কোন ব্যাখ্যা নেই!

তখন সম্ভবত স্কুলে পড়ি।
বয়স কম।
 
ঐ বয়সী অন্য দশ জনের চেয়ে আমি হয়তো একটু বেশীই ভয় পেতাম। ভয় পেতাম অন্ধকারকে। ভয় পেতাম ভুতের, জীনের। ভয় পেতাম মৃত্যুকে, মৃত মানুষকে।
 
আগেই বলেছি, ওই সময়টাতে আমি খুব নামাজী ছিলাম।
এমনকি আমাদের গ্রামের মসজিদে- নামাজে ইমামতীও করতাম, প্রায়ই শুক্রবারে জুম্মার নামাজে খুতবা দিতাম। আর প্রচুর পরিমাণে বই পড়তাম।
 
আমাদের গ্রামেরই আরেকটা ছেলে, ওর নাম দুখাই।
কিন্তু দুখাই চাইতো সবাই ওকে ডাকুক আলমাছ নামে; আমি আলমাছ ডাকতাম।
 
ওই ছেলেটা আমাকে সহযোগীতা করতো নামাজে এবং নিজেও নামাজ পড়তো নিয়মিত। আর আমি যেহেতু একটু ভয় পাই- কাজেই ওর উপর অঘোষিত দায়িত্ব ছিল ভোড় বেলা সে আমাদের বাড়ীতে এসে আমাকে সাথে করি নিয়ে যাবে মসজিদে; তারপর আজান দেব, নামাজ পড়বো। এভাবেই চলছিল।
 
কোন এক ভোড় বেলায় এভাবেই একদিন সেই আলমাছ আমাকে নাম ধরে অন্য দিনের মতো করেই নামাজে যাবার জন্য ডাকলো। আমি ওকে গেট না খুলেই আমাদের বারান্দায় বসতে বলে ওজু করতে গেলাম।
 
ওজু করে ফিরে এসে গেট খুলে দেখি বারান্দায় আলমাছ নেই। ও কখনও এমনটা করে না। আমি কিছুটা অবাক হলাম। ভাবলাম হয়তো ওর কোন জরুরী প্রাকৃতিক ডাক এসেছে- তাই চলে গেছে। একটু ওয়েট করলাম। কিন্তু ও আসছে না।
 
ওদিকে ফজরের নামাজের সময়ও হয়ে গেছে। এখন না গেলে সময়মত আজান দেয়া হবে না। আমি চিন্তা করলাম আলমাছ নিশ্চয়ই মসজিদে চলে আসবে। আমি একাই সাহস করে মসজিদে গেলাম; কিন্তু সেখানেও আলমাছ নেই। আরও একটু সাহস করে মসজিদের তালা খুলে ভেতরে ঢুকলাম। আজান দিলাম। সুন্নত আদায় করলাম। ততক্ষনেও আলমাছের কোন সাড়া নেই। অন্য কেউও আসলো না নামাজ পড়তে।
 
একটু ভয় ভয়ও লাগছিল। আমাদের গ্রামের মসজিদের পাশে বেশ কয়েকটা কবর। ওদিকে তাকালে আরেকটু বেশী ভয়।
 
আলমাছের কোন খবরই নেই।
 
ওদিকে নামাজের সময় শেষ হয়ে যাবে ভেবে আমি একাই ফরজ নামাজ আদায় করলাম।
 
নামাজ শেষে মসজিদ তালা মেরে বের হলাম এবং ভাবতে লাগলাম, ঘটনা টা কি? আলমাছ তো এমন করার ছেলে না! ওর কি কোন সমস্যা হলো? যাব খোঁজ নিতে ওর বাড়ীতে?
 
ভাবতে ভাবতে মেইন রাস্তায় আসার পর দেখি আলমাছ আসতেছে। আমি কিছুটা ধমকের স্বরে বললাম- কি ব্যাপার? এটা কি করলি তুই?
ও বলল, কেন? আমার ঘুম ভাংগেনি; তাই আসতে পারিনি। আমি কি করবো ঘুম না ভাংলে?
 
