সিদ্ধান্ত

ইদানিং খুব ইচ্ছে হচ্ছে বাংলাদেশের কোন একটা গ্রামে গিয়ে কিছু দিন থাকি।
 
তাজ মাছ আর সবজী খাবার লোভ তো রয়েছেই কিন্তু তারচেও বেশী দেখার আগ্রহ বাচ্চারা এখন কি কি দেশীয় খেলা-ধুলা পছন্দ করে তা দেখা।
 
আমার কৈশরে আমরা অনেকগুলি খেলা খেলাম।
তন্মোধ্যে দাঁড়িয়াবাধা, গোল্লাছুট, লাটিম, সাতচাঁড়া ইত্যাদি তো ছিলই এমনকি কোথাও থেকে গাছের শক্ত লতা এনে টারজান হয়ে ঝুলতাম। গোসলের জন্য পানিতে নেমে দীর্ঘ সময় নিয়ে কত যে ‘ছোয়া-ছুয়ি’ খেলেছি তারও ইয়েত্তা নেই।
 
তখনও ক্রিকেট খেলা সেভাবে জনপ্রিয় ছিল না। আমরা খেলতাম ডাংগুলি। অনেকটাই ক্রিকেটিয় স্টাইলের গ্রাম্য খেলা।
 
একটা আমেরিকান স্কুলে পড়ার সুবাদে বাস্কেটবল, ফুটবলের পাশাপাশি আরও একটা খেলা খুবই জনপ্রিয় ছিল আমাদের মধ্যে- সেটা ‘ব্যাডবল’। অনেকটাই ক্রিকেটের মতোই তবে এটাতে চারটি কোনা থাকে- পূর্ণ চক্র দিয়ে পয়েন্ট হয়। খেলাটা আমেরিকায় এখনও বেশ জনপ্রিয়- আমেরিকানরা ক্রিকেট পছন্দ করে না।
 
আমেরিকানরা এই পৃথিবীর সবকিছুই পরিবর্তন করে নিজেদের নিজস্ব স্ট্যাইলে ইউজ করে; ফুটবল খেলাটাকেও তাই এরা সকার নামে ব্যবহার করে কোন পরিবর্তন ছাড়াই। এরা সকার খেলে।
 
সে যাকগে।
তখন জনপ্রিয় খেলা ছিল ফুটবল।
বাংলাদেশ ছিল তখন দুই ভাগে বিভক্ত। মোহামেডান এবং আবাহনী।
 
একদল আবাহনী সমর্থন করতো, অপর দল সমর্থন করতো মোহামেডানকে। দেশের বলতে গেলে প্রতিটি ঘরে ঘরে তখন আবাহনী এবং মোহামেডান এর ফ্লগ উড়তো।
 
ঢাকা ষ্টেডিয়ামে খেলা হতো। মাঠ থাকতো তখন কানায় কানায় পূর্ণ। আবাহনী-মোহামেডান সব দলেই বিদেশ থেকে ৩/৪ জন করে খেলোয়াড় ভাড়া করে নিয়ে আসা হতো। মোহামেডান এর এমেকা, নাসের হেজাজী এদের নাম এখনও মনে রয়েছে।
 
সারা দেশে তখন সে কি উত্তেজনা।
 
খেলার মাঠে সামান্য কোন বিষয় নিয়ে সমর্থক-দর্শকদের মধ্যে লেগে যেতো মারামারি। ভয়ংকর মারামারি। পরিস্কার মনে পরে একবার এমন ভয়াবহ অবস্থা হয়েছিল যে, সরকার বাধ্য হয়ে আবাহনী আর মোহামেডানের ফাইনাল ম্যাচটি বাধ্য হয়ে দর্শক বিহীন অবস্থায় বনানীর ‘এরশাদ আর্মি ষ্টেডিয়াম’ এ অনুষ্ঠিত করায়।
 
একজন আরেকজন কে তখন প্রশ্ন করতো ‘আপনি মোহামেডান না আবাহনী’?
 
বিষয়টা এরকম ছিল যে বাংলাদেশের একজন মানুষের পরিচয় হবে হয় সে ‘আবাহনী’ নতুবা ‘মোহামেডান’।
 
এর বাইরে কোন মানুষের অন্য কোন পরিচয় থাকা চলবেই না!
 
