লাইক । লভ । হাহা । ওয়াও

বিটুইন ফরটি ফাষ্ট ষ্টিট এন্ড সেভেনথ এভিনিউ-এ আমার অফিসটি ৩য় তলায়।
লিফট থেকে নেমে লবি দিয়ে রিভলবিং গেট পেরুলেই পৃথিবী বিখ্যাত ফরটি সেকেন্ড টাইমস স্কোয়ার।
 
টাইমস স্কোয়ারের মূল আকর্ষণ বিশাল বিশাল এলইডি বিলবোর্ড।
সেই বিজ্ঞাপন বোর্ডের আলো রাতকে দিনে পরিণত করে।
 
সূর্য্যের উপস্থিতির কোন প্রয়োজনই হয়না টাইমস স্কোয়ারে।
এতটাই আলো।
 
আপনি রাত দু’টার সময়ও যদি যান- সাবওয়ে থেকে বের হবার পর বুঝতেই পারবেন না এটা দিন না রাত- শুধুমাত্র উপরে আকাশ পানে যদি দৃষ্টি না দেন!
 
২৪-ঘন্টা ধরেই প্রানবন্ত! জীবন্ত।
 
একদল অতি দুষ্ট মেয়ে এই ভয়াবহ শীতেও উদম শরীরে ছবি তুলে দু’পয়সা আয়ের নেশায় মাতে। স্রেফ ৫ ডলার দিয়ে আকিয়ে ফেলতে পারেন আপনারও একটা স্কেচ- যাষ্ট কয়েক মিনিতেই।
 
সারা পৃথিবী থেকে শতশত পর্যটক আরও বেশী আনন্দময় করে রেখেছে টাইমস স্কোয়ারকে।
 
আগেই বলেছি, টাইমস স্কোয়ার এই বিশ্বের একমাত্র জায়গা যেখানে আসলে ৮০ বছরের বৃদ্ধও পরিণত হয় ২০ বছরের টগবগে যুবকে।
 
সে যাকগে! আমি তো আর ৮০ নই; যাষ্ট অর্ধেক!
 
তো, এই বিশাল বিশাল বিজ্ঞাপন বোর্ডের একটাতে ‘ফেসবুক’ এর একটা বিজ্ঞাপন ঘুরে ফিরে প্রচার হয়।
 
আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি ঐ বিজ্ঞাপটিতেই।
শুধুমাত্র ওদের একটা বিষয়ের জন্য। স্রেফ একটাই বিষয়, আমাকে মুগ্ধ করে।
 
বিজ্ঞাপনটার বক্তব্য- ‘টাইমস স্কোয়ার থেকে তোমাকে লাইভ প্রচার করো’।
ব্যস এটুকুই।
 
এটা মুগ্ধ করার কিছু না।
কিন্তু সেই কিছুটা হলো- ফেসবুকের বিখ্যাত ইমো’গুলি।
লাইক । লভ । হাহা । ওয়াও
 
হ্যাঁ। স্যাড ও এংগ্রি মিসিং।
স্যাড এবং এংগ্রি মিসিংটাই আমাকে মুগ্ধ করে।
 
কেন আপনি দুঃখ পাবেন?
কেন আপনি এংগ্রি হবেন?
 
আপনি লাইক করুন।
আপনি ভালবাসুন।
আপনি হাসুন।
আপনি অভিভূত হোন।
 
কষ্ট নিবেন কেন?
ফেসবুক কষ্ট দেবার জন্য নয়।
টাইমস স্কোয়ার কষ্টের স্থান নয়।
 
আমি মুগ্ধ।
আমি সত্যিই মুগ্ধ।
আমি আরও বেশী জীবন্ত হয়ে উঠি।
 
এই বিজ্ঞাপনটি শুধুমাত্র এখন টাইমস স্কোয়ারেই নয়; নিউ ইয়র্ক সাবওয়েতে ফেসবুকের আরও কিছু বিজ্ঞাপনও দেখা যায় যেখান থেকেও স্যাড ও এংগ্রি ভ্যানিস!
 
এবার চলুন একটু ব্যাংকক যাই।
সুকুমভিতের কাছে চায়না টাওন। সেই চায়না টাওনের একটা অভিজাত আবাসিক এলাকা।
পাশাপাশি দু’টো বাড়ী।
 
সেই দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক যথেষ্ঠ ভালো নয়। অনেকটা শত্রু পক্ষ।
ওদের একটি পরিবার একটা ‘সাদা বিড়াল’ পালন করে। খুব যত্নআত্তি করে সেই হোয়াইট ক্যাটকে। কিন্তু দুষ্টু বিড়ালটি প্রায়ই পাশের শত্রু বাড়ীতে ঢুকে পরে।
 
ওবাড়ীর লোকজন বিরক্ত।
মহা বিরক্ত।
একদিন দুদিন তিনদিন!
আর কত সহ্য হয় বলুন?
 
