থিরাভাদা বুড্ডিষ্ট

বাঙালীদের মধ্যে একসময় ইউনানী ওষুধের দারুণ জনপ্রিয়তা ছিল।
বাংলাদেশ তথা পশ্চিম বঙ্গে এখনও বেশ কয়েকটা ইউনানী ওষুধের দোকান দেখা যায়।
 
এই ইউনানী ওষুধগুলি মূলত তৈরী হতো চায়নার ইউনান প্রভিন্সে। ইউনান প্রভিন্সটি চায়নার দক্ষিন এবং কিছুটা দক্ষিন-পূর্বের একটি রাজ্য। মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডের সংগেও কিছুটা বর্ডার রয়েছে।
 
ইউনান প্রভিন্সের রাজধানী কুনমিং।
কুনমিং অত্যন্ত সুন্দর এবং চিরবসন্তের শহর।
ফুলে ফুলে সাজানো অসাধারণ একটা শহর এই কুনমিং। চমৎকার আবহাওয়া সেখানে। যখনই কুনমিং এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতাম- তখন আগে থেকেই একটা গরম জামা হাতে রাখতাম। বাংলাদেশের জানুয়ারী মাসের মতো তাপমাত্র সেখানে সারাবছর জুড়ে।
 
কুনমিং শহরের ঠিক কিছুটা উত্তরে রয়েছে এই পৃথিবীর সবচে মনোমুগ্ধকর ‘ষ্টোন ফরেষ্ট’টি। মানে পাথরের জংগল। আমরা সুন্দরবনে বা বান্দরবানে গাছের জংগল দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু পাথর দিয়েও যে অতি-মনোরম ন্যাচারাল ফরেষ্ট সৃষ্টি হতে পারে- সেটা কুনমিং এ-ই সম্ভব।
 
অসাধারণ।
আমি প্রত্যেকটা বাংলাদেশীকে বলবো- জীবনে একবার হলেও কুনমিং যান এবং সেই অসাধারণ ষ্টোন ফরেষ্টে গিয়ে কিছু ছবি তুলে নিয়ে আসেন; বাকী জীবনভর ঐ জংগলেরই গল্প করতে পারবেন।
 
সেই কুনমিং এ আমার অনেকবার যাওয়া হয়েছে।
একবার গেলাম ‘কুনমিং ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন এন্ড এক্সিবিশন সেন্টার’টি পরিদর্শনে। চায়নার অগ্রগতিকে আমি সবসময়ই শ্রদ্ধা করি।
 
ওখান থেকে বের হচ্ছি, হঠাৎ পেছন থেকে কয়েকটা ছেলে ভাংগা ভাংগা বাংলায় আমাকে ইংগিত করে বলছিল ‘ভাই কেমন আছে? বাংলাদেশ?’
ছেলেগুলি দেখতে মলিন মুখ। পোষাকে নেই কোন আভিজাত্য। ৫/৬ টা অল্প বয়সী ছেলে।
 
আমি ওদের কাছে গেলাম। ওদের একজন আমাকে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে সালাম জানালো।
 
আমি বাংলায় জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমাদের বাড়ী কোথায়?’
ওদের একজন জানালে, ‘আমাদের বাড়ী আরাকান’।
 
আমি বেশ অবাকই হলাম। মিয়ানমার। জানতে চাইলাম আরাকানের মানে রাখাইন রাজ্যের ঠিক কোথায়?
ওরা জানালো রাখাইন এর সিটও-এ। আমি জীবনে একবার মাত্র মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের ‘মংডু’ পর্যন্ত গিয়েছিলাম। সেটাও টেকনাফ দিয়ে নাফ নদী পাড় হয়ে।
 
আমি জানতে চাইলাম, ‘চায়নাতে কিভাবে এসেছো?’
‘অনেক কষ্ট করে বর্ডার দিয়ে চলে এসেছিলাম। এখন এখানেই থাকি। আমাদেরকে পুলিশ কিছু বলে না, প্রায় কয়েকশ রয়েছি আমরা এখানে। কাজকর্ম কিছু করি। চলে যায় কোন রকমে।’
 
