অামিষ

ধরুন আপনি কোন একটা বাড়ীতে গেলেন।
সেই বাড়ীতে ঢুকেই দেখলেন ড্রয়িং রুমে একটা চার্টে ওই পরিবারের প্রতিটি সদস্যর নাম এবং জন্ম তারিখ সুন্দর করে ক্রমান্বয়ে লেখা রয়েছে।
 
তাদের কবরস্থানে গিয়ে দেখলেন মৃতের জন্ম তারিখ, মৃত্যু তারিখ এবং সে এই পৃথিবীতে টিক কত বছর, কত মাস এবং কত দিন, কত ঘন্টা বেঁচে ছিলেন- তার বিস্তারিত লেখা রয়েছে।
 
একটু অবাক হবেন না?
 
বাড়ীর ছেলে বা মেয়েদের পোষাক দেখেই বুঝে ফেললেন কে বিবাহিত বা কে এখনও সিংগেল রয়েছে।
বিয়ের পর মেয়েদের এক কালারের নির্ধারিত পোষাক, বিয়ের আগে অন্য কালারের এবং নির্ধারিত একই ডিজাইন। ছেলেদের পোষাকও নির্ধারিত। বিয়ের পর কোন ছেলে আর বাকী জীবনে তার দাড়ি’তে খুর লাগাতে পারবে না।
 
ইয়া লম্বা লম্বা দাড়ি হয়ে যাবে- সবাই রবীন্দ্রনাথ।
 
ছেলেরা বাধ্যতামূলক হ্যাট পরবে।
বিয়ের আগে মেয়েদের জন্য রয়েছে সবুজ রংএর বিশেষ পোষাক। বিয়ের পর নীল-আকাশী ড্রেস। রবিবার প্রার্থনার দিন তাদের পরতে হবে কালো পোষাক। শুধু রবিবার।
 
প্রতিটি বাড়ীর জানালার অর্ধেকটা জুরে ‘সবুজ’ পর্দা।
এরা বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করে না।
এরা টেলিফোন ব্যবহার করে না।
এরা প্রাইভেট গাড়ী ব্যবহার করে না।
এরা টেলিভিশন দেখে না।
এমনকি এরা ইন্টারনেটও ব্যবহার করে না।
 
ওহাইও থেকে শুধুমাত্র আমিশ পিপলদের জন্য প্রকাশিত হয় ‘দ্য বাজেট’ নামে একটা দৈনিক পত্রিকা। সেটা আবার ওদের ডাচ ভাষায়। এটাই ওদের একমাত্র গণমাধ্যম। এর বাইরে ওরা কোন খবর রাখে না।
 
অামিষরা ডাচ ভাষায় কথা বলে।
ওদের গ্রামে বাইরের কোন কালচার বা দেশের লোক যদি যায়- তাহলে তারা বিদেশী। এবং ওদের কাছে ‘বিদেশী’ মানেই হলো ‘ইংলিশ’। যেই বিদেশী সে-ই ইংলিশ! ওরা কোন বিদেশীদের সংগেই মিশে না। কথা বলতে চায় না।
 
এসব কারণে ব্যক্তিস্বাধীনতার দেশ আমেরিকায়- ওদের জন্য রয়েছে ওদের পছন্দ ও রুচি মতো চলাফেরার ব্যবস্থা। ওদের কালচারকেও সম্মান করা হয়। বাইরের মানুষ যেন ওদের কোন বিরক্ত করতে না পারে- সেজন্য বিশেষ আইন রয়েছে।
 
আমাদেরকে ওদের গ্রামের ভেতর ঢুকানোর আগে একটা ড্যামো আমিশ বাড়ীতে নিয়ে এক ঘন্টার একটা লেকচার ও ওদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয় যেন আমরা কেউ আইন ভংগ না করি। ওখানে ছেলে ও মেয়েদের আলাদা আলাদা স্থানে বসানো হয়- আমিশ কালচার অনুযায়ী।
 
ওদের গ্রামের ভেতরে আমাদের গাড়ী থেকে নামতে দেয়া হয়নি। ছবি তোলার উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। ওদের যেন আমরা কোন বিরক্ত না করি- সে ব্যাপারেও ছিল নির্দেশনা।
 
যাই হোক, প্রশ্ন এসেই যায়- তার মানে কি এরা আধুনিক নন?
মোটেও তা না। তারা তাদের ধর্ম বিশ্বাস থেকে কাজ করে।
 