তারা ঐ বাড়ীতে বেশ কয়েকবার অভিযোগ পাঠিয়েছে- কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি। হোয়াইট ক্যাট প্রায়ই এবাড়ীতে ঢুকে পরে।
 
অবশেষে একদিন।
এরা ভয়াবহ বিরক্ত হয়ে উঠলো।
উৎ পেতে রইলো।
 
যেই ‘হোয়াইট ক্যাট’ এই বাড়ীতে ঢুকেছে ওমনি একজন বিড়ালটিকে ধরে ফেলল।
এরপর কিছু কেরোসিন তেল ঢেলে দিল বিড়ালটির পেছনটাতে।
এবং ম্যাচলাইট জেলে সেই বিড়ালের পাছায় লাগিয়ে দিল আগুন।
 
‘অপ্রাণিবেতর’ অবস্থা!
যাই হোক বিড়াল আহত হলো।
পেট হসপিটালে ভর্তি হয়ে এ যাত্রা রক্ষে পেল।
 
কিন্তু বিড়ালের মালিক পক্ষ ছাড়বার পাত্র নয়।
তারা মামলা ঠুকে দিল থাই আদালতে।
 
সাক্ষ্য। প্রমাণ। উকিল। সব হলো।
অবশেষে আদালতের রায় এল- ‘মামলা ডিসমিস’।
কারণ, থাই আইনে- ‘বিড়ালের পাছায় আগুন লাগিয়ে দিলে কি শাস্তি হবে- সেটার কোনই দিক নির্দেশনা নেই!’
 
অতএব, এ মামলা চলতে পারে না।
 
এবার চলুন সান ফ্রান্সসিকো।
ফেসবুক হেড কোয়াটার।
আমি বসে রয়েছি ওয়েটিং রুমে।
মার্ক জাকারবার্গ আমাকে ঢেকে পাঠিয়েছেন। সকালের ফ্লাইটেই আমি উপস্থিত।
 
বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ বিলয়নিয়ার বলে কথা!
 
জাকারবার্গের অতি সুন্দরী পিএস আমাকে ডেকে পাঠালেন। ওর নাম এলেক্সসিস।
 
স্মার্ট গাই জাকারবার্গ।
একটা ফেসবুক লেখা টিশার্ট করে সোফায় বসা। হাতে এপল ম্যাকবুক।
 
আমাকে দেখেই মুগ্ধ দৃষ্টিতে ‘হাই তাওফিকুল! হাও আর ইও ডুয়িং টুডে?’
আমি কথা হারিয়ে ফেললাম। স্বপ্ন মনে হচ্ছিল, মাইরী! কি বলবো ভুলেই গেলাম! শুধু মাথা ঝাকালাম।
 
জাকারবার্গ আর আমি মুষ্টিবদ্ধ হাতে ‘ফিষ্ট-বাম্প’ করলাম।
জাকারবার্গের হাতটা বেশ নরম। আমার ঘুষিতে একটু ব্যথা পেলো মনে হলো!
 
যাই হোক। জাকারবার্গ খুব ব্যস্ত মানুষ।
নিজেই কথা শুরু করলেন জাকারবার্গ, ‘গত দু’দিনে তোমাদের বাংলাদেশ থেকে প্রায় কয়েক’শ হাজার কালো বিড়াল আপলোড হয়েছে। এবং প্রায় ত্রিশ মিলিয়ন ‘ব্লাক ক্যাট ইমো’ প্রদর্শিত হয়েছে! বিষয়টা আমাকে বেশ ভাবিত করেছে! তাই তোমাকে সুদুর নিউ ইয়র্ক থেকে জরুরী তলব। যদিও বিমানভাড়া এবং ফুড-একোমোডেশনসহ ২দিন ফেসবুক এড়িয়া ভিজিটএর ফ্রি ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সেটা বড় কথা না। বিষয়টা নিয়ে আমি খুবই চিন্তিত।’
 
আমি স্বভাবসুলভ হেসে দিয়ে তার চিন্তা লাঘব করার জন্য বললাম, ‘ওহ এই কথা! আমাদের একজন ব্লাক ক্যাট গত ভোড়ে পটল তুলেছে- সেজন্য একটু ‘ফেসবুক-জাগরণ’ সৃষ্টি হয়েছিল আরকি! এটা তেমন কিছু না। বাঙালী হুজুকে মাতাল- দু’দিনেই নতুন ইস্যু চলে আসবে- তোমার কালো বিড়ালে আর টান পরবে না।’
 