ছেলেগুলির সংগে অারও কথা বলার খুব আগ্রহ ছিল- কিন্তু সময়াভাবে সম্ভব হয়ে উঠেনি।
 
ঘটনাটা আজ থেকেও বছর ১৫ আগের। ওই প্রথম আমি রোহিঙ্গাদের সংস্পর্শ পাই।
 
স্যাংহাইতে আমার বান্ধবী পানপান। ওকে একদিন জানতে চাইলাম তোমার ‘রিলেজিয়ন’ কি? পানপান জানতে চাইলো ‘রিলিজিয়ন’ মানে কি? আমি ওকে ইংলিশে স্পেলিং লিখে দেখালাম। ও বুঝলোই না- রিলিজিয়ন-টা কি জিনিস? আমি অবশ্য পরে আর বুঝানোর চেষ্টাই করিনি। পরবর্তীতে আমি অনেক চাইনিজ-কেই জিজ্ঞেস করেছি এবং সিওর হয়েছি ওদের ডিকশানারী থেকে ‘রিলিজিয়ন’ ওয়ার্ডটি চাইনিজ কমিউনিষ্ট গভর্ণমেন্ট তুলে দিয়েছে। রিলিজিয়নও নাই ওদের কোন মাথা ব্যাথাও নেই।
 
শুধুমাত্র ওয়েষ্টার্ণ চায়নার টিবেত এ আছে বৌদ্ধরা আর উরুমচীতে রয়েছে মুসলিমরা। উভয় জাতি-ই মেইনল্যান্ডারদের হাতে নির্যাতিত।
 
চাইনিজরা নাস্তিক।
ওরা রিলেজিয়ন মানেই জানে না।
 
গেলাম, ব্যাংকক।
সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট থেকে একটা ট্যাক্সি নিলাম কন্ট্রাকে সুকুমভিট পর্যন্ত।
ট্যাক্সি ড্রাইভর ছিল লোকল থাই ছেলে। কথাবার্তায় খুবই স্মার্ট কিন্তু চেহারায় শয়তান শয়তান ভাব রয়েছে। হঠাৎই একটা টোল গেটে থামিয়ে আমাকে বলল ‘তাড়াতাড়ি ২০ বাথ দাও, টোল দিতে হবে’।
আমি দিলাম এবং বললাম, ‘২০ বাথ তোমাকে এডভান্স দিলাম বাকীটা সুকুমভিট গিয়ে মিলিয়ে দেব।’
ওছেলে আমার দিকে কটমট করে তাকালো। আমিও কটমট করে তাকালাম।
এবং বললাম, ‘তুমি ঝামেলা করো না কিন্তু, নইলে পুলিশে কমপ্লেইন করবো’।
ও হেসে দিয়ে বলল, ‘না না ঝামেলা করবো কেন? ঠিক আছে।’
 
থাইরা বৌদ্ধ। আমি নিশ্চিত ছিলাম যদি আমি পুলিশ কমপ্লেইন কথাটা না বলতাম, ও আমার কাছে ঐ ২০ বাথ অতিরিক্ত দাবী করতো।
 
আমি আমার অনেকগুলি ব্যাংকক, পাতায়া ভ্রমনে বেশ কয়েকটি থাই ছেলের ওরকম আচরণ পেয়েছি এবং প্রতিবারই ‘বুদ্ধিমত্তা’ ব্যবহার করে পরাজিত হওয়া থেকে বিরত থেকেছি। থাই ছেলেগুলি প্রচন্ড রকমের বদমাইশ টাইপ হয়ে থাকে।
 
কিন্তু থাই পুলিশ পর্যটকদের খুবই সহায়তা করে।
 
কুয়ালা লামপুর।
প্লাজা রাকায়েট এর সংগে পুডুরায়া বাস ষ্টপেজ।
তার অপজিটেই কুতারায়া এলাকাটা বাংলাদেশী অধ্যূষ্যিত। বলা যেতে পারে একটা মিনি বাংলাদেশ এটা। অনেকটা নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের মতোই।
 
কুয়ালা লামপুর এ আমার আইফোন হারিয়ে যাওয়া ও তা আবার উদ্ধার করার গল্পটাও আমি করেছি। আইফোন ফোর এ একটা বেসিক প্রব্লেম ছিল- হঠাৎ হ্যাং করতো। আমি বহুবার এই প্রব্লেমটা ফেস করেছি। ঢাকায় থাকতে ইষ্টার্ণ প্লাজায় আমার ম্যানেজারকে দিয়ে পাঠাতাম, ৩০০ টাকা নিতো প্রতিবার। আবার হ্যাং করতো, আবার ৩০০। এভাবেই চলতাম।
 
এক পর্যায়ে আমি চায়না থেকে টুলবক্স নিয়ে আসি, নিজেই আইফোন খুলে ঠিক করে ফেলতাম। ৩০০ টাকা সেভ হতো।
 
