আইডেনটিটি ক্রাইসিস

আমার ফ্রেন্ডলিষ্টে বেশ কয়েকজন ভারতীয় বাঙালী বন্ধু রয়েছেন।
তাদের মধ্যে ৪ জনকে আমি অসম্ভব পছন্দ করি, ওনাদের কোন লেখাই মিস করি না। তাদেরই একজন একটা ‘লাল পোষ্ট’ দিয়েছেন যেখানে তিনি মমতা ব্যানার্জীকে ‘বঙ্গনেত্রী’ সম্মোধন করেছেন।
 
মমতা ব্যানার্জীকে আমি পছন্দ করি, ওনাকে শ্রদ্ধা করি। একজন প্রকৃত দেশপ্রেমী নেতা ঠিক এমনই হওয়া চাই।
 
নাহ, মমতাঝি কারো সন্তান বা স্ত্রী নন (তাছাড়া ওনাকে চিরকুমারী বলেই জানি)। আপাদমস্তক সৎ এবং সাহসী এই ভদ্রমহিলা শাসক হিসাবেও দূরদর্শী। আমি ওনার ভেতরে ভারতবর্ষের ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে পাই- যিনি হবেন প্রথম ভারতীয় বাঙালী প্রধানমন্ত্রী- এটা আমার শ্রেফ ব্যক্তিগত বিশ্বাস।
 
যে নেতা নিজের যোগ্যতায় নিজেকে বলিয়ান করেন- তাকেই আমি শ্রদ্ধা করি।
শেখ মুজিবর রহমানও এমন একজন নেতা যিনি কারো পরিচয়ে পরিচিত ছিলেন না।
 
নেতা হিসাবে শেখ মুজিবর রহমান দুর্দান্ত সাহসী, মেধাবী এবং ভাল বক্তা। শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তান থেকে সকলকে ছাড়িয়ে প্রধান নেতায় পরিণত হতে পেরেছিলেন।
 
বাংলাদেশের সদাবিভ্রান্ত ও অলস মানুষদের মধ্যে তিনি স্বাধীনতা-বোধ জাগিয়ে তুলতে পেরেছিলেন; এই কৃতিত্ব তারই।
 
কিন্তু শেখ মুজিবের প্রকৃত চরিত্র বোঝা যায় ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত।
 
তিনি এই সময়টাতে বাংলাদেশটাকে তার নিজস্ব জমিদারী, যেমন খুশী তেমন ইচ্ছে মার্কা শাসন ব্যবস্থা, প্রশাসনিক অবকাঠামোকে ধ্বংশ করে দেয়া এবং শেষটায় যে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ আত্মত্যাগ করলো, পুংগ হলো, অসংখ্য মা-বোন ধর্ষিতা হলো সেই ‘গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা’কে লাথি মেরে একদলীয় পারিবারিক বাকশাল ব্যবস্থা চাপিয়ে দিলেন জাতির উপর।
 
এটা বাংলাদেশের ৭ কোটি মানুষের সংগে বেঈমানী।
শেখ মুজিবর রহমান তার এই বেঈমানীর পরিণতি ভোগ করেছেন। সেনাবাহিনীর কয়েজন দেশপ্রেমিক সাহসী সুর্য-সন্তান বাংলাদেশের মানুষকে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে পচাত্তরের পনেরই আগষ্ট সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে বাকশাল মুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছেন।
 
শেখ মুজিবের বিষয়টা মুলত ১৯৭৫ সালেই মিমাংসা হয়ে গিয়েছিল।
১৯৯৬ সালেও শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে কোন বাড়াবাড়ি করেননি বললেই চলে।
 
কিন্তু এবারে ভয়াবহ রকমের চাটুকারবেষ্টিত শেখ হাসিনা তার পিতাকে পয়গম্বর ‘প্রফেট অব বেঙ্গল’ পর্যন্ত ঘোষনা দিতেও দ্বিতীয়বার চিন্তা করেননি।
 
জাতিকে সর্বত্র মিথ্যা ইতিহাস শিখিয়ে আজীবন ক্ষমতায় থাকার চেষ্টারত শেখ হাসিনা বুঝতেও পারছেন না যে এতে শেখ মুজিবকে কতটা হাস্যকর প্রানীতে পরিণত করা হচ্ছে।
 