আমি অবাক স্বরে বললাম, মানে? তুই না আমাকে ডেকে ঘুম ভাংগিয়ে বললি যে তুই বাইরে বারান্দায় অপেক্ষা করছিস!
আলমাছকে আমি যতটুকু চিনি, ওর মিথ্যা বলার কোন কারণ দেখি না আমার সাথে।
সে বলল, না তো। আমি মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম। তোকে কখন ডাকবো?
আমি হতবাক, বিস্মিত। এবং কিছুটা সাহস এবং সংগে কিছুটা ভয়ও পেলাম।
 
– তাহলে? ঘটনা কি?
আমি এর উত্তর জানি না। সেদিনও জানতে পারিনি; আজও জানি না।
 
যাই হোক, আমার ভয় কিন্তু কমলো না।
আমি তারপরও ভয় পেতাম।
 
এর মধ্যে একদিন পড়লাম হুমায়ূন আহমেদ এর ‘ভুত’ উপন্যাসটি।
 
এছাড়াও ‘দেবী’সহ আরও কয়েকটা ভৌতিক উপন্যাসও পড়লাম। ভূত আর দেবী পড়ার পর থেকে আমার ভয়ের মাত্রা আরও ১০০ গুন বেড়ে গেল।
 
অন্ধকার দেখলেই আমি ভয়ে শেষ।
 
আমি সত্যিই তখন প্রচুর বই পড়তাম। প্রতিদিন পাঠ্য বই পড়ার ফাকে গড়ে প্রায় ১০০ পাতার উপর বিভিন্ন বই পড়তাম- তখন সেটা আমার নেশা হয়ে গিয়েছিল। আমি সব ধরণের বই-ই পড়তাম। ধর্মীয় মসলা মাসায়েল, সাঈয়েদ আবুল আলা মওদূদী, ওয়েষ্টার্ণ, দস্যূ বনহুর, মাসুদ রানা, কুয়াশা, আরও কত কি যে পড়তাম। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল কোনটাও বাদ দিতাম।
 
এর মধ্যেই হুমায়ূন আহমেদ এর আরও কি একটা বই (সম্ভবত মিসির আলীর কোন একটা) পড়লাম।
 
সেখানে ভূত, জীন ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক যৌক্তিক তথ্যাদি উপস্থাপন করা হয়েছে। খুব ভালো লাগলো। ভূত বা জীন দেখলে কিভাবে মোকাবেলা করতে হবে- তারও একটা চমৎকার দিক-নির্দেশনা দেয়া রয়েছে।
আমি সাহস পেলাম।
 
সাহসী হয়ে গেলাম।
এবার শুধু পরীক্ষার পালা।
 
তখন কোন এক রমজান মাস।
আমি সেহারী খেয়ে ফজর এর নামাজ শেষ করে বাসায় ফিরে নিজের রুমে হারিকেন এর আলো কমিয়ে শুয়েছি। তখনও আমাদের গ্রামে ইলেকট্রিসিটি আসেনি।
 
একটু ঘুম ঘুম আসছে। হঠাৎ হালকা ঘুম ভেংগে গেল। আধো আধো অন্ধকারে আমি পরিষ্কার দেখলাম ঠিক আমার খাটের ডান পাছে বুক সেলফ এর সামনে ইয়া মোটা করে সাদা-কালো শরীরের বিশাল এক দৈত্য দাতে-দাত কেলিয়ে হাসতেছে।
 
মুহুর্তে আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম। শরীরের লোমগুলি দাড়িয়ে গেল। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করলাম। এবং ঠিক তখনই হূমায়ূন স্যারের সেই ভুত মোকাবেলার পরামর্শটি মনে পড়ে গেল। আমি নিজেকে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তত করে নিলাম।
 
চোখ বন্ধ করলাম।
মন শান্ত করলাম। চোখ বন্ধই রাখলাম।
 
এবার মনে মনে খুব ঠান্ডা মাথায় নিজেকে নিজে নিজে বললাম, ‘আমি এখন চোখ খুলবো। চোখ খুলে আমি যা দেখবো- সেটাই প্রকৃত সত্য। আমি এতক্ষন যা দেখেছি- সেটা সত্য নয়।’
 
তারপর, চোখ খুললাম।
এবার ঠিক সেই জায়গাটাতেই বড় বড় চোখ করে তাকালাম।
 
ডান হাত দিয়ে হারিকেন এর আলো বাড়িয়ে দিলাম।
 
এবং দেখলাম, আমার বেতের চেয়ারের সামান্য অংশ ছেড়া ছিল- সেই ছেড়া অংশ দিয়ে হারিকনের আলো বের হয়ে বুক সেলফ এর বই এর উপর মিশে গিয়ে এক অদ্ভুৎ ছবি তৈরী করেছে।
 