তো ঐ কুয়ালা লামপুরে আমার আইফোনটি হ্যাং করলো। মহা বিপদ। কি করি?
কুতারায়া গেলাম। ওখানে বেশ কয়েকটি সেলফোন এর সপ। প্রথম দোকানটিতে ঢুকলাম।
একটা থাই বৌদ্ধ ছেলে, লোকল। আমি থাই বৌদ্ধদের খুব সহজেই আইডেনটিফাই করতে পারি। ওছেলে আমার ফোনটা হাতে নিয়ে বলল, ১০০ রিংগিত লাগবে। বলেই সে ওটা খুলার কাজ শুরু করে দিল।
 
অামি অনেকটা ধমকের স্বরে ওর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলাম।
আরেকটু ভেতরে একটা মিয়ানমারের রোহিংগা ছেলে, ওর নাম আবদুল্লাহ আমার পরিচিত ওর দোকানে গেলাম। সে ফোনটা নিল। কি যেন করলো মিনিট পাঁচেক পরই আমাকে আইফোনটা ফেরত দিয়ে বলল ‘নাও এটা ঠিক হয়ে গেছে’।
 
আমি মানিব্যাগে হাত দিলাম, ‘কত দিবো?’
আবদুল্লাহ টাকা নেবে না। বলল, ‘এটা কি কোন কাজ হলো যে টাকা নেব? অন্য কাজে এসো তখন টাকা নেব। এখন যাও, আমি ব্যস্ত।’
আমি হকচকিয়ে গেলাম! কিভাবে কি করলো?
 
সমস্যাটির সমাধান পেয়েছিলাম নিউ ইয়র্কে এসে। বাংলাদেশী ইমিগ্রান্ট সুমেন বিশ্বাস; যশোরের হিন্দু যুবক- আমাকে বিনা পয়সায় শিখিয়ে দিল। কৃতজ্ঞতা সুমেনের কাছে। আসলে আইফোনের হোম বটন আর অন/অফ বটম একসংগে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখলেই সেটা রিষ্টার্ট হয়।
 
যাক এর কয়েক সপ্তাহ পর আবার কুয়ালা লামপুর গিয়েছি, সেই থাই ছেলেটি আমাকে আবার ডাকলো।
আমি গেলাম ওর দোকানে। আমাকে বলল, ‘আমার কাছে একটা প্রায় নতুন আইফোন আছে মাত্র ৪০০ রিংগিত; নিবে?’
ওকে দেখাতে বললাম।
বের করলো। আমার পছন্দও হলো। তখন আমার আইফোনটি নেই- হারিয়ে গিয়েছে। আমি খুশীই হলাম। ৪০০ রিংগিত এ আমার লস হবে না।
 
ওই ছেলে ইনভয়স লিখলো সব মিলিয়ে ৭৫০ রিংগিত।
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, ‘৪০০ রিংগিত বললে, এখন ৭৫০ রিংগিত লিখলে কেন?’
‘৪০০ রিংগিত তো ফোনের মূল্য, আনলক ফি, এটা ওটা সব মিলিয়ে ৭৫০ রিংগিত দিতে হবে।’
আমি বললাম নিব না তোমার ফোন।
ওই ছেলে আমাকে বলে, ‘তোমাকে নিতে হবে এবং ৭৫০ রিংগিত-ই দিতে হবে, আমি ইনভয়েস করে ফেলেছি।’
আমি সাধারণত মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখি। ওকে ঠান্ডা মাথায় বললাম, ‘তোমাকে কিন্তু আমি পুলিশে দেব’।
ওই ছেলে আরও এক ডিগ্রী গরম হয়ে আমাকে বলে, ‘ঠিক আছে চলো পুলিশের কাছে’।
দোকান থেকে ও বের হলো। কাছেই পুলিশের একটা মোবাইল ইউনিট বসে। আমরা সেখানে গেলাম। ও ওর ভাষায় পুলিশ-কে কি যেন বলল।
 
এবার অফিসারটি আমাকে জিজ্ঞেস করলো ঘটনাটি বলতে, আমি বিস্তারিত এবং আদ্যপান্ত বললাম। আমি যখন পুলিশকে বিস্তারিত বলছি- ও তখনই কিছুটা ভরকে গেল! এবং এক পর্যায়ে বলল, ‘আমি ১ মিনিট আসছি’ বলেই অদৃশ্য হয়ে গেল।
 
