পুরাই উল্টো

সারা জীবন যেই শব্দটাকে ‘সিডিউল’ বলে জেনে এসেছি আমেরিকা আসার পর সেটা হয়ে গেল ‘স্কাজুয়াল’।
হার্টের প্রব্লেম হলে যে টেষ্ট-টা সবার আগে করা হয় সেটাকে জানতাম ‘ইসিজি’ নামে, এখানে আসার পর তা হয়ে গেল ‘ইকেজি’।
সারাজীবন বাড়ীতে, অফিসে সর্বত্র ঢোকার দরজা খুলেছি ভেতরের দিকে আর এখানে এটাও উল্টো, বাইরের দিকে খুলতে হবে। সারাজীবন ভর ফ্যান, লাইট, এসির সুচিই অন করেছি নীচের দিকে বাটন নামিয়ে এখন সেটা উঠাতে হয় উপরের দিকে- অন করার জন্য। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব কি বুঝে মাইলকে কিলোমিটারে রূপান্তর করলেন বুঝি না- এখনতো আবার সেই মাইলেই ফিরে আসলাম বৃদ্ধ বয়সে।
কিলোগ্রাম হয়ে গেল পাউন্ড, রাস্তায় অনেক দেশেই গাড়ী ডানদিকে চলে, এমনকি চীনের অংশ হয়েও হংকং এর বা’দিকে আবার মেইনল্যান্ডে ডান দিকে; কাজেই এটা কোন সমস্যা নয়। অবশ্য আমাদের সার্কের আফগানিস্তানে ডান দিকে গাড়ী চলে, মিয়ানমারেও তাই।
সারা জীবনে কোনদিন আমি ছাতা ব্যবহার করিনি; কিন্তু এখানে আসার পর মোবাইলের এ্যাপসে ‘শতভাগ সঠিক ওয়েদার আপডেট’ নিয়ে, প্রয়োজনে ছাতা হাতে নিয়ে বের হতে হয়; সবাই তা করে এখানে। যেমন আগামীকাল নিউ ইয়র্কে তাপমাত্রা নামবে ১৬ ডিগ্রি ফারেনহাইটে, যেটা লুকস লাইক হবে মোটামুটি ৬ ডিগ্রি; আমি আজই এটা জানি আগামী ৭ দিন পর কি হবে, কয়টা থেকে কয়টা অবধি কতটুকু বৃষ্টি হবে বা স্নো-রেইন বা স্নো পরবে তা আমি নির্ভূলভাবেই জানি; এবং সেভাবেই জামা-কাপড়-জুতা-ক্যাপ-হ্যান্ডগ্লাপ্স ইত্যাদির জোগাড় রাখি।
বাংলাদেশে যারা বসবাস করেন- বিশেষ করে ঢাকা শহড়ে, তারা সবসময় হাতের কাছে একটা ইমাজেন্সী ফান্ড রেডী রাখেন; পরিবার বা তার নিজের আপদ-বিপদের কাজে লাগবে বলে। হসপিটালে গেলে আগে টাকা জমা করে তারপর চিকিৎসা হয়, টাকা সর্ট হয়ে গেলে চিকিৎসা বন্ধ, ওষধের জন্য নিজেকেই দৌড়াতে হয় ইত্যাদি। এটাই ছিল আমাদের কাছে অতি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু এখানে ওসবের কোন বালাই না। কার এতো সময় আছে।
আপনি অসুস্থ হলেন- নো প্রব্লেম। নাইনওয়ানওয়ান এ একটা কল দিন। এমনকি আপনার মোবাইলে যদি ব্যালন্সে না থাকে তবুও কল যাবে। আরও মজার তথ্য হলো আপনার মোবাইলে যদি কোন সীম বা রীম কার্ডও না থেকে- শুধু মাত্র চার্জ থাকলেই আপনি ইমাজেন্সি কল করতে পারবেন ওই নষ্ট মোবাইল থেকে। আপনার কাজ শেষ। এরপরের দায়িত্ব ইমাজেন্সী কতৃপক্ষের। সবোচ্চ মিনিট পাচেকের মধ্যে এম্বুলেন্স চলে আসবে, আপনাকে নিয়ে যাবে হসপিটালে, আপনার কাছে কোন টাকা-পয়সা আছে বা নাই সেটা কেউ জানতেও চাইবে না কোনদিন। আপনি ভর্তি হবেন, ওয়াল্ড ক্লাস ট্রিটমেন্ট, চেকআপ, মেডিসিন, নার্স মোদ্দকথা যা যা দরকার সবই পাবেন। চিকিৎসা হবে। আপনি সুস্থ হবেন। তারপর আপনাকে কতৃপক্ষ বাসায় চলে যেতে বলবে। না তারপরও ওরা আপনার কাছে কোন বিল চাবে না। হসপিটালের দায়িত্ব রোগীকে সুস্থ করা। হ্যা, একটা বিল যাবে আপনার বাসার ঠিকানায় রেগুলার মেইলে; যা খরচা হয়েছে তার একটা বিল যাবে- যদি আপনার কোন হেলথ ইন্সুরেন্স না থাকে, হয়তো ৫০০ ডলার বা ২০ হাজার ডলার- যা-ই হোক।
আপনার কাছে যদি টাকা না থাকে বা টাকা না দিতে চান, অফিসে যাবেন ২০, ৫০ ডলার নিয়ে, সারেন্ডার করবেন- ‘এতো টাকা আমি কোথায় পাবো?’ ওরা সুন্দর একটা হাসি নিয়ে বলবে, ও আচ্ছা। কত দিতে পারবেন আপনি? অাপনি হয়তো বলবেন আমার কাছে মাত্র ৫০ ডলার আছে। তারা আবার একটা হাসি দিয়ে বলবে ঠিক আছে, দিয়ে যান। এরপর, আপনার বিষয়টি মিটমাট হয়ে গেল। (সরি সরি, এটা কিন্তু ঘুষ না। আপনাকে পাক্কা রিসিপ্ট দেবে ওরা। ঘুষ কি জিনিস এরা জানে না।) আর যদি আপনার বার্ষিক ইনকাম ২৭,০০০ ডলারের নীচে হয়, তাহলে তো কথাই নাই। আপনার জন্য রয়েছে ‘মেডিকেট’। অর্থাৎ আপনার কাছে কোন বিল কোনদিনই যাবে না। আপনার যাবতীয় চিকিৎসা সম্পূর্ণ ফ্রি, ওষুধ ফ্রি, চেক-আপ ফ্রি, সবকিছু ফ্রি। শুধু একটা মাত্র প্রোব্লেম- আপনার পিসিবি (অনেকটা ফ্যামেলী ডাক্তার) আপনাকে পাগল করে ফেলবে নিয়মিত টেলিফোন করে- আপনার নিয়মিত চেক-আপ হয়নি, ঠিকমত ব্লাড দেননি অনটাইম, ফ্ল-শর্ট দেয়া হয়নি এই মওশুমে; ইত্যাদি। মিলিয়ন ডলার বিল হলেও আপনি জানবেন না কোনদিনও।
আর যদি আপনার ইনকাম ২৭,০০০ ডলারের বেশী হয়- তাহলে রয়েছে ইন্সুরেন্স ব্যবস্থা। মাসিক ০ ডলার থেকে ২০ ডলারের মধ্যে; ষ্টেট ভেদে ভিন্নতাও আছে। এরপর সব ফ্রি। আমেরিকায় একটি চাইল্ড ডেলেভারী কেসে কমবেশী ২৫,০০০ ডলার বিল হয়; কোনদিন কেউ দেয় বলে শুনিনি।
এমনকি আপনি যদি টুরিষ্টও হন, তবুও পেতে পারেন ইউএসএ তে ফ্রি ট্রিটমেন্ট এর জন্য মেডিকেড সুবিধা। ড. হুমায়ূন আহমেদ এর চিকিৎসার জন্য তা স্ত্রী শাওন এর নিকট কেন যে- লাখ লাখ ডলারের হিসাব শুনলাম- অমি বুঝি না।
একবার সুইডেন যাবার জন্য ভিসা নেব ২০০৮ সালে। তারা জানালো যদি ভ্রমণকালীন সময়ে অসুস্থ হয়ে যাই সেজন্য আমাকে হেলথ ইন্সু্রেন্স পারসেস করতে হবে ঢাকা থেকেই; ২২০০ টাকা দিয়ে করেছিলামও। আর আমেরিকা? কিচ্ছু দরকার নেই।
