ক্যালকুলেটরে জায়গা হবে না- কমপিউটার নিয়ে ৮০ দিয়ে গুন করুন

সেই ১৯৯৩ সাল থেকেই সিনেমা হলে গিয়ে বাংলা সিনেমা দেখা ত্যাগ করি- ওসবে শিক্ষনীয় কিছু নেই বলে।
 
মাঝে হুমুয়ূন আহমেদ এর সিনেমাগুলি টিভিতে দেখেছি- ভাল লাগতো।
 
বাংলাদেশী টেলিভিশন চ্যানেলগুলিও কখনওই দেখা হয় না বা ইচ্ছে করেই দেখি না।
 
এখানে আসার পর গত ২ বছরে একান্ত অবসরে বসে ইউটিউব এর কল্যানে হুমায়ূন আহমেদ এর প্রায় সবগুলি টিভি নাটকই দেখেছি।
 
তার মধ্যে অচীন রাগিনী নামের একটা নাটক দেখেছিলাম কিছুদিন আগে।
 
শাওন একটা সেক্রেটারী গোছের জব পায়। নিয়োগকর্তা বিশাল বড়লোক, বিলিওনিয়র। শাওন একটা প্রেমও করে। তো, যেদিন জয়েন করতে যাবে- সেসময় ওর প্রেমিক এসে উপস্থিতি।
 
সবটা শুনে প্রেমিক অভিমত দেয় ‘তোমার ওই চাকুরীতে জয়েন করাটা ঠিক হবে না’।
শাওনের প্রশ্ন, ‘কেন?’
‘ওসব বড়লোক পয়সাওয়ালাদের মতিগতি আমার বেশ ভাল করেই জানা আছে- ওরা তরুনী মেয়ের সংগ লাভের জন্যই বেশী বেতনে জব অফার করে থাকে’। প্রেমিকের উত্তর।
 
শাওন সংগে সংগে জবাবে বলে, ‘তুমি কিভাবে জানো। তোমার তো দিন আনতে পান্তা ফুরোয়, ঠিক মতো তিন বেলা খাবারও জুটে না- বড়লোকের মতিগতি তুমি কিভাবে বুঝবে?’
 
আসলেই তাই।
বাংলাদেশের মানুষের গড় আয় ১০০০ ডলার বছরে। মানে হল গিয়ে মাসে ১০০ ডলারেরও কম। যার আয় ১০০ ডলার সে কিভাবে বিলিয়নিওরওয়ালার কর্মকান্ড বুঝবে?
 
১ ডলার সমান কমবেশী ৮০ টাকা।
১ মিলিয়ন ডলার মানে হলো ৮ কোটি টাকা।
 
১০০০ মিলিয়ন সমান ১ বিলিয়ন।
 
ডোনাল্ড ট্রাম্প্র হাতে রয়েছে ৩.৭ বিলিয়ন ডলার।
ক্যালকুলেটরে এমাউন্টটা ধরবে না। কমপিউটার থাকলে ৮০ গিয়ে গুন করে দেখতে পারেন।
 
আরেকটু সহজ করে দিই ৩.৭ বিলিয়ন ডলার মানে ৩৭০০ মিলিয়ন ডলার। এবার না হয় ৮০ দিয়ে গুন করেন। ও হ্যাঁ। এসব হিসাব তার সকল ব্যাংক লোনের পরে।
 
ডোনাল্ড ট্রাম্প যে বাড়ীটাতে বসবাস করেন সেটা ৬৮ তলা। নিউ ইয়র্কের ম্যানহ্যাটনে অবস্থিত বাড়ীটার নাম ‘ট্রাম্প টাওয়ার’। আমার অফিস থেকে খুব কাছে- ওয়ার্কিং ডিসটেন্স মাত্র ২০ মিনিট। ওয়াল ষ্ট্রিট এ তার আরও একটা টাওয়ার রয়েছে ৮০ তলা। কয়েক মাস আগে ওটার ৬৮ তলায় একটা কাজ ছিল- গিয়েছিলাম। ম্যানহ্যাটনেরই জাতিসংঘ সদর দপ্তরের কাছেই রয়েছে থার্ড এভিনিউতে আরও একটা ট্রাম্প টাওয়ার। এমনকি আমেরিকার বাইরেও অনেক দেশে তার এরকম বিশাল বিশাল টাওয়ার রয়েছে একক মালিকানাধীন।
 