যাই হোক প্রসংগে ফিরে আসি।
চাটুকাররা শেখ মুজিবকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, বাঙালী জাতির জনক, বঙ্গবন্ধু ইত্যাদি বিশেষনে ভুষিত করে দিবা-নিশি টুয়েন্টি-ফোর-আওয়ার্স।
 
প্রথমে আসি ‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাব নিয়ে।
শুনেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রনেতারা মিলে তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধী দিয়েছিল।
 
তার আগে কয়েকটা তথ্য শেয়ার করি।
বাংলা এই পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম ভাষা।
এবং এই বাংলা ভাষায় যারা কথা বলে তাদেরই বাঙালী বলা হয়।
 
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিম বঙ্গ মুলত বাঙালেদেরই বসবাস।
এছাড়াও ভারতের আসাম, মেঘালয়, উড়িশ্যা, ত্রিপুরা রাজ্য ও আন্দামান-নিকোবর দ্বিপপূঞ্জ’র বড় একটা অংশ বাঙালী। পাকিস্তানের করাচীতেও এক মিলিয়নের বেশী বাঙালীর বসবাস।
 
শেখ মুজিব কি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ‘বাঙালী’?
কিভাবে?
কোন বিবেচনায়?
কোন যোগ্যতায়?
৭ কোটি মানুষের সংগে বেঈমানী করার যোগ্যতা?
 
দ্বিতীয় প্রশ্ন।
শেখ মুজিব ‘বাঙালী জাতির জনক’ হয় কিভাবে?
ভারতীয় রাজ্য পশ্চিম বঙ্গের অধিবাসীরা কি শেখ মুজিবকে তাদের জনক হিসাবে মেনে নিবে?
 
আসামীজরা, ত্রিপুরার লোকজন? আন্দামনের বাঙালী বাবুরা কি শেখ মুজিবকে তাদের জনক ভাববে?
 
একটা জাতি কিভাবে তৈরী হয় এবং তার কিভাবে জনক হতে হয়- এতটুকু বোধ সম্পন্ন একটা মানুষও আওয়ামী লীগে বা বাংলাদেশী চাটুকারীদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
 
এবার আসুন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধী নিয়ে।
শেখ মুজিব কোন বঙ্গ’র বন্ধু।
তখন ছিল পূর্ব বাংলা বা পরে পূর্ব পাকিস্তান। এখন বাংলাদেশ। এখানে বঙ্গ কোথায়?
 
হ্যা একটা বঙ্গ রয়েছে ভারতে- সেটা পশ্চিমবঙ্গ।
পশ্চিম বঙ্গের বাঙালী বাবুরা একটু আওয়াজ দিবেন- আপনারা কি ‘বঙ্গ-বন্ধু’র পদটি দিতে রাজী রয়েছেন একজন বিদেশীকে?
 
আপনাদের বঙ্গনেত্রী মমতা ব্যানার্জী কি এটা মেনে নিবেন?
 
একজন মানুষকে ভালবেসে একটা সম্মানজনক উপাধী দেয়া যেতেই পারে- সেটা হতে হবে বাস্তবসম্মত।
 
শেখ মুজিব আর আওয়ামী লীগের সবকিছুতেই গলদ। আওয়ামী শব্দটিও পাকিস্তান থেকে আমদানী করা।
 
ভারতীয় ‘বঙ্গ’ আর পাকিস্তানী ‘আওয়ামী’ নিয়ে এরা বাংলাদেশে রাজনীতি করে।
 
শেখ মুজিব বেঁচে থাকলে হয়তো এদের দেখে নিজেই বলে উঠতেন ‘হায় মুজিব, হায় মুজিব!’
 
যাই হোক, আমরা বাংলাদেশী। কোন বঙ্গ তো নই-ই।
কোন বঙ্গবন্ধুও আমাদের দরকার নেই।
 
শেখ মুজিব ও তার পরিবার ‘বঙ্গ-বন্ধু’ হয়তোবা হতে পেরেছিলেন কিন্তু বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারেননি কোনদিনও।
 
যাবতীয় নষ্টামী আমরা ৭৫রেই ঝেরে ফেলেছিলাম, দুর্ভাগ্য জাতের ঘাড়ে আরেকটি নষ্টা মহিলা চেপে বসেছে- এটাকেও ঝেড়ে ফেলা হবে ইনশাল্লাহ।
   Send article as PDF