে বসবাস করে যে কি না পাকিস্তানের পক্ষে দালালী করবে? এতে কার কি লাভ? পাকিস্তান আরাফাতের মতো মূর্খ বেকুব জিপিএ-পাইপ প্রজন্ম তৈরী করে না যে তারা ১৫০০ মাইল দূরের একটি দেশকে দখল করতে দালাল নিযুক্ত করবে। পাকিস্তানের সেই সময় নেই- ওসব ফালতু চিন্তা করবার।

বরং পাকিস্তানের একমাত্র শত্রু দেশ হচ্ছে ভারত। আর ভারতের কোন প্রতিবেশী বন্ধু দেশ নেই। হিন্দু রাষ্ট নেপাল পর্যন্ত ভারতকে শহত্রু জ্ঞান করে। সেখানে এই আরাফাতরা একজন মানুষকে বা ভিন্ন মতাবলম্বীকে হয় রাষ্ট্রিয়ভাবে জুডিশিয়াল কিলিং বা ক্রস-ফায়ারে দিয়ে হত্যা করে নয় তো ‘পাকি-পেতাত্ম’ বা ‘পাকি-দালাল’ বলে গালি দেয়। এবং দেশটাকে একতাবদ্ধ করার বিপরীতে বিভক্তি সৃষ্টি করে ধংসের চেষ্টা চালায়। আর ঠিক একইভাবে দেশটাকে আজ ধ্বংসের জন্য মরিয়া হয়ে চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে মুনতাসির মামুন, জাফর ইকবাল, আনিসুজ্জামানেরা। আদতে এরা যখন মরবে- তখন বাংলাদেশের আসল ‘গৃহশত্রু’ বিদেয় হবে- যারা দেশটাকে দুইভাগে বিভক্ত করে, দেশের মানুষের চিন্তাকে বিশৃঙ্খল করে ব্যক্তিগত ফায়দা লুটতে মরিয়া। আর এসব কাজে প্রয়োজনীয় অর্থ, প্রয়োজনী সমর্থন, সহযোগীতা করে ভারত সরকার। যেন বাংলাদেশ দাঁড়াতে না পারে কোনদিনও।

এইসব আনিসুজ্জামানেরা, এইসব জাফর ইকবালরা, এইসব মুনতাসির মামুনরা এবং এদেরই চ্যালা আরাফাতরা একই উদ্দেশ্য সাধনে চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে দেশটিতে দ্বিধা-বিভক্তি উসকে দিয়ে দেশের মানুষকে দেশের জন্য একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে বাঁধা দিয়ে এবং দেশে অবৈধ, অগণতান্ত্রিক রাস্তায় পরিচালিত করে চিরতরে ধ্বংস করে দেয়া যায়। বিনিময়ে তারা অল্প কয়েকজন নিজেদের ব্যক্তি-স্বার্থে ফায়দা লুটতে পারে। এরা হলো প্রকাশ্যে ভারতীয় দালাল। এরা কোন কালেও ভারতীয় নোংড়া নীতির বিরুদ্ধে কোন কথা বলবে না। এরা ভারত সরকারকে প্রয়োজনে বাংলাদেশটা লিখে দিবে, ভারতকে বাংলাদেশের উপর যা খুশী তাই করতে দিবে; এমনকি সীমান্তে দু’দিন পরপর ভারতীয় বিএফএফ যখন বাংলাদেশী নীরিহ মানুষ হত্যা করে তখন তারা তার বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ না করে উল্টো উৎসকে দিয়ে বলে যে, বাংলাদেশীরা গরুচোর, তাই তার তাদের হত্যা করা হয়েছে। অথচ আবার এরাই নিজেদের ‘স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি’ আবার ‘প্রগতিশীল’ বলেও নিজেরাই দাবী করে!

বাহ আরাফাত বাহ। কি বুদ্ধি তোর!নিজেকে কি ভাবিস? দেশের সকলেই কি আওয়ামী লীগ যে তোর মতো বেকুবের সব কথাই সকলে বিশ্বাস করে বসে রয়েছে?

যাই হোক, এই আরাফাতরাই আজও মৃত্যুর ৩৯ বছর পরও প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াকে কথায় কথায় গালি দেয়। তখন প্রগতিশীলতা কোথায় থাকে? গালি দেয়ার কালচার কারা তৈরী করেছে এদেশে? অসুস্থ্য বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থ্যতা নিয়ে এই নাসিম সাহেব যখন ট্রল করে বলেছিল, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থতার ভান করছে’ তখন আরাফাতের প্রগতিশীলতা কোথায় পালিয়েছিল?