এখানে ক্যাশ টাকার কোন ‘বেল’ নেই। সর্বত্রই ক্রেডিট কাড। এমনকি আপনি কতটুকু গুড পার্সন সেটাও হিসাব হবে আপনার ক্রেডিট স্কোর দেখে। আপনার ক্রেডিট স্কোর কম হলে বাসা ভাড়াও পাবেন না আমেরিকায়। বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের জন্য ব্যাংকগুলি ৭/৮ হাজার টাকা বার্ষিক চার্জ তো নিতই- তদুপরি প্রতি চার্জে কমবেশী ৩% ইন্টারেস্টও নিয়ে নিত। এই ফি, সেই ফি ইত্যাদি তো রয়েছেই।
আর এখানে? কোন চার্জ তো নেই-ই; উল্টো প্রতি পারসেসে ১% ক্যাশ ব্যাক পাওয়া যায়। আমি তো প্রতি মাসেই প্রায় ১০০ ডলার পাই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে।
আর হ্যা, যাদের কোন কাগজ-পত্র বা আমেরিকায় বৈধতা নেই তারাও ফ্রি চিকিৎসা পায় নিউ ইয়র্ক ষ্টেটে।
আমেরিকায় কোন অবৈধ লোক নেই। এটা ইমিগ্রান্টদের দেশ; এদেশের আদি পুরুষ বলে কেউ নেই, সবাই ইমিগ্রান্ট হয়ে এসেছে এখানে এবং সারা বিশ্বের আগ্রহী ইমিগ্রান্টদের জন্য আমেরিকার দরজা উম্মুক্ত। আমেরিকায় রয়েছে দুই ধরণের লোক। ডকুমেন্টেড এবং আন-ডকুমেন্টেড। ডকুমেন্টেড হলো- যার পাসপোর্ট বা গ্রীনকার্ড রয়েছে অথবা অন্তত সোসাল সিকিউরিটি নাম্বার রয়েছে।
আর, আন-ডকুমেন্টেড হলো তারা- যাদের সোসাল সিকিউরিটি নাম্বার নেই (যেমন আমি; তবে খুব শিগগীরই পাবো)।
আমেরিকায় রয়েছে ৫০টি ষ্টেট। তারমধ্যে নিউ ইয়র্ক হলো আনডকুমেন্ডেটদের স্বর্গরাজ্য। নিউ ইয়র্ক পুলিশ জীবনেও কাউকে জানতে চাইবে না- তার বৈধ ডকুমেন্ট রয়েছে কিনা? এমনকি রাষ্ট্রের জন্য মারাত্বক হুমকী সৃস্টিকারী ব্যক্তি না হলে- পুলিশ এরেষ্ট করলে, বিচার হলে, সাজা হলেও তারা ফেডারেল গভার্নমেন্ট অথবা ইমিগ্রেশনকে কোনদিন জানাবে না যে- ‘একজন অবৈধ লোক আটক হয়েছে’ হয়তো ইমিগ্রেশন তাকে হণ্যে হয়ে খুজছে ডিপোর্ট করার জন্য।
নিউ ইয়র্ক সিটিতে প্রায় ১৯২টি দেশের ভিন্ন ভিন্ন কালচারের মানুষ বসবাস করে। নিউ ইয়র্কে যারা বসবাস করে তাদের বলা হয়ে থাকে ‘নিউ ইয়র্কার’। নিউ ইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ প্রত্যেককে ফ্রি ‘সিটি আইডি কার্ড’ দিচ্ছে যেন সে আর আইডেন্টিটি হিসাবে ব্যবহার করতে পারে। এবং ওয়াদাবদ্ধ হয়েছে যে, আইডি কার্ডধারীর কোন তথ্য ফেডারেল গভার্ণমেন্ট বা ইমিগ্রেশনকে তারা কোনদিনও জানাবে না। কারো কোন ভয় নাই নিউ ইয়র্কে। আনডকুমেন্টড-রাও নিউ ইয়র্কে স্বাধীন। শুধুমাত্র সোসাল সিকিউরিটি ও ওয়ার্ক পার্মিট না থাকলে বৈধ আয় করা যায় না- অবৈধ আয়ে ইনকাম কম, সপ্তাহে ৪/৫শত ডলার মাত্র।