তাদের জন্য রয়েছে প্রতিটি বাড়ীতে বড় অতি আধুনিক ‘ন্যাচারাল গ্যাস চেম্বার’। ওই গ্যাসের সাহায্যে বিশেষভাবে তৈরী গ্যাসের বৈদ্যুতিক বাতিতে আলোকিত হয় তাদের বাড়ীঘর। তাদের গ্রামে কোন ইলেকট্রিক লাইন নেই। তাদের জন্য রয়েছে বিশেষভাবে তৈরী গ্যাসের রিফ্রেজিরেটর, এয়ারকন্ডিশনার, ওয়াশিং মেশিনও।
 
তাদের বিছানার চাদর, বালিশের কভারও বিশেষভাবে ডিজাইন করা। একটা সাধারণ মানের বেড কভারের মুল্য মাত্র ৬০০ থেকে ১৫০০ ডলার।
 
এরা আমেরিকান সিটিজেন।
এদের সোসাল সিকিউরিটি নাম্বার রয়েছে।
 
কিন্তু এদের কোন পাসপোর্ট নেই।
কারণ ওরা তো বিমানেই চড়ে না। বিদেশেও যায় না। পাসপোর্ট দিয়ে হবে টা কি? এমন কি আমিশরা ভোটাধিকারও প্রয়োগ করে না।
 
ওরা ক্যামেরা ব্যবহার করে না, কেউ ছবি তুলতে চাইলে বিরক্ত হয়। আমিশ ভিলেজে ছবি তোলা হারাম।
 
এরা স্কেটিং করে দ্রুত চলাফেরা করে। অথবা ঘোড়ার গাড়ীতে যাতায়াত করে। বাইসাইকেলও ওরা খুব পছন্দ করে।
 
এরা কিন্তু বাস্তবে অনেক আধুনিক এবং ওদের জীবন যাপন অনেক ব্যয়বহুল। ওদের ইনকামও ভালো।
 
ওরা যৌথ পরিবারে বসবাস করে। মুলত প্রতি ২০ বছর পরপর ওরা প্রয়োজনে আলাদা পরিবারে ভাগ হয়ে বসবাস করে নতুন প্রজন্মের জন্য।
 
ওদের নিজস্ব স্কুলিং রয়েছে।
ওদের প্রধান পেষা কৃষি কাজ ও গবাদিপশু পালন। ওদের পালিত গরু প্রচুর দুধ দেয়। এছাড়া ওরা ভেরা, গাধা, ঘোড়াও পালন করে। প্রচুর মুরগীও পালন করে এরা। এবং গরু বা ঘোড়ার গাড়ীতে চলাফেরা করে। গরু বা ঘোড়ার চালিত গাড়ী দিয়ে কৃষি কাজও করে।
 
কিন্তু, ওরা যখন ব্যবসায়িক কাজকর্ম চালায়, তখন ওরা ব্যবহার করে কমপিউটার, ইন্টারনেট, টেলিফোন, সেলফোন ইত্যাদি সবই। ব্যবসায়ের জন্য সবকিছুই ওরা ব্যবহার করে। কিন্তু বাড়ীতে কোন কিছুই ব্যবহার চলবে না।
 
অসুস্থ্য হলে ওরা প্রধানত বাড়ীতে থেকেই ট্রিটমেন্ট নেয়। একান্ত বাধ্য না হলে হসপিটালে যায় না। হসপিটাল কতৃপক্ষের এম্বুলেন্সে চড়তে বাঁধা নেই। খুব প্রয়োজন হলে রেন্ট এ কার এর গাড়ীতে চড়ে যাতায়াত করে।
 
কেউ যদি প্রাইভেট কার ক্রয় করে তাহলে তাকে সমাজচুত্য করা হয়।
প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১০% আমিষ লোকজন- স্বজাতি ত্যাগ করে মার্কিন মুল স্রোতের সংগে মিশে যায়।
 
আমেরিকায় মোট ‘তিনশ হাজার’ আমিশ পিপল রয়েছে। মুলত সুইজারল্যান্ড এর এ্যানাবাপিষ্ট অরিজিন জার্মান ঐতিহ্যবাহী খৃষ্টান চার্চ ফেলোশীপরাই আমিষ নামে পরিচিত যারা আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় দেশান্তরী হয়- নিরব, বিশাল অঞ্চল নিয়ে বসবাসের জন্য যাতে তাদের ধর্ম চর্চায় কোন সমস্যা না সৃষ্টি হয়। তারা মেননাইট চার্চের ঘনিষ্ঠ ধর্মচর্চাকারী।
 
আমিশদের খাবারও ভিন্ন। ওরা মাছ, মুরগী সবই খায়, ওরা কিন্তু বাইরের রেষ্টুরেন্টের খাবার পছন্দ করে না বা খায় না। তারপরও ওদের গ্রামের বাইরে কিছু আমিশ রেষ্টুরেন্ট রয়েছে- যেখানে মুলত ‘ইংলিশ’রা খায়।
   Send article as PDF