ঠিক বলতে গেলে এখনও অবধি যেভাবে মানুষ অপরকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আপনি ‘বিএনপি’ না আওয়ামী লীগ’?
 
একজন মানুষ, তাকে নির্ধারণ করা হবে সে ‘আওয়ামী লীগ’ না কি ‘বিএনপি’!
 
হ্যাঁ। এটাই আমাদের বাংলাদেশ।
 
আপনি বিএনপি, নইলে আওয়ামী লীগ।
আপনি শেখ মুজিবের আদর্শে অনুপ্রাণিত নতুবা জিয়াউর রহমানের।
 
এর বাইরে আর কিছুই হবার সুযোগ নেই যেন!
 
ওহ হ্যাঁ। ঢাকার মাঠের সেই ফুটবল যুগে ‘আবাহনী-মোহামেডান’ এর বাইরে আরও একটা তৃতীয় দল ছিল ‘ব্রাদার্স ইউনিয়ন’।
 
আর, এখনও সেই ‘আওয়ামী লীগ’ আর ‘বিএনপি’র বাইরেও একটা তৃতীয় দল রয়েছে- জামায়াতে ইসলামী বা জাতীয় পার্টিও।
 
এবার আপনার পরিচয় দিন- আপনি কোন দল?
 
এর বাইরে আপনার কোন স্বাধীন সত্বা নেই- থাকতে পারেও না।
 
শেখ মুজিবর রহমান বা জিয়াউর রহমানের বাইরে আপনি কোন কিছু আর দেখতে পারবেন না- আপনাকে অন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
 
আমি আমার কৈশরে ‘আবাহনী-মোহামেডান’ এর অতি-সমর্থন দেখে বিরক্ত হতাম।
 
আমি যুক্তির মানুষ। যুক্তির বাইরে যাই না। তখনও যেতাম না। মনে মনে মোহামেডানকে সমর্থন করতাম কিন্তু প্রকাশ্যে কাউকেই না। আমি আবাহনী-মোহামেডান হতাম না।
 
আমি যে বছরদু’টোতে ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসে পড়ি ঠিক সেই তার প্রথম বছর ১৯৯০ এর ৬ই ডিসেম্বর এরশাদ সাহেব বিতারিত হন। এবং ঐ সময়টা থেকেই মুলতঃ বাংলাদেশের ফুটবল খেলাটি জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করে।
 
রাজনীতিতে তখন শক্তিশালী অবস্থানে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ।
 
তখন থেকেই যেন প্রকৃতির কোন এক ঈশারায় দেশের মানুষগুলি ‘আবাহনী-মোহামেডান’ যুগকে বিদায় দিয়ে ‘আওয়ামীলীগ-বিএনপি’ যুগে পদার্পণ করে।
 
দেশে শুরু হয় আওয়ামী লীগ বিএনপি যুগ। মানুষ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পরে।
 
আমি হয়তো একটু বেশীই ‘ইচরে পাকা’ ছিলাম তখনও। আমি বেগম খালেদা জিয়া বা শেখ হাসিনার মধ্যে রাষ্ট্রনায়কোচিত কোন যোগ্যতাই দেখতে পেতাম না। আমি তাদের পছন্দ করতাম না, করিনি কোনদিনও। এখনও পছন্দ করি না এবং তাদের পছন্দ করার মতো কোন কারণও খুঁজে পাই না।
 
বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় বসেই শেখ হাসিনার পূর্ণ সমর্থন নিয়ে যখন প্রেসিডেন্ট পদটিকে শুধুই সাংবিধানিক পদ এবং প্রেসিডেন্ট হবার আগেই তাকে ‘নপুংসক’ বানিয়ে নেবার আইনটি তৈরী করলেন আর সেই সংগে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ‘নিজস্বতা’ কেড়ে নিয়ে দলীয় দাসে পরিণত করলেন- তখনই আমি বেশী বুঝতে পেরেছিলাম দেশের ভবিষ্যৎ কি হবে।
 
অত্যন্ত ‘ক্ষুদ্র এবং সংকীর্ণমনা’ এই দুই মহিলা’র কারণে বাংলাদেশটা আজ ধ্বংশের দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত।
 
আর হটকারী মহিলা শেখ হাসিনার অযোগ্যতা এবং লাগামহীন স্বৈরাচারীতার কারণে আজ বাংলাদেশ মানুষ বসবাসের অযোগ্য ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
 
