জ্বলে উঠুন

তখন তো গ্রামেই থাকি- কলেজের প্রথম দিনগুলোর দিকের কথা।
আমার বড় আপা বাড়ীতে আসলেন দিন কয়েক থাকবেন।
 
তার বড় মেয়েটার জন্ম দিন পরে গেল।
কেক নিয়ে আসা হলো। কাটা হলো। খানা-পিনাও হলো।
সপ্তাহ খানেক পর তারা ঢাকা ব্যাক করবে।
 
আমাদের পাশের বাড়ীতে আমার একজন চাচাতো ভাইয়ের ফ্যামেলী থাকতো- ওরা আরেকটু সাদা-মাটা জীবন-যাপন করতো। বড় মেয়েটার বয়স আট কি দশ হবে। আমার কাছে এসে বলল, ‘কাকা, ওরা আবার কবে বাড়ীতে আসবে? কি মজা করলাম একয়দিন!’
 
আমি বললেম, ‘ঠিক নাই- যখন সময় পাবে তখনই আসবে হয়তো’।
মেয়েটা মন খারাপ করলো, বলল, ‘ওরা যখন আসবে তখন কি আবারও জন্মদিন করবে?’
আমি হেসে দিলাম, ‘কেন? যখন জন্মদিন হবে তখনই তো পালন করবে- কেন তোর জন্মদিন পালন করতে চাস- ঠিক আছে তোর জন্ম তারিখটা তোর আম্মুর কাছ থেকে জেনে নিয়ে তোরও জন্মদিন করার ব্যবস্থা করবো’।
 
ও কিছুটা বিব্রত হয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বলল, ‘আমার জন্মদিনও করা যায়?’
আমি হেসে দিয়ে বললাম, ‘হ্যাঁ অবশ্যই করা যায়- যে কারো জন্মদিনই পালন করা যায়’।
 
আমি ওর চোখে তৎক্ষনাত ঝিলিক দিয়ে যাওয়া দ্যুতিটা দেখতে পেয়েছিলাম।
 
২০০২ সালের দিকে।
গেল বছরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে।
 
আর আমিও গেল বছরই নবাবগঞ্জের ব্যবসা বিক্রি করে দিয়ে ঢাকায় চলে আসলাম।
আমার অত্যন্ত লাভজনক ঐ ব্যবসাটি বন্ধ করে ঢাকায় চলে আসাটা পরিচিতজনরা আমার বোকামী হিসাবেই গণ্য করেতো।
 
কিন্তু আমি তো জানতাম যে আমি কি চাই।
 
ঢাকা এসে সারাদিন অনলাইনে বসে থাকি। টিএন্ডটি টেলিফোনের সাহায্যে ‘গণফোন’ এর আনলিমিটেড ইন্টারনেট তখন মান্থলি ৭ হাজার বা ৫ হাজার টাকা।
 
বিএনপি পুরোনো টু-ষ্ট্রোক বেবী টেক্সি বন্ধ করে সিএনজি ফোর ষ্ট্রোক অটোরিক্সার চালানোর অর্ডার দিয়েছে সংগে ট্যাক্সি ক্যাবও আসবে, আসা শুরুও হয়ে গেছে।
 
পরিচিত এক ব্যবসায়ী আমাকে অনুরোধ করলো তাকে ৮০০ সিটির ভালো কোন ট্যাক্সি আমদানী করে দেবার জন্য।
 
আমিও মজা পেলাম- এবং খুঁজেও বের করে ফেললাম দাইয়ূ এর ইন্ডিয়ান মেটিজ কারটি। অসাধারণ সুন্দর দাম মাত্র ৩০০০ ডলার।
 
যাই হোক- মূল ক্রেতার সংগেও পরিচয় হলো।
 
মুল ক্রেতা আওয়ামী লীগের একজন পরাজিত সংসদ সদস্য প্রার্থী’র (বর্তমানে তিন অবশ্য এমপি) ভাগিনা। বয়স অল্প বিলো টুয়েন্টি ফাইভ।
 
যাই হোক- ভাগ্য খারাপ ছিল- ভারতে দাইয়ূ কোম্পানী ব্যাংক-ক্রাপ্ট হয়ে যাওয়াতে রেডী হওয়া ৩১২ পিস গাড়ী আর আমদানী করা হয়নি শেষ পর্যন্ত।
 
তো, সেই ভাগিনা ও তার মামা’র সংগে আমার একটা চমৎকার সম্পর্ক সৃষ্টি হলো (যে সম্পর্কটা এখনও রয়েছে)।
 
সেই ভাগিনা আমাকে একদিন বলল, ‘আচ্ছা ভাই- গাড়ী কিভাবে আমদানী করে? আমাকে একটু বলবেন?’
 
আমি তাকে কোম্পানী করা, প্রডাক্ট খুঁজে বের করা, ব্যাংক সাপোর্ট, কো-লিটারল, ডকুমেন্টস, এলসি ইত্যাদী সম্পর্কে মোটামুটি একটু আইডিয়া দিলাম।
 
বেচারা- আমার চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, ‘আচ্ছা ভাই, আমিও কি যদি চাই তাহলে এসব করতে পারবো?’
 
আমি ঝটপট তাকে উত্তর দিয়েছিলাম, ‘কেন নয়? যে-কেউই চাইলেই করতে পারবে।’
 
আমি তাৎক্ষনাত তার চোখেও একটা ঝিলিক দেয়া দ্যূতির উপস্থিতি এবং সংগে মুখে চমৎকার একটা হাসির রেখা দেখতে পেয়েছিলাম।
 
সে এখন, আজ ঢাকা শহরের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
 
আমার সেই ভাতিজিও এখন ঢাকায় থাকে- এবং নিশ্চিত জানি যে সে তাদের ছেলে-মেয়েদেরও প্রতিবছরই জন্মদিন করে।
 
যাই হোক, আমাকে প্রায়ই অনেক ইনবক্সে এসে প্রশ্ন করে ‘ভাই আপনি কোন দলকে সাপর্ট করেন?’
এই ‘ক্ষুদ ও ষ্টুপিড’ প্রশ্নে আমি বিরক্ত হই এবং ম্যাক্সিমাম সময়ে কোন উত্তর দিই না।
 
বাংলাদেশের মানুষদের ধারণা- আপনাকে যে-কোন একটা দলের সমর্থক হয়েই রাজনীতি করতে হবে।
 
কিন্তু আমি সকলকে বলতে চাই- ‘না। কথাটা অত্যন্ত ভুল। আপনি প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জণ করুন। নির্দিষ্ট ভিশন সামনে নিয়ে আসুন। আপনি নিজেই একজন রাজনৈতিক নেতা- আপনাকে কারো রাজনীতিকে সমর্থন করে রাজনীতি করতে হবে না। তোষামদ-মোসাহেব বা চামচা তো সকলেই হয়- নেতা হয় কজন? আপনিও চাইলেই শেরে বাংলার মতো, শেখ মুজিবের মতো, জিয়াউর রহমানের মতো অথবা তাদের চেয়েও অনেক অনেক বড় একজন নেতা হতে পারবেন’।
 
আমি বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের চোখের ঝিলিক দেয়া দ্যূতি দেখার অপেক্ষায় থাকি।
 
১৭ কোটি মানুষ যদি একযোগে একটিভ ও সচল হয়ে উঠে- বাংলাদেশ কোথায় উঠে যাবে- ভাবতে পারেন? কে আটকিয়ে রাখতে পারবে তখন?
 
হ্যা, আপনাকেই বলছি- ‘আপনি সবকিছু করারই যোগ্য’।
   Send article as PDF