মোটে দুটি সমস্যা

লেখার আইডিয়াটা ছিল চুরি করা।
আমি একটু আগেই যে স্ট্যাটাসটি দিলাম সেই লেখাটার কথা বলছি।
 
বাংলাদেশের মোটে দুটি সমস্যা। (এক) ‘চিকুনগুনিয়া জ্বর’, (দুই) ‘বাংলাদেশ সরকার’।
 
বছর বিশেক আগে আফ্রিকার কোন এক নেতা বলেছিলেন, ‘আমাদের দু’টি সমস্যা; প্রথমত ইদুর আর দ্বিতীয়ত সরকার’। সেখান থেকেই আইডিয়াটা চুরি করে বাংলাদেশের উপর চাপিয়ে দিলাম!
 
মাঝে মাঝে দিতে হয়।
কারণ, আইডিয়াই সবকিছু।
 
আইডিয়াই সবকিছু বদলে দিতে পারে।
এমনকি একটা সম্পূর্ণ দেশকেও। বাংলাদেশকেও চেঞ্জ করে দিতে পারে শুধুমাত্র আইডিয়া।
 
সুতরাং আমাদের ‘আইডিয়া’ বের করতে হবে।
 
আর সারা বিশ্বে অসংখ্য সভ্যতার ভেতরেই তো আইডিয়ারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে; আমরা কিন্তু অনায়াসে সেখান থেকেও আইডিয়াগুলি চুরি করে আনতে পারি।
 
মাহথির মোহাম্মদ’কে চিন্তা করতে পারেন।
লি কুয়ান ইও’র কথা বললে তো কোন কথাই নেই।
 
এই দু’জন মানুষ দু’টি পশ্চদপদ দেশকে কিভাবে বদলে দিয়েছে- সেটা তো আমাদের চোখের সামনেই আজ ঝলঝল করে জ্বলছে।
 
স্রেফ আইডিয়া।
 
মুহাম্মদ (সা) সম্পূর্ণ বখে যাওয়া আরব জনপদকে কিভাবেই না সভ্য নগরীতে পরিবর্তিত করে দিলেন। সেটাও সরাসরি মহান আল্লাহ পাকের কাছ থেকে পাওয়া (আইডিয়া)-ই ছিল।
 
জর্জ ওয়াশিংটন। আমেরিকার অন্যতম ‘ফাউন্ডিং ফাদারস অব নেশন’। প্রথম প্রেসিডেন্ট।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনার স্রেফ কতগুলি আইডিয়া সামনে নিয়ে আসেন। তারপরের সবকিছুই তো আজ শুধুই বাস্তবতা। গণতন্ত্র, মানবতাবাদ, সমৃদ্ধি, সৌন্দর্য্য, ক্ষমতা (পাওয়ার), এবং অর্থনৈতিক সামর্থ্য। সবকিছু।
 
জাপান’কে দেখুন। দেখুন চায়নাকে। দক্ষিন কোরিয়া বা তাইওয়ান।
ইওরোপিয়ান সভ্যতা, সমৃদ্ধি সংগে ক্ষমতার দাপট- ওসব তো হাজার বছরের রিয়েল ঐতিহ্য। (অবশ্য, বাংলাদেশেও হাজার বছরের ঐতিহ্য-ফেতিহ্য কি না কি সব রয়েছে! – এখানটায় হাসি হবে!)
 
সম্পূর্ণ এই পৃথিবীটাই আজ অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমরা? বাংলাদেশ? কোথায় আমরা?
 
আবুল মাল আব্দুল মুহিত। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলে রাখা ভারত নিয়ন্ত্রিত গোপালগঞ্জ সরকারের অর্থমন্ত্রীও বটে।
 
আবুল মাল আগামী অর্থবছরের (তার জীবনের শ্রেষ্ঠ) বাজেট ঘোষনা করেছেন।
 
‘যারা ১ লাখ টাকা ব্যাংকে রাখতে পারেন- তারা আমাদের দেশের তুলনায় সম্পদশালী।’ আবার একই সংগে ‘চার হাজার কোটি টাকা তো কোন টাকাই না’। এই সবই এই বৃদ্ধ পাগলের বক্তব্যের অংশ বিশেষ।
 
‘৪ হাজার কোটি টাকা কোন টাকাই না!’
এই কথা বলার সংগে সংগে ঐ বৃদ্ধ পাগলের গালে চপেটাঘাত করে পাবনা’র পাগলা গারগে পাঠানো উচিৎ ছিল। কিন্তু সেটা না করে তাকে আবারও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সুতরাং সে নতুন আর কি করবে? কি উপহার দিবে? তার কাছ থেকে কি এরচে ভাল কিছু আশা করেন?
আমি কিন্তু করি না।
 
গেল বছর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে, ‘যেটা না কি দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংক’- নগদ ১৫ হাজার কোটি টাকা গায়েব হয়ে গেল; সেই টাকাগুলি কার ছিল?
 