বাংলাদেশের বাড়ীর কাছে মুম্বই শহরেও রয়েছে একটা। এক এক করে এরকম মোট ৩৩ টি ব্যক্তিগত মালিকানাধিন বাট কমার্শিয়াল টাওয়ার রয়েছে তার।
 
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তার ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য সচল রাখতে প্রচুর ট্রাভেল করতে হয়।
আর এজন্য তার য়েছে একটা নিজস্ব জেট বিমান। বিশাল এই জেট বিমানটিকে তুলনা করা হতো আমেকিার প্রেসিডেন্ট এর ‘ইউএস এয়ারফোর্স ওয়ান’ এর সংগে। বিমানটি নাকি এয়ারফোর্স ওয়ান এর চেয়েও বিলাশবহুল!
 
এছাড়া বেশ কিছু হেলিকপ্টারও তার রয়েছে- ছোট খাটো দুরত্বে যাবার জন্য।
নিজস্ব এই ‘ট্রাম্প এয়ারক্রাফট’টি ব্যবহার করে তিনি আমেরিকার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে উড়ে গেছেন তার নির্বাচনী কাজে। আর এই এয়ার ক্রাফটি উড়ার সময় প্রতি ঘন্টায় খরচ হয় বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা।
 
ডোনাল্ড ট্রাম্প’কে কিন্তু এগুলি কেউ এসে দিয়ে যায় নি।
মহান আল্লাহ পাক বলে দেননি ‘কুন’ বা ‘হয়ে যাও’ আর হয়ে গেল।
 
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার মেধা, যোগ্যতা, সাহস, পরিশ্রম, দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা, অধ্যবসায় দিয়ে তিল তিল করে গত ৪০ বছরে এসব অর্জন করেছেন। এর মধ্যে তিন দু’দুবার সর্বস্ব খুইয়েছেনও। এবং আবার ঘুরেও দাড়িয়েছেন।
 
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্ম নিউ ইয়র্কের কুইন্সের জ্যামাইকা এষ্টেট -এ। জ্যামাইকা এষ্টেট বাংলাদেশী অধ্যুষ্যিত জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউ এর সংগেই। ওই এলাকাটায় মূলত সম্পদশালী ইহুদীদের বসবাস। ওখানেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাবার নিজস্ব বিশাল বাড়ীতে তার জন্ম।
 
একজন মানুষকে এতসব সম্পদের মালিক হতে হলে কি পরিমাণ সার্বিক যোগ্যতা থাকতে হয়, সেটা ভাবার মতো মেধাও কয়জন রাখে সেটাও গবেষনার বিষয়।
 
ডোনাল্ড ট্রাম্প মদ খান না।
ডোনাল্ড ট্রাম্প সিগারেট খান না।
 
মেয়ে মানুষে এই লোকটার দুর্বলতা রয়েছে। আমাদের এরশাদের মতোই।
এছাড়া তার উল্লেখ করার মতো আর কোন দুর্বলতা খুঁজে পাওয়া যায় না।
 
আমার পরিচিত একজন ইজিপশিয়ান মুসলিম ভদ্রলোক ম্যানহ্যাটনের যে বাড়ীতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বসবাস করেন সেই বাড়ীতেই তার সিকিউরিটির কাজ করেন। ভদ্রলোক মুসলমান। অসংখ্য মুসলিম ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোম্পানীতে জব করেন। অসংখ্য আনডকুমেন্টেড কর্মচারী রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোম্পানীতে।
 
ঐ ইজিশিয়ান একদিন গল্প করলেন, একদিন গেটে তিনি কর্মরত। ডোনাল্ড ট্রাম্প গেট দিয়ে ভেতের ঢুকছেন। সে তাকে স্যালুট জানালে ট্রাম্প থেমে যান। নাম জানতে চান। এবং কেমন আছে সে- তাও জানতে চান। এবং শেষটায় পকেট থেকে ১০০ ডলারের একটা নোট বের করে হাতে ধরিয়ে দেন।
 
একজন ‘বড় মানুষ’ কখনও ‘ছোট মানুষ’ হয়- আমি এটা বিশ্বাস করি না।
 
আমেরিকানরা স্বপ্নবাদী মানুষ।
আমেরিকানরা সবসময়ই স্বপ্নের মধ্যে থাকে।
নতুন নতুন স্বপ্ন দেখে বেড়ায় এবং তার বাস্তবায়ন ঘটায়।
 
ডোনাল্ড ট্রাম্পও আমেরিকানদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন।
 
আমার অসংখ্য পরিচিত মানুষ রয়েছে নিউ ইয়র্কের ম্যানহ্যাটনে। সবাই ব্যবসায়ী। এদের মুখে যে কথাটা আমাকে প্রায়ই শুনতে হয় তা হলো, প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময়টা ছিল আমেরিকার স্বর্ণযুগ।
 
তখন প্রচুর আয়-রোগজার ছিল তাদের।
কিন্তু জর্জ বুশ ক্ষমতায় এসে দু’টি যুদ্ধে জড়িয়ে পরেন এবং আমেরিকার অর্থনীতির বারোটার বাজিয়ে দেন।
 
আর সেই বারোটা থেকে বারাক ওবামা আমেরিকাকে বের করে আনতে পারেন নি।
 
প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকার সবচে জনপ্রিয়তম প্রেসিডেন্ট।
 
হিলারী ক্লিনটন তার স্ত্রী। পেশায় আইনজীবী- তবে কোনদিন তিনি সেভাবে আইন-ব্যবসা করেছেন তা শোনা যায় না, ওখানে তার কোন সফলতার গল্পও নেই।
 
হিলারী ক্লিনটন ৮ বছর বিল ক্লিনটনের স্ত্রী হিসাবে হোয়াইট হাউজে ফাষ্ট লেডী ছিলেন। যেমন এখন রয়েছেন বিদায়ী ফাষ্ট লেডী মিশেল ওবামা।
 
এরপর হিলারী ক্লিনটন নিউ ইয়র্ক থেকে সিনেটর নির্বাচিত হয়েছিলেন। অতপর তিনি ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার চেষ্টা করেন এবং আফ্রিকান-আমেরিকান বারাক ওবামার কাছে তিনি নির্বাচনের দৌড়ে পরস্থ হন। সেখানে তিনি তেমন কোন যোগ্যতা দেখাতে পারেননি।
 
বরং হিলারী ক্লিনটন বিশাল ঋণগ্রস্থ হয়ে পরেন। যে ঋন শোধ করতে বিল ক্লিনটনকেও পর্যন্ত বেশী পরিশ্রম করতে হয়েছে বহুবছর।
 
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দায়িত্ব নেবার পর হিলারী ক্লিনটনকে তার সেক্রেটারী অব ষ্টেট বা পররাষ্ট্র-সচিব এর দায়িত্ব দেন। ৪ বছর তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন- কিন্তু আহামরী কোন সাফল্য তার ঝুরিতে নেই। বরং বর্তমান বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরী অনেকটাই সফলতা দেখাতে পেরেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে।
 
আমি আরও দু’জন আমেরিকান মহিলার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। একজন ম্যাডলিন অলব্রাইট ও ক্যান্ডেলিৎসা রাইস। দু’জনই সাম্প্রতিক সময়ের মার্কিন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দু’জনের অত্যন্ত সফল মহিলা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। তন্মোধ্যে ক্যান্ডেলিৎসা রাইস অত্যন্ত চমকপ্রদ সাফল্য দেখেয়েছেন বিশ্ববাসীকে।
 
ক্যান্ডেলিৎসা রাইস আফ্রিকান আমেরিকান। অনেকেই তাকে অনুরোধ করেছিলেন প্রেসেডেন্ট পদে নির্বাচন করার জন্য। কিন্তু সরাসরিই বলেছেন ‘আমি অতটা যোগ্য নই’।
 
তুমুল জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্ত্রী পরিচয় ছাড়া হিলারী ক্লিনটন আর এমন কি দক্ষতা দেখাতে পেরেছেন যে আমেরিকানরা তাকে ‘মহান’ কিছু ভেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবেন?
 