পুলিশ বিষয়টা বুঝতে পারলো। আমাকে অফিসারটি বলল, ‘এই ছেলেগুলি খুব বদমাইশ প্রকৃতির হয়। আমরা এদের চিনি- তোমাকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে টাকা নিতে চেয়েছিল! এখন তুমি যদি চাও তাহলে তোমাকে একটা লিখিত কমপ্লেইন দিতে হবে; সেক্ষেত্রে আমরা ওকে এরষ্টে করে কোর্টে চালান দিব। কিন্তু তোমাকে থানায় গিয়ে কমপ্লেইনটা দিতে হবে। আমরা চাই তুমি ওর বিরুদ্ধে কমপ্লেইনটা দাও। এরা প্রচন্ড অসভ্য, তুমি কখনোই থিরাভাদা বুড্ডিষ্টদের সংগে লেনদেন করবে না।’
 
আমি রাজী হলাম না তখন থানায় যেতে, ওত সময় আমার কোথায়?
যাই হোক, এরকম আরও অনেক থিরাভাদা বুড্ডিষ্টদের সংগে আমার পরিচয় হয়েছে পৃথিবীর অনেক শহড়ে। এরা ভয়ংকর।
 
আমি আসলে এই গল্পগুলি করলাম একটা বিশেষ কারণে।
আমি একটু দেখাতে চেয়েছিলাম, ‘থাই চেহারার বৌদ্ধ ছেলেগুলি’ ঠিক কেমন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের হয়। আমি আজ পর্যন্ত একজন ‘থাই চেহারার বৌদ্ধ’ ভালো মানুষ দেখিনি।
 
এগুলি বদের হাড্ডি। মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডের বৌদ্ধরা মুলতঃ একই গোত্রভূত ‘থিরাভাদা বুড্ডিষ্ট’। এরা ভীষন রকমের মারমুখী, হিংস্র, উগ্র, উদ্ধৌত এবং বেয়াদব।
 
আমার বিশ্বাস এই পৃথিবীর সবচে অসভ্য শ্রেনীর প্রাণী এই ‘থিরাভাদা বুড্ডিস্ট’ গুলি।
আমি এদের ঘৃণা করি মনে, প্রানে।
 
মিয়ানমারের নোবেল জয়ী নেত্রী অংসান সুচিও একজন থিরাভাদা বুড্ডিষ্ট।
মিয়ানমারের অপারপার ক্ষমতাসীনরাও একই গোত্রভুক্ত।
 
বোদ্ধ অধ্যষ্যিত রাখাইন রাজ্যটিতে প্রচুর সংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসবাস। কিন্তু আরাকানিরা ওই মুসলিমদের বার্মিজ হিসাবে স্বীকারই করে না। আমরা মানে বাংলাদেশীরা এদেশে রাখাইন বৌদ্ধদের- আমাদের বাংলাদেশী হিসাবে সম্মান দিই, স্বীকৃতি দিই। কিন্তু বার্মিজরা সেটা মানতে নারাজ।
 
বার্মিজরা ক্রমাগত সংখ্যালঘু রোহিংগা মুসলিমদের হত্যা করে চলছে।
পৃথিবীর যে-কোন অঞ্চলের নির্যাতনকে এই ‘মাসাখার’টি হার মানাবে।
 
বাংলাদেশের মিডিয়াগুলি অন্যান্য বিষয়ের মতোই একটা সময় অংসাং সুচি নিয়ে মেতে থাকতো। যেমন মেতেছিল হিলারী ক্লিনটনকে নিয়ে কিছুদিন। ভাবটা এমন যেন কোন একটা ‘মহিলা’ ক্ষমতায় আসলেই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে!
 
‘মহিলা’ সুচীর দল এখন ক্ষমতায়।
রোহিঙ্গা নির্যাতন বেড়েছে।
প্রতিদিন শত শত মুসলিমকে হত্যা করা হচ্ছে আরাকানে। শুধু হত্যাকান্ড নয়, অমানবিকতার এরকম দৃষ্টান্ত অধুনাকালের পৃথিবীতে দেখা যায় না।
 
কতটা হিংস্র, বর্বর এ হত্যাকান্ড- কল্পনাও করা যায় না।
ফেসবুকে অনেকেই ওসব ছবি পোষ্ট করে, লাইক, কমেন্টস করে।
আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। আমরা ওদের জন্য কিছুই করতে পারি না।
 
বাংলাদেশের সরকার, মিডিয়া, সংখ্যলঘু সম্প্রদায় যারা নাকি সোচ্চার ‘সাম্প্রদায়িকতা’ নিয়ে- এরা ওসব দেখে না। দেখার কথাও না। জানোয়াররা কি সবকিছু দেখতে পারে?
 