মৃত্যুর পর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কবর ভেঙে ফেলা আরাফাতের মতো সেই লোক গুলোই এখন বলতেছে, যে লাশ নিয়ে উপহাস করা ঠিক না।

সাঈদী সাহেবের মিথ্যা মামলায় ফাঁসির রায়ের দিন এরা এভাবেই মিষ্টি মুখ করেছিল। অপরদিকে ঐ দিন সারাদেশে প্রতিবাদ মিছিলে ১৭৭ জন মানুষ (হাসিনার সরাসরি নির্দেশে) পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন। সেদিন কোন গর্তে লুকিয়ে ছিলি রে আরাফাত? জাফর মাষ্টার আর তোরা তো পারিসই গর্তে লুকিয়ে থাকতে আর মিথ্যার প্রসার ঘটাতে।

আরাফাত এই শাহেদ আফ্রিদির অসুস্থতায় দোয়া করার বিরুদ্ধেও কথা বলেছে। একজন প্রগতিশীল দাবিদার কিভাবে এটি করতে পারে- আরাফাত উত্তর খুঁজে পাবে?
আরি ব্যাটা, এই শাহেদ আফ্রিদি সেদিন ২০ হাজার ডলার দিয়ে বাংলাদেশী এক ক্রিকেটারের ব্যাট কিনে নিয়েছেন- যেন বাংলাদেশের মানুষ করোনায় একটু হলেও সহযোগীতা পায়। তুই (আরাফাত) নিজে বাংলাদেশের মানুষের জন্য কি করেছিস? তোর ভাওড়ারা (জাফর ইকবাল, আনিসুজ্জামান, মুনতাসির মানুন, আনোয়ার হোসেন) কয় টাকা দিয়েছে বাংলাদেশের মানুষের জন্য?

জানি তোর কোন উত্তর নেই।আর এজন্যই আমরা শাহেদ আফ্রিদির জন্য দোয়া করি- কারণ সে দোয়া ডিজার্ভ করে।

আর আমরা নষ্ট-আওয়ামীদের মৃত্যুতে উল্লাস করি কারণ শুধুমাত্র এটা না যে আমরা তোদের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চাই যে- তোরা যে অন্যায়গুলে গত ১০ বছর যাবৎ করে যাচ্ছিস সেটা ‘চরম নষ্টামী, চরম অন্যায়, চরণ নৈরাজ্যকর’। বরং তোদের তো আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে না দিলে স্বীকার করবি না।

আমরা কিন্তু আদতে মৃত মানুষকে নিয়ে ট্রল করছি না- ওরা তো মরেই গেছে; আসলে আমরা ট্রল করছি এই ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে আর হাসিনার মোসাহেবদের যারা ট্রল এর স্রষ্টা, যারা উল্লাসের স্রষ্টা, যারা মৃত্যু কামনার পথ দেখিয়েছে।

তোরা যে কতটা তুচ্ছ; স্রেফ বন্দুকের বাহাদুরীতে ১৭ কোটি মানুষকে দাবিয়ে রেখেছিস, তাদের কথা বলতে দিচ্ছিস না; তাদের ভোটাধিকার হরণ করেছিস, কথায় কথায় গুলি করে পাখির মতো হত্যা করিস তোরা। তোরা খুনী, তোদের বেঁচে থাকারই তো কোন অধিকার নেই। তোদের মৃত্যুতে কেন উল্লাস করবো না?

আমরা ট্রল করে তোদের বুঝিয়ে দিতে চাই, তোদের মনে করিয়ে দিতে চাই- তোরা চিরদিন থাকবি না। তোদেরও মরতে হবে এবং তোদের মৃত্যুর পর দেশের ১৭ কোটি মানুষ হাসি-তামাসা করবে মিষ্টি খাবে; ঠিক যেমনটা করতে বাধ্য হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট এক শুভদিনে।

আমরা তো আওয়ামী লীগের মৃত্যুতে উল্লাস করি- যারা বাংলাদেশে খুনের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছে। আওয়ামী লীগ মানেই খুনী। একটা সাপ যখন মানুষ হত্যা করে তখন কি সেই সাপটিকে হত্যা করতে পারলে আমরা আনন্দ করি না? সো, আওয়ামী লীগ মরলে কেন আনন্দ করবো না? আওয়ামী লীগ যদি মানুষ হতো- তাহলে আমরা অবশ্যই তাদের মৃত্যুতে আনন্দ করতাম না।

শেষ কথা, আবারও একটি শুভদিন বাংলাদেশে অত্যাসন্ন।আমরা আরও ট্রল করবো, আরও মিষ্টি খাবো; তোদের মৃত্যুতে আনন্দিত হবো।

তারপর তোদের বিদায়ের পর একটি সুন্দর বাংলাদেশ আমরাই নির্মাণ করবো- যেখানে মৃত মানুষকে নিয়ে আর কেউ হাসি-তামাসা করবে না। কারণ তখন আর ‘জিপিএ-পাইপ’ সৃষ্টির পথ বন্ধ করে দেয়া হবে।

তোরা আমাদের শিখিয়েছিল মৃত্যু নিয়ে ট্রল করা, আমি তাই করছি। আর আমরা যখন দেশ নির্মাণের দায়িত্ব নিবো- তখন আমরা শেখাবো মানুষকে, একজন অপরজনকে শ্রদ্ধা করতে। জীবতকেও যেমন শ্রদ্ধা করবো, মৃতকেও- সে যে-ই হোক। আমরা যা মানুষকে শিখাবো মানুষও আমাদের সংগে ঠিক তাই-ই করবে। বুঝলিরে কিছু- আরাফাত?

একটি সুসভ্য বাংলাদেশ আমরা রেখে যাবো ঠিক তোদের বিপরীত।

   Send article as PDF