আমেরিকা এমন একটি দেশ- যে দেশে ১৮ বছরের নীচে প্রতিটি শিশুর পড়াশোনা, যাবতীয় বই-পত্র, চিকিৎসা সম্পূর্ণ ফ্রি, এমনকি টিফিনও ফ্রি। সে বা তার বাবা-মা বৈধ না অবৈধ, কোন দেশ থেকে এসে এতে কিছুই এসে যায় না। আর তার বাবা-মার যদি ট্যাক্স ফাইল থাকে এবং ইনকাম লো হয়- বছরে প্রায় ১২,০০০ ডলার পায় সন্তানের জন্য।
আর, আপনার সন্তানের জন্মটা যদি ভাগ্যগুনে আমেরিকার মাটিতে বা আকাশসীমায় হয়েই যায়- তা হলেতো সবই হয়ে গেল। এমনকি বারাক ওবামার মতো প্রেসিডেন্ট হবার যোগ্যতাও সে পেয়ে গেল। আপনিও গ্রীনকার্ড পাবেন সন্তানের বদৌলতে, বাট ১৮ বছর পর।
আরেকটা বিষয় না বলে পারছি না। আমেরিকায় ঢুকা-টাই সবচে চ্যালেঞ্জ। এখানে একবার ঢুকে ফেললে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ওবামা’র ক্ষমতা নেই আপনি স্বেচ্ছায় ইউএসএ ত্যাগ না করলে আপনাকে বল পূর্বক বের করে দেবে। এমনও ঘটনা রয়েছে ৮/১০ বছর আইনী লড়াই করে অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট থেকে ‘ডিপোর্টেশন’ অর্ডার হয়ে গেছে। পুলিশ অর্ডারের কপি নিয়ে তাকে রিকোয়েষ্ট করে, ‘স্যার একটা সই করে কাগজটি নেন, দেশে চলে যান’। কিন্তু সে যদি তাতে স্বেচ্ছায় সই না করে; পুলিশ এরপরও জোর করে না, করতে পারে না।
যে-কেউ আমেরিকায় আসার পর যদি ঘোষনা দেয় ‘আমি নিজ দেশে নির্যাতিত, দেশে ফেরা সম্ভব নয়’ তাহলে ১৫০ দিনের মধ্যে ফেডারেল গভার্ণমেন্ট তাকে সোসাল সিকিউরিটি নাম্বার এবং ওয়ার্ক পার্মিট দিয়ে দেবে; ইমিগ্রেশনে তার কেস চলবে; ভাগ্য ভাল হলে গ্রীনকার্ড হয়ে যায় এক চান্সেই। আর কপাল যদি খুব বেশী খারাপও হয় তবুও সে বৈধ ভাবে ১০ বছর এখানে থেকে যেতে পারে- ডিপোর্টশন অর্ডার না হওয়া পর্যন্ত। আর মধ্যে যদি সে কোন আমেরিকান সিটিজেনকে বিয়ে করে ফেলতে পারে (এমনকি ডিপোর্টেশন হবার পরেও) তাহলে আর ঠেকায় কে? তিন মাসের মধ্যে গ্রীনকার্ড, ৫ বছরের মধ্যে ইউএস সিটিজেন।