বাংলাদেশের কোন একজন রাখাইন বৌদ্ধকেও আমি আজ অবধি ‘এই নৃশংস হত্যাকান্ডের’ বিরুদ্ধে একটা বাক্যও উচ্চারণ করতে দেখিনি।
 
কিন্তু আমরা তো চোখ বন্ধ করেও থাকতে পারি না।
এই হিংস্রতার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো ছাড়া কোন গত্যান্তর নেই।
 
আমেরিকা নিরব। জাতিসংঘ নিরব। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
মৌলবাদী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রদায়িক ভারত রাষ্ট্রও এব্যাপারে নিরব।
 
পাকিস্তান হয়তো কিছুটা প্রতিবাদ করতো- কিন্তু ওরাতো অনেক দূরের দেশ।
আর এক প্রতিবাদ করতে পারতো মালয়েশিয়া- ওরাও এখন করাপ্টেড কান্ট্রি।
 
আমাদের প্রতিবেশী মানুষগুলিকে এভাবে দিনের আলোতে হত্যা করা হবে- আমরা কিছুই করতে পারছি না! সীমান্ত খুলে দিয়ে ওদের এদেশে আশ্রয় দিতে পারছি না!
 
এতো নিষ্ঠুর পৃথিবী এটা?
চোখের সামনে মানুষকে হত্যা করা হবে- কেউ সেই হত্যাকান্ড ভিডিও করবে- সেগুলি আমরা দেখবো!
 
মানবতা আজ কোথায়?
এই পৃথিবীর সকল মানবতার মৃত্যূ হয়েছে রাখাইন রাজ্যে, মিয়ানমারে। মিয়ানমার একটা সহিংস্র, ঠান্ডা মাথার খুনী রাষ্ট্র।
 
একটা কাজ কি করা সম্ভব?
আমরা সকলে যদি প্রতিদিন হাজার হাজার ই-মেইল পাঠাই সৌদী সরকার, মালয়েশিয়ান সরকার, তুরষ্ক, পাকিস্তান, ইরান, জাতিসংঘ, আমেরিকা, হিউম্যান রাইটস ইত্যাদি দেশ বা সংগঠনগুলোর কাছে; রাশিয়া, ইওরোপিয়ান ইওনিয়ন, বৃটিশ সরকারের কাছেও – প্রতিদিনই যদি হাজার হাজার লাখ লাখ অভিযোগ, প্রতিবাদ আমরা পাঠিয়ে-ই যাই; কিছু কাজ তো হতেও পারে। মুসলিম রাষ্ট্রগুলিকে ব্যবস্থা নেবার অনুরোধ থাকবে। মানবতার কথা বলতে হবে ওদের কাছে।
 
এই কাজটা আমাদেরই করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে করলে একটা রেজাল্ট আসতেও তো পারে!
 
আমি জানি না যে এতে কিছু কাজ হবে- কিন্তু চেষ্টা করা যায় কিনা সেটাও তো ভাবতে পারি।
 
অথবা অন্য কোন উপায়।
বসে যে থাকতে পারছি না- এভাবে হাত গুটিয়ে!
 
এই বৌদ্ধ জানোয়ারগুলি যখন আপনার-আমার সামনে কোনদিন মুখে আওড়াবে ‘জীব হত্যা মহাপাপ’ তখন আমরা ওদের ঠাটিয়ে একটা চড়-তো মারতে পারবো? মুখের সবটুকু নোংড়া থুথু ওদের মুখমন্ডলে মাখিয়ে দিতে তো পারবো।
 
আমাদের যেহেতু কিছুই করার ক্ষমতা নেই- ঘৃণা অার প্রতিবাদ তো আমরা জানাতে পারি।
আর মহান আল্লাহর কাছে একটু সাহায্য প্রার্থনা।
 
হে আল্লাহ, মিয়ানমার এর রোহিঙ্গা মুসলিমদের তুমি সহায়তা করো।
তুমি ছাড়া ওদের যে আর কেউ নেই।
 
আসুন না প্লিজ আমরা সকলে মিলে একটা বুদ্ধি বের করি।
একটু চেষ্টা করেই দেখি না কিছু করতে পারি কিনা- ওই অসহায় নির্যাতিত মানুষগুলির জন্য?
 
আমরাতো এখনও বেঁচে আছি।
কিন্তু ওরকম নির্যাতন আমাদেরও উপরও যে আসছে না- সে নিশ্চয়তা আপনাকে কে দিবে?
   Send article as PDF