৮১ মিলিয়ন ডলার হ্যাকিং হয়ে গেল সেন্ট্রাল ব্যাংক থেকে। কার টাকা ওগুলি?
 
সজীব ওয়াজেদ জয়কে মাসে ২ লাখ ডলার ‘প্রতিবন্ধী ভাতা’ প্রদান করা হচ্ছে রাষ্ট্রিয় তহবিল থেকে- সেগুলি কার টাকা থেকে আসে?
 
ডিজিটাল বাংলাদেশ শ্লোগান দিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয় যে ৪৩ হাজার কোটি টাকা খেয়ে ফেললো- সেগুলি কার টাকা ছিল?
 
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ৬৮ হাজার কোটি টাকা ‘অটিজোম’ এর নামে ব্যয় করলো- কার টাকা থেকে?
 
যে পদ্মা সেতু করতে ১০ হাজার কোটি টাকাও খরচ হবার কথা নয়- সেটা প্রজেক্টে খরচ করা হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। ঐ ২০ হাজার কোটি টাকা কার ছিল?
 
লন্ডনে সম্প্রতি রেজিষ্ট্রিকৃত অখ্যাত কোম্পানীকে রেল প্রজেক্টের নামে ৭২ হাজার কোটি টাকা দেয়া হচ্ছে- সেগুলি কার টাকা থেকে?
 
হাজার হাজার কোটি টাকা নষ্ট করে মগবাজার ফ্লাইওভার তৈরী করা হয়েছে, যেটা ভুল নকশায় বাস্তবায়ন করা হলো- সেই টাকাগুলি কার ছিল?
 
বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারতীয় ভারী ভারী ট্রাক-লরীগুলি চলছে নামমাত্র কথিত খরচ দিয়ে, এই রোডগুলি কার টাকা দিয়ে তৈরী হয়েছে, মেরামতির টাকা কে দেয়?
 
রাষ্ট্রিয় লোটপাটের এরকম আরও হাজারটা প্রমাণ আপনারাও দিতে পারবেন।
 
হ্যা। হ্যা। হ্যা। এসবই আমার টাকা। আপনার টাকা। আপনার টাকা। আমরা কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যেই দু’চার পয়সা উপার্যন করি, সেই টাকা থেকে এসব চুরি চলছে। ডাকাতি চলছে। আর তার নেতৃত্ব দিচ্ছে গোপালগঞ্জ সরকার প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এবং তার প্রধান কেশিয়ার এই আবুল মাল। ওসব মালের বাবার টাকা না।
 
আবুল মালের ফর্টিন জেনারেশনও ওত টাকা চোখে দেখেনি।
 
আমার টাকা, আপনার টাকা নষ্ট করতে আবুল মালের কষ্ট হবে কেন?
কি দায়বদ্ধতা রয়েছে এসব মালদের?
 
পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে এভাবে জনগণের টাকা চুরি করে খেয়ে কেউ পার পেতে পারে না। পাওয়া সম্ভব না। কিছুতেই সম্ভব না।
 
কিন্তু এরা জনগণের টাকা খেয়ে দিচ্ছে।
দেশের রাজস্ব খেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক খেয়েছে।
ফরেন রিজার্ভ খেয়েছে।
ইসলামী ব্যাংক খেয়েছে।
সরকারী চারটি ব্যাংক (সোনালী, রুপালি, জনতা, অগ্রনী) লোপাট করে এখন শূন্য করে দিয়েছে।
বেসরকারী ব্যাংকগুলি থেকে লক্ষ কোটি টাকা লোন দিয়ে সেসব ব্যাংকগুলিকেও তারল্য সংকটে ফেলেছে।
 
লুটে পুটে খাওয়া শেখ করে এবার আবুল মাল হাত দিয়েছে আপনার আমার পকেটে। এটা পকেট মারের হাত।
 
আপনি ব্যাংকে আপনার টাকা রাখবেন- সেখান থেকে সে টাকা খাবে।
অথচ আপনি ট্যাক্স দিচ্ছেন। ভ্যাট দিচ্ছেন। সবকিছু দেবার পর- আপনার কাছে যে টাকাটা রয়েছে সেখান থেকেও সে এবার টাকা নিবে।
 
জনগণ ট্যাক্স কেন দেয়?
আমি কষ্ট করে টাকা রোজগার করবো, ট্যাক্স কেন দিবো?
 