তবে, সবচে মজার বিষয় হলো- আমেরিকায় ঢোকার পর ‘পলেটিকাল এসাইলাম’ না করেও হাজারটা ওয়ে রয়েছে এখানে সহজে বৈধভাবে বসবাসের, গ্রীনকার্ড পাবার (এলওয়ান, ইভি-ফাইভ, এমপ্লয়মেনন্ট বেইসড গ্রীনকার্ড ইত্যাদি। বাংলাদেশের মানুষ ওদিকে আগায় না; তারা বেশী বুদ্ধিমান প্রাণীতো- কিছু বুঝে না বুঝে ডাইরেক্ট সবাই ‘পলেটিকাল এসাইলাম’ করে বসে। আর আমেরিকাও বাংলাদেশকে একটু বেশীই সুযোগ দিয়ে রেখেছে। অন্যান্য ম্যাক্সিমাম দেশের নাগরিকরা আমেরিকা ঢোকার ১ বছরের মধ্যে বাধ্য থাকে পলেটিকাল এসাইলাম ফাইল করতে; এক বছর পর আর তা করা যায় না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ ৫ বছর সময় পায়- ফাইল করতে।
আরও একটা বিষয়, আমেরিকা অবৈধভাবে আমেরিকায় ঢোকা-কে খুবই অপছন্দ করে। অর্থাৎ মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে আমেরিকা ঢুকলে- পলেটিকাল এসাইলামও গ্রহন করতে চায় না। তবে, বিয়ে করলে কোন সমস্যা নেই।
সবশেষে, একটা পরামর্শ। আমেরিকায় যদি আসার সিদ্ধান্তই নেন; সবার আগে যে-কোন একটি হাতের কাজ খুব ভালোভাবে শিখে তারপর আসবেন। বাংলাদেশে আমি আমার ড্রাইভারকে বেতন দিতাম ১২ হাজার টাকা। আর আমেরিকায় একজন ড্রাইভার-ই সবচে বেশী ইনকাম করে থাকে। সপ্তাহে অনায়াসেই ১৫০০ ডলার আয় করতে পারে; বুদ্ধিমান হলে আরও বেশী। একজন প্লাম্বার, কুক, একজন রং মিস্ত্রি- এদের আয়ও দিন প্রতি ৩০০ ডলার; সপ্তাহে ২০০০ ডলারও হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কোন কাজ না শিখে আমেরিকায় অাসে। তারা ‘অড জব’ করে- কেউ ডিস ওয়াসার, কেউ সেলস, কেউ ক্লিনার আর সাপ্তাহিক আয় ৩০০ থেকে ৪৫০ ডলার ম্যাক্সিমাম। এদের কে কেউ চাকুরী দিতে চায় না। বাংলাদেশের অনেক বড় বড় রিটায়ার্ড অফিসার, আমলা রা এখানে পিজা ডেলীভারী করে; হাতের কাজ জানে না বলে। আমেরিকান স্কুলে পড়াশোনা না করলে যত ভালই ইংলিশ জানুন, হাতের কাজ জানা না থাকলে আপনি সত্যিই অসহায় এখানে।
তবে, পুঁজিবাদী আমেরিকায় সত্যিকারের মজা ব্যবসায়ীদের জন্য। ব্যবসায়ীদের জন্য এটা সত্যিই স্বর্গরাজ্য। বাংলাদেশে যেমন একজন দোকানদার ১০০০ টাকা সেল করলে হিসাব করে দেড় থেকে দুইশত টাকা লাভ হলো। আর এখানে? দিনে ১০০০ ডলার যদি আপনি সেল করতে পারেন- শতভাগ শিওর থাকবেন আপনার লাভ হয়েছে কমপক্ষে ৭৫০ ডলার।
বাংলাদেশে কারো কোর্টে সাজা হলে- পুলিশ সংগে সংগে তাকে হাজতে ঢোকায়, সাজা শুরু হয়ে যায়। আর আমেরিকায়? বিষয়টা সত্যিই খুব মজার। ধরুন- আপনার ৩ মাসের জেল হয়েছে। আপনি কোর্টে উপস্থিত। শুনলেন। আপনার কাজ শেষ। এরপর পুলিশ কোনদিন আপনাকে খুঁজবে না। আপনাকেই নিকটবর্তী পুলিশ ষ্টেশনে যেয়ে তাগাদা দিতে হবে- ‘ভাই, আমার তো ৩ মাসের জেল হয়েছে; আমি কবে স্কাজুয়াল পাবো জেল খাটার?’ পুলিশ কাগজ-পত্র চেক করে তাদের কোন সীট খালি থাকলে তাকে জানাবে আপনি অত তারিখ থেকে অত তারিখ পর্যন্ত জেল খাটতে পারেন, অথবা আরও মাস ছয়েক লাগলে স্কাজুয়েল পেতে। পরে এসে খবর নিবেন স্যার। আপনাকে ধন্যবাদ।