কিন্তু বুদ্ধিমান জাকারবার্গের চিন্তায় কোন ঘাটতি হলো বলে মনে হলো না।
একটু কি চিন্তা করে আবার আমায় বলল, ‘শোন, আমি কিন্তু বুদ্ধিমান। আমি জাকারবার্গ। আমি ভবিষ্যত দেখতে পাই। আমি বিশ্বাস করছি- এই ব্লাক ক্যাট দু’দিনে হারিয়ে যাবে না। এর পেছনে বিশাল কোন ‘ইংগিত’ মিলছে।’
 
আমি কি উত্তর দিবো- ভাবছি; ঠিক তখনই সে আবার বলে উঠলো, ‘আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেটা হলো বাংলাদেশীদের জন্য আমি একটি ‘ব্লাক ক্যাট’ ইমো এড করবো। এতে তোমাদের দেশে আর কাউকে বাড়তি কষ্ট করে ব্লাক ক্যাট বা ইমো ক্যাট নিয়ে সময় নষ্ট করতে হবে না। আমি- এমনিতেই নিম্ন আয়ের দেশ হলেও ওখান থেকে প্রচুর রেভিনিও আর্ন করছি। আমার তো একটা নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে! বলো তুমি?’
 
‘বাংলাদেশীদের সুবিধার্থে তুমি ব্লাক ক্যাট ইমো এড করতে চাও? তারচে টাইগার ইমো দিলেও তো আমাদের সকলে চিনতে পারতো! তুমি বরং ‘টাইগার ইমো’ এড করে।’
 
‘আরে ধুর! আমি কি তোমার মতো ষ্টুপিড নাকি?’
‘আমি বোকা?’ জাকারবার্গের কথায় বিরক্ত হলাম।
 
মনে মনে বললাম, ‘আরে ব্যাটা তুই নিজেই একটা ষ্টুপিড। চান্সে ফেসবুক বানাইয়া ফেলসস এখন পয়সার গরমে মানুষকে মানুষ ভাবিস না! ব্যাটা রামছাগল কোথাকার! আরে জাকাইরা, আমাদের বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয় আরেকটু হলেই তো গুগল বানাইয়া ফেলছিলো। ইউটিএ থেকে বরখাস্ত না হলে ও নিজেই ফেসবুক বানিয়ে ফেলতো। তুই তো এতদিন সাবওয়ে ট্রেনে ম্যাজিক দেখাইয়া বেড়াইতি- কাজের অভাবে! আর, আমার সাথে এখন ভাব লস?’
 
যাই হোক, জাকারবার্গ আমার মনোভাব বুঝতে পারেননি।
 
তিনি বলতে থাকলেন, ‘শোনো। টাইগারের বিষয়টা আমিও ভেবেছিলাম। কিন্তু পরে দেখলাম, দু’চার বছরের মধ্যেই তোমাদের সুন্দরবনের সব টাইগার এমনিতেই রামপালের ছাইয়ে ঢেকে কালো বিড়ালে-ই পরিণত হবে। তাই ভাবলাম, তোমরা হয়তো সেজন্যই সকলে মিলে ‘ব্লাক ক্যাট’ আপলোড দিচ্ছ। আমি তো তোমাদের বাংলা ভাষা পড়তে পারি না। তাছাড়া গুগল কিসব উল্টা-পাল্টা অনুবাদ দেখায় কিছুই বুঝি না; সেজন্যই তোমাকে ডাকছি।’
 
আমি বললাম, ‘ও। আচ্ছা!’
মার্ক জাকারবার্গ বলে চলছে, ‘সে যাই হোক। আমি ভবিষ্যত ভালোই বুঝি। তোমার সঙগে কথা বলে কোন লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না। শুধু শুধু তোমার পেছনে টাকাগুলিই আমার গচ্চা গেল। এরচে সজীব ওয়াজেদ জয় না কি বল্লে- ওকে ডাকলেই ভালো করতাম। এনিওয়ে, আমি শিগগিরই ‘ব্লাক ক্যাট ইমো’ আপলোড দিচ্ছি- তোমাদের বাংলাদেশীদের জন্য। তুমি এবার বিদেয় হও!’
 
তখনই ঘুম ভেংগে গেল!
ধ্যাৎ তারি! কিছু খেতেও পারলাম না!
 
এলেক্সসিসকেও আর দেখা হলো না!
স্বপ্নগুলি এতো দুষ্ট হয় কেন গো?
   Send article as PDF