আমি উঠে বসলাম।
সাহস পেলাম।
শক্তি পেলাম।
যুক্তি পেলাম।
নিজেকে বুঝাতে পারলাম।
 
এবং ঐ দিনের পর থেকে আমি আর কোন ভূত দেখিনি।
 
ভয় কিছুটা দূর হল। কিন্তু মৃত মানুষের ভয় তখনও তাড়া করে বেড়াতো।
স্কুল ছেড়ে কলেজে পা রাখলাম।
 
আমার এক চাচাতো দাদী মারা গেলেন। আমি সাধারণত মৃত মানুষের কাছে যেতে ভয় পেতাম। কিন্তু এখন যেহেতু একটু সাহস বেড়েছে- সিদ্ধান্ত নিলাম আজ মাটি চাপা দেয়া পর্যন্ত দেখবো।
 
এবং তাই-ই করলাম। কবরস্থানে গেলাম লাশের সাথে। নিজে উপস্থিতি থেকে অন্য সবার সাথে শরীক হয়ে মাটি চাপাও দিলাম।
 
বাসায় ফিরলাম।
গোসল করলাম।
এবং ভয় কেটে গেল।
 
এখন আর মৃত মানুষকে ভয় করি না।
যতটুকুই বা ভয় করি তা শুধু জীবিত মানুষকে!
 
যাকগে, সেটা অন্য গল্প।
 
এরপর এলো- নিজে মরে যাবার ভয়। কি হবে মরে গেলে। কেমন যেন একটা ভয়ের অনুভূতি। বাসে উঠলে ভয়- ইস যদি বাসটি একসিডেন্ট করে!
সত্যি খুবই ভয় পেতাম।
 
এবার আমার মাথায় চিন্তা এলো কিভাবে এই ভয়কে দূর করা যাবে। বিশেষ করে ছোট সরু রাস্তা দিয়ে বাস যখন খুব দ্রুত গতিতে চলে বা অন্য বাসকে সাইড দিতে এক্কেবারে ঢালু পর্যন্ত চাকা নামিয়ে দেয়- তখন তো আমার মহা ভয় শুরু হয়ে যায়।
 
একদিন চোখ বন্ধ করলাম। চোখ বন্ধ করে বাসের আর্কিটেকচার ডিজাইনটি কল্পনা করলাম।
 
এবং আশ্চর্য্যজনকভাবে লক্ষ করলাম সুন্দর এবং যৌক্তিক একটি বিষয়।
আমি মনে মনে বাসের সম্পূর্ণ বডিটা ফেলে দিলাম। রাখলাম শুধু ছয় চাক্কার উপর চেসিসটি। এবং দেখলাম- এটা যত খাদেই যাক না কেন, ৩টি চাক্কা কিন্তু ঠিকই উপরেই রয়েছে। কাত হয়ে পরে যাবার বা পল্টি খাবার সম্ভবনা এক্কেবারেই কম।
 
যুক্তি দিয়ে সাহস ফিরিয়ে আনলাম।
কিন্তু তারপর বাসের একসিডেন্ট ভয় যদিও বা কাটলো- মৃত্যু ভয়তো আর কাটে না।
 
এরমধ্যে দেশ-বিদেশ যাতায়াত শুরু হয়েছে- বাড়ছে ব্যবসা বাণিজ্য।
 
কোন এক চায়না সফরে বেইজিং থেকে শ্যাংডং প্রভিন্সের রাজধানী জেনান যাবো সন্ধ্যার ফ্লাইটে।
 
সময়মত সবকিছুই ঠিক-ঠাক ছিল। আমরা বোডিং পাস নিয়ে এয়ারপোটে ডোমাষ্টিক ডিপার্টচারের বোর্ডিং ব্রীজে ওয়েট করছি। আমাদের বিমানে বোর্ড করার ডাক এলো। যথারীতি বিমানে উঠে বসলাম। বিমান টেক অন করার কথা ঠিক ৭টায়। প্রায় ৩০০ সিটের যাত্রভর্তি বোয়িং এয়াক্রাফটি ফ্লাই করার জন্য টারমাকের দিকে যাত্রাও শুরু করে দিল।
 
এবং ঠিক তখনই শুরু হলো মুসুলধারে বৃস্টিসহ বর্জপাত।
আমার দেখা সবচে সেরা এবং ভংয়কর বৃষ্টিসহ বর্জপাত ছিল সেটা।
 
ক্যাপ্টেন টারমাক থেকে বোর্ডিং গেটে ফিরে আসলেন বিমানটি নিয়ে। আমাদের সকলকে ওয়েটিং এ যেয়ে বসতে অনুরোধ করলেন। আমি বিমান থেকে নেমে আসলাম।
 