অযোগ্যের হাতে ক্ষমতা পরলে যা হয়- ঠিক তাই হয়েছে আজ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলদার শেখ হাসিনার হাতে ক্ষমতা পরায়।
 
১৯৯৩ সালের দিকে আমি বাংলাদেশের নির্মিত বাংলা সিনেমা বা নাটক দেখা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করি। ওসবে দেখার বা শিখার কিছু নেই। হুমায়ূন আহমেদ এর নাটক বা সিনেমায় নির্মল হাসি পাওয়া যেত তাই হাসতে মন চাইলে তাঁর নাটক বা সিনেমাগুলি দেখতাম। এছাড়া আর কারোটাই সেভাবে দেখা হয়নি।
 
ওসময় বাংলা টিভি নাটক বা সিনেমার পরিচালকরা একটা কথা প্রায়ই বলতে, ‘দর্শক এরকম সিনেমা পছন্দ করে- তাই আমরা দর্শক ধরে রাখতেই এরকম ছবি বানাই’।
 
আমি হাসতাম।
কি সুন্দর যুক্তি! দর্শক পছন্দ করে- তাই তারা বানাচ্ছেন। নইলে আরও ভালো বানাতে পারতেন। কি যোগ্যতা তাদের!
 
বাংলা সিনেমা এবং বাংলা রাজনীতি দু’টো প্যারালালভাবেই যেন সামনে এগিয়ে যাচ্ছে এই বাংলাদেশে।
 
আমি কোন কালেই আবাহনী মোহামেডান হয়ে উঠতে পারিনি, কোন সময়ই আওয়ামী লীগ বিএনপি হতে পারিনি এবং বাংলা সিনেমাও দেখি না।
 
আমি আমার লেখায়- আমি যা বুঝি, তার যুক্তি, ব্যাখ্যা ও বাস্তবতা দিয়ে উপস্থাপন করি। মন গড়া কিছুই লিখি না আর যুক্তির বাইরে কিছুতে আমি বিরক্ত হই।
 
আমি আমার অতি শক্তিশালী পর্যবেক্ষন ক্ষমতা ব্যবহার করি এবং দূরদর্শিতাকে কাজে লাগাই আমার লেখা লেখিতে।
 
আমি সমালোচনা করি, এবং সেই সংগে কি করা উচিৎ তারও দিক নির্দেশনা দিই।
 
সঠিক দিক নির্দেশনাই যদি না দিতে পারি- তাহলে শুধুই সমালোচনা করে কি লাভ? ওরকম সমালোচনা তো আমাদের দেশের মা-বোনেরাও করে!
 
১৯৯০ থেকে আজ ২০১৭।
দীর্ঘ প্রায় ২৭ বছর বা প্রায় তিন যুগ।
 
দেশের মানুষ আজ আওয়ামী লীগ আর বিএনপি কে দেখে দেখে ক্লান্ত। হতাশ। বিরক্ত। বিভ্রান্ত।
 
সাধারণ মানুষ আর এখন আওয়ামী লীগ বিএনপিকে শুধু অপছন্দই করে না- ঘৃণাও করে।
 
মানুষ আওয়ামী লীগের বিপরীতে বিএনপিকে বা বিএনপির বিপরীতে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয় ‘ভালবেসে বা পছন্দ করে নয়’; বিরক্ত হয়ে ‘কম খারাপ’ কে বেছে নেয়- যোগ্য খুঁজে পায় না বলে।
 
ইদানিং অনেককেই বলতে শুনি শেখ হাসিনা ঝানু রাজনীতিবিদ। দুর্দান্ত খেলা খেলেন তিনি। যেহেতু রাজনীতি একটা বড় গেম- সেহেতু যেভাবে পারা যায় সেভাবেই তারা ক্ষমতায় থাকবে- এটাই রাজনীতি!
 