আমেরিকানরা আবেগে চলে না।
আবেগে চললে তারা ‘আমেরিকা’ হতে পারতো না।
 
একজন মহিলা নির্বাচন করেছে বলে তাকেই ভোট দিতে হবে?
 
এসব বাংলাদেশ চলে দাদা।
বাংলাদেশ আর তৃতীয় বিশ্বে চলে- যেখানে মানুষ নামের গাধাদের রাজত্ব। যারা স্বপ্ন দেখতেই জানে না। যারা শুধু ভাত খেতে পারে। অলস ঘুমাতে পারে। পরিশ্রম করতে যাদের কস্ট হয়।
 
উত্তরাধিকারীত্ব আর পরিবারতন্ত্র বা রাজতন্ত্র গাধাদের দেশের জন্য উপযোগী।
বাংলাদেশের মানুষ নিজেকে যোগ্য ভাবতে পারে না। অন্ধরা কিভাবে নিজেকে যোগ্য ভাববে?
 
আর তাই, তারা তাদের ভবিষ্যৎ হাসিনা-খালেদা পরিবারের উপর দিয়ে রেখেছে। এবং ওই দেশে বসে আমেরিকার ভবিষ্যৎও আরেক মহিলাকে দিয়ে আমেরিকায় পরিবারতন্ত্র ও মহিলাতন্ত্র কায়েমের দুঃস্বপ্ন দেখে ২০ হাজার কিলোমিটার দূরে বসে!
 
 
 
 
আমেরিকাটা কেমন, কেমন এদেশের ইনফ্রাসট্রাকচার, এদের ক্ষমতা, আচরণ, ব্যবহার এবং এখানকার সভ্যতা- সেটা বাংলাদেশে বসে চিন্তাও করা সম্ভব নয়।
 
যারা তুলনা করার চেষ্টা করে- তারা মানুষের মধ্যেই পরে না!
মানুষ হবার যোগ্যতাই তারা রাখে না।
 
হিলারী ক্লিনটনের নাকি ৩০ বছরের রাজনীতির অভিজ্ঞতা রয়েছে- তাই সে যোগ্য!
 
যুক্তিটা কি?
অভিজ্ঞতাই যোগ্যতা।
 
অভিজ্ঞতা অবশ্যই একটা যোগ্যতা- তবে সেটা চাকুরীর বাজারে।
 
প্রেসিডেন্সীতে বা ব্যবসায় অভিজ্ঞতা’র দরকার নেই- ক্যারিশিমাটিক হতে হয়, ডায়নামিক হতে হয়, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হতে হয়, করিৎকর্মা হতে হয়। সাহসী হতে হয়। শক্তিশালী হতে হয়। প্রত্যুতপন্নমতি হতে হয়।
 
হিলারী এর কোনটা- শুনি?
কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প এর সবগুলিই- তার জীবনী দেখে আসুন।
 
হিলারী ক্লিনটন আর বিল ক্লিনটনের নিজ রাজ্য আরকানসাস-এও সে পরাজিত হয়েছে।
 
হাসিনার বা খালেদার অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশ কেমন চলছে- সেটা এখনও দেখতে পান না?
 
পাবেন কি ভাবে- আপনি যে অন্ধ সেটাতো আপনি নিজেও জানেন না।
 
জন্মগ্রহণ করে প্রাণী হওয়া যায়।
কিন্তু মানুষ হতে হলে ন্যূনতম জ্ঞান থাকতে হয়। বোধ থাকতে হয়।
 
১০০০ ডলার আয়ের মানুষ ৬০,০০০ ডলার আয়ের মানুষদের সম্পর্কে ধারণা করবে কিভাবে সেটাই তো আমি বুঝছি না!
আর ডোনাল্ড ট্রাম্প তো ৬০ হাজার ডলারের মানুষ না; বা হিলারীর মতো মহাঋণগ্রস্থ কোন মানুষও না- তার মূল্য ৩.৭ বিলিয়ন ডলার।
 
ক্যালকুলেটরে জায়গা হবে না- কমপিউটার নিয়ে ৮০ দিয়ে গুন করুন এবার।
   Send article as PDF