বৃষ্টি বাড়তেই আছে, বাড়তেই আছে। থামার কোন নাম নেই। ওদিকে জেনান থেকে আমাদের হোষ্ট ফোন দিল- কি ব্যাপার কখন আসবো? আমি বলে দিলাম জানি না। তুমি ওয়েট করো। ফ্লাইট ডিলে।
 
ঠিক রাত বারটার দিকে বৃষ্টি কমলো।
আমাদের আবার অন বোর্ড করা হলো।
 
আমি ঐদিন আমার জীবনে বিমানের ট্রাফিক জট কাকে বলে সেটা উপভোগ করেছিলাম। আমি এসব বিষয়ে খুব মজা পাই- সেটাতো আগেই বলেছি।
 
৭৭টি বিমান গুনেছিলাম- যেগুলি আমাদের টার আগে ফ্লাই করলো এক এককরে। রাত প্রায় ২টার দিকে আমাদের বিমানটি টেক অন করলো।
কিন্তু তখনও হালকা বর্জপাতসহ বৃষ্টি হচ্ছিল বেইজিংএর আকাশে।
 
বিমানটি যখন উপড়ে উঠছিল- আমি যতবার সম্ভব মনে মনে আয়তুল কুরশিসহ যা যা সুরা, আয়াত, দোয়া-দরুদ জানি তার সবটাই আওরাচ্ছিলাম আর ভয়ে কাপছিলাম। যদিও অামি তখন বিমান ভ্রমনে মোটামুটি খুবই অভ্যস্ত, তথাপিও বিমান দুর্ঘটনার ভয় আমাকে ঝেকে ধরতো।
 
বিমানটি বেশ কিছুটা উপড়ে উঠার পর লক্ষ করলাম- ক্যাপ্টেন হঠাৎ বিমানের আলোর সংখ্যা কমিয়ে দিল এবং চাইনিজ ভাষায় কিসব যেন বলতে লাগলো।
 
আমি যেহেতু চাইনিজ ভাষার মাথামন্ডু কিছুই বুঝি না- সেহেতু বুঝে নিলাম আমাদের বিমান ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে হয়তো। ঠিক তখনই বিমানটি কয়েক হাজার ফুট নিচে পড়ে যেতে থাকলো।
 
আমি তো শেষ!
এর আগেও আমি এয়ার ভ্যাকুয়ামের কবলে পড়েছি। অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু ওদিনের সেই ভ্যাকুয়াম ডাউন! ওহ্ এখনও মনে পরলে …।
 
যাই হোক আমাদের বিমান ধ্বংশ হল না।
আবার উপরে উঠলো। এবং বিমানটি যেভাবে কাপছিল- তাতে মনে হচ্ছিল খুব বাজে কার্পেটিং উঠে যাওয়া রাস্তা দিয়ে একটি পাংচার চাকা নিয়ে দৌড়াচ্ছে আমাদের বহন করা বিমানটি।
 
তার উপর বর্জবিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আকাশে।
 
সেই দিনের সেই ঘন্টাখানেক সময়ের ফ্লাইটে আমাদের বিমানটি কম করে হলেও ১০ থেকে ১২ বার এয়ার ভ্যাকুয়ামের কবলে পড়েছে আর উঠেছে সংগে কাপা-কাপিতো আছেই।
 
ঠিক ঐ অবস্থায়ই আমার ভেতরে একটা অদ্ভুৎ পরিবর্তন চলে আসলো।
এবং সম্ভবত, এই পরিবর্তনটার জন্যই আমি অপেক্ষায় ছিলাম দীর্ঘদিন।
হঠাৎ আমার মনে হল, আচ্ছা! বিমানটি যদি এখন দুর্ঘটনাকবলিত হয়-ই; তাহলে এই বিমানের ভেতরে ৩০০ যাত্রীর সবাই তো একসাথে মারা যাবো।
বাকী ২৯৯ জন যদি মরতে পারে- আমি একা বেঁচে থেকে লাভ কি? বরং ৩০০ জন এক সাথে মরে যাওয়াই তো ভালো।
 
তাহলে আর ভয় কিসের?
 
আরও ভাবলাম, ৬০০ কোটি মানুষ এই পৃথিবীতে।
 
সবাইতো মরবে একদিন।
আমি তো মহা বেকুব!
 