আমি বিরক্ত হই। তাদের মানসিক সুস্থ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করি।
 
শেখ হাসিনা মোটেও কোন ঝানু রাজনীতিবিদ নন। স্রেফ অতি সংকির্ণমনা এক গোঁয়াড় মহিলা।
 
২০০৬ সালে অন্য অনেকের সংগে আমিও বিএনপির উপর বিরক্ত ছিলাম। ২০০৭ এ যখন ফখরুদ্দিনকে সেনাবাহিনী তত্ববধায়কের দায়িত্ব দেয়- তখন শুধু আমিই নই- বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মানুষই খুশী হয়েছিল এবং তখনকার সময়ে ‘মন্দের ভালো’ বা ‘কম খারাপ’ শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে বাধ্য হয়েছিল, আমিও দিয়েছিলাম। কয়েকজনকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করার লক্ষ্যে সহায়তাও করেছি। মনে প্রাণে চাইনি যে বিএনপি আবারও ক্ষমতায় আসুক।
 
ঠিক যেভাবে ২০০১ এর নির্বাচনে ‘কম খারাপ’ হিসাবে বিএনপিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলাম তখনকার ‘বেশী খারাপ’ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে।
 
২০০৯ এ দেশের মানুষ ‘বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ’কেই ভোট দিয়েছে- এজন্য যে ‘তৃতীয়’ কেউ ছিল না; অনেকটা বাধ্য হয়েছে ভোট দিতে।
 
যদি ‘কাউকেই পছন্দ নয়’ জাতীয় কোন অপশন থাকতো- তাহলে আওয়ামী লীগ বিএনপির চেয়েও বেশী ভোট ‘ঐ’ চিহ্নেই পরতো। মানুষ এখন কিছুটা হলেও সচেতন।
 
দেশের মানুষ সত্যি সত্যিই এখন এই ‘তৃতীয় কারো’ জন্যই অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু এই ‘তৃতীয় কেউ’ তো আর আমেরিকা বা অষ্ট্রেলিয়া থেকে আসবে না- এটা কেউ-ই বুঝতে পারছে না।
 
আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বাংলাদেশের সবচে বড় সংগঠন। কারণটাও পরিস্কার। আঞ্চলিক বড় নেতারা সব ‘আওয়ামী লীগ’ বা ‘বিএনপি’। এবং দেশের মানুষ মোটেও সচেতন না।
 
কাজে, কাজেই মানুষ তাদের আঞ্চলিক প্রভাবে প্রভাবিত।
 
কিন্তু দেশের মানুষ যদি আজ সচেতন হতো, দূরদর্শী হতো, এবং বুদ্ধিমান হতো- তাহলে তারা কোন অবস্থাতেই ‘আওয়ামী লীগ’ বা ‘বিএনপি’তে সীমাবদ্ধ থাকতো না।
 
আর দেশের মানুষকে সচেতন, দুরদর্শী বা বুদ্ধিমান হতে বাঁধা দিচ্ছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা।
 
আমার কৈশরে আমি যখন স্কুলে পড়েছি- তখন শেখ মুজিবর রহমানের নাম উচ্চারণ ছিল নিষিদ্ধ। শেখ মুজিবর রহমান যে আসলে কে- আমরা তা বুঝে উঠতে পারতাম না।
আর এখন যারা স্কুলে পড়ছে তাদের জন্য শেখ মুজিবর রহমান মানেই সবকিছু- অন্যসব গৌন। জিয়াউর রহমান অস্তিত্বহীন একজন ব্যক্তিমাত্র।
 
অর্থাৎ বিষয়টা অত্যন্ত পরিস্কার যে, আপনি আওয়ামী লীগ অথবা আপনি বিএনপি। এবং আপনাকে ওভাবেই রেখে দেয়া হচ্ছে বা হবে।
 
সুতরাং আপনি জানেনই না কিভাবে ‘তৃতীয় পক্ষ’কে ক্ষমতায় অানা সম্ভব। অপরদিকে আমরা তৃতীয় পক্ষ হিসাবে বুঝি সামরিক বাহিনীকেও!
 
একটা বড় রকমের গোঁলক ধাঁধাতে আটকে রয়েছে দেশের মানুষ। সেখান থেকে তারা বের হতে পারছে না এবং তাদের বের হতে দেয়াও হচ্ছে না।
 
আজ অযোগ্য, অবৈধ শেখ হাসিনা দেশের পুলিশ বাহিনীকে যেভাবে ব্যবহার করে যাচ্ছে- তাতে কোন সভ্য মানুষের পক্ষেই রাজনীতি করা সম্ভব না বা নতুন কিছুই বলা সম্ভব না- ডাইরেক্ট গুম বা ক্রস ফায়ারে দিয়ে দেয়া হবে।
 
তাহলে উপায়?
আমি আপনাদেরকে সামরিক বাহিনীর উপর ভরষা করে থাকতেও পরামর্শ দিবো না।
 
আমি শুধুই একটা কথাই বলবো- আপনি যে আজও পরাধিন সেটা কি আপনি বুঝেন?
 
