ঠান্ডার অভিজ্ঞতা!

নিউ ইয়র্কে এখন তাপমাত্র অনুভুত হচ্ছে -২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস (-১১ ডিগ্রি ফারেনহাইট); যদিও প্রকৃত তাপমাত্র চলছে -১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস (+৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট); সংগে ভয়াবহ ঠান্ডা বাতাসের গতিবেগ বইছে।
 
গতকাল স্নো পড়েছে তবে খুব বেশী যে তা নয়।
আমি শীত সহ্য করতে পারি ভালই- এটা অমার কাছের মানুষরা মোটামুটি সবাই জানে। তবে এই শীতের বর্ণনা দেয়া যেতে পারে এভাবে যে- মনে হয় শরীরে কেউ যেন প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাসের সাথে বরফ গলা জল ঢেলে দিচ্ছে শত্রুতা করে।
 
ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।
১৯৯৬ সাল। জীবনে প্রথমবার সিদ্ধান্ত নিলাম বিদেশ যাব। বিদেশ মানে ভারত। মনের ভেতর চিন্তা দার্জিলিং এবং কাঠমান্ডু যাব। শীতের ভয়াবহতা কেমন হতে পারে সেসম্পর্কে তখনও কোন ধারণা ছিল না।
 
মে মাস, ঢাকায় তখন প্রচন্ড গরম। মে-জুন মাসে বাংলাদেশের গরম সম্পর্কে বলার প্রয়োজন নেই, সবাই জানেন। ঢাকা থেকে বাই রোডে গেলাম কলকাতা। প্রথম বিদেশ। সেখানে ঢাকার চেয়েও গরম। এক দুই দিন ঘুরলাম। ওখান থেকে যাব দার্জিলিং। আমার একটা বৈশিষ্ট্য হলো আমি কোন গাইড নিই না বাইরে বেড়াতে গেলে- নিজে নিজে খুঁজে নিই সবকিছু যা যা প্রয়োজন। এতে অনেক মজা, অনেক আনন্দ। একটু ধারণা পেয়েছিলাম যে দার্জিলিং শীতের শহর। তখনতো আর মোবাইল বা ইন্টারনেট ছিল না।
 
গরম কোলকাতা থেকে নন এসি বাসে করে বিকেল ৪টায় রওয়ানা দিয়ে পরেরদিন সকাল ১০টা নাগাদ শিলিগুড়ি গিয়ে পৌছলাম। ওখানে দেরী করব না ভেবেই রেখেচিলাম। প্রচন্ড গরমে এবং নন এসি বাসের খোলা জানালায় প্রচুর ধুঁলাবালিতে আমার অবস্থা সত্যিই খুব খারাপ।
 
জীপে উঠে জানতে পারলাম দার্জিলিং পৌছতে সাড়ে চার ঘন্টা লাগবে। জীপ চলতে শুরু করলো- মনে হলো আকাশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিছি। জীপ শুধু দুর উঁচু পাহাড়ের উপরে উঠেই চলছে। বেশ অনুভব করছিলাম।
ঘন্টা দু’য়েক চলার পর বুঝলাম একটু একটু শীত লাগছে। এতক্ষনে লক্ষ্য করলাম জীপের অন্য প্যাসেঞ্জাররা সকলেরই প্রয়োজন মতো শীতের জামা কাপড়ে আবৃত। আমি নিজেকে বোকা ভাবতে লাগলাম।
 
আরও কিছুক্ষন পর শীত কি জিনিস বুঝতে শুরু করলাম। আরও বুঝতে পারলাম আমার ঠোট ফেটে শক্ত ও কালো হয়ে আছে।
 
যা ই হোক দার্জিলিং পৌছলাম।
কঠিন শীত। আমি ক্লান্ত। হোটেলে উঠলাম। বিভৎস মনে হলে নিজেকে নিজের কাছে- দ্রুত গোসল করে ফ্রেস হতে হবে।
 
হোটেল রুমে ঢুকেই আগে বাথরুমে গেলাম। কোন কিছু না ভেবে- এক মগ পানি চট করে মাথায় ঢেলে দিয়ে আরেক মগ পানি ভরতে গেলাম- ততক্ষনে লক্ষ করলাম ‘আরে আমি তো ফ্রিজড হয়ে আছি’। ঐ দিনের সেই ঠান্ডার অভিজ্ঞতা আমি কোনদিন ভুলতে পারবো না- ভুলা সম্ভব নয।
 
সে যা-ই হোক। এরপরও ঠান্ডার অভিজ্ঞতা আমার আরোও হয়েছে। কাঠমান্ডু, দিল্লী, লক্ষ্ণৌ, গ্যাংটক, কুনমিং, সাংহাই, বেইজিং এর ঠান্ডা সহ্য করার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে পরবর্তীতে।
 
একবার তো শুধু বরফ পরা (স্নো) দেখতেই ডিসেম্বরের শেষে গেলাম গ্যাংটক- সে এক দারুণ অভিজ্ঞতা।
 
যাক সেসব কথা। আমার ছোট বেলায় ফারেনহাইট, মাইল, সের ইত্যাদির এককের ব্যবহার থেকে সেলসিয়াস, কিলোমিটার, কিলোগ্রামে পরিবর্তিত হই এবং পুরোপুরি অভস্থ্যই হয়ে গিয়েছি। ইন্টারনেট আর বই পরে জানতাম আমেকিায় ফারেনহাইট, মাইলের প্রচলনই রয়েছে।
 
মাইলের হিসাবে খুব একটা সমস্যা না হলেও- ফারেনহাইট হিসাবটা এখনও শতভাগ ঠিকঠাক অভ্যস্থ হয়ে উঠিনি। ফারেনহাইট হিসাবে আমেরিকানদের মতো অভ্যস্থ হতে, সুযোগ থাকা সত্বেও- আমি আমার মোবাইল এ্যাপসে ফাইনহাইট ই সিলেক্ট করে রাখি। গত সপ্তাহেই জেনেছি আজ বুধবার তাপমাত্রা -১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌছবে। প্রাথমিক প্রস্তুতি ছিল শীত থেকে নিজেকে প্রতিরক্ষার।
 
নিউ ইয়র্কে, সত্যি বলতে- আমাকে সর্বমোট ১৮ থেকে ২০ মিনিটের মতো শীতকে মোকাবেলা করতে হয় দিনে। এছাড়া বাসা, অফিস আর সাবওয়েতে থাকা-কালীন শীত বোঝার কোন উপায় নেই এখানে। কষ্ট হবার পরিবর্তে স্নোকে সকলে এনজয় করে এখানকার পরিশ্রমি মানুষরা।
 
ছোট বেলায় গ্রামে সন্ধ্যার পর কাঠ জোগাড় করে- গ্রামের ছেলেরা মিলে আগুন জেলে উত্তাপ নেয়া আর খুব সকালে টাটকা রস- সত্যিই আমি নষ্টালজিক হয়ে পরি এখনও মাঝে মাঝে!
   Send article as PDF