এটাই আমেরিকা। এরা সত্যিই মহান, আমাদের চিন্তার চেয়ে অনেক বেশী। মহান একটি দেশ, একটা জাতি।
বাংলাদেশ থাকতে অনেকের কাছেই শুনতার, আমেরিকান রা নাকি ন্যাংটা থাকে, শুনে মজাও পেতাম। কিন্তু গত এক বছরে আমি একজন আমেরিকানকেও ন্যাংটা দেখিনি। হ্যা, ওরা ওপেন কিস করে; কিন্তু সেটা নোংরা হিসাবে নয়। ঢাকার গাউছিয়ার মত নোংড়ামী আমেরিকায় নেই। আমেরিকানরা জামা-কাপড় পড়েই চলাফেরা করে; অসভ্যতা এরা জানে না। আরা যারা আমাকে এসব তথ্য দিত- আসলে তাদের চোখ এবং রূচিতেই যে প্রচুর প্রব্লেম সেটা এখন বুঝি।
যে জীবনে আমেরিকায় না আসতে পেরেছে- তার জীবনটা সত্যিই একটা ব্যর্থ জীবন। আর হ্যা, আমেরিকানরা অবশ্যই ক্ষমতা, সাহস এবং যোগ্যতা রাখে সারা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার। যে গরু দুধ দেয়- তার লাথিও ভাল। আজকের সারা বিশ্বের যে উন্নতি- তার ৯০% এর উদ্ভোব এই আমেরিকানদের দ্বারাই। আজ যদি- মহাশূণ্যের কোন দূর্বিপাক পৃথিবীর জন্য অশনি হয়ে দ্বারায়- এই আমেরিকা, একমাত্র আমেরিকার দিকেই পুরো পৃথিবীবাসীকে সাহায্যের জন্য তাকিয়ে থাকতে হবে; এবং আমেরিকা স্বার্থহীনভাবে সহযোগীতা করবে। এটাই আমেরিকার শিক্ষা।
সেদিন ওই পুতিনের রাশিয়া ব্যস্ত থাকবে তাদের খাদ্য জোগাড়ে- যতই লাফাক আজ তলাবিহীন ঝুড়ির বা ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মতো।
শেষটায় শুধু একটা কথাই বলব, আমেরিকা পাগলের দেশ। আপনি পাগল না হলে আমেরিকায় না আসা-ই ভাল।
পাদটিকা: সরি, যে কথাটা বলার জন্য এ লেখা তা-ই-তো বলা হল না। ছোটবেলায় আমরা দেখেছি স্কুলের স্যারেরা বেত নিয়ে ক্লাসে আসতেন; একটু পান থেকে চুন খসলে উত্তম-মাধ্যম দিতেন ছাত্রদের। আর আমেরিকায় দেখলাম ঠিক তার উল্টো। শিক্ষকরা দুরে থাক মা-বাবাও যদি কোনদিন সন্তানের গায়ে হাত তোলে, পুলিশ তাৎক্ষনাত মা-বাবা’কে গ্রেফতার করে এবং সন্তানকে শেল্টারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
আর, বাস বা ট্রেনে, ছোটদেরকে সবাই নিজে উঠে যেয়ে সীট অফার করে বসতে। আমরা কি করি? – ওই পিচ্ছি ওঠ, বড়দের বসতে দে। ভাড়া দেবে না জায়গা দখল করে আছে! আচ্ছা কি শিক্ষা নিই আমার সমাজ থেকে?
পুরাই উল্টো একটা দেশ।
   Send article as PDF