এবং সেই সেদিনের বিমান ভ্রমন আমার অবশিষ্ট যে ভয়টুকু ছিল- সেটাও কেড়ে নিল বেইজিং এর মধ্য আকাশে থেকে।
 
এখন আর কোন ভয় নেই।
আমি রেডী।
 
এখন, ঠিক এই মুহুর্তে যদি মৃত্যু এসে আমার সামনে উপস্থিত হয়, আমি ষ্ট্রেইট বলবো, ‘ওকে মিষ্টার আজরাইল, লেসট গো; আই এম রেডী।’
 
শেষটায় কিছু কথা তবুও থেকে যায়।
এবং সেটা আমেরিকা নিয়ে।
 
আমেরিকা ভূতের দেশ।
এবং আমেরিকা যাদুরও দেশ।
আমেরিকার মাটিতে একবার যে পা দিবে- এই মাটি তাকে আটকাবেই‍!
আমেরিকার যাদু সত্যিই অনেক শক্তিশালী। সেই যাদুতে আমি নিজেও বন্ধি।
 
এবং, তারপরও আমেরিকায় প্রচুর ভূত রয়েছে- এটা আমার কথা নয়।
ডিসকভারী চ্যানেল এর কথা।
 
আমি ডালাসে ছিলাম বেশ কয়েক মাস। অত্যন্ত চমৎকার, অতি-অত্যাধূনিক একটা বাসায় আমি থাকতাম। বাসা ভাড়াও অনেক কম, মাত্র ৬৪৭ ডলার।
 
বাসায় ঢোকার দ্বিতীয় দিনেই বাথরুমে ঢুকে গেট লক করেছি- হঠাৎ করে কোন কারণ ছাড়াই আমার সারা শরীরের সব লোমগুলি দাড়িয়ে গেল। অদ্ভুৎ একটা শীতল অনুভূতি আমার সম্পূর্ণ শরীরে বয়ে গেল।
 
আমি অবাক হলাম।
এমন তো হবার কোন কথা নয়?
নিজেকে শান্ত করলাম।
চোখ বন্ধ করলাম। সেই মন্ত্রটি আবারও পড়লাম।
 
কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। ঠিক সেই একই অবস্থা। আমার লোমগুলি দাড়িয়েই আছে।
 
কিছুটা দ্রুততার সাথেই বাথরুম শেষ করে বের হয়ে আসলাম- সবকিছুই স্বাভাবিক।
 
আমি প্রায় মাস তিনেক ছিলাম ঐ বাসাটাতে।
 
ড্রয়িং রুম, লিভিং রুম, বেড রুম সবই ঠিক-ঠাক। কিন্তু শুধুমাত্র বাথরুমে ঢুকতেই সেই একই অনুভূতি।
 
আরও একটা বিষয় খুবই লক্ষনীয় ছিল- আমার সেই বাসার ইলেকট্রিক বাল্বগুলি কয়েকদিন পরপরই ফিউজ হয়ে যেত। তিন মাসে প্রায় ৭/৮টি বাল্ব ফিউজ হয়েছিল। বাসার নতুন রিফ্রেজিরেটরটিও একবার নষ্ট হলো।
ওয়াশিং মেশিনটি নষ্ট হল একদিন। কোন কারণ খুঁজে পেল না মেকানিক। বাসার ভেতরে মেশিন থেকে পানি চলে আসতো। পরে, কর্তৃপক্ষ বাধ্য হলো নতুন করে লাইন তৈরী করে দিতে।
 
বেডরুমের ৫ পাখার ফ্যানটি ২বার নষ্ট হল।
রিফ্রিজারেটরে রাখা স্বাভাবিক খাবার, পরদিন খেতে গিয়ে দেখতাম লবন বেশী হয়ে আছে।
 
গভীর রাতে বেশ কয়েকদিন কিচেনে টুকটাক আওয়াজ শুনতাম, সত্যি বলছি কোন ইদুর ছিল না আমার সেই বাসায়।
 
এবং চলে আসার দিন তিনেক অাগে আমার নতুন প্রিন্টারটি নষ্ট হয়ে গেল কোন কারণ ছাড়াই।
 
এছাড়াও আরও অনেক অনেক সমস্যা নিত্যদিন এসে হাজির হত।
 
আমি এখন অনেক শক্ত মানুষ।
আমি ভয় করি না কোন কিছুকেই।
 
এবং, তারপর সেই বাথরুম!
সেই শরীর শীতল করা অনুভূতি।
 
কোন ব্যাখ্যা নেই!
   Send article as PDF