একজন সভ্য দেশের সভ্য মানুষকে প্রশ্ন করেন, ‘জনগণ কেন সরকারকে ট্যাক্স দেবে?’
 
আপনি কোনদিন জানতে চেয়েছেন বাংলাদেশের কোন সরকারের কাছে- ‘কেন আমি ট্যাক্স দিবো?’
 
আপনি ট্যাক্স দিবেন- সেই টাকা দিয়ে দেশের সরকার, প্রশাসন, পাবলিক-সার্ভেন্ট তাদের বেতন নেবে। রাষ্ট্র দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করবে! স্রেফ এটুকুই?
 
আপনি বোকা।
তাই আপনাকে বোকা-ই বানিয়ে রাখা হয়েছে।
 
সরকার আপনার কাছ থেকে শুধু নিবে, দেবে না কিছুই? তাহলে আপনি কেন ট্যাক্স দিবেন?
আপনি কষ্ট করে টাকা রোজগার করেননি?
 
আপনার টাকার মূল্য নেই?
আপনি দু’দিন না খেয়ে থাকলে, বাজার করার টাকা না থাকলে, বাড়ী ভাড়া দেবার টাকা না থাকলে- কেউ কি আপনাকে সাহায্য করে? আপনি অসুস্থ্য হয়ে টাকার অভাবে চিকিৎসা না পেলে কেউ কি আপনার খোঁজ রাখে?
 
রাখে না, তাই তো?
তাহলে আপনার কি দায় পরেছে আপনার টাকা দিয়ে আপনি ‘সরকার পুষবেন’?
 
সরকারকে আপনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিতে হবে- বিনিময়ে আপনি ট্যাক্স দিবেন।
সরকারকে আপনার বেকার ভাতা (চাকুরীর ব্যবস্থা করে দিতে না পারলে) দিতে হবে- এজন্য আপনি ট্যাক্স দিবেন।
সরকারকে আপনার পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিতে হবে, বৃদ্ধ অবস্থায় আপনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে হবে- তাহলেই আপনি ট্যাক্স দিবেন।
 
নইলে আপনি কেন ট্যাক্স দিবেন? অাপনার কি দায় পরেছে আপনি সরকারকে আপনার টাকার ভাগ দিবেন?
সরকার রাস্তা বানায়, ব্রীজ বানায়- গাড়ী থেকে রোড ট্যাক্স, ফেরী বা ব্রীজ টোল নেয় না?
 
তাহলে আপনি কেন সরকারকে টাকা দিবেন?
 
দিবেন এইজন্য যে, আপনি জানেন-ই না যে আপনার কথা বলারও অধিকার রয়েছে।
আপনাকে শেখানো হয়েছে ‘ট্যাক্স দেয়া দ্রেশপ্রেম’। সরকার কি দেশপ্রেম করে? সরকার আপনার জন্য কি করে? সব দায় কি আপনার একার?
 
ঘুরে দাঁড়ান। সময় এসেছে।
নিজের টাকা নায্য হিস্যা নিজে বুঝে নিন।
প্রতিবাদ করুন। কেন ট্যাক্স দিবেন? পুলিশ বেতন নিবে, পুলিশ অস্ত্র কিনবে, পুলিশ সেই অস্ত্র আপনার বুকে তাক করবে। আপনার টাকার গুলি আমার বুকে বসাবে।
 
আপনি শুধু ট্যাক্স দিবেন।
আপনার ট্যাক্সের টাকা আবুল মালেরা লুটে পুটে খাবে।
 
আপনাকে অন্ধ করে রাখা হয়েছে। আপনি চোখে দেখেন না।
আপনি সিংগাপুর দেখেন না। আপনি মালয়েশিয়া দেখেন না।
আপনি আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা দেখেন না।
 
আপনি ভাবেন ওরা উন্নত দেশ।
ওদের উন্নত কে বানিয়ে দিয়ে গেছে? কেউ না।
 
ওরা নিজেরাই নিজেদের বানিয়েছে।
আপনার দেশও আপনাকেই বানাতে হবে।
 
ওরা আইডিয়া বাস্তবায়ন করেছে।
ওদের আইডিয়াগুলিও আপনি চোখে দেখেন না?
 
আপনার চোখে যদি পার্মানেন্ট ছানি পরেই থাকে- তাহলে থাকুন চোখ বন্ধ করে! ট্যাক্স দিন। ভ্যাট দিন। চুরি করার আরও সুযোগ দিন।
 
দিতে থাকুন। দিতেই থাকুন।
 
নোট: সরকার ভাল হলে মশা থাকবে না; মশা না থাকলে চিকুনগুনিয়া বলেন আর ডেংগুই বলেন- কিছুই থাকবে না।
   Send article as PDF