আপনি যে গণতন্ত্র পাচ্ছেন না- সেটা বুঝেন?
আপনার যে কোন-ই মানবাধিকার নেই সেটা কি আপনি বুঝতে পারেন?
 
রাষ্ট্র চলছে আপনার পকেটের পয়সায় কিন্তু আপনি রাষ্ট্র থেকে কিছুই পাচ্ছেন না- অথচ সবার আগে রাষ্ট্র থেকে কিছু পাবার অধিকার রয়েছে আপনার। সেই অধিকার কোথায়?
 
আপনি ট্যাক্স দিচ্ছেন, আপনি ভ্যাট দিচ্ছেন- কিন্তু আপনি টাকার অভাবে চিকিৎসা না পেলে আপনাকে রাষ্ট্র কি দিচ্ছে?
 
আপনার কষ্টে উপর্জিত টাকা থেকে আপনি ট্যাক্স দিচ্ছেন কিন্তু আপনার স্ত্রী বা সন্তানের চিকিৎসা আপনি টাকার অভাবে করাতে পারছেন না। কেন?
 
আপনি চাকুরী না পেলে, আপনি ব্যবসায় লস দিলে- রাষ্ট্র কি আপনার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে কোন কালেও?
 
সঠিক ও বাস্তবধর্মী শিক্ষা পাওয়া অাপনার অধিকার। শিক্ষা শেষে চাকুরী পাওয়াও আপনার মৌলিক অধিকার। আর এ অধিকারের জন্যই আপনি ট্যাক্স দিচ্ছেন, ভ্যাট দিচ্ছেন- কিন্তু সেই অধিকারটুকু কি পেয়েছেন?
 
আপনার এসব ‘অধিকারগুলি’র নাম ‘গণতন্ত্র’।
আপনার এসব ন্যায্য অধিকারগুলিই সংক্ষেপে ‘মানবাধিকার’।
 
পাচ বছরে একবার ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নৌকা বা ধানের শীর্ষে সিল মারার নাম ‘গণতন্ত্র’ না। এই অতি সামান্য শিক্ষাটাও আপনি পাননি, আপনি জানেনও না।
 
আপনানকে শিখানো হয়- ট্যাক্স দেয়াটা ‘দেশপ্রেম’। আর বিনিময়ে আপনার দেয়া সেই ‘দেশপ্রেম’কে লুটে পুটে খেয়ে যায় এই বাংলাদেশ রাষ্ট্রব্যবস্থা।
 
অর্থাৎ এই রাষ্ট্রই আজ ডাকাত।
এই রাষ্ট্রই আজ টাউট, বাটপার, চোর, খুনী।
 
আর আপনি শুধুই দেশপ্রেমী!
এরপরও কি আপনি ঘুমিয়ে থাকবেন?
 
একটা সুন্দর পরিচ্ছন্ন স্বাধীন, মানবাধিকারে পূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশ কি আপনিও চাইতে পারবেন না?
 
অযোগ্য, অদক্ষ, খুনী রাষ্ট্রকে আপনি কেন আপনার কষ্টের টাকা দিয়ে পুষবেন?
 
আপনার হাতেই সব ক্ষমতা।
আপনি একজন মানুষ মানেই ১৮ কোটি মানুষ।
আপনাকে আগে সচেতন হতে হবে। আপনাকে এক্ষুনি জাগতে হবে।
 
আর আপনি যেদিন সচেতন হবেন, আপনি যেদিন জাগ্রত হবে- সেদিনই অযোগ্যতার অবসান হবে।
 
কেউ এসে ‘তৃতীয় শক্তি’ হয়ে আপনাকে আপনার অধিকারগুলি বুঝিয়ে দিয়ে যাবে না।
 
সেই অবস্থা বাংলাদেশে নেই- গত অর্ধশত বৎসরে সেই ‘অবস্থা’কে হত্যা করা হয়েছে।
 
‘সিদ্ধান্ত এবং ক্ষমতা’ দু’টোই আপনার হাতে।
 
আপনি কি আওয়ামী লীগ বিএনপি হয়ে থাকবেন- নাকি ‘মানুষ’ হবেন?
 
সেটাও কিন্তু আপনারই সিদ্ধান্ত।

 

 

   Send article as PDF